--- বিজ্ঞাপন ---

ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু বোমা ব্যবহার করবে পাকিস্তান: হুঁশিয়ারি  প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং): দিন যতই গড়াচ্ছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার বিরোধপূর্ণ অঞ্চল কাশ্মীর ইস্যুতে দু’দেশ ক্রমেই চরম সংঘাতের দিকে এগুতে চলেছে। ৫ আগস্ট কাশ্মীরের উপর বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এরপর ১৬ আগস্ট ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সেদেশের পরমাণু নীতি অর্থাৎ প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন। এবং সর্বশেষ সেনা প্রধানের পক্ষ থকে কড়া বক্তব্য আসছিল । এতে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আজাদ কাশ্মীর ভারত জোরপূর্বক দখল করে নেবে। এমনই এক  উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান  শনিবার ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু বোমা ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিলেন। আল-জাজিরা টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি দুদেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের জোর সম্ভাবনার  কথা সাফ জানিয়ে দিলেন।

ভারত ও পাকিস্তানের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কূটনীতিকগণ  মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থায় প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এর আগেও জানিয়েছিলেন এধরণের পরিস্থিতির কথা। দুদেশের মধ্যেকার উত্তেজনা পরমাণু যুদ্ধের প্রায় নিকটে পৌঁছেছিল জানান তারা। মার্কিন কূটনীতিক ব্রুস রিডেল তার লেখা “এভয়ডিং আর্মাজেডন: আমেরিকা, ইন্ডিয়া এন্ড পাকিস্তান টু দি ব্রিংক এন্ড ব্যাক” বইতে অতীতে দুদেশ পরমাণু যুদ্ধের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছেছিল জানান। কার্গিল নিয়ে সীমিত যুদ্ধ। এরও আগে পাকিস্তান পরমাণু ওয়ারহেড নিয়ে প্রসুÍতি নেয়। গোয়েন্দা উপগ্রহে পাওয়া তথ্য ও ছবির ভিত্তিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পাকিস্তানকে বুঝিয়ে সুজিয়ে সেযাত্রায় নিবৃত্ত করেছিলেন। বর্তমানেও একই পরিস্থিতি । দুদেশই  পরমাণু শক্তির দেশ। পাকিস্তান অতীতের মত পরমাণু অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের পত্র-পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরমাণু বোমা ব্যবহারের হুঁশিয়ারি সম্বলিত আল জাজিরা টিভিকে দেয়া সাক্ষাতকারের বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। ইমরান খান বলেন, কাশ্মীরই দুদেশের মধ্যে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। কাশ্মীর সম্পর্কে সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী ভারতের সঙ্গে আচমকা পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে যে আশংকা করেছেন সে ব্যাপারে  তার মতামত চাইলে আল জাজিরা টিভিকে ইমরান খান বলেন, এটা অবশ্যম্ভাবী। বর্তমানে কাশ্মীরে যা চলছে এটাকে একপ্রকার গণহত্যা বলা চলে। ৮০ লক্ষ মুসলিম অধিবাসী গত ৬ সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। তার ভাষায়, কাশ্মীরে আজ যা ঘটে চলেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজী জার্মানির সময়ের  পরে আর কোথাও  ঘটেছে কিনা তার জানা নেই।

ইমরান খান হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, প্রচলিত যুদ্ধে পাকিস্তান যদি হেরে যাওয়ার পর্যায়ে চলে যায় তখন বাধ্য হয়ে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে তার দেশ। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আল জাজিরা চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শনিবার দেয়া ঐ সাক্ষাতকারে ইমরান খান বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে তা পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারের দিকেই যায়। আমি যদি পাকিস্তানের কথা বলি, আল্লাহ না করুন, আমরা যদি যুদ্ধে হারের পর্যায়ে পৌঁছে যাই, তখন আমাদের কাছে দুটো রাস্তা খোলা থাকবে। হয় আত্মসমর্পণ করা, নইলে নিজেদের মৃত্যু পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা। ইমরান খান বলেন, ‘এরকম পরিস্থিতি হলে পাকিস্তান নিজেদের মৃত্যু পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য লড়াই করবে। আর যখন পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে, তার তীব্রতা অনেক ভয়ঙ্কর হয়।’

‘পাকিস্তান কখনই যুদ্ধ শুরু করবে না, এবং এটা পরিষ্কার যে আমি একজন শান্তিবাদী। আমি যুদ্ধবিরোধী। আমি বিশ্বাস করি যুদ্ধ কোনও সমস্যারই সমাধান করতে পারে না।’’ তিনি কাশ্মীর প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেন।

সাক্ষাতে ইমরান খান বলেন, ‘এই লড়াই যাতে না হয়, সেজন্যই একাধিকবার পাকিস্তান জাতিসংঘের কাছে এ বিষয়টি পেশ করেছে,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন,রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার দোরগোড়ায় গেছে পাকিস্তান। কারণ যদি এই যুদ্ধ হয়, তার প্রভাব কিন্তু শুধুমাত্র দু’দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তা গোটা পৃথিবীতে তার প্রভাব পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘ভারত পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এফএটিএফ-এ দেশটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পীস রিচার্স ইন্সটিটিউট (এসআইপিআরআই) এর ২০১৮সালের হিসেবে পাকিস্তানের হাতে পরমাণু ওয়ারহেড বোমার সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০টি। ভারতের আছে ১৩০ থেকে ১৪০টি।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস এর মতে, পাকিস্তানের নিকট দূরপাল্লার শাহীন-৩ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম।

পাকিস্তানের ‘নসর’ ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র তো রয়েছে সম্পূর্ণ ভারতকে লক্ষ্য করেই তৈরী করা হয়েছে । ভারতীয় বাহিনী আচমকা হামলা করলে পাকিস্তান সাথে সাথেই ঐ হামলাকারী বাহিনীর উপর ৭০ কিলোমিটার পাল্লার এই ‘নসর’ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে। অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। তবে এতে শহর কিংবা বেসামরিক জনপদের তেমন ক্ষতি হবেনা।পাকিস্তান দাবী করছে, এই ‘নসর’ ট্যাকটিক্যাল পরমাণুবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের সকল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারবে। এসকল পরমাণু ওয়ারহেড ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে একে অপরের প্রায় সব ক’টি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও নগরের কেন্দ্রস্থলেও আঘাত হানতে সক্ষম।

## শহীদ, ১৫.০৯.২০১৯ ইং।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.