--- বিজ্ঞাপন ---

লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষে ॥ আগামীকাল সোমবার ভোটগ্রহণ, কে হচ্ছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের মাঝি!

0

কাজী আবুল মনসুর: কে হচ্ছেন চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম আসন-৮ এর (চান্দগাঁও-বোয়ালখালি) মাঝি। নৌকা নাকি ধানের শীষ। এ নিয়ে সরগরম এখন পাড়া-মহল্লা। শনিবার মধ্যরাত থেকে থেমে যাচ্ছে কোলাহল, প্রচার প্রচারনা। সোমবার ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে প্রশাসনের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। রবিবারের মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌছে যাবে সকল নির্বাচনী সরঞ্জাম। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষপর্যন্ত লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতিকের মধ্যে। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য ৬ প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে মূলতঃ দু’জনের মধ্যে। নৌকা প্রতিক নিয়ে দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। শতভাগ  ইভিএম মেশিনে হবে ভোটগননা। ফলে ফলাফলের জন্য তেমন অপেক্ষা করতে হবে না। দু’জনই  জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।

গত ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন মঈনউদ্দিন খান বাদল। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল অনেকটা আতঙ্ক ও শঙ্কার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে।  এবার প্রমবারের মতো উপ-নির্বাচনে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও নগরীর মোহরা, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, পূর্ব ও পশ্চিম ষোলশহর) আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে একাধিকবার বৈঠক ও মতবিনিময় সভা করেছেন ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই কমিশনার একাধিকবার নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা করেছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ জন পুলিশ ও ১১ জন আনসার সদস্য দায়িত্বে নিযুক্ত থাকবেন। এছাড়াও পুরো আসন জুড়ে টহলে থাকবেন ৫ প্লাটুন বিজিবি, ৬ প্লাটুন ‌র‌্যাব ‌সদস্য, ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এখানে মোট কেন্দ্রের  সংখ্যা ১৭০ টি। ১২’শ  ইভিএম মেশিন দিয়ে ১১৯৬টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। চট্টগ্রাম-৮ আসনটি সিটি করপোরেশন ৩, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরণদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার। কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮৯টি।

সংসদ সদস্য হওয়ার লড়াই এ আছেন আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন আহমেদ (নৌকা), বিএনপির হয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আবু সুফিয়ান (ধানের শীষ), বিএনএফ প্রার্থী এস এম আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বাপন দাশগুপ্ত (কুঁড়েঘর প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক (আপেল) ও ইসলামিক ফ্রণ্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মো.ফরিদ উদ্দীন (চেয়ার)।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে দাবি করে চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান বলেন, ভোটের মাঠের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক আছে। বড় ধরণের কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। ভোটের আগে ও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে।

এর আগে, গত ৩০ ডিসেম্বর বোয়ালখালীতে প্রচারণা চালাতে গেলে বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানের উপর হামলার অভিযোগ উঠে। এসময় তার কর্মীদের মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনেন তিনি। একইভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেও সুফিয়ানের গাড়িতে হামলা ও বোয়ালখালীর পৌরমেয়রের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। বছরের প্রথমদিন চান্দগাঁও আবাসিকে পোস্টার লাগাতে গিয়ে হামলার শিকার হন যুবদল নেতা মোশাররফ। ২ জানুয়ারি চান্দগাঁও খাজা রোডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন ইলিয়াস ও জাবেদের অনুসারীরা। এসময় জাবেদসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণাকালে বারবার এমন ঘটনা নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকলেও ভোটের মাঠের উত্তাপ বাড়ার শঙ্কায় আছে প্রার্থীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর প্রচারণাকালে পাল্টাপাল্টি হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এ শঙ্কা বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদন্ডী আমতল এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ককটেল বিস্ফোরন ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা স্লোগান দিয়ে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।

শনিবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ  হয়েছে প্রচারনা

শনিবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচারণা। নির্বাচনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনী অপরাধ আমলে নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাঁচ ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বোয়ালখালী অংশে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সারকে নিয়োগ দিয়েছে ইসি। এই দুই কর্মকর্তা আজ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণাকালে বারবার এমন ঘটনা নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিজেদের অবস্থান ইতোমধ্যে তুলে ধরেছে প্রশাসন। ইসির পক্ষ থেকেও প্রার্থীদের মতামত গ্রহণ করে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখার কথা বলা হয়েছে। ভোটারদের আস্থা ফেরাতে ও ভোটমুখী করতে নানা উদ্যোগে নিয়েছে ইসি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘সর্বোত্তম পন্থায় সর্বোতভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ

এদিকে বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, বোয়ালখালীতে আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এলাকায় গুলি ছুঁড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পোপাদিয়া এলাকায় এক কর্মীর মোটরসাইকেল ভেঙে পুকুরে ফেলে  দিয়েছে। নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথায় জসিম নামে এক আ. লীগ নেতা কর্মী-সমর্থকদের মোবাইলে হুমকি দিচ্ছে। গত নির্বাচনের মতো ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়, সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, আমি সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না। তাই আমার নেতা-কর্মীরাও নির্বাচনী আইন মেনে প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী বৃহস্পতিবার রাতে বোয়ালখালীতে নৌকার ক্যাম্পে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভোটারদেরকে ভীতি প্রদর্শন করছে। সেন্টার দখলের পাঁয়তারা করছে। আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হতে।

প্রধান দু’প্রার্থীর পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য

শেষপর্যায়ে এসে প্রধান দু’প্রার্থী মোছালেম উদ্দিন আহমেদ ও আবু সুফিয়ান একে অন্যের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়েছে। গণমাধ্যমকে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন,বিএনপি ভোট সেন্টার দখলের পায়তার করছে। অপরদিকে ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাতে আধারে নিজেদের অফিসে নিজেরাই আগুন দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।

নির্বাচনে যিনিই জয়লাভ করুক না কেন এলাকার মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন। কোন প্রকার সংহিসতা ছাড়া নির্বাচন যাতে সম্পন্ন হয় সেজন্য সক্রিয় রয়েছে প্রশাসন। দফায় দফায় বৈঠক করে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিজিবি ও র‌্যাব টহল নির্বাচনের পরেও থাকবে। পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য প্রার্থী, সমর্থকসহ সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন নির্বাচন কমিশন।

উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর কারণে আসনটি শূন্য হয়। পরবর্তিতে  শূণ্য আসনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় ১৩ জানুয়ারী। ### ১১.১.২০২০

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.