--- বিজ্ঞাপন ---

ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

0

নিউজ ডেস্ক: ব্রুনাইয়ে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর সফরে দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা জোরদারের আলোচনা হয়েছে। সরকার প্রধানের সফরের যেসব বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে তা নিয়ে একটি যুক্ত বিবৃতি সই হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ব্রুনাই’র যুক্ত বিবৃতিতে দুই দেশ জ্বালানি খাতে সমম্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার যোগান দিতে বাংলাদেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহসহ জি টু জি চুক্তির আওতায় এ সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগানো হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পেট্টোকেমিক্যাল, সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, কারিগরি সহযোগিতা ও সক্ষমতা উন্নয়নের মতো খাতে দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমম্বিত সহযোগিতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া সম্মত হয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৩৫তম বার্ষিকীতে সুলতান বলকিয়ার আমন্ত্রণে দেশটি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী।

সেখানে দুই নেতা বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জ্বালানি, আইসিটি, জাহাজ নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, পর্যটন অবকাঠামো, ব্লু-ইকোনমি এবং পাট শিল্পের মতো খাতে পারস্পরিক বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছেন। ব্রুনাই দারুসসালাম বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘হালাল ফুড মার্কেটে’ প্রবেশের সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পারস্পরিক চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা আরো জোরদারে সম্মত হয়েছে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল নিয়োগ ও ওষুধ উৎপাদন ও বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কার্যকর সুযোগ সুবিধা দিতে উভয় পক্ষ জোর দিয়েছে। অভিন্ন স্বার্থ এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কমনওয়েলথ এবং আশিয়ান আঞ্চলিক ফোরামসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা আরো জোরদারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। আশিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অব্যাহত চেষ্টার প্রতি দুই নেতা সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং এই সম্পর্ক উন্নয়নে পারস্পরিক লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তারা সম্মত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে মানবিক সহযোগিতা প্রদান এবং তাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের প্রতি ব্রুনাই দারুসসালাম সমর্থন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি লাভ এবং সামাজিক খাতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করায় ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করা ও স্বীকৃতি লাভ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ নির্ধারিত যোগ্যতার মানদন্ড সফলভাবে পূরণ করায় অভিনন্দন জানান। নেতৃবৃন্দ সক্রিয়ভাবে যথাযথ ব্যবস্থার অধীনে একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনা বিবেচনা করবেন এবং এ লক্ষ্যে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারকরণে জনগণের সঙ্গে জনগণের ভাব বিনিময়ের গুরুত্ব স্বীকার করে নেতৃবৃন্দ সফর, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, ছাত্র ও কর্মীদের আসা যাওয়া, তথ্য বিনিময়, এবং গবেষণা ও উন্নয়ন প্রয়াসের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপকতর ও গভীর সহযোগিতা উৎসাহিত করার জন্য অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যেতে একমত হয়েছেন। উভয় পক্ষ যোগাযোগ উন্নত করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে এবং অবিলম্বে বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা ও সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। উভয় পক্ষ বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা অর্জন, জ্ঞান বিনিময়, শান্তি স্থাপন এবং মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে গভীর সহযোগিতা প্রদান উৎসাহিত করবে।
নেতৃবৃন্দ ২০১৮ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন আহ্বানকে স্বাগত জানান এবং বন্দর সেরি বেগওয়ান নগরীতে ২০২০ সালে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় রয়েছেন। নেতৃবৃন্দ উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী শ্রমিকদের মূল্যবান অবদান স্বীকার করেন এবং আলোচনার মাধ্যমে শ্রম সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা খুঁজে দেখার জন্য কর্মকর্তাদের উৎসাহ প্রদান করেন। সফরকালে নেতৃবৃন্দ কৃষিতে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতা, মৎস্য ও পশুসম্পদ; তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ (এলএনজি); যুব এবং ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি ও শিল্প ক্ষেত্রে ছয়টি সমঝোতা সই করেন। নেতৃবৃন্দ উভয় দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত সফর সুবিধা চালুর বিনিময় নোট স্বাক্ষরকে স্বাগত জানান। দুই নেতা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.