--- বিজ্ঞাপন ---

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের নতুন লেসার অস্ত্র

0

ইরানের দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির মুখে যুগান্তকারী লেসার ভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আবিষ্কার করল ইহুদী  রাষ্ট্র ইসরাইল। আর এ সংবাদটি এমন এক সময় প্রচার করা হল যখন ইরানের জেনারেল সোলেমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সৈন্যদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল ইরান। ইসরাইলের বন্দর নগরী হাইফা লক্ষ্য করে ইরান মিসাইল হামলা চালাবে এমর্মে ইতিপূর্বে হুমকি দিয়েছিল ইরান। সিরিয়া ও ইরাকে ইরানের নানা স্থাপনার উপর  ইসরাইল বেশ কয়েকবার আচমকা হামলা চালিয়েছে। তখন থেকেই দেশটি ইরানের প্রতিশোধমূলক  ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে রয়েছে। ইরানের কমান্ডার কাশেম সোলেমানিকে ইরাকে ড্রোন থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে হত্যার পর ইসরাইল এখন ২৪ ঘন্টা নিজেদের সতর্ক অবস্থায় রেখেছে।

ইসরাইলের  নতুন এই লেসার বেইজড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল ঠেকাতে এবং ধ্বংস করতে সক্ষম। এমনটি বর্তমান লেসার নিয়ন্ত্রিত এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে ইসরাইলে ব্যাপকভাবে চালু ‘আয়রণ ডোম’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস এর চাইতে বেশী কার্যকর এবং এতে খরচও পড়বে কম। ইসরাইলের সংবাদ মাধ্যম এই নতুন আবিষ্কারকে যুগান্তকারী অস্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। মর্টার থেকে শুরু করে ড্রোন, রকেট, ট্যাংক বিধ্বংসী  ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইলও তৎক্ষণাত ছাই করে দিতে পারবে এই শক্তিশালী  লেসার নিয়ন্ত্রিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইসরাইলের সংবাদমাধ্যমগুলো গত দু’দিন এই লেসার অস্ত্র আবিষ্কারের খবরটিকে ফলাও করে প্রচার করেছে। পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী আকাশে ভাসমান টার্গেটকে ধবংস করতে পারবে এই লেসার নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেট  বলেছেন, এই লেসার নিয়ন্ত্রিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কয়েকগুণ মজবুত করল। বর্তমানে ইসরাইলের হাতে থাকা নিজেদের তৈরী  ‘এ্যারো ‘, প্যাট্রিয়ট প্রভৃতি ক্ষেপণাস্ত্রের চাইতে অধিক কার্যকর ও সাশ্রয়ী হবে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস । অতীতের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পরিবর্তে আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে এই নতুন লেসার অস্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরাইলের দৈনিক  ‘ইদিয়ত আ’হারনত’ পত্রিকা ৯ জানুয়ারী এ খবর দেয়। পাশ্ববর্তী  প্রতিবেশী  শক্তিশালী  মুসলিম দেশ তুরস্ক ও ইতিমধ্যে লেসার অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছে যা ইরান ছাড়াও ইসরাইলের  জন্য মাথাব্যথার আরও একটি কারণ । তুরস্কের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক  বর্তমানে শীতল।

মুসলিম দেশ তুরস্কও ইতিমধ্যে লেসার অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছে যা  ইসরাইলের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ

“তুরস্কের তৈরী লেসার অস্ত্র দিয়ে লিবিয়ায় চীনের তৈরী মনুষ্যবিহীন উইং লুং-২ সামরিক ড্রোন ইউএভি বিমান ভূপাতিত” শিরোনামে এ সংবাদ প্রকাশিত হয় একটি সামরিক অনলাইন ওয়েবসাইটে। গত ১২ আগস্ট প্রকাশিত হয় সংবাদটি । সকল সংবাদ মাধ্যমে হয়তবা ব্যাপকভাবে এর  প্রচার হয়নি। কিন্তু সংবাদটির গুরুত্ব খাটো করে দেখার উপায় নেই। তবে, ইউরোপের বেলজিয়াম ভিত্তিক প্রভাবশালী সামরিক বিষয়ক অনলাইন ওয়েবসাইট ‘আর্মি রিকগনিশন’ এ সংবাদটি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে ভবিষ্যতে এর ব্যাপকতা কতখানি তা-ও উল্লেখ করেছে।

সামরিক বিষয়ক সাংবাদিক আলেকজান্ডার টিমোখিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের প্রথম দিকের ঐ ঘটনায় দেখা গেছে, লিবিয়ার যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে জেনারেল খলিফা হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির  পক্ষে সংযুক্ত আরব আমীরাতের দেয়া  চীনের তৈরী  উইং লুং-২ শ্রেণীর মনুষ্যবিহীন সামরিক ড্রোন ইউএভি তুরস্কের তৈরী  লেসার অস্ত্রের সাহায্যে ভূপাতিত করা হয়। ড্রোনটির জলন্ত ধ্বংসাবশেষ চীনের টেলিভিশনেও  প্রদর্শন করা হয়েছে। লিবিয়ার  জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার ও মিসুরাত বাহিনীর পক্ষে তুরস্ক সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে এই সামরিক লেসার অস্ত্র প্রেরণ করেছে।

ইসরাইল ছাড়াও তুরস্কের লেসার অস্ত্রের সক্ষমতায় পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশ ও  সামরিক বিশেষজ্ঞরা বিস্ময় ও উদ্বেগ  প্রকাশ করে। ‘রিকগনিশন’ সামরিক বিষয়ক ম্যাগাজিনটি আরও লিখেছে, বিশ্বে দুই সামরিক পরাশক্তি দেশ  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াকে ডিঙ্গিয়ে লেসার অস্ত্র প্রযুক্তিতে তুরস্ক যে এতদূর এগিয়েছে এটা রীতিমত অবাক করে দেয়ার ঘটনা। পত্রিকাটি লিখছে, তুরস্কের তৈরী লেসার অস্ত্রের মাধ্যমে কি ভবিষ্যতে তাহলে লেসার অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে। নিত্য নতুন এবং হাইটেক প্রযুক্তির অস্ত্র আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তুরস্কের দিকে ইতিমধ্যেই সবার দৃষ্টি নিবন্ধিত। দেশটি হাইটেক অস্ত্র  ‘বেরাকতার টিবি-২’ ড্রোন, টি-১২৯ ‘এটাক’ হেলিকপ্টার ও টিএস ১৪০০ টার্বোশ্যাফট ইঞ্জিন, ভবিষ্যতের ষ্টীলথ জঙ্গী বিমানের মডেল টিএফ-এক্স

 

ইত্যাদি প্রযু্িক্ত উদ্ভাবনে সাম্প্রতিক সময়ে দৃষ্টি কেড়েছে সবার। ইসরাইল, গ্রীসসহ আঞ্চলিক অন্যান্য প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসিফ তায়িফ এরদোয়ান  এগিয়ে যেতে সংকল্পবদ্ধ। কয়েক মাস আগে গত ৩০ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত  ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আইডেক্স আন্তর্জাতিক সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে নিজেদের তৈরী  নতুন নতুন এসব হাইটেক অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শন করেছে তুরস্কের অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী ‘আসেলসান’, অটোকার, তুশাস, এফএনএসএস, রকেটসান, হাভেলসান, টিএআই, এসটিএমসহ কোম্পানীসমূহ।  একের পর এক নিত্য নতুন  হাইটেক অস্ত্রের ব্যবহার ও সক্ষমতা দেখিয়ে চলেছে তুর্কীরা।

২০১০ এর গোড়ার সময় থেকেই তুর্কিরা লেসার অস্ত্র নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। এসময় তুরস্কের ‘সাবটাগ’ নামক কোম্পানি রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা ‘তুবিতাক’ এর যৌথ সহায়তার ১.২৫ কিলোওয়াট থেকে ৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতার লেসার পরীক্ষামূলক উৎপাদন করে প্রদর্শন করে। পরবর্তীকালে এটি সামরিক কাজে ব্যবহার করার বিষয়টি তখন গোপণ থেকে যায়।

‘আর্মি রিকগনিশন’  লিখছে, ২০১৫ সালে তুরস্কের অস্ত্র গবেষণা সংস্থা  ‘তুবিতাক’ ঘোষণা  দেয় সংস্থাটি লেসার অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। নতুন অস্ত্র উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তুরস্ক  যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়ার মত ব্যয় করেনা। তবে লেসার অস্ত্র গবেষণায় তুরস্কের ন্যায় দেশ হঠাৎ বড় অংকের বাজেট শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই ৪৫ কোটি মার্কি

ন ডলার অর্থ ব্যয় করেছে। এরপর দেশটির বড় অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানীর মধ্যে ‘আসেলসান’ ২০১৮ সালের ৭ জুলাই জানায় যে, ঐ কোম্পানী একটি লেসার অস্ত্র তৈরীতে সফল হয়েছে যা দিয়ে ৫০০ মিটার দূরের মনূষ্যবিহীন ইউএভি ড্রোন এবং ২০০ মিটার দূরের সাঁজোয়া যান সহ ভারী লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম। পরে ঐ লেসার অস্ত্র অটোকার এর ‘কোবরা’ সাঁজোয়া যানে

সজ্জিত করা হয় এবং ঐ লেসার অস্ত্রের সাথে গাইডেন্স সিস্টেমস সংযুক্ত করা হয় যা দিয়ে লেসার অস্ত্রটি যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটি ধ্বংস হচ্ছে ততক্ষণ লক্ষ্যবস্তুতে স্থির ধরে রাখা যাবে।

তুর্কী সামরিক অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী ‘আসেলসান’ ও ‘অটোকার’ এর লেসার অস্ত্রের বিভিন্নমুখী ব্যবহার আবিষ্কার উন্নত বিশ্বের বিশেষ করে পশ্চিমা অস্ত্র রফতানিকারক প্রথম সারির দেশসমূহ আঁতকে উঠেছে। সাঁজোয়া যানে মোতায়েনযোগ্য লেসার অস্ত্র যা কিনা এখনও রাশিয়া কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেবেও দেখেনি তৈরীও করেনি সেটি বাস্তবে করে দেখাল তুরস্ক। শোনা যাচ্ছে, তুরস্ক স্প্রিং শ্রেণীর বিমানবাহী জাহাজ তৈরী করতে সচেষ্ট।  হয়তবা রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্ক হাইটেক অস্ত্র প্রযুক্তিতে বিশ্বে নিজেদের স্থান ক্রমেই মজবুত করছে। শোনা যাচ্ছে, দেশটি মার্কিন এফ-৩৫ ষ্টীলথ বিমান না দেয়ার বিকল্প নিজেদের তৈরী ৫ম জেনারেশনের টিএফ-এক্স ষ্টীলথ জঙ্গী বোমারু বিমান আগামী দিনগুলিতে হয়তবা  বাস্তবে বানিয়ে দেখাবে এতেও বিস্মিত হবার কিছু থাকবেনা।

# ০৯.০১.২০২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.