--- বিজ্ঞাপন ---

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে -চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি

0

ডেস্ক রিপোর্ট: রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ চট্টগ্রামে বলেছেন, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ।এদেশের রয়েছে বিপুল মানব সম্পদ, উর্বর কৃষিভূমি এবং সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ।জনবহুল এ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। প্রকৌশলীগণ উন্নয়নের কারিগর। তাদের মেধা, মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা ও চেতনায় থাকবে দূরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন। আগামী ২০৫০ সালে বা ২১০০ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত বা বাংলাদেশের অবস্থান কোন স্তরে পৌঁছাবে তা বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সমাবর্তনে সভাপতি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। এবারের ৪র্থ সমাবর্তন-২০১৯ সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর  দুই হাজার ২৩১ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।

এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বক্তব্যের শুরুতেই আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়ে বাঙালি জাতিকে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন আপন সত্ত্বায়। স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ভাষা আন্দোলন ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের। আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেও যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা আজ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের আত্ম-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। আমি আশা করি, আজকের নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করবে এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও লব্ধ জ্ঞানকে এ লক্ষ্যে কাজে লাগাবে।

সনদপ্রাপ্ত স্নাতকপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাইলফলক; একইসাথে তা স্নাতকদের জন্যও একটি স্মরণীয় দিন। জীবন চলার পথে তোমরা আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ সোপান অতিক্রম করলে। জীবনের আসল সংগ্রাম এখন থেকে শুরু হবে। আজকের এ সনদ প্রাপ্তি সেই সংগ্রামে অবতীর্ণ হবার স্বীকৃতি পত্র। এ সনদের সম্মান তোমাদের রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, তোমাদের এ অর্জনে দেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। তোমরা তোমাদের সেবা, সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দিয়ে এ সনদের মান সমুজ্জ্বল রাখবে। কর্মক্ষেত্রে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেন; মাতৃভূমি এবং এ দেশের জনগণের কথা কখনো ভুলবে না। অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত করবে না। তোমাদেরকে এ পর্যায়ে আসতে দেশবাসী যে সহায়তা করেছে তোমরা তোমাদের মেধা, মনন ও কর্মের মাধ্যমে তা পরিশোধ করবে। আমি তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। তোমরা বড় হও এবং দেশ ও  জাতির কল্যাণে অবদান রাখ।

রাষ্ট্রপতি চট্টগ্রামের স্মৃতিচারণ করে বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার চট্টগ্রামের এই পাহাড়শোভিত মনোরম পরিবেশে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৬৬ সালে এই চট্টগ্রামের লালদিঘীর মাঠে লক্ষ জনতার সামনে ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালির মুক্তির সনদ হচ্ছে এই ৬-দফা। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উৎরাই এর মধ্য দিয়ে জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান জননেতা এম এ হান্নান ঐ-দিন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ ঘটনা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে আমাদের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়। বন্ধ হয় মানুষের বাক, মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা।নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে ‘রূপকল্প ২০২১’ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। এ রূপকল্প বাস্তবায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এরই মধ্যে আমরা স্বল্প মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার মধ্য দিয়ে উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছি। আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

## শহীদ, চট্টগ্রাম, ০৫.১২.২০১৯ ইং।

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.