--- বিজ্ঞাপন ---

ট্রাম্পের হুমকি সত্বেও ইরান আক্রমণে ভয় পাচ্ছে আমেরিকা

0

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (৫ জানুয়ারী) ইরানকে উদ্দেশ্য করে সর্বশেষ টুইটে বলেছেন ইরান কোনপ্রকার প্রতিশোধমূলক হামলা চালালে এর পরিণামে ইরানের ৫২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তৎক্ষণাত হামলা চালিয়ে এর জবাব দেবে আমেরিকা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃটেনও শরিক হবে বলেছে। ইরানে তারা সাবমেরিন থেকে ২০ ফুট লম্বা টর্পেডো নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে বৃটেন জানিয়েছে। জবাবে ইরানের সেনা প্রধান মেজর জেনারেণ আবদুল রহিম মুসাভি রয়টার সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ইরানে হামলা চালানের সৎসাহস আমেরিকার নেই।

বিশ্বের ১ নং শক্তিধর দেশ হিসেবে বিবেচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত পরমাণু ক্ষমতার দেশের বিরুদ্ধে ইরানের সামরিক শক্তি কতখানি এ নিয়ে সামরিক বিশ্লেষকরা হিসেব কষতে শুরু করেছেন। প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্টের মোকাবেলায় কোনভাবেই সমর্থ দেশ নয়। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ইরাকে দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সেদেশের পাশ্ববর্তী দেশ ইরানের উপর যথেষ্ট পরিমাণে গোয়েন্দাগিরি করার সুযোগ পেয়েছে। তেহরাণের প্রতিটি সামরিক, শিল্পস্থাপনা, তেলক্ষেত্র, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এমনকি সব অলিগলি আমেরিকার নখদর্পনে। তবে ইরানের সামরিক শক্তিকে খাটো করে দেখছেননা সামরিক বিশ্লেষকরা।
সামরিক শক্তিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র
সামরিক বিশ্লেষক কাইল মিজোকামি এক নিবন্ধে লিখেছেন, মূলত: সত্তর এর দশকে ১৯৭৯ সালে বিপ্লবী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত ইরানের তৎকালীন শাসক শাহ রেজা পাহলভী ইরানকে সামরিক দিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সমকক্ষ শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। ইরানের শাহ তখন দেশটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র দেশ হিসেবে জাহির করতে সমর্থ হন। এ সুবাদে আমেরিকার সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র যা-ই চাইতেন তা পেতেন তিনি। সেময় শাহের আমলের এম৬০এ১ ট্যাংক, এফ-১৪ টমক্যাট জঙ্গী বিমান, সী কোবরা এটাক হেলিকপ্টার, গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার এখনও ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে খুচরা যন্ত্রাংসের অভাবে সেগুলির কার্যক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে শাহের পতনের পর আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরীতা ক্রমশ: বাড়তে থাকে।এরপর ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ ৮ বছরের যুদ্ধে ইরানের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়।

ইরানের সামরিক বাহিনী

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর মতে, বর্তমানে ইরানের স্থল সেনার সংখ্যা-৩ লক্ষ ৫০ হাজার। তম্মধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার হচ্ছে মূলত: পেশাদার সেনা, বাকীরা রিজার্ভ থেকে সংগৃহীত। মেইন ব্যাটল ট্যাংক রয়েছে ১,৬৬৩টি। ইনফেন্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল রয়েছে ৭২৫টি, আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ৬৪০টি , সেলফ প্রফেলড সহ আর্টিলারী কামানের সংখ্যা-২,৩২২ এবং রকেট লাঞ্চার রয়েছে -১,৪৭৬টি। যদিও কাগজে কলমে ইরান বড় করে নিজেকে জাহির করলেও দেশটির বেশীর ভাগ সমরাস্ত্রই শাহের আমলের ঐ ৭০ দশকের।
ইরানের বিমান বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৪৭ হাজার । শাহের আমলে আমেরিকার কাছ থেকে নেয়া ৪৭ টি এফ-৪ ফ্যান্টম জঙ্গী বিমান, ২৪টি এফ-৫, ২০টি মিগ-২৯ এবং ২৪টি টমক্যাট জঙ্গী বিমান সচল রয়েছে। এছাড়া আরও আছে ১৭টি চীনের তৈরী এফ-৭ ফাইটার বিমান।

ইরানের নৌ বাহিনীর অবস্থা তেমন ভাল নয়। সদস্য সংখ্যা-১৮ হাজার। তৎকালীন শাহ কর্তৃক বৃটেন থেকে সংগ্রহ করা ২ টি জামারান শ্রেণীর ফ্রিগেট, এছাড়া আরও আছে ২৪টি পুরাতন ফ্রিগেট ও মিসাইল সজ্জিত টহল বোট। এসব য্দ্ধুজাহাজগুলির সবকটিতেই জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।৯০র দশকে রাশিয়া থেকে ক্রয় করা ৩টি ‘কিলো শ্রেণীর সাবমেরিন এখন পুরোনো অবস্থায়। দেশটির কাছে উত্তর কোরিয়া থেকে সংগ্রহকৃত ১৪টি ‘ইয়োনো শ্রেণীর ছোট মিজেট সাবমেরিন রয়েছে। ইরানের নিজেদের তৈরীকৃত জুলফিকার শ্রেণীর ট্যাংক মূলত: মার্কিন ৬০ দশকের এম-৬০ ট্যাংকের উপর ভর করে তৈরী করা হয়েছে। ইরানের তৈরী জঙ্গী বিমান ‘সায়েকিহ’মার্কিন এফ-৫ই টাইগার ২ বিমানের নকল করে তৈরী।ইরানের তুফান ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে আমেরিকার ‘টো’এর কপি। তবে বর্তমানে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। বিমান থেকে বিমানে নিক্ষেপণযোগ্য ‘আজারাখ’তম্মধ্যে অন্যতম। ইরানের কাছে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-৩০০ রয়েছে। তবে এটি কতটা কার্যক্ষম এনিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাছাড়া, ইরানের দাবীর তালিকায় নিজেদের তৈরী ‘কাহার’স্টীলথ জঙ্গী বিমান, ‘কারার’ ব্যাটল ট্যাংক রয়েছে। এগলোর কার্যক্ষমতা নিয়ে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের সন্দেহ রয়েছে।

তবে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কোর এর হাতে রয়েছে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল। পারস্য উপসাগরে টহলের জন্য রয়েছে এবাহিনীর কয়েক শত ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত ছোট স্পীড বোট। এসকল বোট ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, মেশিনগান, রকেট এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত রাখা হয় সবসময় যা মার্কিন ও মিত্র দেশগুলির নৌ বাহিনীর জাহাজগুলির জন্য হুমকীর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বাহিনীর কাছে ইরাক থেকে সংগ্রহকৃত রুশ নির্মিত ১০টি এসইউ-২২ জঙ্গী বোমারু বিমানও রয়েছে। এর পাশাপাশি কয়েক ডজন হেলিকপ্টারও আছে এ বাহিনীর সংগ্রহে। ইরানের সামরিক বাজেট বছরে ১৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে বৈরী দেশ সৌদি আরব প্রতিরক্ষা খাতে বছরে ব্যয় করে ৬৭.৬ বিলিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ৬৪৯ বিলিয়ন। ইরানের জনসংখ্যা ৮ কোটি ১০ লক্ষ এবং আয়তন ১৬ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৯৫ বগর্ কিলোমিটার।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি

অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩২ কোটি ৪৫ লক্ষ ২৭ হাজার। দেশটির আয়তন ৯৮ লক্ষ ২৭ হাজার ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার। সৈন্যসংখ্যা-১২ লক্ষ ৮১ হাজার। রিজার্ভ ৮ লক্ষ ১১ হাজার। ট্যাংক-৬,৩৯৩, আমর্ড ফাইটিং ভেহিকল-৪১,৭৬০টি। জঙ্গী বিমান-৪৫৭, মাল্টিরোল ফাইটার-২,১৯২টি, হেলিকপ্টার-৪,৮৮৯টি। নৌ বাহিনীতে বিমানবাহী জাহাজ ১২টি সহ সর্বমোট-২০টি, ডেস্ট্রয়ার ৮৫টি, সাবমেরিন-৭১টি
## ০৫.০১.২০২০ ইং।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.