--- বিজ্ঞাপন ---

মানুষের ঘুম কেন আসে না…

0

আজকাল সবার কর্মব্যস্ত জীবন। কোমলমতি শিশুদের উপর পড়ার চাপ। ঠিক মতোন ঘুমোতে পারে না শিশুরাও। মোবাইল সংস্কৃতির কারনে পাল্টে গেছে জীবন যাপন। প্রতিটি ঘরে ঘরে গভীর রাতে ঘুমোতে যাবার সমস্যা। বড়রা যা হোক অনেক কিছু সামলে নিচ্ছে, কিন্ত শিশুরা। তারাও বাবা-মা’র সাথে রাত জাগছে। সকাল বেলায় তাড়াতাড়ি উঠার বিষয়টি বড়রা সামলে নিলেও পারছেনা শিশুরা। অনেক মা-বাবা তাদের সকালে টেনে হিচেড়ে তুলে স্কুলে পাঠানোর প্রতিযোগিতায় নামেন। অন্যদিকে কিশোর-তরুনরা গভীর রাত পর্যন্ত ইন্টারনেট বা গেমস খেলে সময় কাটায়। সকালে উঠে তাদের দৌড়াতে হয় কোচিং এ বা স্কুল-কলেজে। এসব কারনে ঘরে ঘরে এখন না ঘুমানোর অস্বস্তিতে ভরপুর। যে রোগটি এখন ভয়াবহ আকার ধারন করছে তার নাম ইনসমনিয়া।

আধুনিক জীবনের দুরন্ত গতি, স্ট্রেস, টেনশন, মেজাজ হারানোর নিয়ে চলছে মানুষের জীবন। ফলে দেখা দিচ্ছে হার্টের সমস্যা, ডায়বিটিস, মানসিক সমস্যাসহ নানা রোগ। এসব ভারী ভারী সমস্যার মাঝে যে সমস্যাটি প্রায় প্রত্যেকের ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে তা হলো ‘ইনসমনিয়া’। দিনের পর দিন ঘুম না হওয়ার কারনে মেজাজ হয়ে যাচ্ছে খিটখিটে, চোখের তলায় জমছে কালি। একই সাথে ঘাড় ব্যথা, সাথে চোখের বারোটা বাজছে। চোখের কোনায় ব্যথা। মাথা ভারী হয়ে থাকা। এ সবই না ঘুমনোর কারনে। শেষপর্যন্ত ডাক্তারের কাছে দৌড়াদৌড়ি।

Woman with insomnia lying in bed with open eyes

ইনসমনিয়া আসলে কি?

ঘুম নিয়ে সমস্যা কমবেশি সবার আছে। এ বিষয়টিকে সবাই সাধারনত হাল্কাভাবে নেন। মনে করেন, আজকে না হলো তো কি হয়েছে কালকে হবে। এই কালকেও আর হলো না। তাহলে কি পরশু হবে। এই যে নেগলেক্ট করা এটি কি ঠিক হচ্ছে। আসলে আমরা তো জানি না ইনসমনিয়া আমাদের শরীরে বাসা বেধে চলেছে। তাই সবার আগে জেনে নেয়া উচিত ইনসমনিয়া আসলে ঠিক কি? ডাক্তারের ভাষায়, রেগুলার স্লিপিং ডিজঅর্ডার অর্থাৎ একেবারেই ঘুম না হওয়া বা কম ঘুম হওয়াকে ইনসমনিয়া বলে অবহিত করা হয়। এটি শুধু বড়দের না ছোটদেরও হয়ে থাকে। তাই এ অসুখ সর্ম্পকে ধারনা থাকা প্রয়োজন। সাধারনত তিন ধরনের ইনসমনিয়া আমাদের হয়ে থাকে। ট্রানসিয়েন্ট ইনসমনিয়া,অ্যাকিউট ইনসমনিয়া, ক্রনিক ইনসমনিয়া। কয়েকদিন ধরে স্লিপিং ডিজঅর্ডার কন্টিনিউ করলে তাকে ট্রানসিয়েন্ট ইনসমনিয়া বলে, যা কিছু দিন পরে সেরে যেতে পারে। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে যাদের ক্রনিক ইনসমনিয়া আছে তাদের নিয়ে। কারন তারা বছরের পর বছর ধরে কষ্টে ভোগেন। একবার চিন্তা করলে দেখলে বুঝা যায়, যদি একদিন ঠিকমতোন ঘুম না হয় তাহলে আমাদের কি রকম লাগে। যাদের দিনের পর দিন ঘুম না হয় তাদের অবস্তা কি। ইনসমনিয়ার ফলে এখন মানুষ হাজারো সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। নানা রোগ শরীরে বাসা বাধছে। শরীরে এসে যাচ্ছে অলসতা। ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, স্ট্রেসসহ নানা কিছু মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অনেক সময় ওষুধের সাইড এফেক্টের কারনে বা কোন খাবারেরে এলার্জির কারনে ইনসমনিয়া হচ্ছে। হরমোনাল পরিবর্তন, শব্দ দূষণও ইনসমনিয়ার কারনে হতে পারে।

কম ঘুম মানেই ইনসমনিয়া

ঘুম না হওয়া মানেই ইনসমনিয়া নয়। পুওর স্লিপ কোয়ালিটি অনেক সময় স্লিপ এপনিয়া অথবা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন এর জন্য হয়। এর মানে কিন্তু ইনসমনিয়া নয়। ঘুমের সময় যদি কোন কারণে কারো নরমাল দুইদিন ইন্টারাপ্ট হয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম কম ঘুমের জন্য দায়ী হতে পারে। এর ফলে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে, তা হলো ঘুমের সময় পায়ে ব্যাথা, মাসল পুল এবং পা নাড়ানোর ইচ্ছে। সাধারণত আয়রন ডেফিসিয়েন্সি থেকে এরকম হয়। মাঝেমাঝে ডিপ্রেশন,টেনশন এমনকি জেট ল্যাগ এর কারণে ঘুমের অসুবিধা হয় যা কখনো কখনো বেশ কিছুদিন ধরে কন্টিনিউ করে। কিন্তু এগুলোর কোনও টিকে ইনসমনিয়া বলা চলে না।

ইনসমনিয়া ও মেয়েরা

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষদের থেকে মহিলারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। সাধারণত প্রত্যেক মাসের মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল এর সময় প্রায় প্রত্যেক মহিলাই টেম্পোরারি ইনসমনিয়ায় ভোগেন । আর এসবের জন্য দায়ী ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন। প্রেগনেন্সির সময় ইনসমনিয়ায় কষ্ট পেয়েছেন এমন অভিজ্ঞতা প্রায় ৭৮ শতাংশ মহিলার। এ সময় ইনসমনিয়া মূল কারণ হলো শরীরে হওয়া বিভিন্ন হরমোনাল চেঞ্জ। প্রেগনেন্সির সময় আপনার শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে। এছাড়াও ব্যাক পেইন, বাচ্চার মুভমেন্ট ,ডেলিভারি নিয়ে চিন্তা, ব্যায়াম কম হওয়া এ সমস্ত কারণে ইনসমনিয়া হতে পারে। তবে এই নিয়ে বেশি চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আপনার যদি আগেই ইনসমনিয়ার কোন হিস্ট্রি না থাকে, ও শুধুমাত্র এই সময়ে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, তাহলে বাচ্চার জন্মের পরে এটা সেরে যাবে। কিন্তু আপনার ইনসম্নিয়া যদি ক্রনিক হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এ সময়ে ঘুমের ব্যাঘাত মা ও শিশু দুজনের জন্যই ভালো না।

সামান্য রদবদলের ইনসমনিয়া কন্ট্রোল

ইনসোমনিয়া নিয়ে বেশি চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। কিছু ডায়েটারি ও লাইফ স্টাইল চেঞ্জ আপনাকে ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। যেসব খাবারে ক্যাফেইন আছে সেসব খাবার বেশি না খাওয়াই ভালো । যেমন কফি, চা, কোল্ডড্রিংক ইত্যাদি। সকালে ব্রেকফাস্ট এ হোল গ্রেন ব্রেড, কলা ও সিরিয়াল এড করতে পারেন। বেশি তেল মসলা দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। রাতে বেশি খাবার না খাওয়াই ভালো। আর ঘুমোতে যাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলুন । অনেক সময় দেখবেন ভারী খাবার খেলে রাতে কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। ঘুমোতে যাওয়ার আগেই কোনরকম অ্যালকোহল না হওয়াই ভাল। যদিও প্রাথমিক ভাবে অ্যালকোহল সিডেটিভ এর কাজ করে কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। অনেক সময় আমরা টেনশন কমানোর জন্য করে থাকি ।কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না যে পরোক্ষ এই অভ্যাস আমাদের ক্ষতিটা করে যাচ্ছে । অত্যাধিক স্মোকিং এর ফলে ইনসমনিয়া দেখা দিতে পারে। আপনি যেখানে ঘুমোন সেই পরিবেশে সামান্য রদবদল ইনসমনিয়ার সমস্যায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে। ঘুম কেন হচ্ছে না এ নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। পরিবর্তে আপনি মাইন্ড ডাইভার্ট করার চেষ্টা করুন। তবে ঘুম না হলে কখনো ঘুমের ওষুধ খাবেন না। এর ফলে ঘুম না হবার কারণ নির্ধারনে দেরি হবে। শোয়ার ঘর পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক রাখুন। রোজদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান আর। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে যদি ঘুম না আসে তাহলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ুন। ভালো বই পড়ুন এমন কিছু ছবি কিংবা স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করুন যা আপনি উপভোগ করেন। চাইলে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনার পছন্দের কোন লাইভ মিউজিক শুনতে পারেন। এতে ঘুম আসতে সুবিধা হবে। ভালো ঘুমের জন্য ইনসমনিয়াকে আপনার জীবন থেকে দূর করার জন্য আপনি ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ও মেডিটেশনের সাহায্য নিতে পারেন। এসবের ফলে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় ও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও বাড়ে। যার ফলে আপনি থাকবেন সতেজ যা স্ট্রেস, টেনশন কমাতে সাহায্য করবে। দরকার পড়লে কোন ভালো যোগা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। যদি একান্তই নিজে হ্যান্ডেল করতে না পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিন। কিন্তু কোন অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না। এতে আপনার ক্ষতি বেশি হবে। সবশেষে একটাই কথা, কোন কারণে বেশি টেনশন করবেন না। টেনশন করলে কোন সমস্যার সমাধান তো হবেই না কিন্তু আপনার শরীর হয়ে পড়বে দুর্বল। তাই ভালো থাকুন, ভালো কথা চিন্তা করুন। আর নিজেদের জীবনধারা সামান্য পরিবর্তন করুন। দেখবেন একদিন কখন ভোর হবে এই চিন্তা না করে আপনি ভাববেন যেন একটু দেরিতে সকাল হয় কারণ আপনার কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। (সুত্রঃ সানন্দা) ২১.১২.১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.