--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজার এখনও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে

0

দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজের পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ এখনও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কর্তৃক ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রী, বন্দরে আমদানীকারকদের চালান এলেও দাম কমছেনা। গত মাসের প্রথম দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘন ঘন অভিযান জরিমানা এমনটি দু ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠিয়ে বাজার মনিটরিং সক্রিয় করেছিল । তবে বর্তমানে পেঁয়াজের বিভিন্ন  চালান আসতে শুরু করলেও দাম কমছেনা। এক্ষেত্রে বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন বলে বাজার সংশ্লিষ্টমহল মনে করেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় পেঁয়াজ চাষীরা ঘরে তুললেও আড়তদারদের বড় সিন্ডিকেটটি  দেশীয় নতুন পেঁয়াজ দ্রুত বাজারে আনতে গড়িমসি করছে । তারা যতদিননা পর্যন্ত  আমদানীকৃত পেঁয়াজের মজুত শেষ না হয় ততদিন বেশী দামেই বিক্রী করে মুনাফা করতে চাইছে। বাজারের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে  দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাকতাই এবং খুচরা বাজার কাজীর দেউড়ি, রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার, পাহাড়তলী এবং টিসিবি’র সেল সেন্টারগুলো ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে ।

চট্টগ্রামে নগরীতে টিসিবি প্রতিদিন ৬টি থেকে ট্রাক সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টিতে উন্নীত করে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রী চালু করেছে। গত সোমবার থেকে নগরীর কোতোয়ালী, জামালখান, পুলিশ লাইন, আগ্রাবাদ সহ নগরীর বিভিন্ন  এলাকায় ন্যায্যমূল্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রী করা হচ্ছে। এসব টিসিবি বিক্রয় কেন্দ্রে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে। গত ১৯ নভেম্বর প্রথম  টিসিবি ৬টি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। জনপ্রতি ১ কেজি, ৪৫ টাকা দাম। প্রতি ট্রাকে ১ টন করে পেঁয়াজ রয়েছে। সোমবার ২ ডিসেম্বর  ট্রাকের সংখ্যা বাড়িয়ে উন্নীত করা হয়। এতেও খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। এখনও কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রী হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ঁেপয়াজের সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয়। দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে বিক্রী না করে আগের আমদানীকৃত পেঁয়াজেই নজর তাদের। এজন্য দাম তেমন একটা কমছেনা।

হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, মানভেদে চীনা পেঁয়াজ ৮০-১০০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১২০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আকারে ছোট ও স্বাদে দেশীয়  পেঁয়াজের মতো হওয়ায় মিয়ানমারের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি চট্টগ্রামে তবে এর সরবরাহ কম।

সূত্র জানায়, নভেম্বরে ১৫ দফায় মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে নৌপথে এসেছে ২২ হাজার ৫৬২ টন

টিসিবি যে পেঁয়াজ ৪৫ টাকা বিক্রি করছে কাজীর দেউড়ি বাজারের মুদির দোকানে তা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য পেঁয়াজ ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির জন্য গত ১২ অক্টোবর থেকে রোববার ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অনুমতিপত্র (আইপি) নেওয়া হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৮৫ টনের। এর মধ্যে মিশর থেকে ৬২ হাজার ৩৭৪ টন, চীন থেকে ১৩ হাজার ৮৩ টন, তুরস্ক থেকে ১৩ হাজার ৬৮ টন, পাকিস্তান থেকে ৫ হাজার ৮৮০ টন, শ্রীলংকা  থেকে ১ হাজার ৬০০ টন, বেলজিয়াম থেকে ১ হাজার টন, নেদারল্যান্ডস থেকে ৬৮০ টন, উজবেকিস্তান থেকে ২০০ টন পেঁয়াজ আনা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ খালাস হয়েছে ১০ হাজার ৯৬৭ টন। এর মধ্যে মিশর থেকে এসেছে ৫ হাজার ৩০৬ টন, চীন থেকে ২ হাজার ৭৭২ টন, মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২২৮ টন, তুরস্ক থেকে ১ হাজার ৬৬ টন, ইউএই থেকে ১৬৮ টন, পাকিস্তান থেকে ৪২৭ টন পেঁয়াজ।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর শাখার উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি ইস্যু, বন্দর থেকে পণ্য খালাসে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ছাড়পত্র ইস্যুকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। বন্দর দিয়ে প্রতিদিনই পেঁয়াজের কনটেইনার আসছে। পআশাকরি, কিছু দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।

এদিকে, ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য বরাদ্দ ১৭৫ কেজি পেঁয়াজ খোলাবাজারে বিক্রির সময় টিসিবি’র এক ডিলারসহ চার জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার অক্সিজেন মসজিদ গলি থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানায়, টিসিবির ডিলার দোলন বড়ুয়া অক্সিজেনের মসজিদ গলিতে জাহাঙ্গীর স্টোরে সাত বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন। অভিযানের সময় দোকানেই ছিলেন ডিলার দোলন বড়ুয়া, তার সহকারী দিলীপ বড়ুয়া ও ট্রাকচালক এমদাদুল হক। পুলিশ দোকানিসহ চার জনকেই আটক করে।

জানা গেছে, খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য টিসিবি ডিলার দোলন বড়ুয়াকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে দিয়েছে। এসব পেঁয়াজ ৪৫ টাকা করে বিক্রি করার কথা। কিন্তু এই ডিলার বেশি দামে ১৭৫ কেজি পেঁয়াজ দোকানি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের কাছে বিক্রি করে দেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করেছে। পুলিশ জানায়, ওই এলাকার জাহাঙ্গীর স্টোর থেকে সাত বস্তা পেঁয়াজ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি করে পেঁয়াজ আছে।

## চট্টগ্রাম, ০৩.১২.২০১৯ইং।

 

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.