--- বিজ্ঞাপন ---

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রচুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান!

0

নিউজ ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে আকাশপথের লড়াইয়ে গত সপ্তাহে পাকিস্তান অস্ত্রবিষয়ক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, ওই লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের অপব্যবহার করেছে পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের পর এবারই প্রথমবার নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারত ও পাকিস্তান বিমান হামলা চালিয়েছে। এ সময় ভারতীয় একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করে পাকিস্তান। এর পাইলটকে কয়েকদিন আটক রাখার পর শুক্রবার নয়া দিল্লির হাতে তুলে দেয়া হয়। ভারতের অভিযোগ, গত বুধবার ভারতীয় যে যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে তাতে পাকিস্তান ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। এ যুদ্ধবিমান কেনার সময় যুক্তরাষ্ট্র যে সব শর্ত দিয়েছিল তা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযোগ। তবে ওই অপারেশনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, তারা এমন রিপোর্টের বিষয়ে অবহিত। তিনি মনে করেন, যদি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে তা এর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তির লঙ্ঘন। এক্ষেত্রে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীন নির্ভরতা
২০০১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে ২০০১ সালেই আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বড় একটি মিত্র হয়ে ওঠে পাকিস্তান। এর বিপরীতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বড় সামরিক সহায়তা পেতে থাকে। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র চুক্তি দাঁড়ায় ৩৫০ কোটি ডলার। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের ক্রেতা হয়ে ওঠে পাকিস্তান। ওই সময় কয়েক ডজন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনে পাকিস্তান। সঙ্গে নানা রকম বোমা ও জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। অস্ত্র বিক্রির চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বলে দেয়, এসব অস্ত্র কোন কোন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। সুনির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ দেয়া হয়। তবে পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে কি বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়।
২০১৬ সালে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা অভিযোগ করে সীমান্তের ভিতরে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে দমনে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান সরকার। ২০১৮ সালে দেখা যায়, পাকিস্তানকে দেয়া সামরিক সহযোগিতা, যেটা স্থগিত করা হয়েছে, তার পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
ওদিকে চীনা অস্ত্রেরও বড় ক্রেতা পাকিস্তান। ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে চীনের কাছ থেকে ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র কিনেছে ইসলামাবাদ। এ তথ্য সিএসআইএসের। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বেইজিংয়ের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক শক্তিশালী রাখার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেছেন, আমাদের জনগণকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনার জন্য চীনকে ব্যবহার করতে হবে উৎসাহ হিসেবে।
পাকিস্তানের নিজস্ব যুদ্ধবিমান, যা তারা আভ্যন্তরীণভাবে তৈরি করে তা চীনা জেএফ-১৭এস ডিজাইনের।
একটি অনিশ্চিত বর্ণনা
বৃহস্পতিবার ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা দাবি করেন, তারা একটি এমএমআরএএএম আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের বিভিন্ন অংশ পেয়েছেন ভারতের ভিতরে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি শুধু বহন করতে পারে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। এয়ার ভাইস মার্শাল আর জে কে কাপুরের মতে, নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করেছিল পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান। কিন্তু তাদেরকে গুলি করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। পাকিস্তান এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ভারতীয় বিমানবাহিনী আকাশপথে অভিযান চালানোর পরেই তারা অ্যাকশনে গিয়েছিল। ভারতের দাবি তারা পাকিস্তানের বালাকোটে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে এমন শিবির থাকার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
বুধবার ইমরান খান বলেছেন, আমরা শুধু ভারতকে বলতে চেয়েছি যে, আমাদেরও সক্ষমতা আছে। যদি তোমরা আমাদের দেশের ভিতর এসে কর্মকা- চালাও তাহলে আমরাও আসবো। আমরাও একই কাজ করবো তোমাদের দেশে। এ অবস্থায় রোববার ইমরান খানকে ফোন করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রচ-ভাবে সুরক্ষিত কাশ্মির সীমান্তের দু’পাড়ে উভয় দেশের অবস্থানের কারণে সামরিক গুলিবিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরিচালক রাজা মোয়াজ্জম শুক্রবার সিএনএনকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বেশ কিছু স্থানে ভারত থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে পাকিস্তানি কমপক্ষে চারজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আটজন। তিনি বলেছেন, কয়েক ডজন বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে গোলার আঘাতে। কয়েক শত মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালিত আশ্রয়শিবিরে অবস্থান নিয়েছেন প্রায় ৬০০ মানুষ।
লড়াই শুরুর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত।
গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা হয়। এতে ভারতীয় কমপক্ষে ৪০ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হন। এ জন্য ভারত জঙ্গি গ্রুপ জৈশ ই মোহাম্মদকে দায়ী করে। বলা হয়, এর সঙ্গে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মদত রয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.