--- বিজ্ঞাপন ---

বৃটেনের রাজনীতিতে উদীয়মান কয়েকজন বাংলাদেশী

0

কাজী আবুল মনসুর
নানা দেশের বহু বর্ণের মানুষ একত্রে বাস করে আসছে যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেনে। স্বাভাবিকভাবেই এরা রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নমত ও পথের সমর্থক। ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান এখন অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক শক্ত এক ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেখনকার বাঙালিদের এক বৃহৎ অংশই ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন ও বিচার ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও সমাজনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিতে বাঙালিদের অভিষিক্ত হওয়াই এর প্রমাণ।
লেবার দল, কনজারভেটিভ দল, লিবারেল ডেমোক্রেটিক দল ছাড়াও আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল আছে ব্রিটেনে। বৃটেনে মূলত প্রধান তিনটি দলের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। ভোটের হিসেবে ব্রিটেনে কনজারভেটিভ এবং লেবার দল অনেক ক্ষেত্রেই সমানে সমান এবং একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বি।   ব্রিটিশ-বাংলাদেশি লেবার পার্টির পক্ষে সব সময় ভোটযুদ্ধে সক্রিয় থাকেন রুশনারা আলী (বেথনাল গ্রীন অ্যান্ড বো), টিউলিপ সিদ্দিক (হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন) এবং রুপা হক (ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাক্টন), আনোয়ার বাবুল মিয়া (ওয়েলিং অ্যান্ড হ্যাটফিল্ড), মেরিনা আহমেদ (বেকেনহাম) , রউশন আরা (সাউথ থেনেট), ফয়সাল চৌধুরী এমবিই (স্কটল্যান্ডের এডিনবরা সাউথ ওয়েস্ট) এবং আব্দুল্লাহ রুমেল খান (পোর্টসমাউথ নর্থ)। এছাড়াও সাজু মিয়া (ওয়াইর ফরেস্ট) লিবারেল ডেমোক্রেটস এর প্রাথী, আফজাল চৌধুরী (ইস্টহ্যাম) ফ্রেন্ডস পার্টির হয়ে বৃটেনে রাজনীতির মাঠে থাকেন।

বাংলাদেশী চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমাল মাসরুর (বেথনালগ্রীন অ্যান্ড বো), অলিউর রহমান (পপলার এন্ড লাইম হাউজ), আবু নওশেদ (ইয়ার্ডলি, বার্মিংহাম) এবং মির্জা জিল্লুর (ইস্টহাম) বৃটেনের রাজনীতিতে উঠে আসছেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১৪ জন কোন না কোনভাবে বৃটেনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নিজেদের অবস্থানের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে ৮ জন লেবার পার্টির পক্ষে, ১ জন লিবারেল ডেমোক্রেটস, একজন ফ্রেন্ডস পার্টি এবং চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেবেন।  গত  ২০১৫ সালের ব্রিটেনের পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে এমপি পদে নির্বাচন করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটেনের রাজনীতিতে অতীতেও মেধার স্বাক্ষর রাখা এই ৬ জন হলেন- রুশনারা আলী, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে), রূপা আশা হক, আনোয়ার বাবুল মিয়া, মিনা সাবেরা রহমান ও প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। ২০১৫ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের প্রধান তিনটি দল থেকে এই ৬ জন মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
এদের মধ্যে বর্তমান প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে সর্বোচ্চ ৪ জন বাংলাদেশি মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা হলেন নির্বাচনী আসন পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো থেকে রুশনারা আলী, হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড একটন আসনে রূপা আশা হক এবং ওয়েলইউন হ্যাটফিল্ড আসনে আনোয়ার বাবুল মিয়া। এছাড়া ক্ষমতাসীন জোটের কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে বার্কিং আসনে লড়বেন মিনা সাবেরা রহমান। নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া সর্বশেষ বাংলাদেশি সিলেটের প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। তিনি ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির হয়ে নর্থহ্যাম্পটন সাউথ আসনে লড়েন।
রুশনারা আলী ১৯৭৫ সালে সিলেট জেলার বিশ্বনাথে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে অভিবাসিত হন তিনি। টাওয়ার হ্যামলেটে বেড়ে ওঠা রুশনারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর ক্রমে জড়িয়ে পড়েন ব্রিটিশ রাজনীতিতে। যে আসন থেকে তিনি এমপি হয়েছেন, সেই আসনের সাবেক এমপি ওনা কিংয়ের ক্যাম্পেনের অন্যতম দায়িত্ব ছিল রুশনারা আলীর ওপর। ফলে এ ‘বেথনাল গ্রিন-বো’ আসনটির নাড়ি-নক্ষত্র ছিল তার হাতের মুঠোয়। লেবার পার্টির ফাইনাল নমিনেশন পেতে প্রায় ৫০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিকে ডিঙাতে হয়েছে তাকে। তারপর পেয়েছেন সেই গণভোটের বিজয় মুকুট। আরো উল্লেখ্য লেবার পার্টির রুশনারা আলী হলেন এখন পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য। হাউস অব কমনসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১০ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১১,৫৭৪ ভোট বেশি পেয়ে।

সে সময় ব্রিটেনে মুসলিম এমপিদের মধ্যেও অন্যতম হিসেবে দৃষ্টি কাড়েন রুশনারা আলী। বর্তমানে বেশ সুনামের সাথেই তিনি কাজ করে চলেছেন। কিছুদিন আগেই শ্যাডো মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন। এদিকে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো ভোটে অংশ নেয়া তরুণদের জন্য ‘মাই ভয়েস, মাই ভোট’ প্রচারাভিযান শুরু নেমেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বেথনাল গ্রীন এন্ড বো এমপি রুশনারা আলী। তরুণদের সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বাড়ানো ও গণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে সক্রিয় করতেই তার এই প্রচারণা। উলে­খ্য, ‘মাই ভয়েস, মাই ভোট’ বৃটেনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আপ-রাইজিং’ এর একটি উদ্যোগ। আর এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন রুশনারা আলী এমপি। সংস্থাটির পেট্রন হিসেবে রয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, বিরোধীদলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড এবং সহকারি প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ। এছাড়া রুশনারা আলীকে ভবিষতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দাবীদার বলে মনে করছে বৃটেনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পত্রিকা নিউ স্টেটসম্যান। ম্যাগাজিনটি বৃটেনের ভবিষত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সম্ভাবনাময় যে ২০ জন এমপির নাম প্রকাশ করেছে তার মধ্যে রুশনারা আলীর স্থান সবার উপরে। “পার্লামেন্টের উদীয়মান তারকা” শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে অনুর্ধ ৪০ বয়সের ২০ জন এমপির তালিকা দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের উজ্জ্বল রাজনৈতিক ভবিষত রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে অনেকেই আগামীতে বৃটেনের মন্ত্রীসভায় স্থান করে নিবেন। এমনকি এদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবেন ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। উচ্চশিক্ষিতা টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের মেরটন কাউন্সিলের মিটচাম এলাকায় ১৯৮২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ, ব্র“নাই, ভারত, সিঙ্গাপুর, স্পেন এ বাল্যকাল কাটিয়েছেন। পশ্চিম লন্ডন থেকে ১৯৮৮ সালে তিনি উত্তর লন্ডনে চলে আসেন এবং এ-লেভেল সম্পন্ন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যের উপর আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী এবং কিংস কলেজ অব লন্ডন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১১ সালে তিনি পলিটিক্স, পলিসি এন্ড গভর্নমেন্টের উপর দ্বিতীয়বারের মতো মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। লেবার পার্টির ৯ শ’ সদস্যদের ভোটাভুটিতে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন এলাকা থেকে মনোনয়ন লাভ করেন তিনি। আসনটিতে ১৯৯২ সাল থেকে লেবার প্রার্থী গেল্ডা জ্যাকসন টানা এমপি নির্বাচিত হন। বার্ধক্যের কারণে গ্লেন্ডা অবসরের ঘোষণা দিলে টিউলিপ মনোনয়ন পান। গত নির্বাচনে কনজারভেটি প্রার্থী ক্রিস ফিলিপ এ আসনে মাত্র ৪২ ভোটে গ্লেন্ডার কাছে হেরে যান। এবার টিউলিপ কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী স্থানীয় কাউন্সিলর সায়মন মার্কাসের বিরুদ্ধে লড়ে জয়ী হন। ২০১৫ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া ছিল লেবার পার্টি। ২০১০ সালে টিউলিপ প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি ক্যামডেন বারার রিজেন্টস পার্ক ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ক্যামডেন কাউন্সিলের কমিউনিটিজ অ্যান্ড কালচারাল ক্যাবিনেট সদস্য। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফিলিপ গ্লাউড এসোসিয়েশটস, সেভ দ্য চিলড্রেন, বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের সাবেক লেবার এমপি ওনা কিং, টুটিং এলাকার লেবার এমপি ও সাবেক মন্ত্রী সাদেক খান, লেইটন ওয়ানস্টেড এলাকার সাবেক লেবার এমপি হেরী কোহেনের সঙ্গে কাজ করেছেন। এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে রুশনারা আলী টিউলিপকে অসাধারণ মেধাবী এবং পরিশ্রমী প্রার্থী বলে প্রশংসা করেছেন।
১৯৬০ সালের দিকে মা-বাবার সাথে সিলেট থেকে ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন রূপা আশা হক। পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোসিওলজির শিক্ষক। তিনি কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার। এর আগে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন। পিএইচডি করেছেন কালচারাল স্টাডিজের উপর। তার বিখ্যাত বই বিয়ন্ড কালচার ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়, যা ২০০৭ সালে ফিলিপস আব্রাহাম মেমোরিয়াল প্রাইজের জন্য শর্ট লিষ্টেড হয়। রূপা হক ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভের সেইফ সিট বাকিংহাম শায়ারের চিজহাম-আমেরশাম সিটে শেরিল গিলানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিত্ করে হেরে যান। পরে ২০১০ সালে তিনি লন্ডন বারা অব ইলিংয়ের ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আগামী ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন সংসদীয় আসন থেকে লেবার দলের পক্ষে পার্লামেন্টে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য পার্টির চুড়ান্ত মনোনয়ন লাভ করেছিলেন তিনি। গার্ডিয়ান, দ্য স্টেটসম্যান, ট্রাইবুনসহ নানা পত্রিকা ও জার্নালে নিয়মিত লিখেন রূপা আশা হক। রূপা হক এর আরো দুই বোন রয়েছে। সকলেই কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার বড় বোন নোরা হক একজন আর্কিটেক্ট। ছোট বোন কনি হক বিখ্যাত বিবিসি প্রোগ্রাম ব্ল ও পিটারের একজন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা।
আনোয়ার বাবুল মিয়া পৈত্রিক নিবাস সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর গ্রামে। ১৯৯৮ সালে লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি গ্রহণ করা আনোয়ার গ্রেটার লন্ডনের গ্রেট জেমস স্ট্রিট চেম্বার্সের একজন নিয়মিত আইনজীবী, ইমিগ্রেশন ও মানবাধিকার আইনের উপর একজন বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি ব্রিটিশ বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সের একজন ডিরেক্টর ও বৃটিশ বাংলাদেশি প্র্যাক্টিসিং ব্যারিস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। একইসাথে তিনি পারিবারিক একাধিক ব্যবসাও দেখাশোনা করে থাকেন। ২০১১ সালে ব্রিটিশ বাংলাদেশি হুদজ হোদর সেরা বাংলাদেশিদের তালিকায় আনোয়ার বাবুল নিজের অবস্থান করে নিয়েছিলেন। লেবার দল বার্ষিক সভায় সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে আনোয়ার বাবুল মিয়াকে হ্যাটফিল্ড আসন থেকে আগামী সাধারণ নির্বাচনে লড়ার জন্য মনোনীত করেন।
সিলেট নগরীর বাগবাড়ীতে জন্ম প্রিন্স সাদিক চৌধুরীর। ১৯৭১ সালে তিনি বৃটেনে যান। পরে নর্থহ্যামটন শায়ার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বর্তমানে ব্যবসা করছেন। দীর্ঘদিন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটের রাজনীতি ও নর্থহ্যামটন বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনের সাথে জড়িত। ২০০৭ সালে লিবারেল ডেমোক্রেট (লিবডেম) থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ব্যবসার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটির গন্ডি ছাড়িয়ে নর্থহ্যামটনে বসবাসরত অন্যান্য এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমেও যুক্ত। এই প্রথম কোনো এশিয়ান নর্থহ্যামটন থেকে এমপি পদে মনোনয়ন পান।
১৯৬৮ সালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার রাউলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মিনা সাবেরা রহমান। খুব ছোটবেলায় প্রায় ২১ দিনের শিশু অবস্থায় বাবা মায়ের সাথে ব্রিটেনে আসেন তিনি। ধীরে ধীরে ব্রিটেনের স্কুল জীবন শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেন সংগ্রামী এ নারী। একদিকে সংসার জীবন অন্যদিকে ছেলে মেয়েদের মানুষ করা, তার উপর নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগানোর জন্য চাকরি। এভাবেই ১৯৯৩ সাল থেকে পড়ালেখার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন কনজারভেটিভের রাজনীতির সাথে। এক সময় কনজারভেটিভ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ রেড ব্রিজের প্রেসিডেন্ট, কনজারভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের ইলফোর্ড সাউথ এর ভাইস চেয়ারম্যান, ক্রেনব্রোক ওয়ার্ড কনজারভেটিভের চেয়ারম্যান ও বাংলা উইমেন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন ও পূর্ব লন্ডনের একটি হাউজিং কোম্পানির ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন। লন্ডনের বার্কিং আসন থেকে আগামী ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি কনজারভেটিভ দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্রের জননী। তার স্বামী সিলেটের বাসদ রাজনীতির অন্যতম পুরোধা গয়াছুর রহমান গয়াছ।
যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বাংলাদেশিরা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক কর্মকান্ডে সাফল্য পেয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা এখন ধীরে ধীরে বৃটেনের মূল ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। উদীয়মান এসব বাংলাদেশীর কারনে বিদেশে দেশের মান-মর্যাদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করছি, নিজ কর্মগুণ আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং বিচক্ষণতার সাথে এগিয়ে চলা উপরোক্ত বাঙ্গালীরা ব্রিটিশ ইতিহাসকে আগামীতে আরো উজ্জ্বল করে তুলবে। হয়ত এদের মধ্যে থেকে কেউ একজন ভবিষ্যতে হতে পারেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীও।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.