--- বিজ্ঞাপন ---

দক্ষিন কোরিয়ায় বাংলাদেশীদের সব অর্জন নষ্ট হচ্ছে গ্রুপিং এর কারনে

0
ওমর ফারুক হিমেল, দক্ষিন কোরিয়া থেকে ##
আমি পুরো নয়বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী,বলতে পারেন আপাদমস্তক খেটে খাওয়া মানুষ। দক্ষিণ কোরিয়ায় কোরিয়ানদের রয়েছে ঈর্ষান্বিত অর্জন,পাশাপাশি  এই অর্জনে অংশী হয়েছে নানান দেশের প্রবাসীরা। ছোট এই উন্নত দেশটিতেও  বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত  অর্জন আকাশসমান। কেউ গবেষণায়, কেউ চাকরিতে, কেউ প্রযুক্তিতে।দূর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য,সমষ্টিগতভাবে কোনো ভালো অর্জন হয়নি বললে চলে , কোন প্রাণোচ্ছল উপমা নেই বললেই চলে, আমাদের আয়োজনে সংকীর্ণতা প্রচ্ছন্ন লক্ষণীয়।  অনৈক্য জাতীয় ক্যাসিনো। বড় কোনো প্লাটফর্ম নেই। সবাই মিলে উদ্যোগ নেয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে বহুধাবিভক্ত। যুৎসই প্রাণখোলা  বড় উদ্যোগের অভাবে বাংলাদেশের শৈলী সৌন্দর্য অনুপস্থিত। কয়েকটি বছরজুড়ে বাংলাদেশ উপস্থাপিত হচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোগে,এতে বাংলাদেশের টোটাল সংস্কৃতি,শিল্প, কৃষ্টি পরিপূর্ণ  ফুটে উঠছে না।কোরিয়াতে গড়ে উঠা সর্ববৃহত্তম সংগঠন  বাংলাদেশ  কমিউনিটিও দুইভাগে বিভক্ত, একই সাথে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও নিজেরা বহুধাবিভক্ত।
বাংলাদেশের দূতাবাস, সিউলের রাষ্ট্রদূত  আবিদা ইসলাম কয়েকবার চেষ্টা করে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে একই ছাতায় আনতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে,বাংলাদেশ  দূতাবাসেরও কৌশলগত ভুল রয়েছে। বাংলাদেশ  মিশনের নানা আয়োজনেও সব পক্ষকে একই ছামিয়ানায় নিচে  আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে  গোটা কোরিয়া দেখছে বিভক্ত বাংলাদেশকে।
অনৈক্যের সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি  উদাহরণ দেওয়া যাক। বাংলাদেশ  কমিউনিটি ইন কোরিয়ার এক পক্ষ  ভিন্ন ধারার  কিছু আয়োজন করলে অন্য পক্ষও এদেরকে অনুসরণ করছে। করছে,এক পক্ষ ঈদ পুর্নমিলনী করলে অন্য পক্ষ বাংলাদেশ কালচারাল  এসোসিয়েশনকে সাথে নিয়ে আয়োজন  করছে বৈশাখী  মেলা।তাছাড়াও রয়েছে ইপিএসভিত্তিক নানা সংগঠন।এদের মধ্য অন্যতম হলো ইপিএস বাংলা কমিউনিটি,ইপিএস স্পোর্টস  এন্ডওয়েলফার,ইপিএস বাংলা  ইন কোরিয়া। এই সংগঠনগুলোয় একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত,কেউ সাগরপাড়ে এক হাকার  প্রবাসী কে নিয়ে  ভ্রমণে গেলে, অন্য সংগঠন পরের মাসে দেড় হাজার প্রবাসীকে নিয়ে সাগরপাড়ে বিচ কনসার্টের আয়োজন করে, কোন সংগঠন ইফতারির জন্য কাতার চ্যারিটি ফান্ড থেকে টাকা কালেকশন করলে অন্য সংগঠন দরখাস্ত নিয়ে পরের সপ্তাহে কাতার দূতাবাসে হাজির।
একটি সূত্র জানায়, কাতার দূতাবাসের  একজন কর্মকর্তা নাকি বলে উঠলেন কোরিয়াতে বাংলাদেশী  কয়টি সংগঠন  আছে। কোরিয়া বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা ও কোরিয়ানরা  এক  বিভক্ত বাংলাদেশকে দেখছে। কোরিয়ার মাঠিতে এক হওয়ার বদলে,হচ্ছে বিভক্ত। কমিউনিটি গুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে  প্রবাসীরা। কিছুদিন আগে বৈশাখীতে চিত্রবিৎ হলো অন্য বাংলাদেশ  কোরিয়াতে  একই দিনে একই তারিখে পাঁচ জায়গায়  হয়েছে আলাদা বৈশাখী অনুষ্ঠান।  কোরিয়াতে বাংলাদেশীরা শুধু ভাবমূর্তি হারায়নি একই সাথে  হারিয়েছে জৌলুস, আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা,হারিয়েছে সম্ভাবনা,সামনে চলার প্রেরণা।  আয়োজনটি ঐক্যের ভিত্ মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারেনি, বরং নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
দক্ষিণ  কোরিয়াতে প্রায় পচিশটির মতো  সংগঠন রয়েছে । বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও বাদ যায়নি।  রয়েছে গান চর্চার সংগঠন ।রয়েছে মসজিদ ভিত্তিক,মন্দির ভিত্তিক সংগঠন।ইদানীংকালে  বেশি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থানা,গ্রাম এসোসিয়েশন।রয়েছে কয়েকটি দোকানভিত্তিক সমবায় প্রতিষ্ঠান।
সবচেয়ে কষ্ট দেয় , হৃদয়ে রক্তক্ষরণ  যখন দেখিএসব  সংগঠন নিয়ে দেশের মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে সামাজিক  যোগাযোগ  মাধ্যমে কুৎসা  রটাতে,একে অপরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে।কোরিয়ার মত প্রেষিত, পরিশ্রমী দেশে প্রত্যেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে,   নিজের রক্ত-ঘামের,মেধার,পরিশ্রমের, ত্যাগের  বিনিময়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত  হাড় ভাংগা পরিশ্রম করছে। কোরিয়ার মত মূল্যবান,সময়ের সমঝদার দেশে,  সেই সূর্যবীররা  নিজেদের মূল্যবান সময়, অর্থ ও শ্রম দিয়ে সংগঠন দাঁড়  করাচ্ছে। কিন্তু তা ছোট পরিসরে।যার যা মন চাই, তাই করতেই পারে, তা যদি হতো বৃহৎপরিসরে কতোনাই কল্যাণহতো। বৃহৎ  প্ল্যাটফর্মই বৃহৎ আয়োজন, বৃহত্তম উপস্থাপন হয়। হাসি, বেদনা খুনসুটি আদান প্রদান হয়। একে অপরের পাশে সম্মিলিতভাবে বর্ণিল দাঁড়ানোর সুযোগ  হয়। কিন্তু ফেসবুকে এত কুৎসা কেন, এত অনৈক্য কেন, কি লাভ, কখনো কি ভেবেছেন, এতে বাংলাদেশের গুড ব্রান্ডিং না ডিব্রান্ডিং হয়। কোরিয়ার মত শান্তিপ্রিয় দেশে কেন এত লাগালাগি?  এখানে মসজিদভিত্তিক ইসলামী সংগটন রয়েছে,এর মধ্য তাবলীগও বিভক্ত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন রয়েছে,রয়েছে এদের প্রত্যকের গ্রুপিং,উপগ্রুপিং।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোরিয়া  কি জন্য ? কি উপকারে আসবে?  দেশ থেকে আসার সময় লাগেজে করে রাজনীতি কেন আনতে হবে,মগজে করে দেশ থেকে রাজনীতি আমদানি করে কি লাভ?সবচেয়ে  অপ্রীতিকর তখনই লাগে সামাজিকভাবে প্রসিদ্ধ কিছু মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে হীনস্বার্থে সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হয়। কিছু কিছু নামে  বেনামে ভূয়া আইডি থেকে এই অপপ্রচার চলছে, অস্থির করে রেখেছে সামাজিক বন্ধনকে।এদের কুৎসা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সজ্জন কর্মবীর রাষ্ট্রদূত  আবিদা ইসলামও। অথচ বারবার চেষ্টা করেও তিনি কমিউনিটিগুলোকে এক করতে পারেনি। যারা প্রবাসে আছেন দেখবেন , কোন দেশ এভাবে বিদেশে রাজনৈতিক   শাখা খুলেনি। অনেকেই  কাজের চেয়ে  রাজনীতিকে উদ্দেশ্য বানিয়েছে। বরং যারা বাংলাদেশী  কোরিয়ান আছেন আপনারা কোরিয়ায়  মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন,এতে বাংলাদেশ সবচেয়ে উপকৃত হবে।   আসুন সবাই মিলে  কোরিয়ায়  একটি উজ্জ্বল বাংলাদেশকে তুলে ধরি। এর মাঝেও দেশের প্রতি আস্থা,আন্তরিকতা,  ভালোবাসায়  নিয়মিত  কিছু সংগঠনও খুবই ভালো ভূমিকা পালন করছে। শুধু তা-ই নয়, এমন অনেক বাংলাদেশিই কোরিয়ায়  আছেন, যাঁরা দেশের মর্যাদাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। দেশকে, দেশের প্রতাকাকেও সমুজ্জ্বল করছেন।
নীরবে-নিভৃতে  অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন,গবেষণায় সফল হয়েছেন,অনেকে কোরিয়ার নামীদামী  বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন,অনেক ইপিএস কর্মী কোম্পানী পরিচালনা করছেন,অনেক বাংলাদেশী ভাই, কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গড়ে তুলেছেন,কেউ সরকারী অফিসে চাকরি করছেন,কেউ এনজিওতে, কেউ কোরিয়ার গুগল অফিসে চাকরি  করছেন,মোট কথা, কিছুসংখ্যক মেধাবী মানুষ তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে দেশের পতাকা,দেশের পাসপোর্টের সম্মান বৃদ্ধি করছেন।কাজ করে চলেছেন।  আশা রাখছি,অচিরেই সকল প্রবাসী ভাইদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় কোরিয়ার মাটিতে সম্প্রীতি,ঐক্যর,সম্মীলনের বাংলাদেশের গোলাপ ফুঁটবে।সাইরাসের ভাষায় বলছি,যেখানে একতা আছে, সেখানে জয় অবশ্যম্ভাবী।
আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.