--- বিজ্ঞাপন ---

ভারতের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ পাকিস্তান

ট্রাম্পের পাকিস্তান সফর নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে দিল্লীর

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

পাকিস্তান এখন ভারতের চাইতে নিরাপদ দেশ। বিশ্বের সবচাইতে ২০টি বিপদজনক দেশের তালিকায় পাকিস্তানের নাম আসেনি এসেছে ভারতের। অপরদিকে সর্বশেষ আরও একটি খবর ভারতের জন্য অনেকটা দু:সংবাদের মত। সে খবরটিও ভারতের পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ পেল। খবরটি হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের ভাষায় সন্ত্রাসী মদদদাতার দেশ পাকিস্তানে শীঘ্রই সফরে যাচ্ছে। এছাড়াও, আরও একটি খবর নিয়েও ইতিমধ্যে ভারতের মোদী সরকার বেশ বিব্রত। পাকিস্তানে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল  ম্যাচ খেলতে শুরু করেছে। ভারতের পত্রপত্রিকায় এনিয়েও সমালোচনার অন্ত নেই। সব মিলিয়ে ভারতের মোদী সরকার এখন ঘরে বাইরে ক্রমেই বিতর্কিত শাসকে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্বের বিপজ্জনক দেশগুলোর তালিকায় ভারতের নাম উঠল অথচ পাকিস্তান ঐ তালিকায় নেই। দুদিন আগে সংবাদটি লন্ডনের বিখ্যাত সংবাদ ম্যাগাজিন দ্য স্পেকটেটর এর জরীপে বেরিয়ে আসার পর থেকে ভারতের পত্রপত্রিকা বলছে এর ফলে বিশ্বে ভারতের ইমেজ অনেকখানি নষ্ট হয়ে গেছে। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের কলকাতার বাংলা ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকার মন্তব্য “বিশ্বের কাছে মুখ পুড়ল ভারতের ৷ বসবাসের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক দেশগুলির তালিকায় ভারত রয়েছে ৫ নম্বরে ৷ অথচ এই তালিকায় প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে নেই পাকিস্তান ৷“

ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য স্পেকটেটর ইনডেক্স এর এক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বসবাসের জন্য বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসাবে ৫ নম্বরে নাম রয়েছে ভারতের ৷ প্রথম ৪টি দেশ হল , ব্রাজিল,দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও আর্জেন্টিনা৷।

শনিবার দ্য স্পেকটেটর ইনডেক্স টুইট করে জানিয়েছে, ব্রাজিল এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ৷ এমন ২০ টিরও বেশি দেশের তালিকা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। ওই তালিকার ২০ নম্বর অর্থাৎ শেষে রয়েছে থাইল্যান্ড এর নাম। অথচ এই তালিকায় বসবাসের জন্য বিপজ্জনক দেশ হিসেবে নাম নেই পাকিস্তানের ৷

ম্যাগাজিনটিতে প্রকাশিত বসবাসের জন্য বিপজ্জনক দেশের তালিকা- ১. ব্রাজিল, ২. দক্ষিণ আফ্রিকা, ৩. নাইজেরিয়া, ৪. আর্জেন্টিনা, ৫. ভারত, ৬. পেরু, ৭. কেনিয়া, ৮. ইউক্রেন, ৯. তুরস্ক, ১০. কলম্বিয়া, ১১. মেক্সিকো, ১২. যুক্তরাজ্য, ১৩. মিশর, ১৪. ফিলিপাইন, ১৫. ইতালি, ১৬. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৭. ইন্দোনেশিয়া, ১৮.গ্রীস, ১৯. কুয়েত ও  ২০. থাইল্যান্ড।

ইমরান আমার খুব ভাল বন্ধু-ট্রাম্প

অপরদিকে  খুব শীঘ্র পাকিস্তান সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেদেশের ডন সহ বিভিন্ন পত্রিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী  শাহ মাহমুদ কোরেশীর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলন চলছে। আর সেখানেই মুখোমুখি বৈঠক হয়েছিলেন পাকিস্তানের  প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, ডোনাল্ড  ট্রাম্প পাকিস্তানে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ভারতে আসার আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল ডোনাল্ড  ট্রাম্পের। তাই ভারতে আসার পথে তিনি ইসলামাবাদ ঘুরে আসছেন কিনা সে বিষয়টা স্পষ্ট নয়। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এর দাবি ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই পাকিস্তানে আসার কথা জানিয়েছেন।

যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পাকিস্তানে আসার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, “ভারতে আসার পথে কি আপনি পাকিস্তানে যাবেন?” তার উত্তরে ডোনাল্ড  ট্রাম্প বলেন, “এই তো আমাদের দেখা হচ্ছে আর যাওয়ার প্রয়োজন নেই ”।

হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আগে কখনো হয়নি। তাঁর দাবি দেশ হিসেবে আগে সেরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমেরিকা ও পাকিস্তানের ছিল না তবে বর্তমানে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাতে দুই দেশ কাছাকাছি এসেছে।”

সম্প্রতি ভারতের তরফে জানানো হয়েছে শীঘ্রই আসবেন ভারতে তারিখ নিয়ে কথাবার্তা চলছে। গত বছর ২৬ জানুয়ারি অতিথি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প কে আমন্ত্রণ করেছিল ভারত। কিন্তু সময়ের অভাবে আসতে পারেননি মার্কিন  প্রেসিডেন্ট।

গত এক বছরের মধ্যে এই নিয়ে তিনবার মুখোমুখি হলেন ইমরান খান ও ট্রাম্প। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দাবী এ বৈঠক খুবই ফলপ্রসু হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন তিনি নিজে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্যের মতো বিষয় সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

কিছুদিন আগেই পাকিস্তানকে গ্রে লিস্টে ফেলে ছিল এফএটিএফ। হাফেজ শহীদ, মাসুদ আজহারের মত জঙ্গী নেতাদেরকে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল এই এফএটিএফ।

ইমরানের সাক্ষাতে মুগ্ধ ট্রাম্প কন্যা

পাকিস্তানের দি নিউজ পত্রিকা জানায়, ডাভোসে ওয়াল্ড ইকনমিক ফোরামের সফরসূচীর এক ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী  ইমরান খানের সাথে দেখা করেন ট্রাম্পের কন্যা ও হোয়াইট হাউসের সিনিয়র এডভাইজর ইভাংকা ট্রাম্প। উভয়কে আন্তরিকভাবে হেসে কথা বলতে দেখা যায় বলে পত্রিকাটি মন্তব্য করেছে।

কাশ্মীর নিয়ে আবারও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প

ভারতের পত্রিকা সংবাদ প্রতিদিন মন্তব্যে জানায়, ফের কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন  আমেরিকার  প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার পরই কাশ্মীর নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক সামিটের ফাঁকে মঙ্গলবার ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেন  ট্রাম্প। জানা গিয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে।  এদিন ট্রাম্প বলেন, “ইমরান আমার খুব ভাল বন্ধু। বাণিজ্য ছাড়াও আমরা কিছু সীমান্ত  নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছি। কাশ্মীর নিয়ে ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও আমাদের কথা হয়েছে। যদি আমরা সাহায্য করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সাহায্য করব। আমরা খুব খুব গুরুত্বের সঙ্গে দু’দেশের দিকে নজর রাখছি। আমরাই দুই পড়শি দেশের মধ্যে চলা বিবাদ শেষ করতে পারব, কারণ এই কাজ অন্য কেউ পারবে না।”

উল্লেখ্য, এর আগেও কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমনকী ভারতের প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীর নিয়ে তাঁর সাহায্য চেয়েছিলেন বলেও দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। এহেন পরিস্থিতিতে ফের কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে নয়াদিল্লীর উদ্বেগ বাড়িয়েছেন তিনি। এদিকে, ডাভোসে বৈঠকের পর ইমরান বলেন, “কাশ্মীর ইস্যুটি খুবই বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানে আমাদের জন্য ভারত একটা বিরাট বিষয়। এবং অবশ্যই আমরা সবসময় আশা রাখি যে সমস্যা সমাধানে আমেরিকা একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, যেটা আর কোনও দেশ পারবে না।”

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইমরান খানের বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন  দিল্লী। কারণ, কাশ্মীর নিয়ে কোনওভাবেই তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ চায় না ভারত। গত বছর জুলাইতে হোয়াইট হাউসে গিয়েও একই আর্জি জানিয়ে এসেছিলেন ইমরান। তবে কাশ্মীরের মতো দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আমেরিকার মধ্যস্থতার কোনও  প্রশ্নই ওঠে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় দিল্লী।

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.