--- বিজ্ঞাপন ---

অস্ট্রেলিয়ার ৫৩টি দাবানল জ্বলছে, পথে পথে ক্যঙ্গারুর জ্বলন্ত দেহ

নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু

0

পথে পথে ক্যঙ্গারুর জলন্ত দেহ। কোয়ালাসহ বিলুপ্ত প্রানীদের অভয়ারন্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চল। বিশেষ করে ভিক্টোরিয়াতে। এখন এসব বনাঞ্চল জ্বলছে। প্রান রক্ষার জন্য নিরীগ প্রানী দিকবিদিক ছুটছে। মানুষ দেখলে জড়িয়ে ধরছে। জলন্ত ক্যঙ্গারু কাটাতারে জড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখে যে কারও মন খারাপ হতে পারে। নিরীহ প্রানীগুলো দাবানল বুঝে না। তারা মনে করছে, কেন তাদের আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করছে। তারা বুঝছে না, কিভাবে কোথায় গেলে তাদের প্রান বাঁচবে। এমন অসহায় চিত্র বিশ্ব আর কখনও দেখে নি। অথচ কেউ এগিয়ে আসছে না এ দাবানলের গ্রাস থেকে অস্ট্রেলিয়াকে রক্ষা করতে। সব দায় যেন অস্ট্রেলিয়দের। গত বছর আমাজনের জন্য সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়েছিল। এখন তার চেয়েও ভয়াবহ বিপদ মোকাবেলা করছে অস্ট্রেলিয়া। নিরীহ প্রানী আর মানুষদের বাচানোর জন্য হলিউডের চিত্রতারকারা মাঠে নামছেন। মুসলমান আর খৃষ্টান এক সাথে বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। এখন প্রশ্ন অস্ট্রেলিয়ার ১০০টি দাবানলের গ্রাস কোথায় গিয়ে দাড়াবে।

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। এরই মধ্যে মারা গেছে ৫০ কোটি প্রাণী। যা বিশ্বের জন্য অশনি সংকেত। এত বিপুল পরিমাণ প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনা আর কখনো হয়নি। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়াতে রাজত্ব রয়েছে ক্যাঙ্গারুর। পথে পথে পড়ে আছে জ্বলন্ত ক্যাঙ্গারুর লাশ। অনেক প্রাণী মানুষকে জড়িয়ে ধরছেন। নিরীহ প্রাণী গুলো মনে করছেন মানুষই তাদের রক্ষাকর্তা। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদদের দেওয়া তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি স্তন্যপায়ী পাখি ও সরীসৃপের মৃত্যু হয়েছে দাবানলে জ্বলছে গিয়ে। এ সংখ্যা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদরা।

দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে হাজার হাজার কোয়ালা। প্রায় বিলুপ্তির তালিকায় থাকা এই প্রজাতির বেশিরভাগেরই বয়স ছিল অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলে। বিশেষ করে নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্য দক্ষিণ উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার কোয়ালার মৃত্যু হয়েছে। যা এ অঞ্চলের কোয়ালার সংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। পরিস্থিতি এমন অবস্থা হয়েছে মৃত প্রাণীদের দেহ খুঁজেও পাওয়া যাবে না।

অস্ট্রেলিয়ায় এত গরম আর কখনো অনুভূত হয়নি। ভিক্টোরিয়া অঞ্চলের কয়েকটি জায়গায় গরম এখন এমারজেন্সি লেভেলের উপরে চলে গেছে। প্রায় সময় এখন ভিক্টোরিয়া পার্কসহ নানা পর্যটন স্থাপনা খালি করার নির্দেশ জারি করা হয়। বছরের শেষে কমপক্ষে ৩০ হাজার পর্যটক এখানে জমায়েত হন। এখন পর্য টকরা কোনমতে প্রাণ নিয়ে সটকে পড়তে শুরু করেছে। প্রশাসনের ক্রমাগত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসার বদলে বেড়েই চলেছে। আরো শুরু হয়েছে নেপথ্য ঝড়ো হাওয়া।

বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার চারটি প্রদেশের দাবানলের ধ্বংসলীলা সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যে অন্যতম ভিক্টোরিয়া। এদিকে বিবিসি জানিয়েছে , দাবানলে ঘরবাড়ি ও জমি ছারখার হওয়ার মধ্যেই গত শনিবার দক্ষিণ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় বহু এলাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৭৩ টি দাবানল শুরু হয় ৫৩ টি এখনো জ্বলছে। দাবানল এ পর্যন্ত প্রায় ২২ লাখ একর এলাকা পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। নিখোঁজ হওয়ার খবর এসেছে ২৮ জনের। ২২ জনকে পাওয়া গেলেও বাকিদের কোন খবর নেই। অস্ট্রেলিয়ায় এখন প্রায় একশটি দাবানল তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

দাবানল মোকাবেলায় এরই মধ্যে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। হলিউডের তারকা নিকোল কিডম্যান হিউ জ্যাকম্যান ও পপ তারকা পিঙ্কসহঅনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দাবানল থেকে বন্যপ্রাণীদের জীবন রক্ষার জন্য। বনের প্রাণীদের রক্ষায় তারা আর্থিক সহায়তা করছেন। একইসঙ্গে অন্যদেরও দান করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তারা। হলিউডের অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান তার ইনস্ট্রাগ্রামে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়া আগুন থেকে জীবন বাঁচাতে তিনি ৫ লাখ ইউএস ডলার দিয়েছেন। আরও অনেক অস্ট্রেলিয় হলিউড তারকা এগিয়ে এসেছেন এই সংকটকালে। তারা অন্যদেরও এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

গত বছর আমাজনের অরণ্য বিধ্বংসী আগুন দেখেছিল গোটা বিশ্ব। সে নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়েছিল। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলের গ্রাসে অস্ট্রেলিয়ার যে বিস্তীর্ণ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে অনেকেরই যেন নজর নেই। প্রথম দিকে এই আগুন নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা না থাকলেও এখন অস্ট্রেলিয়ার একটা বড় অংশই ভয়াবহ আগুনের গ্রাসে।  প্রতিবছর গরমকালে এখন অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ অংশের দাবানল শুরু হয়। এবার অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে গরম পড়েছে তা অতীতে কখনও পড়েনি। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খরা। শুকিয়ে গেছে মাইলের পর মাইল তৃণভূমি অরণ্য। ফলে দাবানল ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টি এখন অস্ট্রেলিয়ার মানুষকে ভাবাচ্ছে সেটি হচ্ছে তীব্র বাতাস আর আগুনের তীব্রতায় দাবানল নিয়ন্ত্রণ করা দমকল বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ১২৮ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। ফলে দাবানলের গতিপথ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।

এদিকে বিপর্যস্ত অস্ট্রেলিয়া কে বাঁচাতে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ার মুসলমান ও খ্রিস্টান ধ ধর্মাবলম্বী লোকজন। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।  প্রতিবেদন থেকে জানা যায, রবিবার অ্যাডিলেডের বন পার্কে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার ব্যবস্থা করেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কিছু লোক। এসময় মুসলমানরা তাদের সাথে একত্রিত হয়। প্রায় ৫০ জন মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুও প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন । সেখানে তারা দাবানল থামাতে ও খরা জনিত অঞ্চলের জন্য সৃষ্টিকর্তা র কাছে বৃষ্টির প্রার্থনা করেন।### ৫.১.২০২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.