--- বিজ্ঞাপন ---

তুর্কি সৈন্যরা মার্কিন হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেনা, ‘রাস আল আইন’ শহর কমান্ডোদের দখলে, কুর্দিরা  পালাচ্ছে

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম:  তুরস্ক বাহিনী ও তাদের সহযোগী  সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ)’র কমান্ডোরা ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ শুরুর শুরুর চার দিনের শেষে সাফল্যের সাথে গুরুত্বপূর্ণ শহর রাস আল আইনের কেন্দ্রস্থল দখল করে নিয়েছে। এ দখলের মধ্য দিয়ে মানিবিজ ও কামিশলি’র মধ্যেকার এম-৪ হাইওয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে কৌশলগত শহর ছিল এটি। অভিযানের  ১২ অক্টোবর শনিবার শেষ  খবরে জানা গেছে । রয়টার সংবাদ সংস্থা জানায়, কুর্দি পিকেকে ও অন্য দলের যোদ্ধারা প্রচন্ড গোলার মুখে  শরহরটিতে তাদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেছে। সেখানে মার্কিন ঘাঁটির একেবারে কাছে তুর্কি বাহিনীর গোলা এসে পড়েছে বলে শুক্রবার রাতে সিএনএন জানায়।এদিকে অভিযান চলাকালে মার্কিন একটি ঘাঁটির অতি কাছে গোলা এসে পড়ার পর ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষীপ্ত হয়েছে এবং তুরস্কের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে ‍দিয়েছে এসব নিষেধাজ্ঞার হুমকি মাথায় রেখেই তুরস্ক অভিযান শুরু করেছে। তুরস্ক লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে জানিয়েছে।  তুরস্ক ও তার  সমর্থিত এসএনএ’র যোদ্ধারা চারদিন আগে

৯ই অক্টোবর উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় অভিযান শুরু করে। তুরস্কের হিসাবে এ যাবৎ পিকেকের (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি)’র হামলায় সেদেশের  প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।  এই পিকেকে’কে  সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তুরস্কের অভিযোগ , অথচ পশ্চিমা দেশগুলো অতীতে তলে তলে এ সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে  অস্ত্রশস্ত্র  দিয়ে শক্তিশালী করে আসলেও আইসিস দমনের নামে এখন প্রকাশ্যেই পিকেকে’কে অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে । ন্যাটো জোটের দেশ হওয়া সত্বেও তুরস্কের জনগণের উপর পিকেকের বোমা হামলায় তারা নিন্দা জানাচ্ছেনা। বরং সন্ত্রাসী সংগঠন পিকেকে’কে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য ন্যাটো পশ্চিমা দেশ অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে শক্তিশালী করছে। আর সরবরাহ করা  এসব  অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পিকেকে এবং অন্যান্য কুর্দিরা মিলিতভাবে তুরস্কে নাশকতা এবং সীমান্তে ঘন ঘন চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে।   এসকল কারণেই পিকেকে  কুর্দি মিলিশিয়াদের হটিয়ে ‘সেইফ জোন’ বা নিরাপদ অঞ্চল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তুরস্ক অভিযান চালাচ্ছে এখন ।

তুরস্ক চায় ঐ তার সীমান্ত থেকে সিরিয়ার অভ্যন্তরে ৩০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে  উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বি  সেইফ জোনে তার দেশে কুর্দিদের দ্ধারা ঐ এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয়া ৪ লক্ষ সিরিয়ার শরণার্থীকে পুনর্বাসিত করা। উল্লেখ্য, তুরস্কে সিরিয়া থেকে আগত শরণার্থী সংখ্যা ৩৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ তুর্কি বাহিনীর অভিযানের তৃতীয় দিনে ৩৪২  কুর্দি বিদ্রোহী নিহত হয় এবং তুরস্কের ২ সেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। পিকেকের মর্টার হামলায় তুরস্কের সীমান্ত এলাকায়  শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোতে শরণার্থীর বন্যা বইয়ে দেবো  হুমকী তুরস্কের এরদোয়ানের

তুরস্কের বর্তমান অভিযানের সমালোচনা করায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচিপ তায়েফ এরদোয়ান হুমকী দিয়ে বলেছেন, তার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত  চুক্তি তিনি আর মানবেননা। সমালোচনা করলে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির দিকে ৩৬ লক্ষ শরণার্থীর বন্যা বইয়ে দেবেন। এদিকে ইইউর কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক তুরস্কের এরদোয়ানের হুমকির নিন্দা করলেও ন্যাটো সেক্রেটারী জেনারেল জেনস স্টোল্টেনবার্গ ১১ অক্টোবর শুক্রবার তুরস্কের আংকারায় পৌঁছেন। এবং তিনি দায়েশ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তুরস্কের প্রশংসা করেন। তবে তিনি অভিযানে তুরস্ককে সংযম দেখাতে বলেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফোন করেছেন। ইমরান এরদোয়ানকে বলেন, তুরস্ক যেমন কুর্দি সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে  তেমনি পাকিস্তানও বিদেশী মদদপুষ্ট সন্ত্রাসের হামলার শিকার। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে  ইসলামাবাদকেও   ৭০ হাজার মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে।

 

এই কুর্দিরা আসলে কারা? তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচিপ তায়েপ এরদোয়ান কেন সীমান্তে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পথ বন্ধ’ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন? তুরস্কের অভিযানের শিকার কুর্দি জনগোষ্ঠী কারা? তুরস্ক কেন কুর্দিদের হুমকি মনে করে?

অতীতের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তুরস্ক এবং সেদেশের কুর্দিদের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাসটা অনেক পুরনো। তুরস্কের জনসংখ্যার ১৫ থেকে ২০ ভাগ জাতিগতভাবে কুর্দি। কয়েক প্রজন্ম ধরে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ কুর্দিদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করেছে। ১৯২০ এবং ১৯৩০’এর দশকে কুর্দিদের বিক্ষোভের উত্থানের সময় অনেক কুর্দি পুনর্বাসিত হয়, কুর্দি নাম এবং পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, কুর্দি ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ ওচালান পিকেকে গঠন করেন, যাদের প্রধান দাবি ছিল তুরস্কের মধ্যে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠন।

 

তুরস্ক নিয়ন্ত্রাধীন কুর্দিস্তানের কুর্দিদের কিছু সংগঠন স্বায়ত্বশাসনের দাবি করছে। তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে স্বায়ত্বশাসনের দাবি রাষ্ট্রদোহীতার সামিল। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে দীর্ঘ ৩১ বছর লড়তে হয়েছে আঙ্কারাকে। পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওচালানকে ১৯৯৯ সাল থেকে কারাবন্দী করে রেখেছে তুরস্ক। তুরস্কের অভিযোগ, পিকেকের সঙ্গে সিরিয়ার কুর্দি সংগঠন কুর্দিশ পিপলস প্রটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) ঘনিষ্ঠ যোগসাজশ রয়েছে। এ অঞ্চলে কুর্দিরা নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তুরস্কের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০% কুর্দি।

কুর্দিস্তান চারভাগে বিভক্ত। তুর্কি কুর্দিস্তান ছাড়াও অপর তিনটি হচ্ছে ইরাকের উত্তরের কিছু অংশ (ইরাকী কুর্দিস্তান), দক্ষিণ-পশ্চিম ইরান (ইরানি কুর্দিস্তান) এবং উত্তর সিরিয়ার (সিরীয় কুর্দিস্তান)। ভৌগলিকভাবে কুর্দিস্তান অঞ্চলটি জগ্রোস পর্বমালার উত্তর-পশ্চিম অংশ এবং তোরোস পর্বতমালার পূর্বাংশ নিয়ে গঠিত। এছাড়া আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সামান্য কিছু এলাকাকেও কুর্দিস্তানের অন্তর্গত গণ্য করা হয়। ইরাকে ১৫%, ইরানে ১০% এবং সিরিয়ায় ৯% জনসংখ্যা কুর্দি। সংখ্যার হিসাবে তুরস্কে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ, ইরানে ৬০ থেকে ৮০ লাখ, ইরাকে ৬০ থেকে ৭০ লাখ, সিরিয়ায় ২০ থেকে ২৫ লাখ।

জাতি হিসেবে কুর্দিদের রয়েছে আলাদা ভাষা এবং সংস্কৃতি। জাতি হিসেবে তাদের খুব সহজেই পার্শ্ববর্তী তুর্কি ও আরবদের থেকে আলাদা করা যায়। কুর্দিরা মূলত সুন্নি মুসলিম। সুন্নি মুসলিমরা সংখ্যায় প্রায় ৮০%। এছাড়া ১৫% কুর্দি শিয়া মুসলিম। আর বাদবাকি ৫% কুর্দি খ্রিস্টিয়ান, ইহুদি, ইয়াজিদি, ইয়ারসানি, মানদিয়ান, বাহাই, জরথুস্ত্র এবং নির্ধর্মী। জাতিগতভাবে কুর্দিরা ধর্মপ্রসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদি এবং পরমতসহিষ্ণু। সুন্নি এবং শিয়া উভয় ভাগের মুসলিমদের মধ্যে সুফিবাদের ব্যপক প্রভাব লক্ষণীয়।

তুরষ্ক নিয়ন্ত্রাধীন কুর্দিস্তান অঞ্চলে বিভিন্ন জাতিসত্তা মানুষ বাস করে এবং বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে কুর্দিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৯৬৫ আদমশুমারী অনুসারে জাতিসত্তার হার। তুরস্ক নিয়ন্ত্রাধীন কুর্দিস্তানে মুসলিমদের উভয় সম্প্রদায় (সুন্নি এবং শিয়া), ইয়াজিদি সম্প্রদায়, জরথুস্ট সম্প্রদায়ের লোক বাসকরে। তবে কুর্দিরা সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ। মেসোপটেমিয়ান সমতল ভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের একটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠী এই কুর্দিরা। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক, উত্তর-পূর্ব সিরিয়া, উত্তর ইরাক, উত্তর-পশ্চিম ইরান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আর্মেনিয়া অঞ্চলে তারা ছড়িয়ে রয়েছে। আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটি কুর্দি এসব পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে।

 

কুর্দিদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে ইসরাইল

পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের মত কুর্দিরাও যাতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দেশগুলি কখনও আইসিস দমনের নামে কুর্দিদের সামরিক অস্তশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সকল প্রকারের সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। সবচাইতে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, পশ্চিমা দেশগুলো প্যালেস্টাইনের ভূমিতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকদের এনে  ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। অথচ প্যালেস্টানকে ঘিরে আরবদের সাথে দফায় দফায় যুদ্ধ হলেও সেখানে ইহুদি রাষ্ট্রটির সাথে সুর মিলিয়ে  এখনও প্যালেস্টাইনী জনগণকে একটি স্বাধীন রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দিচ্ছেনা। ১১ অক্টোবরের ইসরাইলের জেরুজালেম পোস্ট পত্রিকায় সংবাদের বলা হয়েছে সেদেশের বহু সৈন্য তাদের বহুদিনের মিত্র কুর্দিদের সাহায্যে যুদ্ধ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ইসরাইলী সরকারকে সৈন্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরাইল নিজেদের স্বার্থে  কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার দাবিকে পূর্ণ সমর্থন করছে মূল লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে তথা মুসলিম বিশ্বে ভাঙন আর নিজেদের অনুগত একটি দেশ সৃষ্টি। মধ্যপ্রাচ্যের কুর্দি জনগোষ্ঠীর প্রতি ইসরাইলের এই দরদ নতুন নয়। কয়েক দশক ধরে ওই জনগোষ্ঠীটির সাথে ইসরাইলের রয়েছে আন্তরিক সম্পর্ক। গত শতাব্দীর চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে ইসরাইল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের সময় ও পরবর্তী সময়ে নিহিত দুই অঞ্চলের সম্পর্কের শেকড়। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক কুর্দি ইহুদি সেখানে গিয়ে বসতি গড়লেও তারা কুর্দিস্তানের আত্মীয়স্বজনদের সাথে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখতেন। সেই থেকেই কুর্দিদের সাথে তেল আবিবের সম্পর্কের সূত্রপাত। কুর্দিস্তানে অনুষ্ঠিত গণভোটের সময় ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কুর্দিদের প্রতি সমর্থনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়া হয়েছে। ইসরাইলের এই অবস্থানের নেপথ্যে রয়েছে সুদূরপ্রসারী ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ।ইহুদিবাদী দেশটি চায় আঞ্চলিক বৈরী দেশগুলোর বিপরীতে নতুন কোনো মিত্র দেশ। যেটি একই সাথে তাদের মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারেও হাতিয়ার হবে। আরব বিশ্বে ভাঙন ধরাতে পারলে তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ইসরাইল। আর কুর্দিস্তান স্বাধীন হলে সেটি যে ইসরাইলের মিত্র হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একই সাথে এই ভূখণ্ডটি হবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দাদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র।

মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে শত্রুতার কারণে ইসরাইল সব সময়ই চাইতো ওই অঞ্চলে কোনো অ-আরব মিত্র। এ জন্য তারা বেছে নেয় বিভিন্ন দেশে বিভক্ত হয়ে পড়া কুর্দিদের। জাতিগত বিভক্তি উসকে দিতে শুরু করে এ অঞ্চলে। একঘরে অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এই কৌশলটি নিয়েছিলেন ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ান। সেই সূত্রেই কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানির পিতা মুস্তফা বারজানির সাথে সম্পর্ক ছিল তেল আবিবের। ১৯৬৮ ও ৭৩ সালে দুই দফায় ইসরাইল সফরও করেছেন মুস্তফা। বর্তমান সময়েও ইসরাইলি লিকুদ পার্টির সরকার সেই একই নীতিতে চলছে। ভৌগোলিক দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কুর্দিস্তানের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অঞ্চলটির চার দিকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ- ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক ও ইরান। এমন একটি জায়গায় আধিপত্য বিস্তার করতে পারলে এই দেশগুলোকে মোকাবেলায় অনেকটাই এগিয়ে যাবে ইসরাইল। কাজেই আরববিশ্বে জাতিগত বিভক্তি ও নিজেদের মিত্র পাওয়ার এমন সুযোগ তারা ছাড়তে চাইছে না। এ অঞ্চলটির ব্যাপক অর্থনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। কুর্দিস্তানের রয়েছে অঢেল তেলসম্পদ। উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে তেল না পেলেও ইসরাইলের আমদানিকৃত তেলসম্পদের ৭৭ শতাংশই কুর্দি অঞ্চল থেকে আনে। দেশটি স্বাধীন হলে ইসরাইলের জন্য তা আরো নিরাপদ বাণিজ্যকেন্দ্র হবে।

কুর্দিরাও তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আর কোনো সাহায্য না পেয়ে ইসরাইলের দিকে ঝুঁকতে পারে। সিএনএন র বিশ্লেষক ইয়ান লি তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, কুর্দিদের চার দিকে সম্ভাব্য শত্রু। এমনকি তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও গণভোটের সময় তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু একমাত্র আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইসরাইল তাদের সমর্থন দিয়েছে। এই বিশ্লেষক মনে করেন, এ কারণেই কুর্দিরা স্বাধীনতা পেতে ইসরাইলের সাহায্য চাইতে পারে।

কুর্দিরা ব্যক্তি পর্যায়েও ইসরাইলের প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো জাতি বা দেশের লোকদের চেয়ে আন্তরিক। লিকুদ পার্টির সাবেক মন্ত্রী গিডেওন সা’র মনে করতেন মধ্যপ্রাচ্যে দুটি জাতি অবহেলিত, তাদের মধ্যে ইহুদিরা রাষ্ট্র পেলেও কুর্দিরা পায়নি। তিনি বলতেন , কুর্দিরা হলো ইসরাইলের সবচেয়ে আস্থাভাজন ও দীর্ঘস্থায়ী মিত্র। কুর্দিস্তানের গণভোটের সময় আঞ্চলিক রাজধানী ইরবিলে ইসরাইলি পতাকা উড়ানোর কথা এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। কেউ কেউ আমরা হবো নতুন ইসরাইল’ এমন স্লোগানও দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। কুর্দিস্তানের প্রতি ইসরাইলের এই সমর্থন যে কুর্দিদের প্রতিবেশী দেশগুলোর অগোচরে হচ্ছে তা নয়, তারা সব কিছু সম্পর্কেই অবগত আছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে মাসুদ বারজানিকে নেতানিয়াহুর পুতুল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তুরস্ক তো সরাসরিই বলেছে, ইসরাইলি গোয়েন্দারা কুর্দিদের স্বাধীনতার বিষয়ে সহযোগিতা করছে।

## ১১.১০.২০১৯ইং।

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.