--- বিজ্ঞাপন ---

‘তালেবান’ একটি ভয়ঙ্কর জঙ্গি গোষ্ঠির নাম

0

‘তালেবান’ একটি ভয়ঙ্কর জঙ্গি গোষ্ঠির নাম। তালেবানরা মুখে মুখে ইসলামের বুলি আওড়ালেও এদের চরিত্রের মধ্যে ইসলামের কোন প্রতিফলন দেখা যায় না। লোভ-লালসা, বিশ্বাসঘাতকতা, চুরি, হানাহানি, নিরীহ মুসলমানদের হত্যা, বল প্রয়োগে ধর্মান্তরকরণ, মাদক চাষ ও মাদক গ্রহণ, মহিলাদের উপর নির্যাতন ইত্যাদি অপকর্ম অহরহ করে থাকে এই তালেবানরা। পাকিস্তানের পেশোয়ারের সেনা স্কুলে ১৩২টি শিশুসহ ১৪১ জনকে নৃশংস হত্যা করে তালেবান। যদিওবা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রকাশ্যে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তালেবানদের দাবি শরীয়া মোতাবেক তথা ইসলামিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠায়ই তাদের লক্ষ্য। মুসলমান নামধারী তালেবানদের কর্মকান্ডে বাঁধা প্রদানের পরিবর্তে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও ‘তেহরিক-ই-ইনসাফ’- দলের প্রধান ইমরান খান সহযোগিতা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তালেবানের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এখন ইমরান খান। কিন্ত ক’দিন?
মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিশাল অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো প্রধান জঙ্গি সংগঠন তালেবানের আধ্যাত্মিক নেতা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের কার্যত প্রধান ছিলেন তিনি। তাকে বলা হতো সরকারের সর্বোচ্চ পরিষদের প্রধান। তালেবান শাসিত ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানে আমির উল মুমেনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) বলে মানা হতো তাকে। পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাকে ও তার সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। মোল্লা ওমর প্রথম অস্ত্র ধরেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। নেক মোহাম্মদের নেতৃত্বে মুজাহেদিন গ্রুপ হরকাত-ই-ইনকিলাব-ই-ইসলাম এ যোগ দেন তিনি। সোভিয়েতদের সমর্থনে ক্ষমতায় থাকা নজিবুল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে চারবার আহত হন ওমর। সোভিয়েত বিরোধী আফগান যুদ্ধে পানজোয়াই জেলার সাংসারে এক সংঘর্ষের সময় তিনি এক চোখ হারান। অন্য এক সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে জালালাবাদ যুদ্ধে তিনি চোখ হারান। এরপর যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের সীমান্ত শহর কোয়েটায় একটি মাদ্রাসাতে শিক্ষকতা করেন ওমর। তখন থেকে তিনি মোল্লা নামে পরিচিত। পরে তিনি করাচিতে বিনুরি মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর সেখানেই প্রথমবারের মতো ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার, পরে ঘনিষ্টতা। বিখ্যাত মিশরীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব শেখ আব্দুল্লাহ আজ্জামের একজন বড় ভক্ত তিনি।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে দুর্বল নজিবুল্লাহ সরকারের পতন ঘটে ১৯৯২ সালে। এরপরেই আফগানিস্তান জুড়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা আর নৈরাজ্য। আফগান মুজাহিদিন বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। ওই সঙ্কট মুহুর্তে মোল্লা ওমর সিঙ্গেসরে ফিরে আসেন। প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাছাত্র নিয়ে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। এ দলটিই তালেবান (ছাত্র) নামে পরিচিত। সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করা হতো আফগানিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং শরণার্থী শিবির থেকে। গৃহযুদ্ধের সময় ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলায় খুব শিগগির দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তালেবান। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে কান্দাহার প্রদেশ এবং পরের বছর সেপ্টেম্বরে হেরাত দখল করে নেয় তালেবান। তালেবানের কর্মী-সমর্থক দিন দিন বাড়তে থাকে। আফগানিস্তানের অনেক এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে সমর্থকরা ওমরকে আমির-উল-মুমেনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) উপাধিতে ভূষিত করে। এরপর ১৯৯৬ সালে তার হাতে কাবুলের পতন ঘটে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানকে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। আরব দেশের মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং পাকিস্তান তালেবান সরকারকে সমর্থন দেয়। যদিও তখনও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহযুদ্ধ চলছিল। ওমরের একটি বিখ্যাত উক্তি এখানে উল্লেখযোগ্য; তিনি বলতেন, ‘সব তালেবানই প্রগতিশীল। দুইটি বিষয়: চরমপন্থা এবং রক্ষণশীলতা। এ দুটি থেকে আমরা মুক্ত। এর ভিত্তিতে আমরা সবাই প্রগতিশীল, মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।’ পরবর্তীতে আফগানিস্তানে ২০০১ সালের অক্টোবরে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ সামরিক আক্রমণ শুরু হলে মোল্লা ওমর আত্মগোপন করেন। এরপর তার অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হতো, আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের পশতুন উপজাতি এলাকায় তিনি আত্মগোপন করে আছেন। তার অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দাতাকে এক কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তানি তালেবান সাধারণভাবে তেহরিক-ই-তালেবান নামে পরিচিত। ২০০৭ সালে এ জঙ্গি সংগঠনটি সর্বপ্রথম আতœপ্রকাশ করে। বায়তুল্লাহ মেহসুদ এই জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৬ সালে আফগান প্রেসিডেন্ট বোরহান উদ্দিন রাব্বানিকে হটিয়ে সেখানে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তালেবানের হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া পাকিস্তানি উপজাতীয় নেতারা তখন আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে এসে কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ওয়াজিরিস্তান টিটিপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ২০০১ সালে ‘টুইন টাওয়ার’ হামলার পর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর তালেবান যোদ্ধাদের আরো অনেকেই পাকিস্তানে চলে আসেন। মার্কিন চাপের মুখে ২০০৩-০৪ সালে ওয়াজিরিস্তানে টিটিপিকে দমনে অভিযান শুরু করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এরপরই পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় টিটিপি। নিয়মতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে পাকিস্থানে ‘ইসলামি শাসন’ প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দেয় তারা। ২০০৯ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় বায়তুল্লাহ মেহসুদ নিহত হলে টিটিপির নেতৃত্বে আসেন হাকিমুল্লাহ মেহসুদ। পরের বছরের সেপ্টেম্বরে টিটিপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পেশোয়ারের ‘অল সেইন্ট চার্চে’ আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ১২০ জনকে হত্যা করে টিটিপি। একই বছরের নভেম্বরে মার্কিন ড্রোন হামলায় টিটিপি প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদ প্রাণ হারান বলে খবর রটে। তবে খবরটি ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেয় টিটিপি। তবে হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে ওই ঘটনার পর আর কোথাও দেখা যায়নি। এরপর থেকে মূলত মাওলানা ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বে চলছে টিটিপি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’র সৃষ্ঠি কট্টরপন্থী তালেবান জঙ্গিরা। ১৯৮০ সালের শুরুতে সোভিয়েত রাশিয়াকে রুখতে সিআইএ-ই তালেবানদের অস্ত্র সাহায্য দেয়। ১৯৮৭ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে বছরে ৬৫ হাজার টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানরা যে সিআইএ’র সৃষ্টি তা স্বয়ং রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ডন রোহরাবেচার বিভিন্ন সময় প্রকাশ করেছেন। যিনি একটা সময় এই তালেবান জঙ্গিদের সাথে সময় কাটিয়েছেন। এমনকি অস্ত্রধারী তালেবান জঙ্গিদের সাথে তার ছবি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে দেখতে পাওয়া যায়। এই রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান তার মুখেই স্ববলেছেন যে, ‘তালেবানরা সিআইএ কর্তৃক গঠিত এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহও করেছে সিআইএ।’ গত ৭ই অক্টোবর ’০৯ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন তালেবানরা এবং ওসামা বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অস্ত্র সাহায্য লাভ করত। ৭ই মার্চ, ২০০১ সালে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’তে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, ‘জঙ্গি সংগঠন তালেবানদের তৈরি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এই কট্টর মৌলবাদীদের আফগান ক্ষমতায় আনার জন্য ১৯৯৪ থেকে ৯৬ পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি।’ আরো উল্লেখ্য মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের সাথে হোয়াইট হাউসে তালেবান নেতাদের গোপন বৈঠকের ছবি ও টেক্সাসে বুশের খামার বাড়িতে তালেবানদের বেড়াতে যাওয়ার ইতিহাস বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। যা এখনও মুছে যায়নি।


পাকিস্তানের বিগত এক নির্বাচনে ভোটে জিতে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগ ক্ষমতায় এসেছিল । নওয়াজ শরিফ শপথ গ্রহণের পরেই তালেবানদের দমনের ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তালেবানদের হামলায় বহু হতাহতের ঘটনায় তার এ ঘোষণায় তালেবান বিরোধী পাকিস্তানীরা সমর্থন দিয়েছিল। দেশজুড়ে তালেবান তাদের ‘অস্তিত্ব’ বুঝালেও, আফগানিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা খাইবার পাখতুনখোয়া, উত্তর ওয়াজিরিস্তানেই তাদের প্রভাব বেশি৷ পেশোয়ার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী৷ ঘটনা হলো, এই অঞ্চল প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা, অধুনা রাজনীতিবিদ ইমরান খানের ‘তেহরিক-ই-ইনসাফ’-এর শক্ত ঘাঁটি৷ খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে তাদেরই সরকার৷ পাকিস্তান তালেবানের প্রতি কোনো অজ্ঞাত কারণে ইমরান নাকি নরম মনোভাব পোষণ করেন৷ এতটাই যে, তাকে নিন্দুকেরা তার নাম দিয়েছেন ‘তালেবান খান’৷ বস্তুত পেশোয়ারের নারকীয় ঘটনার পর সেখানে রওনা দিলেও, একবার জন্য তালেবানের নাম পর্যন্ত নেননি ইমরান খান৷  উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযানের কথা যখন ঘোষণা করেছিলেন নওয়াজ শরিফ তাকে সমর্থন তো দূরের কথা, এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতায় নামেন ইমরান। মৌলবাদী নেতা ড. তাহিরুল কাদরির সাহায্যে শরিফ সরকারকে পরাস্ত করার অভিযানও শুরু করেন। ওই অবস্থাতে গদি বাঁচাতে তালেবান বিরোধী অভিযান থেকে সরে আসতে বাধ্য হন শরিফ। এরপর দ্বিগুণ চাঙ্গা হওয়া তেহরিক-ই-তালেবান ২ নভেম্বর ওয়াঘা সীমান্তে একটি জমায়েতে বোমা হামলা চালিয়ে ৫৫ জনকে হত্যা করে৷ পরবর্তীতে তালেবানের কারনে নওয়াজ শরীফ সরকারের পতন ঘটে। মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে যায় নেওয়াজ। ইমরান খান তালেবানের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানের গদি পেয়ে যান।
তালেবান, আল কায়দা ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন প্রসঙ্গে পাক সেনাবাহিনীর একটা নীতি আছে। আফগানিস্তানে, কাশ্মিরে নিজেদের জমি পেতে বারবার জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোকে প্রকারান্তরে মদত জুগিয়েছে পাক সেনাবাহিনী এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। কাশ্মীর, মুম্বাই, আমেদাবাদ, হায়দরাবাদে তালেবানকে কাজে লাগিয়েছে আইএসআই। ভারতের পক্ষ থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়, ভারতকে চাপে রাখতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ও সেগুলোর লালন-পালনে মদদ দিয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আফগান তালেবানের বড় নেতা মোল্লা ওমরকে আফগান-পাক সীমান্তে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। আফগান তালেবানের মদতে গড়ে ওঠা তেহরিক-ই-তালেবান সৌদি আরবের কিছু দাতাদের আর্থিক আনুকুল্যে গত কয়েক বছরে পাখতুন অধ্যুষিত এলাকায় একের পর এক মাদ্রাসা গড়েছে। তবে ১৩২টি শিশুর রক্তে ভেসে যাওয়া পাকিস্তানে এখন একটা প্রশ্ন বড় করে দেখা দিচ্ছে। তালেবান, আল কায়দা ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন প্রসঙ্গে পাক সেনার নীতিই শেষমেশ ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এল না তো? তালেবানরা যে এতটাই অবাধ্য হয়ে যাবে, তা হয়তো পাকিস্তানী জেনারেলরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। পাকিস্তানের দ্য নেশন পত্রিকার সম্পাদকীয়তে সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের উদ্দেশে জোরালো ভাষায় বলা হয়েছে, ‘জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে সাহসী জওয়ানরা প্রাণ দিচ্ছে, ব্যাড তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়ছে তারা, কিন্তু এসব সত্ত্বেও সমস্ত তাবৎ রাষ্ট্রহীন সন্ত্রাসীদের বিরোধিতা করার ঢালাও কোনো নীতি আপনারা নিচ্ছেন না।’ তবে এটা সত্য যে, পেশোয়ারের ঘটনার পর পাকিস্তানী সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ নড়ে চড়ে বসেছেন। জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, তোমরা আমাদের শিশুদের হত্যা করেছো, এখন তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ পরিণতি। এর মূল্য দেয়ার জন্য প্রস্তুত হও। পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিহত প্রত্যেক ছোটো ফেরেশতার প্রত্যেক ফোঁটা রক্তের প্রতিশোধ নেবে। এটা আমার অঙ্গীকার।
পেশোয়ারের সেনা স্কুলে ১৩২টি শিশুসহ ১৪১ জনকে নৃশংস হত্যার পর এক বিবৃতিতে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরাসানি বলেন, ‘উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান “জারব-ই-আজাব”-এ তালেবান জঙ্গিদের হত্যা ও তাঁদের পরিবারকে হয়রানি করার জবাবে এই হামলা। সেনাকে শিক্ষা দিতেই এই ‘অভিযান’৷ আমাদের স্বজন হারানোর বেদনা তারাও (সেনারা) বুঝুক। এ হামলায় অংশ নিয়েছিল ছয়জন।’ এছাড়া তালেবানদের আরেকটি গোষ্ঠীও হামলার কৃতিত্ব দাবি করেছে৷ এটি হল মোল্লা ফজলুল্লাহর গোষ্ঠী। মালালার ওপর হামলা নাকি এরাই চালিয়েছিল। পাক গোয়েন্দাদের মতে, পেশোয়ারের হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ওমর খোরাসানি। তেহরিক-ই-তালেবানের অঙ্গ সংগঠন ‘মহম্মদ’ শাখার এক সময়ের ভারপ্রাপ্ত ও বর্তমানে ‘জামাত-উল-আহরার’-এর শীর্ষনেতা খোরাসানি পাকিস্তানের সব চেয়ে মারাত্মক জঙ্গি। সরকারের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই কোনোরকম সমঝোতায় আসতে নারাজ খোরাসানি বারবার মারণ হামলার ‘প্রয়োজনীয়তা’ প্রচার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় এই জঙ্গি নেতা প্রায়ই টুইটারে নিজের নৃশংসতার বর্ণনা দেন। মুন্ডচ্ছেদে কুখ্যাত আইএস-এর নেতা বাগদাদির চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সে। ঠিক কতজন খোরাসানির সঙ্গে আছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে তালেবানের প্রথম সারির কয়েকজন কমান্ডারকে সঙ্গে নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘জামাত উল-আহরার’। আবার, পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকা বলছে, গোটা ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তানের তালেবান কমান্ডার উমরের নির্দেশে৷ পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত জি পার্থ সারথি এ ঘটনার সঙ্গে আগের সপ্তাহে তালেবান নেতা লতিফ মেহসুদের মুক্তির যোগসূত্র আছে বলে উল্লেখ করেন। লতিফ মেহসুদ ২০১৩ সালে ড্রোন হামলায় নিহত তালেবান প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদের আমলে দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। এর পর তালেবানের নিয়ন্ত্রণ যায় মোল্লা ফজলুল্লাহর কাছে। অন্যদিকে সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিম সেলিম বাজওয়ার বলেছেন, ‘নির্দেশ কোথা থেকে এসেছিল, কাদের সঙ্গে কথা বলছিল, কাদের হাতে ছিল লাগাম, সব আমরা বের করেছি৷ সময় হলে বিস্তারিত জানাব।’


পাকিস্তনের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে উজবেক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তান (আইএমইউ)। উজবেকিস্তান ছেড়ে এই ভিনদেশে পাকিস্তানি জঙ্গিদের ‘জেহাদ’-এ শরিক হয়ে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে চাইছে আইএমইউ। যেকোনো জেহাদের পাশে দাঁড়ানোকে তাদের নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করছে ওরা। প্রসঙ্গত করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছিল আইএমইউ। এ কথা তারা নিজেরাই বলেছে। আইএমইউ দীর্ঘদিন ধরেই কট্টরপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে অবস্থানরত বিদেশি জঙ্গিদের অনেকেই আইএমইউ-এর সদস্য। ১৯৯৮ সালের আগস্টে উজবেক জঙ্গি গ্র“পটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের মূল লক্ষ্য উজবেকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইসলাম কারিমভের ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার উৎখাত করে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট কারিমভের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের এক পর্যায়ে আইএমইউ সদস্যরা নিজেরাই উৎখাত হয়ে চলে আসে আফগানিস্তানে। এর পর থেকে আল-কায়েদা ও তালেবান জঙ্গিদের মিত্র হিসেবে আইএমইউ পা রাখে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের দুর্গম পার্বত্য এলাকা উত্তর ওয়াজিরিস্তানে। উপজাতি অধ্যুষিত পাকিস্তানের এই পার্বত্য এলাকায় উজবেক যোদ্ধার সঠিক সংখ্যা কত তা কেউ বলতে পারে না। আনুমান করা হয়, কয়েক হাজার। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে আইএমইউ-এর ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি রয়েছে পাকিস্তানে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তানে হামলা চালায় ২০০১ সালে। মূলত তখন আইএমইউ যোদ্ধারা তালেবান জঙ্গিদের সমর্থন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত বিমান হামলায় কোনো রকমে টিকে যায় এই উজবেক গ্র“পটি। কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়ে মারাতœকভাবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তারা আবারও সংগঠিত হয় পাকিস্তানের উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে। পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে আইএমইউ। গ্র“পের জঙ্গিদের অনেককে পরে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের দেহরক্ষী করা হয়। এই উজবেক জঙ্গিরা তালেবান জঙ্গিদের চেয়ে শিক্ষায় ছিল এগিয়ে। সেই সঙ্গে ছিল সাবেক সোভিয়েত প্রশিক্ষণ। স্বাভাবিকভাবে রণকৌশলে তারা ছিল অন্য জঙ্গিদের চেয়ে খনিকটা এগিয়ে। ২০০৬ সাল থেকে আইএমইউ জঙ্গিরা পকিস্তানি সামরিক বাহিনীর উপর বেশ কয়েকটি হামলা চালায়। তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি বেসামরিক লোকজনও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজবেক জঙ্গিরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর প্রথম হামলা চালায় ২০০৭ সালের মার্চে। মূলত সেই থেকে শুরু হয় পকিস্তানি সৈন্য ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা। বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলাও চালায় উজবেক জঙ্গিরা। এছাড়া কয়েক বছরে তারা অনেক উপজাতীয় নেতাকেও হত্যা করে। ২০০৭ সালের রেড মসজিদ অবরোধে উজবেক জঙ্গিরা অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ২০১২ সালে তারা পেশোয়ার বিমানবন্দরে হামলা চালায়। এছাড়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেও বেশ কয়েকটি আতœঘাতী হামলা চালায়। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান জঙ্গিদের শক্তি বৃদ্ধির পেছনের কারণ হলো, উজবেক জিহাদি ও আরও কিছু বিদেশি দলছুট জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সখ্য। ওয়াাজিরিস্তান থেকে টেলিফোনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তানের একজন তালেবান কমান্ডার বলেন, ‘উজবেক জঙ্গি দলের অন্যতম শাখা ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তান (আইএমইউ) আমাদের বড় শক্তি।’
তালেবান নেতা মোল্লা নাজির ২ জানুয়ারি ২০১৩ পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের ওয়াানা এলাকার কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। মোল্লা নাজির অন্যান্য তালেবান নেতার তুলনায় কিছুটা নরম থাকায় নিজ গোষ্ঠীর লোকজনের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। মোল্লা নাজিরের মৃত্যু পাকিস্তানি তালেবানের জন্য একটি বড় ধরনের আঘাত। আফগান ও পাকিস্তানি তালেবানের অসময়ে আশীর্বাদস্বরূপ ছিলেন মোল্লা নাজির। দক্ষতার সঙ্গে তিনি অভ্যন্তরীণ নানা কোন্দলের অবসান ঘটান। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের ভেতর বহিরাগত উজবেক জঙ্গিরা বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তানের জঙ্গিরা পাকিস্তানিদের হত্যা করতে থাকে। স্থানীয় ওয়াজির উপজাতির দুই শতাধিক বর্ষীয়ান নেতাকে তারা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সে বছর উজবেক জঙ্গিদের দমনে লড়াই শুরু করেন মোল্লা নাজিরের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা। তাদের সহায়তা করেন ওয়ানা এলাকার পাকিস্তানি সেনারা। উজবেক জঙ্গিদের বিতাড়িত করার কারণে মোল্লা নাজির পাকিস্তান সরকারের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। মোল্লা নাজিরের মৃত্যুর ঘটনার তালেবান অধ্যুষিত এলাকায় নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দিচ্ছে। যা পাকিস্তানের পরিস্থিতিকে আরো টালমাটাল করে তুলেছে। অনেকে মনে করছেন, নাজিরের মৃত্যু ঘটনা শান্ত তালেবানকে নতুন করে সহিংস ঘটনা ঘটাতে উসকে দিয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা বেড়েছে।
তালেবানের হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাকিস্তান।তালেবান জঙ্গিরা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের উপজাতীয় অঞ্চলে ক্ষমতাসীন আফগান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই জঙ্গি গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য হামলার বিবরণ তুলে ধরা হলো- ১০ অক্টোবর ২০০৯ : সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টারে হামলা চালায় সামরিক পোশাক পরিহিত ১০ জন তালেবান জঙ্গি। এতে এক ব্রিগেডিয়ার ও লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ ৬ জন সেনাসদস্য নিহত হয়। ২২ মে ২০১১ : পিএনএস মেহরান ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে সেনাসদস্যসহ ১৭ জন নিহত হয়। ১৬ ঘণ্টার ওই আক্রমণে করাচি নৌঘাঁটির একাংশ ধ্বংস হয়ে যায়। তালেবান ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১১ সালের মে মাসে অ্যাবোটাবাদে মার্কিন হামলায় ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে ওই হামলা চালিয়েছে তারা। ১৬ আগস্ট ২০১২ : পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ বিমান ঘাঁটি মিনহাজে হামলা চালায় জঙ্গিরা। সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন সেনাসদস্যসহ ৮ জঙ্গি নিহত হয়। তালেবান ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ : বাবা খান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ জঙ্গি, ২ পুলিশ সদস্য ও ৩ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। বিমানবন্দর ১৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ৮ জুন ২০১৪ : করাচি বিমানবন্দরে পুরনো টার্মিনালে হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। সেনাবাহিনী তালেবানের বিরুদ্ধে অপারেশন চালালে সংঘর্ষে ১২ জঙ্গিসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়। ২ নভেম্বর ২০১৪ : ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের একমাত্র সীমান্ত ক্রসিং ওয়াগাহতে আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়। তালেবানের দুটি শাখা ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। অন্যদিকে আফগনিস্তানে সাধারণ মুসলমানদের যথেচ্ছভাবে হত্যা করার অসংখ্য নজির রয়েছে এই তালেবান জঙ্গিদের। ১৯৯৮ সালের গ্রীষ্মে উত্তরের বৃহত্তম শহর মাজার-ই-শরীফে এ গণহত্যা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। ৮ই আগস্ট সকাল ১০টায় তারা প্রবেশ করে এবং দুই দিন মাজার-ই-শরীফ-এর অলিগলি সর্বত্র ঘুরে বেড়ায় পিকআপে করে। মেশিনগানের সাহায্যে ছুড়তে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। ডানদিন-বামদিক গুলি ছুড়তে থাকে যা কিছু সচল, যা কিছু নজরে আসে সবকিছু লক্ষ্য করে। দোকান মালিক, ঠেলা চালক, বাজার করতে আসা মহিলা ও শিশু এমনকি ছাগল গাধা কোন কিছুই বাদ যায় না তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে। ৮০০০-এর বেশি নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষ সেই সময় তালেবানদের নৃশংসতায় প্রাণ হারায়। তালেবানরা ঐ মৃতদেহগুলো কবর দিতেও বাধা দেয়। পরবর্তী ছয়দিন অবধি মৃতদেহগুলি পড়ে ছিল। যেগুলো তীব্র গরমে পঁেচ উঠে এবং দেহগুলো কুকুরের খাদ্যে পরিণত হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী, তালেবানদের বোম্বিং ও অন্যান্য আক্রমণে বহু সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সাল থেকে তাদের এই আক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং অন্তত ৩৫০টি সশস্ত্র আক্রমণে ৬৬৯ জন সাধারণ আফগান নাগরিককে হত্যা করে তারা।
পাকিস্তানের পেশোয়ারের স্কুলে নৃশংস হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কলকাতার শতাধিক আলেম বিবৃতি দিয়েছিল। তারা এ সময়ে উল্লেখ করেন, মুসলমান কখনো জঙ্গি হতে পারে না, তেমনি জঙ্গিরাও কখনও মুসলমান না। হাদীস শরীফ-এ আছে, ‘মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ঈমানহীনতার কারণেই নিরীহ মুসলমানদের বোমা মেরে হত্যা করতে বিন্দু মাত্র হাত কাঁপে না এই তালেবান জঙ্গিদের। হাদীস শরীফ-এ আছে- ‘যে বিনা কারণে কোন মুসলমানকে হত্যা করল সে কুফরী করল।’ সুতরাং শরীয়ত মোতাবেক জঙ্গি তথা তালেবানরা কাফির।
এদিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে পাকিস্তানি সেনারা জঙ্গিদের মদদ দিয়ে থাকে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা পাক সেনাবাহিনী কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে বলা যায়। পেশোয়ারে নির্মম ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পর তালেবান জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করেছিল সেনাবাহিনী।  অভিযানে তালেবান কমান্ডার সহ শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে বিন্দুমাত্র সহ্য করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ ঘোষনা দেন। কিন্ত পরবর্তী দৃশ্যপট অন্যরকম হয়ে যায়।  পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসার পর ফের জঙ্গিদের সহিংস তৎপরতায় আইএসআই সেই আগের মতোই নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে? পৃথিবী থেকে তালেবান অধ্যায়ের সমাপ্তি কখন হবে এটাই এখন দেখার বিষয়।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.