--- বিজ্ঞাপন ---

শ্রীলংকায় জরুরি অবস্থা জারি

0

নিউজ ডেস্ক: দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলসহ আট স্থানে সিরিজ বোমা হামলায় ২৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত আরও ৫ শতাধিক। রোববার সংঘটিত এ নৃশংস ঘটনায় ভারত মহাসাগরের ছোট্ট-সুন্দর দেশটি শোকে স্তব্ধ। আত্মঘাতী হামলার পর দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

সোমবার মধ্যরাত থেকে পুরো শ্রীলংকায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এছাড়া রাজধানী কলম্বোতে টানা দ্বিতীয় রাতের মতো কারফিউ জারি হয়েছে। সোমবার রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে। হতাহত পরিবাবের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছে শ্রীলংকা সরকার। জামাত আল-তাওহিদ আল-ওয়াতানিয়া নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বনেতারা শোক প্রকাশ করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

রোববার দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের সকাল শুরু হয়েছিল উৎসবমুখর পরিবেশে। ‘ইস্টার সানডে’র এ উৎসবে গির্জায় সমবেত হয়েছিল বহু মানুষ। এ দিনটিই রক্তাক্ত হয় আত্মঘাতীর হিংস থাবায়। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় জনপদ। হামলায় নিহতের তালিকায় এক বাংলাদেশি শিশুসহ কমপক্ষে ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন।

এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। আক্রান্ত শ্রীলংকাকে সহমর্মিতায় সিক্ত করছে পুরো পৃথিবী। রক্তাক্ত ইস্টার সানডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের বিস্ফোরণ ঘটল শ্রীলংকায়। কলম্বোর সেন্ট অ্যান্টনিস চার্চের কাছে এই বিস্ফোরণ হয়। বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় এ বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানা গেছে।

ইস্টার সানডে প্রার্থনার মধ্যে গির্জা আর পাঁচতারা হোটেলে একযোগে বোমা হামলার পর শ্রীলংকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হচ্ছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে পুরো শ্রীলংকায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের মিডিয়া ইউনিট এক বিবৃতিতে বলেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তেই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জরুরি অবস্থা জারির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর ফলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করার অনেক বেশি ক্ষমতা পাবে। তবে এক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে ওই বিবৃতিতে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

দীর্ঘ ২৬ বছর গৃহযুদ্ধের পর গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ হামলার দায় স্বীকার করে জামাত আল-তাওহিদ আল-ওয়াতানিয়া নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী । দুবাইভিত্তিক আল অ্যারাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস। এর আগে শ্রীলংকার সরকারও এ হামলার পেছনে সশস্ত্র গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত (এনটিজে) জড়িত বলে সন্দেহ করে। দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র সেনারত্নে ওই হামলার জন্য ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতকে (এনটিজে) দায়ী করছেন।

তিনি বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে এনটিজে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেনারত্নে এর আগে ওই হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক আছে বলে মন্তব্য করেন। রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ হামলায় জড়িত সন্দেহে ২৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘হামলার ব্যাপারে আগেই সতর্ক করা হলেও তথ্যটি আমলে নেয়া হয়নি।’ ঘটনার পর হামলার স্থানগুলো পরিদর্শন করে পুলিশ। তারা ঘটনার আলামত সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে ছবিও তুলে রাখেন। জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান শ্রীলংকার মুসলিম নেতারা।

হামলার কারণে ইস্টার সানডের সন্ধ্যার সব জমায়েত বাতিল করা হয়। শ্রীলংকার সব সরকারি স্কুলে আগামী দুই দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। জোরদার করা হয় কলম্বোর বন্দরনায়েকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা। ভুয়া খবর রুখতে বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ২৪ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে। তবে কারা ওই সমন্বিত হামলা চালিয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়ে সরকার এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলেনি। তবে শ্রীলংকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ ব্রিটিশ, একই পরিবারের দুই অস্ট্রেলিয়ান, ছয়জন ভারতীয়, ডেনমার্কের তিনজন, তুরস্কের দু’জন, বাংলাদেশ, জাপান, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালের একজন করে নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া চীনের নাগরিকও রয়েছেন।

বিবিসি জানায়, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে কলম্বো থেকে ২০ মাইল উত্তরের শহর নেগোম্বোতে সেইন্ট সেবাস্তিয়ান চার্চে প্রথম হামলাটি চালানো হয়। একের পর এক অভিজাত হোটেল ও গির্জাগুলোয় ভয়াবহ বোমা হামলায় দ্বীপরাষ্ট্রটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। হামলার শিকার হয়েছে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের তিনটি বড় গির্জা সেইন্ট অ্যান্টনির গির্জা, সেইন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জ ও জায়ন গির্জা। ইস্টার সানডের প্রার্থনায় এসব গির্জায় সমবেত হয়েছিল হাজারও মানুষ। হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল কলম্বোর পাঁচ তারকা হোটেল শাংরি লা, দ্য কিংসবেরি এবং সিনামন গ্র্যান্ডের বিদেশি পর্যটকরা। এ ছয় স্থানে সাতটি আত্মঘাতী হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক অপরাধ বিশ্লেষক আরিয়ানন্দ উইলিয়াঙ্গা। তিনি বলেন, ‘শাংরি লা হোটেলে দুটি এবং বাকি স্থানে একটি করে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে।’ এছাড়া ট্রপিকাল ইন হোটেল এবং ডেমাটাগোডা আবাসিক এলাকায়ও বিস্ফোরণ ঘটে।

নৃশংস এ হামলার পর দেশবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তদন্ত কাজে সহায়তা করার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার পরপরই জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, ‘হামলাকারী সবাই শ্রীলংকান নাগরিক।’ প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেফতার করার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি। বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে বিদেশের কারও যোগাযোগ রয়েছে কিনা, সে বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’ শ্রীলংকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়াবর্ধনে হুমকি দিয়েছেন, দেশে কোনো ধরনের উগ্রবাদী দলের অস্তিত্ব থাকলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।

হতাহত পরিবাবের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে শ্রীলংকা সরকার। মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র রাজিথা সেনারতেœ বলেন, নিহতদের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য ১ লাখ রুপি এবং প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়া আহতদের অবস্থা বুঝে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ রুপি সহায়তা দেয়া হবে।

বোমা হামলার পর সন্ধ্যা থেকে পুরো শ্রীলংকায় জারি করা হয়েছিল কারফিউ। সোমবার সকালে তা সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়। পরে রাত আটটা থেকে মঙ্গলবার ভোর চারটা পর্যন্ত আবারও কারফিউ জারি করা হয়েছে।

‘যিশুর পুনরুত্থান’ দিবস উদযাপনে এদিন গির্জাগুলোতে চলছিল বিশেষ প্রার্থনা। ১৯ শতকের শুরুতে নির্মিত কোচিকাডের সেইন্ট অ্যান্থনির গির্জা শ্রীলংকার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। খ্রিস্টানদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের কাছেও এটি একটি আকর্ষণীয় জায়গা। এছাড়া নেগোম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ানের চার্চ এবং বাত্তিকালোয়ার জিয়ন গির্জাও খ্রিস্টানদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাসনালয়। বিস্ফোরণে প্রতিটি গির্জাই মারাÍক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ছাদ উড়ে যায়। বিধ্বস্ত গির্জাগুলোর বেঞ্চ আর যিশুর ভাস্কর্যে রক্তের দাগ লেগে থাকতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ছবি ও ভিডিওতে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর দৌড়ে সেইন্ট অ্যান্থনির গির্জায় গিয়ে মেঝেতে লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। কামাল নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা দৌড়ে গির্জার ভেতরে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। প্লাস্টিক দিয়ে সেগুলো ঢেকে দিলাম। পরে পুলিশ এসে সবাইকে সেখান থেকে বের করে দিল।’ ইস্টার সানডের প্রার্থনার জন্য ওই গির্জায় পাঁচ শতাধিক লোক জড়ো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রায় একই সময়ে বিস্ফোরণ হয় কলম্বোর শাংরি লা, সিনামন গ্র্যান্ড ও কিংসবুরি হোটেলে। প্রতিটি হোটেলের রেস্তোরাঁয় তখন সকালের নাস্তা সারতে আসা পর্যটকদের ভিড় ছিল। আর সেই পর্যটকরাই ছিল আত্মঘাতী হামলাকারীদের টার্গেট। শ্রীলংকায় বেড়ে ওঠা ৪৮ বছরের চিকিৎসক জুলিয়ান ইমানুয়েল পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাজ্যে। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে কলম্বো এসে তারা উঠেছিলেন সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে। ইমানুয়েল বলেন, ‘বিকট বিস্ফোরণের সময় আমরা হোটেলের ঘরেই ছিলাম। বিস্ফোরণের ধাক্কায় আমাদের ঘর কেঁপে উঠল। পরে আমাদের হোটেলের লাউঞ্জে নিয়ে আসা হল। পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যেতে বলা হল।’

সকালের নাস্তা খেতে যাওয়ায় সামান্য দেরি হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান লন্ডন বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক কিরণ আরাসারত্নম। তিনি বলেন, ‘এত জোরে শব্দ হয়েছিল যে, আমি ভেবেছিলাম বজ পাত। সবাই আতঙ্কে ছোটাছুটি করছিল। বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারেনি আসলে কী হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর দেহিওয়ালায় চিড়িয়াখানার কাছে ট্রপিকাল ইন হোটেলে সপ্তম এবং ডেমাটাগোডা আবাসিক এলাকায় অষ্টম বিস্ফোরণের খবর আসে। দেহিওয়ালার ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হন।

কলম্বোয় চার্চের কাছে ফের বিস্ফোরণ : রক্তাক্ত ইস্টার সানডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের বিস্ফোরণ ঘটল শ্রীলঙ্কায়। সোমবার বিকালে কলম্বোর সেন্ট অ্যান্টনিস চার্চের কাছে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে খবর। জানা গেছে, বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে।

এএফপি জানায়, বোম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড এবং বিমান বাহিনীর বিশেষ টিম যখন উদ্ধারকৃত বোমা নিষ্ক্রিয় করতে চেষ্টা করছিল তখন একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। গতকাল হামলার পরপর অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় একটি বাসস্টেশন থেকে ৮৭টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।

কেন টার্গেটে ইস্টার সানডে : শ্রীলংকায় সিংহলি ও তামিলদের মধ্যে ২৬ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয় ২০০৯ সালে। এরপর বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের কাছে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপদেশ হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় গন্তব্য। শ্রীলংকার দুই কোটি বিশ লাখ জনসংখ্যার মোটামুটি ৭০ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বাকিদের মধ্যে ১৩ শতাংশ হিন্দু, ১০ শতাংশ মুসলমান আর ৭ শতাংশ খ্রিস্টান। ইস্টার সানডেতে খ্রিস্টানদের গির্জাগুলো থাকে জমজমাট। এই সময়টায় পর্যটকরাও ছুটি কাটাতে আসেন। হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি নিশ্চিত করার জন্যই ইস্টার সানডে এবং গির্জা ও হোটেলগুলো বেছে নেয়া হয়েছে বলে মনে করেন বিবিসি ওয়ার্ল্ডের এথিরাজন আনবারাসন।

আগেই সতর্ক করা হয়েছিল : দ্য গার্ডিয়ান জানায়, দুই ধাপে এ হামলার ব্যাপারে দুই সপ্তাহ আগে সতর্ক করা হয়েছিল। গত ৯ এপ্রিল শ্রীলংকার গোয়েন্দা প্রধানের লেখা একটি চিঠিতে সন্দেহভাজন হামলাকারী গোষ্ঠীর নামসহ বিস্তারিত ছিল। এরপর ১১ এপ্রিল দেশটির পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়সুন্দর দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে আরেকটি সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, জঙ্গি দল ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত (এনটিজে) কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশন ও শ্রীলংকার প্রধান গির্জাগুলোতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু পুলিশপ্রধানের ওই সতর্কবার্তা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে অবহিত করা হয়নি। রনিল বলেছেন, ‘আমাদের এ বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখতে হবে। দেশকে অস্থিতিশীল করার মতো সুযোগ দেয়া কোনোভাবেই উচিত হয়নি।’ বিবিসি সিংহলির প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন এ ঘটনার পেছনে ছিল বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন।

কলম্বো বিমানবন্দর উড়িয়ে দেয়ার ছক ছিল জঙ্গিদের, পাইপ বোমা উদ্ধার : শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। বিমানবন্দরের কাছ থেকে ‘ঘরে তৈরি’ একটি বোমা উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, রোববার রাতে বিমানবন্দরের প্রধান টার্মিনালমুখী সড়কে ওই পাইপ বোমাটি পাওয়া যায়। পরে বিমান বাহিনী সেটি নিষ্ক্রিয় করে বলে সোমবার জানিয়েছে পুলিশ। শ্রীলংকা বিমান বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, ছয় ফুট লম্বা ওই পাইপ বোমাটি স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া শ্রীলংকার পেত্তাহ শহরের বাস্তিয়ান মাওয়াথা বাসস্টেশন থেকে ৮৭টি বিস্ফোরক উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

শ্রীলংকায় আরও হামলার সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্রের : শ্রীলংকায় আরও সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। হামলার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ভ্রমণবিষয়ক সতর্কতা সংশোধন করে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার এই সংশোধিত সতর্কতা জারি হয়। সতর্ক বার্তায় পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, রোববারের ঘটনার পরও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা শ্রীলংকায় আরও হামলার ষড়যন্ত্র করছে। সন্ত্রাসীরা সামান্য সতর্কতা বা কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই হামলা চালাতে পারে। এতে আরও বলা হয়, হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হতে পারে পর্যটন স্থান, পরিবহনের কেন্দ্রস্থল, বিপণিবিতান, হোটেল, উপাসনালয়, বিমানবন্দর ও অন্যান্য জনবহুল স্থান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী রজিতা সেনারত্নে : সোমবার লঙ্কান স্বাস্থ্যমন্ত্রী রজিতা সেনারত্নে বলেন, এই গোষ্ঠী আত্মঘাতী হামলাকারীদের দ্বারা ব্যবহার করে সিরিজ হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন সংগঠনটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো পক্ষের সংযোগ থাকতে পারে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি না শুধু এদেশে থাকা কিছু লোক এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া এই মাত্রার হামলা সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সহায়তায় হামলা চালিয়েছে স্থানীয় ইসলামিক দল-শ্রীলংকা : শ্রীলংকায় প্রায় তিনশ’ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া নৃশংস হামলাটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সহায়তায় স্থানীয় এক ইসলামিক দল চালিয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রীলংকা সরকার। কেবিনেট মন্ত্রী রাজিথা সেনারাত্নে বলেন, সাত আত্মঘাতী হামলাকারী যারা ইস্টার সানডের এই হামলা পরিচালনা করেছে, তারা ‘ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত’র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শ্রীলংকার নাগরিক। এই দলটি এর আগে বৌদ্ধমূর্তি ভাঙার মতো কাজও করেছিল এবং ২০১৬ সালে তাদের এক নেতাকে আটক করা হয় ধর্মান্ধতা ছড়ানোর অভিযোগে। বোমারুদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক খুঁজে বের করার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসিনা। প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র জানান, গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বিদেশি সন্ত্রাসী সংস্থাগুলো এই স্থানীয় সন্ত্রাসীদের পেছনে কাজ করেছে। রাষ্ট্রপতি সেজন্য বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন। দেশের টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো একটি চিঠির ছবি টুইটারে তুলে ধরেছেন। যেখানে ‘সম্ভাব্য পরিকল্পিত আক্রমণের তথ্য’ শিরোনামের ওই চিঠিতে নাম এবং অন্যান্য বিষয়েও বিস্তারিত বলা হয়েছে।

জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান শ্রীলংকার মুসলিম নেতারা : শ্রীলংকার শীর্ষ মুসলিম নেতারা আত্মঘাতী বোমা হামলার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। গির্জা ও বিলাসবহুল হোটেলে সিরিজ হামলায় এ পর্যন্ত ২৯০ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ ২৪ জনকে আটক করলেও তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। মুসলিম তাত্ত্বিকদের কাউন্সিল যা অল সেইলন জামিয়াতুল উলামা বলছে, ‘সব ধর্মীয় সাইটগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ভয়াবহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি।’

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.