--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকাতে বছরে ২৭ হাজার আত্মহত্যা, ২৩ হাজার খুন, ৮৫ হাজার মানুষ নিজের বন্দুকে আঘাত পায়.আর ১ লাখ ৩৫ হাজার শিশু স্কুলে বন্দুক নিয়ে যায়…

0

আমেরকিার নাম শুনলে আমরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। মনের গোপন কুঠুরিতে উকি মারে ইশ্ একবার যদি আমেরিকায় যেতে পারতাম। আমাদের দেশে নানান অপরাধের খবর যেভাবে দ্রুত প্রকাশ হয়ে যায়, আমেরিকাতে কিন্ত সেভাবে হয় না। সেখানকার সাংবাদিকতা আর আমাদের দেশের সাংবাদিকতার মধ্যে অনেক তফাৎ। কারন আমেরিকানরা সাধারনত তাদের দেশের অপরাধ গোপন রাখতে পছন্দ করে। সারা বিশ্বে তারা ছড়ি ঘুরালেও তাদের দেশের অভ্যন্তরে কি হচ্ছে তা প্রকাশ করতে তেমন উৎসাহ কেউ দেখায় না। তবে আমেরিকার ভেতরের চিত্র নিয়ে আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী  মাইকেল প্যারেন্টি ‘কলংকিত সত্য’ নামের একটি বই বের করেছেন। সে বইটি পড়লে বুঝা যায় আমরা কতো সুখে আছি…

কাজী আবুল মনসুর

সিআইএ’র ওয়েব সাইটে বিশ্বের সকল দেশের তথ্য হালনাগাদ থাকে। আজকের বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ও এফবিআই’র দাপটের ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। মার্কিনীরা নিজের দেশের অপরাধের চেয়ে বাইরের দেশে সন্ত্রাসবাদ খুজেঁ বেড়ায়। নিজের দেশের পারমানবিক বোমা অক্ষুন্ন রেখে বাইরের দেশের পারমানবিক বোমা ধ্বংসের জন্য হুমকি ধমকী দিয়ে যায়। ওয়ান ইলেভেন’র টুইন টাওয়ার ধসের পর লাদেনকে খোঁজ করার নামে ধ্বংস করে আফগানিস্তান রাষ্ট্রটি।

নিরীহ জনগণের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর চড়াও হয় ইরাকের উপর। এখনও পর্যন্ত চলছে ধ্বংসলীলা। ইরাক নামের ঐতিহাসিক দেশটিও ধ্বংস করে দেয়া হয়। এভাবে চলছে ধ্বংসের খেলা। ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র দেশ আমেরিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ কারাগারে বন্দী থাকে। সে দেশের রাষ্ট্রনায়করা যখন ‘স্বাধীনতা-গণতন্ত্র’ রক্ষার নামে বিভিন্ন দেশের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, ডাক দেয় অনন্ত যুদ্ধের, তখন ঢাকা পড়ে যায় আমেরিকা নামক দেশটির অন্ধকার দিকটি।

সারা বিশ্বে ‘উন্নত’ ‘সভ্যতার ধারক বাহক’ বিশ্বের মোড়ল এ রাষ্ট্রটির প্রকৃত চেহারা আমাদের অনেকেরই অজানা। আজকে আমেরিকা বললে আমরা পাগল। সবাই ছুটে যেতে চায় সেখানে। যেন অবারিত সুখের হাতছানি। এ সুখের হাতছানিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মেধা পাচার হচ্ছে, ডিভি লটারিসহ নানা কান্ডের আমেরিকান লোভ আমাদের নেশাগ্রস্ত করে তুলছে। সারা বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উপর আমেরিকান দমন পীড়ন চলছে। মরছে নারী, শিশুসহ লাখ লাখ সাধারন মানুষ।

টেলিভিশনের পর্দায় আমরা দেখছি। আমেরিকা মারছে। আজকে আফগানিস্থান, কালকে ইরাক। এভাবে একের পর এক দেশ আমেরিকান সন্ত্রাসের বলি হচ্ছে। তারপরও আমেরিকা সভ্যতার ধারক ও বাহক। আমরা ছুটে যেতে চায় সেখানে। ‘মাইকেল প্যারেন্টি’ আমেরিকান একজন সাধারণ মানুষ। জন্মের পর থেকে তার পক্ষে আমেরিকার এসব ‘দাদাগিরি’ পছন্দ হতো না। ছোট বেলা থেকে আমেরিকান বিভিন্ন ধ্বংসলীলা দেখে দেখে প্যারেন্টি নিজ দেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকেন। লিখতে থাকেন একের পর এক মার্কিন সমালোচনা। এক সময় তার লেখা আমেরিকান সমাজে আলোড়ন তুলতে থাকে।

মার্কিনী সরকার তার ব্যাপারে নড়ে চড়ে বসে। শেষপর্যন্ত আমেরিকার মূলধারার বিরুদ্ধ মতাবলম্বন ও রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যারেন্টি আর পড়তে পারেননি। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের দেশ আমেরিকার সমাজের চিত্র নিয়ে মাইকেল প্যারেন্টি ১৯৯৬ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। ‘কলঙ্কিত সত্য’ নামের এ বই প্রকাশের পর আমেরিকা শুধু নয় সারা বিশ্বে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

যারা এ স্বপ্নের দেশে যাবার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাদের বেশিরভাগেরই অজানা এ চিত্র। কারণ আমেরিকার অভ্যন্তরে কি হচ্ছে তার বেশিরভাগ অজানাই থেকে যায়। কাগজে কলমে রেকর্ড থাকলেও মোড়ল রাষ্ট্রের এসব দুর্বলতা বিশ্বে খুব কমই প্রকাশিত হয়। ‘আমি বহু লোককে দেখেছি একটা কাজের জন্য কাদঁতে কাদঁতে এই ঘরের মেঝে ভিজিয়ে ফেলেছে। আমাদের আবেদন করতে হয়েছে কেউ এসে এদের আত্মহনন থেকে ঠেকাক। অনেকেই (বলে তারা) স্রেফ মরে যেতে চায়’..বলছিলেন একটি প্রাইভেট সোস্যাল এজেন্সির একজন পরিচালক। আর জায়গাটা ছিল গাড্সডেন, আলবামা।

১৯৯৬ সালে মাইকেল প্যারেন্টি যখন বইটি লিখছিলেন তখন আমেরিকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ কোটি আর এখন প্রায় ৩১ কোটি। প্যারেন্টি সারা বিশ্বের সভ্যতার ধারক-বাহক এই মোড়ল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরিণ কিছু নিষিদ্ধ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। যাতে বেরিয়ে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসল চিত্র। যা প্রকাশিত হতে পারতো আমাদের রাষ্ট্রের অপরাধের চিত্রের মতোন। কিন্ত খুব একটা হয় না। অতিতেও হয়নি এখনও হয় না। আমেরিকান মিডিয়াগুলোও বহিঃবিশ্ব নিয়ে যতটুকু সচেতন তার চেয়ে নিজের দেশে কি হচ্ছে তা নিয়ে তারা অচেতনই থাকেন। তাই মিডিয়াতে নিজের দেশের অপরাধ তেমন একটা প্রকাশ পায় না। আর এতগুলো অঙ্গরাজ্যে কে বা কার খবর রাখে।

কি রয়েছে তার ‘কলঙ্কিত সত্য’ বইয়ে। সেখানে তিনি প্রকাশ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে কোন একটি বছরে ‘২৭ হাজার মার্কিন নাগরিক আত্মহত্যা করে। ৫ হাজার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় (অনেকের মতে এ সংখ্যা আরও বেশি)। ২৬ হাজার মানুষ মারা যায় ঘরের ভেতরেই মারাত্মক দূর্ঘটনায়। ২৩ হাজার মানুষ খুন হয়। ৮৫ হাজার মার্কিন নাগরিক আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হন। এর মধ্যে পরে মারা যান ৩৮ হাজার। যার মধ্যে ২ হাজার ৬০০ জন শিশু। ১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন নাগরিক নানা রকম অপরাধের কবলে পড়েন যার মধ্যে রয়েছে শারিরীক আক্রমন, ধর্ষন, ডাকাতি, রাহাজানি, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি। ১ লাখ ৩৫ হাজার শিশু স্কুলে বন্দুক নিয়ে যায়। ৫৫ লাখ ব্যক্তি নানা অপরাধের জন্য গ্রেফতার হন।

১ লাখ ২৫ হাজার ব্যক্তি মাদকাসক্ত হয়ে অকালে মারা যান। ৪ লাখ ৭৩ হাজার ব্যক্তি তামাক ব্যবহার জনিত অসুস্থতায় অকাল মৃত্যুবরন করে যার মধ্যে ৫৩ হাজারই অধুমপায়ী। ৬৫ লাখ ব্যাক্তি নিয়মিতভাবে হিরোইনসহ নানা মাদক ব্যবহার করে, ৫ হাজার অবৈধ ড্রাগ ব্যবহার করে মারা যায়, ৩ কোটি ১৫ লাখ নাগরিক (প্রায় ৮ জনে ১ জন) গাজাঁ ব্যবহার করে আর এদের মধ্যে ৩ লাখ ভয়াবহ নেশাগ্রস্ত। ৩ কোটি ৭০ লাখ বা প্রতি ৬ জনে ১ জন নিয়মিতভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী ঔষধ ব্যবহার করেন-এদের বেশিরভাগই মহিলা। ডাক্তাররা এটা ব্যবহার করতে বাধ্য করে আর এগুলোর যোগান দেয় ঔষধ কোম্পানি। কারণ এ ব্যবসায় লাভ বেশি।

হাসপাতালে ভর্তি হন এমন ২০ লাখ ব্যক্তিকে খুবই মন নিয়ন্ত্রক ঔষধ দেয়া হয়। ৫ হাজার মানসিক নিয়ন্ত্রণকারী ড্রাগ ট্রিটমেন্টে মারা যায়। ২ লাখ লোককে ইলেকট্রিক শকের চিকিৎসা দেয়া হয় যেটা মাথায় ও স্নায়ু যন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। ৬ থেকে ১ হাজার জনের মস্তিষ্কের সামনের দিকে একটা অংশ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা, ২৫ লাখ মার্কিন নাগরিক অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ১ জন মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য চায়, ব্যবস্থাপত্র নেয় বা মানসিক ও আবেগজনিত সমস্যায় মেডিকেলে যায়। এতে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হয়। ১৩ লাখ ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাকালে আঘাতজনিত কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০ লাখ ব্যক্তি অপ্রয়োজনিয় শল্য চিকিৎসা গ্রহণ করে আর এর মধ্যে ১০ হাজার অপারেশনের কারনে মারা যায়। ১ লাখ ৮০ হাজার লোক ঔষধের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় মারা যায়, ১৪ হাজারেরও বেশি লোক বৈধ প্রেসক্রিপশনে দেয়া ঔষধের অধিক মাত্রার কারনে মারা যায়। ৪৫ হাজার মানুষ মোটরগাড়ী দূর্ঘটনায় মারা যায়। ১৮ লাখ মানুষ কম মারাত্মক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করে।

১ লাখ ২৬ হাজার শিশু বড় ধরনের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জম্মায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কারণ হচ্ছে বাবা মায়ের যত্নের অভাব, পুষ্টির অভাব,পরিবেশগত বিষাক্ততা, মায়ের ড্রাগ আসক্তি। ২৯ লাখ শিশু ভয়াবহ রকমের অবহেলা, অপমান, শারীরিক নির্যাতন ও ইচ্ছেকৃত না খাইয়ে রাখার শিকার হয়। ৫ হাজার শিশু পিতা-মাতা, দাদা-দাদি বা নানা-নানির হাতে প্রাণ হারায়।

৩০ হাজার শিশু নির্যাতন ও অবহেলার কারণে স্থায়ী রূপে শারিরীকভাবে অক্ষম হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশু নির্যাতনে প্রতি বছর যে সংখ্যক শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা ব্লাড ক্যান্সার, মোটর যান দুর্ঘটনা, নানা সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুও চেয়েও বেশি। ১৪ লাখ শিশু বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এদের বেশিরভাগই পিতা – মাতা এবং বয়স্কদের দ্বারা যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পথে ঘাটে যে সব যৌন নিপীড়িত শিশুদের পাওয়া গেছে তাদের শতকরা ৮৩ ভাগ শ্বেতাঙ্গ পরিবার থেকে আসা। দেড় লাখ শিশু হারিয়ে যাওয়ার খবর বিভিন্ন রির্পোটে পাওয়া যায়।

এদের মধ্যে ৫০ হাজারকে আর কখনই খুঁজে পাওয়া যায় না। এরা ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী। নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষ্য মতে, এদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যায়। সম্ভবত প্রতি বছর যত শিশুকে কবর দেয়া হয় তার অর্ধেকই নাম পরিচয়হীন। ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ নারী নির্যাতিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহিলাদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হলো ঘরের নির্যাতন এবং তাদের আঘাত পাওয়ার একমাত্র বৃহত্তম কারণ হলো এই নির্যাতন। ৭ লাখ নারী ধর্ষিত হয়। যা প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে ১ জন। ৫০ লাখ শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে আহত হয়, এদের মধ্যে দেড় লাখ কর্ম সর্ম্পকিত স্থায়ী অক্ষমতায় ভোগে যার মধ্যে রয়েছে পঙ্গুত্ব, পক্ষাঘাত, নষ্ট শ্রবন শক্তি, অন্ধত্ব ও বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ অক্ষমতা। ১ রাখ ভয়াবহ পেশা জনিত রোগে ভোগে যার মধ্যে আছে ফুসফুস কালো হয়ে যাওয়া, ক্যান্সার এবং যক্ষা। ১৪ হাজার কর্মস্থলে খুন হয়। এদের মধ্যে ৯০ ভাগ পুরুষ।

১ লাখ মানুষ পেশাজনিত রোগেভোগে অকাল মৃত্যুবরণ করে। ৬০ হাজার মানুষ কেবলমাত্র বিষাক্ত পরিবেশগত দূষণ অথবা খাদ্য, জল ও বায়ু দূষণের কারনে মারা যায়। ৪ হাজার মানুষ বিষাক্ত মাংস খেয়ে মারা যায়। ১০ লাখ লোকের এইডস আছে। যার মধ্যে আড়াই লাখ মারা গেছে। ১০ লাখেরও বেশি শিশুর আশ্রয় অনাথ আশ্রম বা জেলখানা।পরিবারের মধ্যে বসবাসকারী ১৮ লাখ প্রবীণকে গুরুতর নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

জোর করে বন্দি রাখা, প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার দেয়া, প্রহার করা হয় প্রবীণদের। ১ কোটিরও বেশি মার্কিন নাগরিক হাঁপানি রোগে ভুগছে। ৪ কোটি ব্যক্তি অথবা প্রতি ৪ জন মহিলার মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন,বেশিরভাগই তাদেও বয়স যখন ৯ থেকে ১২ বছর সে সময়কালে ঘনিষ্ট বা দূর সর্ম্পকের আত্মীয়দের যৌন নিপীড়িত হয়। এ ধরনের নির্যাতন স্মৃতিতে সারা জীবনের জন্য দুঃসহ হয়ে বারবার ফিরে আসে। (বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে)

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.