--- বিজ্ঞাপন ---

অস্ট্রেলিয়ায় শীত গ্রীস্মের গোলকধাঁধাঁ।।

0

অস্ট্রেলিয়ায় এখন সামার বা গ্রীষ্মকাল। কিন্তু আমার পোশাক দেখে কি তাই মনে হচ্ছে? ক’মাস আগে কানাডা গেলাম। ভাবলাম সামার। গিয়ে দেখি আমাদের দেশের পৌষমাস! আসলাম অস্ট্রেলিয়া। বলাহল সামার! কিন্তু প্রতিদিন সকালবিকাল শীতের জ্যাকেট পড়তে হয়।দুপুর বেলা কিছুটা গরম অনুভব হয়।কিন্তু বিকেল হতে হতে তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি বা তারও নিচে নেমে যায়।রাতে কাঁথা গায়ে জড়াতে হয়।নাহয় ঘুম আসে না।ঘরের পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্হা আছে।কিন্তু খুব বেশী গরম না পড়লে কখনো তা চালানো হয়না। তেমন প্রয়োজনও পড়েনা।

আসলে অস্ট্রেলিয়া এক বিশাল মহাদেশ। এর এক-একটা অঞ্চলে এক-এক ধরনের আবহাওয়া।দক্ষিণ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় এখন চলছে প্রচন্ড দাবদাহ ও দাবানল। এডিলাইডে আজকে সকাল থেকে তাপ মাত্রা পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস।দুপুরের খবরে দেখলাম চল্লিশ ডিগ্রি। আরও অনেক জায়গায় চল্লিশের উপরে তাপমাত্রা। কিন্তু নিউসাউথ ওয়েলস বা তার রাজধানী শহর সিডনি তে সকালে তাপমাত্রা ছিল ষোল ডিগ্রি। এখন বেলা একটায় ও ২৪ ডিগ্রি। তবে আমার মোবাইল এ্যাপের নির্দেশনা মতে feel like ২৭ ডিগ্রি। আবার অনেক সময় দেখা যায় প্রকৃত তাপমাত্রা হয়ত ২২ ডিগ্রি কিন্তু feel like ১৬ বা ১৮ ডিগ্রি।কানাডায় দেখেছি একই অবস্হা।তাই কখনোকখনো বুঝতে অসুবিধা হয় বাইরে সত্যিকার তাপমাত্রা কত।একদিন বাসার ভিতরে দেখলাম ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাইরে গিয়ে দেখি বেজায় ঠান্ডা! ফিরে এসে আবার জ্যাকেট গায়ে জড়াতে হল। আসলে যখন ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকে তখন হঠাৎ তাপমাত্রা নিচে নেমে যায়। তাই বিকেলে হাঁটতে বের হলে গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে বের হতে হয়।স্হানীয়রা আবার ওসব তেমন কেয়ার করে না।

কানাডিয়ানরাও পাঁচ দশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দিব্যি হাফ পেন্ট হাফ সার্ট গেঞ্জি পড়ে ঘুরতে দেখেছি। তবে অনেক বয়সী মানুষকে হালকা গরম কাপড় পড়তে দেখি। আমি তো আবার শীতকাতুরে মানুষ। তাই সারাক্ষণ ঘরে পায়ে মোজা পড়ে থাকি। তাই বলা যায় সিডনি তে এখনো শীতের আমেজে আছে।তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে হিট ওয়েব শুরু হবে এখানে। আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাই শুনলাম।তখন চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়তে পারে। দক্ষিন পশ্চিমে ৪৮/৫০ হবে নাকি। তখন দুপুরে বাইরে নাকি হাঁটা বেশ কষ্টকর হবে ।তবে বাতাসে আদ্রতা না থাকার কারণে এখানে শরীর ঘামে না। অনেক টা আরবের মরু অঞ্চলের মত।অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার দ্ক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের একটা বিশাল অংশ মরুভূমি। এজন্য এর আবহাওয়ায় মরু অঞ্চলের প্রভাব লক্ষনীয়। যত গরম পরুক না কেন সন্ধ্যা নামতে নামতে সব শীতল হয়ে যায়।এখানে শীত এবং গ্রীষ্ম দুটোই ভালো ভাবে অনুভব করা যায়।তবে কানাডা বা উত্তর আমেরিকার মত এক্স্ট্রিম আবহাওয়া বলা যাবে না।মোটামুটি এখানকার আবহাওয়া মডারেট বা সহনীয় বলা যায়।তাই বাংলাদেশের মানুষ অস্ট্রেলিয়া আসতে পছন্দ করে বেশি।
আমাদের দেশে আকাশের স্তর সাতটা। কিন্তু এখানে ছয়টা। একটা স্তর বা লেয়ার কম ।তাই আকাশ কিছুটা নীচু মনে হয়। সূর্য আর চাঁদ দুটোকেই কিছু টা বড় দেখায়।এখানে আকাশের স্তর একটা কম হবার কারণে সূর্যের অতি বেগুন রশ্মির প্রভাবে এখানকার মানুষের চর্মরোগের হার ব্যাপক এমনকি স্কিন ক্যান্সারের হার ও বেশি। ২০১৪ সালে শীতের সময় এখানে এসেছিলাম। প্রতিদিন সকালে রোদে খালি পা গরম করতাম। হঠাৎ একদিন খেয়াল করে দেখি পা দুটো কাল কুচকুচে হয়ে গেছে। এটা কেমন করে হল? আমি অবাক! পরে জানলাম এখানে বহিরাগত মানুষের এমন হয় সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে ।তাই এখন খালি পায়ে রোদ লাগাই না।আগে পায়ে মোজা আর গায়ে হালকা গেন্জি পড়ে তারপর রোদে যাই।
বাতাসে আদ্রতা না থাকার কারণে এখানকার গরম একটু রুক্ষ হয়ে থাকে। রোদের তাপ একেবারে খটখটে। ফলে গাছপালা ঝোপঝাড় গুলো শুকিয়ে কাট হয়ে যায়।তাই বাতাসের একটু ঘর্ষনেই আগুন ধরে যায়।এখানে এই কারণে গ্রীষ্মে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে কেউ ইচ্ছে করে ও গাছপালায় বা বনে জঙ্গলে আগুন লাগাতে পারে না। আর এখানে বাতাসেই আগুন লেগে যায়। প্রতিবছর এখানে বুশ ফায়ারে লক্ষ লক্ষ হেকটর বনজঙ্গল আগুনে পুড়ে যায়।বিপন্ন হয়ে পড়ে কোয়ালা ক্যাঙ্গারুর মত বন্যপ্রানী। এটা এদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমাদের দেশে যেমন ঘুর্ণিঝড় প্লাবন বন্যা।দুদিন আগে পার্শ্ববর্তী দেশ নিউজিল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ হয়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলো।
আসলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও নির্বিচার প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে পৃথিবী নামক আমাদের গ্রহটির এখন টালমাটাল অবস্থা। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে হয়ত এর খেসারত দিতে হবে। শুনেছি এই শতাব্দীর কোন একসময় মালদ্বীপ নাকি সাগরে বিলীন হয়ে যাবে। তারা নাকি অস্ট্রেলিয়ায় বিশাল ভুখণ্ড কিনে রেখেছে তাদের লোকজনকে সরিয়ে আনার জন্য। ওদের লোকসংখ্যা অনেক কম। কিন্তু আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে কোথাও জমি কিনে কি স্থানান্তর কি সম্ভব? আমাদের আগামীদিনের প্রস্তুতির জন্য জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিল থেকে আমরা সহায়তা পেতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে । এই টাকা সদ্ব্যবহার হচ্ছে, নাকি দুর্নীতির কারণে লুটপাট হচ্ছে? সরকারের উচিত বিষয় টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা। না হয় আগামী দিনে অনেক খেসারত দিতে হবে।

ক্যাম্পবেল টাউন, সিডনি।।
১৭/১২/১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.