--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ

0

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে পাকিস্তানের একটি আদালত।। মঙ্গলবার বিশেষ আদালতের তিন সদস্যের বিচারকের একটি প্যানেল এ রায় ঘোষণা করে।একটি দেশদ্রোহিতার অভিযোগে এ দন্ড দেয়া হয়েছে বলে পাক মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে। বিচারকদের এই প্যানেলে ছিলেন পেশওয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার শেঠ, সিন্ধ হাই কোর্টের বিচারপতি নজর আকবর এবং লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শহীদ করিম। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের পক্ষে আইনজীবী আলী জিয়া বাজওয়া সাবেক এই সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন।

২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। রাষ্ট্রদ্রোহ, জরুরি অবস্থা জারি, বেআইনি উপায়ে বিচারপতি বরখাস্ত, বেনজির ভুট্টো হত্যা এবং লাল মসজিদ তল্লাশি অভিযান-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায় পলাতক রয়েছেন সাবেক এই পাক সেনাপ্রধান। ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগে দেশটির আদালতে মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এই মামলার রায় আদালতে ঝুলে ছিল।

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পরভেজ মুশারফের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই দেশদ্রোহিতার মামলা চলছিল। পারভেজ মুশারফ বহুদিন ধরেই দাবি করেছিলেন যে আদালত তাঁর পক্ষের আইনজীবীর কথা এ মামলায় শুনতে চাইছে না। গোটা মামলাটিই ভিত্তিহীন বলে বহু দিন ধরেই দাবি করেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।

ভারতের আনন্দবাজার জানায়, ২০০৭ সালে সংবিধান বাতিল করে সাংবিধানিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য তিন সদস্যের বেঞ্চ তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। ২০১৪ সালেই তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চার্জ গঠন হয়। তার পাঁচ বছর পর রায় দিল বিশেষ আদালত। ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার রায় দেওয়া হবে, আগেই জানিয়েছিল বিশেষ আদালত। এ দিনের সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বিচারকরা জানিয়েছেন, প্রায় তিন মাস ধরে তাঁরা অভিযোগ, নথিপত্র খতিয়ে দেখেছেন। সওয়াল-জবাবও হয়েছে আদালতে। বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘পাকিস্তানের সংবিধানের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মুশারফকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।’’ ২-১ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে আদালত।

২০০৭ সালে পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করে দিয়েছিলেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। ঘোষণা করেছিলেন সাংবিধানিক জরুরি অবস্থা। সেই ঘটনাতেই মুশারফের বিরুদ্ধে ‘হাই ট্রিজন কেস’ বা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।২০১৩ সাল থেকে সেই মামলার শুনানি প্রক্রিয়া চলছিল। যদিও মুশারফ এই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে এলাহাবাদ হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে আদালতে হাজির না হওয়া পর্যন্ত যেন রায় না দেয় আদালত। সেই মামলার জেরে রায়দান পিছিয়ে যায় নিম্ন আদালতে। হাইকোর্ট মুশারফের আর্জি খারিজ করার পরই এ দিন রায় দিল নিম্ন আদালত।

বর্তমানে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন ৭৬ বছরের মুশারফ। একটি দুর্নীতির মামলায় তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তানেরই অন্য আদালত। সেই মামলায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিন পেয়েছেন তিনি। মুশারফ প্রায় তিন বছর ধরে দুবাইয়ে থাকেন। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ চিকিৎসার জন্য দুবাইয়ে গিয়ে আর ফেরেননি। তার কয়েক মাস পরেই বিশেষ আদালত তাঁকে ধারাবাহিক অপরাধী ঘোষণা করে। বারবার আদালতে হাজির না হওয়ায় পাকিস্তানে থাকা মুশারফের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। পরে আদালতের নির্দেশে বাতিল হয় তাঁর পাসপোর্ট এবং সমস্ত পরিচয়পত্রও। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন পারভেজ মুশারফ। ২০০৮ সালে ইমপিচমেন্ট এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে পাকিস্তানের জন্য তিনি ১০ বছর লড়াই করেন। লড়াইয়ের পরও পাকিস্তানের আদালতে তাঁর পক্ষের কথা শোনা হয়নি। আর দেশের জন্য লড়াইয়ের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কিভাবে ‘দেশদ্রোহিতা’র মামলা দায়ের হয়, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মুশারফ। ২০১৩ সালে থেকে পারভেজ মুশারফের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে চলছে এই দেশদ্রোহিতা মামলা। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চেই পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করে পাক আদালত। এরপর সেপ্টেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ পেশ করা হয় আদালতে। এদিকে, সেই সময় থেকে পাকিস্তান ছেড়ে দেশের বাইরে ছিলেন পরভেজ মুশারফ। দুবাইতে তাঁর হৃদরোগের চিকিৎসা চলছিল সেই সময় থেকেই। এখনও তিনি রয়েছেন দেশের বাইরে। একসময়ে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের নায়ক পরভেজ মুশারফকে ঘিরে পাক আদালতের এমন রায় রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।

রিভিও করবে সরকার

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ সহকারী ফেরদৌস আশিক আওন বলেছেন, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে দেয়া বিশেষ আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ করবে সরকার। এ বিষয়টি ইমরান খান দেশে ফেরার পরই দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, আগামীকাল ইমরান খান দেশে ফিরছেন। দেশে ফেরার পর আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার রায় প্রকাশের পর তাৎক্ষণিকভাবে ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।  বর্তমানে ইমরান খান সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সফরে দেশের বাইরে রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খানের বিশেষ সহকারী ফেরদৌস আশিক আওন বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে।

এদিকে পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী ওই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এই রায়ে আমাদের কী লাভ হবে, এটি আমাদের পারস্পরিক দূরত্ব ও বিভাজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে না? তিনি আরও বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, আমাদের নতুন সংলাপ প্রয়োজন। নতুন সমঝোতা প্রয়োজন।## ১৭.১২.১৯

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.