--- বিজ্ঞাপন ---

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে

0

দক্ষিণ এশিয়ায় কাশ্মীরকে ঘিরে চলমান উত্তেজনা কিছুটা স্থিমিত হয়ে এলেও ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে। দেশ দুটি নতুন নতুন যুদ্ধ জাহাজও নির্মাণ করে চলেছে যা আগের চাইতে তুলনামূলকভাবে ব্যাপক মাত্রায় । গত ১৮ নভেম্বর পাকিস্তান ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ‘শাহীন-১’ নামের ব্যালেস্টিক মিসাইল পরীক্ষার সফল পরীক্ষা চালায়। প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা দি ইকনমিক টাইমস জানায়, ৬৫০ কিলোমিটার পাল্লার এ ‘শাহীন-১’ ভারতের প্রধান শহরগুলিতে আঘাত হানতে সক্ষম। পাকিস্তানের আইএসপিআর (ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেসন্স) এর টুইট বার্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের পত্রিকা ইকনমিক টাইমস জানিয়েছে, এ পরীক্ষার মাধ্যমে পাকিস্তানের আর্মি স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড সেদেশের আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার দিকগুলো পরীক্ষা করে দেখছে।
এর আগে অক্টেবর মাসের ২১ ও ২২ তারিখে ভারতীয় বিমান বাহিনী আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ‘ব্রাম্মোস’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ট্রাক দ্বীপ থেকে এ পরীক্ষা চালানো হয় বলে সামরিক সূত্রে জানা গেছে। সামরিক বিষয়ক পত্রিকা ‘দি ডিপ্লোম্যাট’ এর সাংবাদিক ফ্রাঞ্জ স্টিফেন গ্যাডি ভারতের ‘ব্রাম্মোস’ নামের এ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ইং তারিখে প্রকাশিত তার প্রতিবেদনে বলেন, ভারতের এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটি গতির দিক থেকে শব্দের চাইতে তিনগুণ গতিতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। রাশিয়া ও ভারত যৌথভাবে এটি তৈরী করেছে। মূলত: রুশ নির্মিত পি-৮০০ অনিক সুপারসনিক জাহাজ বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের আদলেই এটি নির্মিত হচ্ছে ভারতের নিজস্ব প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিচার্স ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ডিআরডিও-তে। এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের নাম রাখা হয়েছে ভারতের ব্রম্মপুত্র নদী ও রাশিয়ার মস্কভা নদীর নামানুসারে। এর এর জবাবে পাকিস্তান এ পরীক্ষা চালিয়েছে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ভারতের আগে পাকিস্তান ২৯ আগস্ট পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ২৯০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ‘গজনবী’ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে। ঐ পরীক্ষা চালানো হয়েছিল ৫ আগস্ট কাশ্মীরের ভারতীয় অংশের উপর থেকে দিল্লীর বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারকে ঘিরে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখন। এদিকে পাকিস্তানের সর্বশেষ মিসাইল টেস্টও ভারতের ২,০০০ কিলোমিটার ইন্টারমিডিয়েট পাল্লার ‘অগ্নি-২’ এর দিকে লক্ষ্য রেখেই করা হচ্ছে বলে সমর বিশারদদের ধারণা।
২০০২ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁদিপুরে অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথম ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জে পরীক্ষিত হয়। অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন ১২ টন ও দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রটির রেঞ্জ ৭০০-১,২০০ কিলোমিটার।এটি ১,০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত কনভেনশনাল পেলোড অথবা একটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।এর গতি ২.৫ কি.মি/সেকেন্ড। অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি (শর্ট রেঞ্জ) বা দুটি স্টেজ (ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ) দ্বারা গঠিত। এগুলি রেল ও রোড মোবাইল এবং সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিনে চলে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্ট্রাটেজিক ফোর্স কম্যান্ড অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।
অগ্নি-২ ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ২,০০০-২,৫০০ কিলোমিটার। এর দৈর্ঘ্য ২০ মিটার, ব্যাস ১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৭ টন। অগ্নি-২ দুটি স্টেজেই সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিনে চলে। চীন ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে অগ্নি-২ নির্মিত হয়েছে। যদিও ভারত জানিয়েছে, তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি পাকিস্তান-কেন্দ্রীক নয়। নয়াদিল্লীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাকিস্তান বড় সমস্যা নয়। কিন্তু সামরিক বিশ্লেষকরা কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারতের রণসজ্জা ও হুমকীর দিকে লক্ষ্য রেখে মনে করেন অগ্নি-২ ভবিষ্যতে যুদ্ধ বেধে গেলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করবে ভারত। চীনের পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানেও আঘাত হানতে সক্ষম এ ক্ষেপণাস্ত্র।
এদিকে পাকিস্তান এতদিন বিদেশী নকশা ও কারিগরী সহায়তায় লাইসেন্সে ফ্রিগেট, সাবমেরিন তৈরী করে আসছিল। তবে এবারই প্রথমবারের মত দেশটি নিজস্ব নকশা ও প্রযুক্তিতে ফাস্ট এটাক ক্রাফট মিসাইল তৈরী করতে সক্ষম হল। গত ২৭ নভেম্বর ফাস্ট এটাক ক্র্যাফট-৪ নামের আজমত শ্রেণীর এ যুদ্ধজাহাজটি পাকিস্তানের করাচী শিপইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস তিনবছর ধরে নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তি নকশায় তৈরী করেছে। কানাডা থেকে প্রকাশিত সামরিক বিষয়ক পত্রিকা ‘কাওয়া’ সামরিক অনলাইনের সামরিক বিশ্লেষক বিলাল খান তার এক নিবন্ধে গত ২৮ নভেম্বর বলেন, পাকিস্তান নিজস্ব প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় অত্যাধুনিক এ যুদ্ধজাহাজ তৈরীর সক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে করাচী শিপইয়ার্ডে এর নির্মাণ শুরু হয়। কোন বিদেশী সহায়তা ছাড়াই পাকিস্তানী ইঞ্জিনিয়াররা তিন বছরে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন সফলতার সাথে। এক হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে যেতে সক্ষম ৫৬০ টনের এই ফাস্ট এ্যাটাক শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজটি আকারে ছোট হলেও এর সক্ষমতা অনেক। এ যুদ্ধজাহাজটি থেকে জাহাজ বিধ্বংসী পাকিস্তানে তৈরী ‘হারবাহ’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া যাবে। এছাড়াও জাহাজটিতে বিমান বিধ্বংসী ক্লোজ-ইন-উইপন-সিস্টেম, ২৫ মিমি কামান, অত্যাধুনিক সেন্সর, ইলেকট্রনিক সারফেস সার্চ ও ট্রেকিং রাডারে সজ্জিত থাকছে। এর দৈঘ্য ৬৩ মিটার। ৩০ নট গতি। অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আস্তে আস্তে আরও বড় আকারের ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার ইত্যদি নির্মানের সক্ষমতার পথে এগুচ্ছে।## ২৮.১১.২০১৯ইং

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.