--- বিজ্ঞাপন ---

সংঘর্ষ চলছে,বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর

0

সংঘর্ষ চলছে

৩৭০ ধারা বিলোপের পর থমথমে কাশ্মীরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে৷ জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে রাজনৈতিক নেতা-সহ ১০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতারও করা হয়েছে৷ বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীরে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর খবর পুলিশ নিশ্চিত করেছে৷ কমপক্ষে ৬ জন হাসপাতালে ভর্তি৷ তাঁদের শরীরে গুলির ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। গোটা জম্মু-কাশ্মীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে৷ মোবাইল পরিষেবা, ইন্টারনেট নেই৷ ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র খবরে বলা হয়, ১০০ জনের বেশি গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন৷

বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর

ভারত শাসিত কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দিত সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ, তা বিলোপের একদিন পরেও ওই এলাকা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। রাজ্যের টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ রোববার সন্ধ্যায়ই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং সেগুলো এখনও ঠিক করা হয়নি। কাশ্মিরের রাস্তায় হাজার হাজার সেনা টহল দিচ্ছে।

কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে নেয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এমন ঘোষণায় সেখানকার মানুষ কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, সেবিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। স্থানীয় নেতাদের এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে।

ভারত শাসিত কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের বিবিসি সংবাদদাতা আমির পীরজাদা সোমবার দিল্লির প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের অন্যান্য অংশে কী হচ্ছে তা কেউ জানে না। আমরা কারো সাথে কথাও বলতে পারছি না। মানুষ ভীষণ চিন্তিত। তারাও জানে না আসলে এখন কী হচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে।’

ভারতের অন্যান্য স্থানে থাকা কাশ্মিরিরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং সেবিষয়ে তাদের শঙ্কার বিষয়ে জানিয়েছেন। দিল্লিতে থাকা এক ছাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন যে তিনি স্থানীয় পুলিশের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন – কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

অনেক কাশ্মিরি মনে করেন, সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত, সেটিই ছিল রাজ্যটির ভারতের অংশ থাকার পেছনে প্রধান যুক্তি। আর ওই অনুচ্ছেদ বিলোপের মাধ্যমে দিল্লির সাথে কাশ্মির অঞ্চলের সম্পর্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপরিবর্তনীয়।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ কাশ্মির রাজ্যকে বিশেষ ধরণের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার সুযোগ দিত যার ফলে তারা নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন প্রণয়নের অধিকার রাখতো। যদিও পররাষ্ট্র বিষয়ক সিদ্ধান্ত, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল কেন্দ্রীয়স সরকারের হাতে।

যার ফলে, জম্মু ও কাশ্মির নাগরিকত্ব, সম্পদের মালিকানা এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আইন নিজেরা তৈরি করার ক্ষমতা রাখতো। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষকে জম্মু ও কাশ্মিরে জমি কেনা এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা থেকেও বিরত রাখতে পারতো ওই অনুচ্ছেদের বদৌলতে। ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মিরের অধিকার দাবি করলেও দুই দেশই রাজ্যটির কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
ভারত শাসিত কাশ্মিরে অনেকদিন ধরেই বিদ্রোহ হয়ে আসছে যার ফলে এখন পর্যন্ত বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

ভারতের সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুচ্ছেদ ৩৭০ এর বিলোপের ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই কাশ্মির উপত্যকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

সংসদে ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত দশ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। পর্যটকদের ওই এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদেরও নির্দেশ দেয়া হয় ঘরে ফিরে যেতে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কোন পরিকল্পনা সম্পর্কে কোন ইঙ্গিতও দেয়া হয়নি।

ওই অঞ্চলে থাকা বিবিসি সংবাদদাতা জানান, স্থানীয়রা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কয়েকমাসের খাবার মজুদ করে রাখেন। সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে ধারণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য স্যাটেলাইট ফোন বরাদ্দ করা হয়। রোববার রাতে দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দী করার সময়ই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।

সেসময় থেকে ওই অঞ্চল কার্যত পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে কোনো কিছুরই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র ঘোষণার পর অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা কখন ঠিক হবে, সেবিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি।

তবে স্থানীয়ভাবে পাওয়া খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষকে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। সূত্র: বিবিসি

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.