--- বিজ্ঞাপন ---

কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখি ভয়াবহতার আশংকায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ  পর্ব-২

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মানুষ ৬২ দিন ধরে কার্ফুতে অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেদেশের সিনেটর ক্রিস হোলেন এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ভারতে গিয়েছিলেন সেখানকার পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে। কিন্তু তাদেরকে কাশ্মীরে প্রবেশ  করতে দেয়নি ভারত সরকার। গত শুক্রবার রাজধানী নয়াদিল্লীতে সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে বর্তমানে তারা কাশ্মীরের পাকিস্তান অংশ সফর করছেন। পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক ‘দি ডন’ ও ‘নেশন’ ৬ অক্টোবর অনলাইন সংখ্যায় সিনেটর ক্রিস হোলেন এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সফরের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।  সিনেটর ক্রিস হোলেনের  প্রতিনিধি দলটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদ যান এবং সেখানে প্রেসিডেন্ট সরদার মাসুদ খানের সাথে সাক্ষাত করেন। মার্কিন প্রতিনিধিদলটি গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ঐ অংশে কার্ফু , গণগ্রেফতার, ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এসময় সিনেটর ক্রিস হোলেন  ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে কার্ফু প্রত্যাহার, আটককৃতদের মুক্তিসহ সেখানকার  জনগণের  মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ভারত সরকারের  প্রতি আহ্বান  জানিয়েছেন। পাকিস্তানের কাশ্মীর অংশ সফরকালে তার সাথে রয়েছেন সিনেটর ম্যাগী হাসানসহ অন্যান্য সফরসঙ্গী। ইসলামাবাদে মার্কিন চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স পল জোনস ও রোববার তার সাথে সফরে অংশ নেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল আমীর সফররত মার্কিন সিনেটরদের লাইন অব কন্ট্রোল সীমান্ত পরিস্থিতির সর্বশেষ বর্ণনা দেন বলে ডন পত্রিকা জানায়।

 

অবশেষে ৫০ বছর পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে  কাশ্মীর নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক

চীন ও পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর ভারত কার্ফু জারী করে ফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট সহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ায় অবরুদ্ধ  কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরী বৈঠকের আহ্বান জানায়। এ আহ্বানের প্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের ইতিহাসে গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবার কাশ্মীর ইস্যুটি নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় উঠল। বৈঠক শেষে বিবৃতিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কাশ্মীরের ভারতের একক ব্যাপার নয় এটি জাতিসংঘের বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার আওতাধীন বিষয়। যদিও ভারত বার বার কাশ্মীরকে নিজ দেশের আভ্যন্তরীন বিষয় বলে আসছিল। বিবৃতিতে দু’দেশকে জাতিসংঘের চার্টার মোতাবেক কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানায়।  এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টোনিও গুটারেস গত ৮ আগস্ট এক বিবৃতিতে কাশ্মীরের ভারত অংশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর তথাকথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল সম্পূর্ণ ব্যর্থ : বলছে সংবাদ মাধ্যম 

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের তথাকথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও  উত্তেজনার সূত্রপাত গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারী । ঐদিন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্নীরের এক বাসিন্দা আতœঘাতি  গাড়ী বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে  ৪০ জন ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী সদস্য নিহত হয় । ঘটনার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে । পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী গোষ্ঠী জয়স-ই-মুহাম্মদ এর দায়িত্বও স্বীকার করে নেয়। পাকিস্তান এ ঘটনার ব্যাপারে বলে যেহেতু এটা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্নীরেরই একজন বাসিন্দা করেছে । কাশ্মীরের  জনগণের উপর ভারতের নিষ্ঠুর আচরণ, নির্যাতনেরই বহি:প্রকাশ এবং এটা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুক্তিকামী জনগণই করেছে  বলে মন্তব্য করে। ভারত বরাবরই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হবে ইত্যাদি হুমকি দেয়।  এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারী ভোরে ভারতীয় বিমান হামলায় ঘটনায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বালাকোট নামক পাহাড়ী স্থানে ভারতের ভাষায় তথাকথিত  সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামের বিমান হামলা চালায়। হামলায় নয়াদিল্লী ইসরাইলের রাফায়েল নির্মিত প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন (পিজিএম)  নির্ভুল  লক্ষ্যভেদী  ক্ষেপণাস্ত্র   স্পাইস-২০০০  ব্যবহার করে। হামলার পরপরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে  দাবী করা হয় যে, জয়স-ই-মুহম্মদ নামের জঙ্গী গোষ্ঠির ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে ।

এবং দুই থেকে তিন শতাধিক জঙ্গী এতে নিহত হয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দাবী নিশ্চিত করে বলেন হামলায় নিহত জঙ্গীর সংখ্যা ২৫০। পত্রিকায় বিদেশী গণমাধ্যম ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা সংবাদটির খবর নিতে গিয়ে দেখতে পায় মূলত: ভারতীয় পাইলট ইসরাইলের আধুনিক স্পাইস লক্ষ্যভেদী ক্ষেপণাস্ত্র নিদ্দিষ্ট টার্গেটে না ফেলে পাহাড়ের জঙ্গলে নিক্ষেপ করে।  নিরপেক্ষ স্যাটেলাইট ‘প্ল্যানেট ল্যাব’ সংস্থার  ইমেজে দেখা গেছে, যে স্থানে জয়স-ই-মুহাম্মদ নামের জঙ্গী গোষ্ঠীর ঘাঁটিটি তা কার্যত: অক্ষতই রয়ে গেছে। ভারতীয় দাবী মোতাবেক দুই থেকে তিনশ জঙ্গী খতমের দাবীটিও মোটেও সঠিক নয়। জঙ্গলে ঐ হামলায় একজন সামান্য আহত হয়। রয়টার্স সংবাদ সংস্থা স্থানীয় হাসপাতাল এবং গ্রামে গিয়ে ঐ হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের চেষ্টায় খোঁজখবর নেন। ভারতের দাবী যেখানে ২৫০ থেকে ৩০০ জঙ্গী ঐ সার্জিকাল স্ট্রাইকে নিহত দাবী করা হয়েছে হাসপাতালে কোন আহত বা মৃতের হদিস পাননি তিনি। বৃটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বালাকোটের জাবা গ্রামের একজন স্থানীয় বাসিন্দার সাথে কথা বলেন ঐ বোমা হামলা সম্পর্কে । গ্রামবাসী  ভ্যান চালক আবদুর রশিদ বলেছেন, মরেছে তো কয়েকটি পাইন গাছ আর একটা কাক, আর কিছুই হয়নি। এত স্বাধীনতাকামী মরলো, আর একটা লাশও পাওয়া গেলনা- এটা হয় নাকি। ভারত বোমাগুলি লক্ষ্যস্থল থেকে এক কিলোমিটার  দূরে ফেলেছে এবং সেগুলি পাহাড়ের গাছে ও জঙ্গলে পড়েছে। সেখানে একটি কাকও  মরে থাকতে দেখেছেন তিনি। বিশ্বের সামরিক বিশ্লেষকদের কাছে তথাকথিত  সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এখন কার্যত: হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

 

ঐসময় মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ৩ মার্চ প্রকাশিত কলামে মারিয়া আবি হাবিব তো বলেই ফেলেছেন,‘আকাশ যুদ্ধে ভারত হেরেছে পাকিস্তানের কাছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  এশিয়ায় চীনের আঞ্চলিক আধিপত্য ঠেকাতে ভারতের মত অদক্ষ সামরিক বাহিনীর উপর ভরসা করছে।’ তিনি তার কলামে আরও উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সাথে মার্কিন সম্পর্কের এ অবনতির সুযোগে গত এক দশকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে নিয়েছে। যা এক দশক আগেও ছিল শূন্যের কোঠায়। অর্থ্যাৎ তখন মার্কিনীরা ভারতকে আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম দিতে অনীহা প্রকাশ করত।

নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে ভারতের বিশাল সামরিক বাহিনীকে একটি অদক্ষ সেকেলে উল্লেখ করে বলা হয় যে, এশিয়ার এই দুই চীর প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে গত প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এটিই প্রথম সরাসরি ভারতীয় বাহিনীর শক্তিমত্তা পরীক্ষার জন্য এটি ছিল উপযুক্ত সময়। ভারতের বিমান খোয়ানো ও পাইলট বন্দী  হতে দেখে ওয়াশিংটনের সামরিক পর্যবেক্ষকমহল হতভম্ব ও হতবাক। এদিকে বিবিসি স্যাটেলাইটে ভারতের দাবী অনুযায়ী কাশ্মীরের যে স্থানটিতে ভারত হামলা চালিয়ে জয়স-ই-মুহাম্মদ নামের জঙ্গী  গোষ্ঠীর আস্তানা ধ্বংস করেছে বলেছিল তারও একটি ছবি তুলে ধরে। এতে দেখা গেছে, ঐ স্থানের সবকিছু অক্ষত রয়েছে  ভারতীয় বাহিনী সেখানে বোমা না ফেলে জঙ্গলে বোমা ফেলেছে। (চলবে)

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.