--- বিজ্ঞাপন ---

নাসার বিজ্ঞানী বাংলাদেশী কন্যা মাহমুদা

0

বাংলাদেশে জন্মে বিশ্ব সম্পদে পরিণত হয়েছেন এমন সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তাঁদের কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাক, আজকের বাংলাদেশ প্রস্তুত হতে থাক ভবিষ্যতের সম্পদ তৈরির।

বাংলাদেশি মাহমুদা সুলতানা যিনি নাসার বর্ষসেরা বিজ্ঞানী নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে কর্মরত অবস্থায়। অবশ্যই এটা পুরো বাংলাদেশের জন্য, বাঙ্গালীদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার।

২০১৭ সালের কথা। বিশ্বসেরা গবেষণা সংস্থা নাসার প্রধান স্পেস রিসার্চ ল্যাবরেটরি গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারস  আইআরএডি (ইন্টারনাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ইনোভেটর অফ দ্যা ইয়ার ঘোষণা করা হল। উঠে এলো এক তরুণ বাংলাদেশী নারীর নাম – মাহমুদা সুলতানা। তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্র মহাকাশযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী পরিচিত পেয়ে গেলেন। সেই সাথে মিলল আরও পুরষ্কার।

এম আইটি এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন আলোক তরঙ্গ ডিটেক্টর নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। থ্রিডি প্রিন্টারকে আরও সহজ করার জন্য তাঁর এ আবিষ্কারকে Groundbreaking বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। তবে উদীয়মান এ প্রতিভাবান নারী বিজ্ঞানী হুট করে কিছু করে ফেলেননি। নাসাতে কর্মরত ছিলেন ২০১০ সালে  ছাত্রজীবন থেকেই বলা যায়।

শুরু করা যাক মাহমুদার ছোটবেলা থেকে। জন্মেছেন বাংলাদেশের পাবনাতে। বেড়ে উঠেছেন এদেশের আলো-বাতাস আর মাটিতেই। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনা ও রংপুরে। বাবা গোলাম জাকারিয়া ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। স্বামীর ট্রান্সফারের চাকরি হওয়ায় মেহেরুন নেসা শিশু মাহমুদাকে নিয়ে রাজশাহী বাবার বাড়িতেই থাকতেন। সেখানকার স্কুলেই মাহমুদার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়। এরপরে, কর্মস্থল রংপুরে পরিবর্তন হওয়ায় চলে যান সেখানে। রংপুরে সম্পন্ন করেন মাধ্যমিক শিক্ষা। এরপরে তাঁরা পুরো পরিবার সহ  ইমিগ্রেশন নিয়ে চলে যান আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে। সেখানে মাহমুদা লা মিরাডা হাইস্কুলে পড়াশুনা করেন।

তাঁর বড় চাচা ছিলেন এমস রিসার্চ সেন্টারে ফিজিসিস্ট হিসেবে কর্মরত। ফলে স্কুল জীবন থেকেই নাসার প্রতি ছিল অশেষ কৌতূহল ও ভালবাসা। নাসার বিভিন্ন গবেষণা ও অর্জন তাকে উদ্বেলিত ও আগ্রহী করেছে। তাই নাসার ব্যাপারে সমবয়সী অন্যান্যদের চেয়ে বেশি আপডেটেড থাকতেন।

ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ আন্ডার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরপরই বিখ্যাত বেল ল্যাবরেটরিতে রিসার্চ অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। নাসার স্বপ্ন পূরণ হল ২০১০ এ এসে। এসময় তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে পিএইচডি করছিলেন। এক জব ফেয়ারে মাহমুদা নাসার গডার্ড ডিরেক্টর সিস্টেম ব্রাঞ্চে জবের অফার পেয়ে যান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই গ্রাফেন নিয়ে কাজ করেন তিনি। কার্বনের এই বিশেষ রূপ কোয়ান্টাম ডট আকারে ব্যবহার করে আলোর কিছু বিশেষ রূপ ধারণ করা হয়। এটা সূর্যের করোনার ছবি তুলতে সহায়তা করে। তবে কোয়ান্টাম ডট ব্যবহার করে তা দিয়ে একটি পুরো সেন্সর তৈরির কাজটি বেশ কঠিন ছিল। থ্রি ডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে ২০ বাই ২০ কোয়ান্টাম ডটের ছক সমৃদ্ধ সেন্সর তৈরি করে তাঁর মাধ্যমে করোনার ছবি তোলার জন্য প্রয়োজনীয় তরঙ্গ ধারণ করা যায়, এটা প্রমাণ করার জন্যই তাকে নাসা পুরস্কৃত করে।

এই গবেষণার পাশাপাশি বর্তমানে ন্যানো টেক সম্মেলনে নাসার প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি গোডার্ডের ইন্সট্রুমেন্ট ও পোলোড  সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রাঞ্চের অ্যাসোসিয়েট ব্রাঞ্চ হেডের দায়িত্ব পান তিনি। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর আবিষ্কার পরবর্তী প্রজন্মের কিউবস্যাট ও অন্যান্য মিশনের যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করতে পারবেন।

মাহমুদার কাজ ও অর্জনে নাসায় তাঁর সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতনরা উচ্ছ্বসিত, প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তাকে।  নাসা গোডার্ডের চিপ টেকনোলজিস্ট পিটার হিউস পত্রিকার এক সাক্ষাতকারে বলেন,

” মাহমুদা নাসায় যোগদান করায় আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি। শুরু থেকে মাহমুদা নিজেকে কর্মঠ ও বুদ্ধিমতী হিসেবে প্রমাণ করেছেন।“

সিনিয়র টেকনোলজিস্ট ফর স্ট্রাটেজিক ইন্টেগ্রেশন টেড সোয়ানসন বলেন,

“ মাহমুদা সবসময়ই সর্বশেষ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং তাঁর সহকর্মীদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রযুক্তি আরও কতদূর এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে সচেষ্ট ছিলেন। এছাড়া কাজের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ জোগাড় করতেও সে পিছপা হয়নি। সব মিলিয়ে তাঁর মাঝে একজন সেরা গবেষকের সব গুনই রয়েছে।“

পুরষ্কার ঘোষণার সময় মাহমুদা সম্পর্কে বলা হয়,

“Mahmuda has distinguished herself as a tenacious, creative thinker, impressing virtually everyone with her technical acumen and drive”

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী ওয়েবসাইটের নাসা সংক্রান্ত পাতায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সাক্ষাৎকার।

https://technology.nasa.gov.features.sultana.html

যথাযথ সুযোগ পেলে মাহুমুদার মত বিশ্বখ্যাত তরুণ বিজ্ঞানী এদেশেই তৈরি হতে পারে। তবে এজন্য পেরোতে হবে আমাদের আরও বহু পথ। বাংলাদেশে জন্মে বিশ্ব সম্পদে পরিণত হয়েছেন এমন সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তাঁদের কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাক, আজকের বাংলাদেশ প্রস্তুত হতে থাক ভবিষ্যতের সম্পদ তৈরির।###সূত্রঃ তারামন,রির্পোট-শর্মা লুনা।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.