--- বিজ্ঞাপন ---

সময়ের যাত্রী

0

রুবাব বশরঃঃ

মানুষগুলো কি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে! বুঝতে পারছি, আমার পোশাক বা চেহারা তাদের অবাক করেছে। এ কেমন পরিস্থিতিতে পড়লাম আমি! টাইম-মেশিনে বসার পরও আমি চিন্তা করিনি যে তা সত্যিই কাজ করবে। অথচ গত দু’দিনে কতকিছুই না ঘটে গেল। টাইম-মেশিন আবিস্কারের পর বিভিন্ন প্রাণী দিয়ে পরীক্ষা করা হলেও তাদের অবস্থা, অতীতে গেলো নাকি ভবিষ্যতে গেলো তার কোন খবর জানা যায় নি। আমিই প্রথম মানুষ এই অবিশ্বাস্য মেশিনে করে সময়ের ভ্রমন করলাম। সেই সময়ের অনেক অতীতে জীবিত অবস্থায় বসে আছি। বেশ কিছু সময় লেগেছে আমার মানসিক ভাবে স্থির হতে। টাইম-মেশিনে আমি কতদিন আগে উঠেছি, কতক্ষণ ছিলাম কিছুই মনে নেই। শুধু জানি এই অতীতে এসেছি প্রায় দু’দিন হলো, কারণ দু’বার সূর্যাস্ত দেখলাম।
নিগ্রোদের মতো এই কালো-বিশালদেহী মানুষগুলো অদ্ভুত সব আওয়াজ করে ভাবের আদান-প্রদান করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চারপাশে অনেক খুঁজেও টাইম-মেশিনের কোন চিহ্ন পাই নি। এই মানুষগুলো থেকে অনেক ভাবে ইশারা ইঙ্গিত করে জানার চেষ্টা করেছি যে তারা আমায় কোথায় খুঁজে পেয়েছে। কিন্ত তাদেরকে এই প্রশ্নটুকু বোঝাতে পারি নি। গত এক সপ্তাহ ঘুরাঘুরি করেও ধারণা করতে পারছি না আমি কত বছর পেছনে এসেছি। এখানের মানুষ বেঁচে আছে ফল-মূল,কাঁচা মাংস খেয়ে। গুহায় থাকে, গাছের বাকল পরে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আমি তাদের এখনো আগুন জ্বালাতে দেখিনি!
কে যেন আমার পা নাড়ছে, চমকে উঠে পড়লাম ঘুম থেকে! দেখি কালো পিচ্চি ছেলে একটার হাতে খুব অদ্ভুত দেখতে একটি প্রাণী। ছেলেটার মুখে সব দাঁত বের করা হাসি, যেন প্রাণীটি বিশেষ কিছু। প্রাণীটিকে হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে আবার তাকে দিয়ে দিলাম। এমন কিছু আমি আগে দেখিনি! ইঁদুরের আকারের প্রাণী,কিন্ত মুখটা বাদুড়ের মতো! সিদ্ধান্ত নিলাম সাথে সাথে, জঙ্গলে যেতে হবে। অনেক কিছু জানতে হবে, দেখতে হবে, চিনতে হবে। যদি কখনো আগের সময়ে ফিরে যাই!
খুব ভোরে উঠলাম আজ। খাদ্য সংগ্রহ করতে যাবো ওদের সাথে।
গত তিন ঘন্টা ধরে যা দেখছি, মনে হলো ঘোরের মধ্যে আছি! এমন সব প্রাণী, পাখি, গাছপালা হতে পারে তা আমাদের সময়ের কারো জানা তো অনেক দূরের কথা, চিন্তা করাও অনেক কঠিন ছিলো। সবকিছুর প্রতি আমার এতো আগ্রহ দেখে বাকিরা প্রথম প্রথম মজা পাচ্ছিল, কিন্ত এখন তারা বিরক্ত ভাব দেখাচ্ছে, চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছে। এমন সময় হঠাৎ পেছনে ভয়ংকর এক গর্জন ভেসে আসলো। সবাই যেন মুর্তি হয়ে গেলো! হঠাৎ তাদের একজন চিৎকার করে দৌড় শুরু করলো! আমার পায়ে যেন শেকড় গজিয়েছে। বাকিরাও দৌড় শুরু করলো, আমিও। কোন দিকে দৌড়াচ্ছি, কার ভয়ে দৌড়াচ্ছি জানি না, তবুও দৌড়ে চলেছি।
অন্ধকার হয়ে গেছে। সারা বিকেল আদিম-মানুষগুলোকে খুঁজেছি, পাই নি। অন্ধকারে গুহার মতো একটা জায়গা পেয়েছি। আজ রাত এখানেই কাটাবো। প্রচন্ড ভয় লাগছে। এই অপরিচিত বুনো পরিবেশে তাদের সাহায্য ছাড়া বেশিদিন বাচঁবো না এটা নিশ্চিত।
ঘুমের মধ্যে সারারাত অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেয়েছি। ভালোই রোদ উঠেছে। একি! এমন সুন্দর করে সিড়ি কে বানালো! চারপাশটা দেখে আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে! এটি তো কোন গুহা নয়, বরং আধুনিক যুগের নির্মিত কোনো কক্ষ! দেয়াল সমূহ সু-নির্মিত কোনো কক্ষের দেওয়াল। কাল অন্ধকারে এসব কিছুই খেয়াল করিনি। এই আদিম যুগে তো এমন স্থাপনা থাকার কথা নয়! জলদি চারপাশটা দেখার জন্য বের হয়ে এলাম। কিছুক্ষন পর নিজেকে এমন জায়গায় আবিস্কার করলাম যার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলাম না। চারপাশে দালানকোঠার মতো দেখতে অসংখ্য স্থাপনার ধ্বংসস্তুপ! আধুনিক যুগের নানান রকম ধবংস হয়ে যাওয়া স্থাপনা! এই আদিম যুগে, মানুষ গুহায় থাকে,আগুন জ্বালাতে পারে কিনা সন্দেহ, এমন সময়ে এসব নিদর্শন কিভাবে এলো! পুরো এলাকা ঘুরে মনে হচ্ছে অনেক আধুনিক শহর বা তেমন কিছু যা কোনো কারণে ধবংস হয়ে গেছে! কি অসম্ভব ব্যাপার! আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তবেই এসব ঘটছে? আমি কি টাইম- মেশিনে করে অতীতে এসেছি, নাকি ভবিষ্যতে! অতীত হলে তো এমন সব স্থাপনার নিদর্শন পাওয়া যেত না। ভবিষ্যত হলে এই পরিবেশ, এসব আদি-কালের মানুষ কিভাবে এলো? তাহলে কি আমাদের সেই সভ্যতা কোনো কারণে ধবংস হয়ে নতুন সভ্যতা গড়ে উঠেছে? পারমাণবিক যুদ্ধ বা গ্রহাণুর আঘাত, কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে কি? কত হাজার সব প্রশ্ন অথচ উত্তর জানার কোনো উপায় নেই! এই ভয়াবহ তথ্য আবার আমার সভ্যতায় গিয়ে জানাতে পারবো কিনা জানা নেই। টাইম-মেশিনে বসার সময় আমাকে বলেছিল তারা, যত বেশি সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে, অতীত বা ভবিষ্যত যেখানেই পৌছাই না কেন, তারা আমাকে খুঁজে বের করবেই। আমার দেখা এ সব তথ্য তাদের জানা খুব প্রয়োজন। পুরো সভ্যতার ভবিষ্যত বদলে যেতে পারে এ তথ্যগুলোতে। আমার এখন একটাই কাজ, অপেক্ষা করা।##২৮.৯.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.