--- বিজ্ঞাপন ---

মানবদেহে ক্ষতিকর বিষাক্ত প্রাণী খাদ্য দেশে ঢুকছে

0

কাজী আবুল মনসুর
ফার্মের মুরগি এবং কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাছ মোটাতাজা করনের জন্য বাংলাদেশে আমদানি হচ্ছে মানবদেহের বিষ হিসেবে খ্যাত ‘বোভাইন এবং প্রোসিন’ নামের ক্যামিকেল মিশ্রিত ‘মিট এন্ড বোন মিল’। আমদানি হচ্ছে ‘ফিস মিল এবং ফিস ফিড’ নামে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের চালান নিয়ে আসছে এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী। আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং পরীক্ষাগারের এক শ্রেনীর দুর্নীতিবাজ পরীক্ষদের সহায়তায় এগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত এসব জিনিষ ব্যবহার করে ফার্মের মুরগি ও মাছ সহজেই বড় করা যায়। এসব খাদ্য দামের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকাতে সাধারন মানুষ বাজার থেকে কিনছে। আর নীরবে আক্রান্ত হচ্ছে জটিল রোগে। অথচ দুর্নীতিবাজরা দেখে শুনে এগুলো খালাস করছে। আর এগুলো খালাসের সুপারিশও করে যাচ্ছে।

এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ থাকলেও নির্বিকার প্রশাসন। বড় আকারে কিছু চালান ঢাকার ‘আইসিডিডিআরবি’র রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ঠেকে গেলে প্রশাসনের টনক নড়ে। প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের এসব বিষাক্ত কাচাঁমাল ছাড় করানোর জন্য আমদানিকারক হাইকোর্ট পর্যন্ত যায়। একের পর এক মামলা করে। শেষপর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার গত ২২ আগষ্ট এটর্নী জেনারেলের বরাবরে একটি চিঠিতে ‘রাসায়নিক পরীক্ষায় উক্ত পণ্যে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থেও মিশ্রন রয়েছে বলে জানায়’। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে প্রয়োজনে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবার প্রস্ততি নিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘ফিশফিড বা ফিশমিল’ নামে মানবদেহে ক্ষতিকর পণ্য দেশে আসছে। কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ এক শ্রেনীর কর্মকর্তাও সহায়তায় এগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে। এসব ক্ষতিকর জিনিষ দিয়ে খাদ্য তৈরি করে গরু, ফার্মের মুরগি এবং মাছের উপর প্রয়োগ বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। যত মোটা ততই লাভ। দ্রুত বৃদ্ধি হয় বলে বাজাওে মুনাফা বেশি। তাই চক্রটি ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য তৈরি কওে আসছে বছরের পর বছর ধরে। এসব বিষয় ক্রমশ বেরিয়ে আসতে থাকলে সরকার এ ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে। ফিশফিড বা ফিশমিলের ঘোষনা দিয়ে ‘মিট এন্ড বোন মিল’ বস্তুও উপর নজরদারি শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রোমেক এগ্রো এন্ড ফিড প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৭ হাজার ৭২০ কেজি ফিশফিড আনলে তা পরীক্ষাকালে দেখা যায় এতে ক্ষতিকর ‘বোভাইন এবং প্রোসিন’ নামক ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। তারা চালানগুলো খালাসের জন্য আদালতে যায়। আদালতের এটর্নি জেনারেলকে বিষয়টি অবহিত করেন কাস্টম কমিশনার। ফলে এগুলো আটকে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিকারক চালানটি খালাসযোগ্য বলে প্রথমে ছাড়পত্র দেয় আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রক দফতরের চট্টগ্রামস্থ প্রধান অনুপ কুমার সাহা। অথচ তিনি তা করতে পারেন না। গত ৮ আগষ্ট অনুপ কুমার সাহা স্বাক্ষরিত একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘আমদানিকারকের সূত্রোক্ত আবেদন পর্যালোচনা এবং আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮ এর অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এর বিধান মোতাবেক আইনানুগ ও ন্যায়সঙ্গত একটি সিদ্ধান্ত দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় স্থানীয় আইটিসি কমিটি কতৃক বিগত ৪ আগষ্ট তারিখে ২৬.০৩.১২০০.০০১.১৬.০৪৯.১৯/৫৭ সংখ্যক পত্র প্রেরন কওে পোল্ট্রি রিসার্স এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিটিআরটিসি) চট্টগ্রাম থেকে নমুনা টেস্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করে। উক্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা কওে তা বিসিএসআইআর, ঢাকা এর টেস্ট রিপোর্ট এবং পিআরটিসি ল্যাব, চট্টগ্রাম এর টেস্ট রিপোর্ট অনুরুপ বা কাছাকাছি মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় পণ্য চালানটি (ফিশ ফিড) খালাসযোগ্য মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হলো’।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, শুধু এ প্রতিষ্ঠান না এ ধরনের পণ্য আমদানির সাথে জড়িত আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল কন্টেনারে এ ধরনের পণ্য এনে খালাসের জন্য জমা কওে রেখেছে। ইতিমধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য খালাসের জন্য হাইকোর্টে রীট করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ঢাকার ফিশ টেক বিডি লিমিটেড করেছে ৪টি রীট। তাদের রয়েছে প্রায় ১০০ টন মতো পণ্য, ম্যাগনিফাই এগ্রো লিমিটেড করেছে ৩টি রীট। তাদেও রয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার কেজি, এডভান্স এগ্রোটেক লিমিটেড (১ লাখ ৩৮ হাজার কেজি), মিশাম এগ্রো (১৫০ টন), ময়মনসিংহের একোয়াটেক এগ্রো (১ লাখ ৮ হাজার কেজি), ভিএনএফ এগ্রো (৫০ হাজার কেজি) পণ্য। সবগুলো আমদানি হয়েছে ফিশ মিল ও ফিস ফিড ঘোষনা দিয়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব পণ্য পরীক্ষা কওে চট্টগ্রামস্থ বিসিএসআইআর খালাসযোগ্য বলে রিপোর্ট দেয়। কিন্ত এগুলো যখন ঢাকাস্থ আইসিসিডিডিআরবি’তে পরীক্ষা করা হয় তখন বিপরীত চিত্র উঠে আসে। পরবর্তিতে তিনটি পরীক্ষায় এসব পণ্যে ক্ষতিকারক ‘বোভাইন এন্ড প্রোসিন’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ আমদানিকারকের পক্ষ নিয়ে আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রক অনুপ সাহা, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক আকতার হোসেন এবং চট্টগ্রামস্থ বিসিএসআইআর এগুলো খালাসযোগ্য বলে মত দেয়। আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রক অনুপ কুমার সাহা রিপোর্টে ঢাকাস্থ আইসিডিডিআরবি স্বীকৃত মান নিয়ন্ত্রণকারী ল্যাব হিসেবে তালিকাভুক্ত নয় বলেও উল্লেখ করেন।
পুরো বিষয়টি জানতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সরওয়ার জাহানের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, কাস্টমসে এ ধরনের অনেক চালান আটকা রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে আমদানিকারকরা খালাসের চেষ্টা করছে। কিন্ত আমরা আদালতে পক্ষভুক্ত হয়ে এসব ক্ষতিকর জিনিষ যাতে বের করা না যায় তার জন্য চেষ্টা চালাবো। তিনি বলেন, যেব পণ্য তারা এনেছে তাতে আমদানি নিষিদ্ধ বোভাইন ও প্রোসিন রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব ক্যামিকেল সরকার অনেক আগে নিষিদ্ধ করেছে। এ ব্যাপারে আমরা কাস্টমস ও আদালতকে আমাদেও অবস্থান ব্যাখ্যা করবো। চট্টগ্রামের আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রক অনুপ কুমার সাহা এগুলো খালাসযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত দেয়ার বিষয়ে সৈয়দা সরওয়ার জাহানের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, তিনি কি অথোরিটি? কিভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেন।’
এসব ক্যামিকেলে কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে বিষয়টি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী এন্ড এ্যানিমেল সায়েন্স ইউনিভাসির্টির অধ্যাপক ড. পরিতোষ কুমার বিশ^াস বলেন,‘ এগুলো হচ্ছে অনেক উচ্চ লেভেলের প্রোটিন। যেগুলো সাধারন মোটাতাজা করনের জন্য ব্যবহার করা হয়। বোভাইনের কারনে উন্নত বিশে^ ‘মেট কাউ ডিজিজ’ নামের এক ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। এগুলো ব্যবহারের ফলে মানবদেহের নার্ভাস সিস্টেমে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যার ফলে মাথার নিউরনগুলো কমে যায়। মানুষ পশুর মতোন আচরণ করেন। সমাজে যাতে কোন প্রকার ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে তার জন্য এগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’####

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.