--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রাম সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র পদে নতুন নাকি পুরানো মূখ

0

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী মার্চে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে পাড়া মহল্লায় আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীতা নিয়ে। কেউ বলছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনই হচ্ছেন আওযামী লীগের প্রার্থী। কিন্ত অনেকে তা মানছেন না, বলছেন পরিবর্তন আসবে মেয়র প্রার্থীতায়। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পুত্র বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলকে মনোনয়ন দেয়া হবে। নওফেল নির্বাচনে আদৌ আগ্রহী কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে এরই মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আবারও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকার পরে চট্টগ্রামের মেয়রের স্থান। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তাই সারাদেশের জন্য একটি আলোচনার বিষয়বস্ত। ঢাকার পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে আগামী মার্চে। এ নির্বাচন নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগ। কারন আসনটি এখন নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের হাতে। তাই স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন এটি প্রায় নিশ্চিত। হাইকমান্ডের উপর নির্ভর করছে সবকিছু। যদি নেত্রী আবারও যদি তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে তার প্রার্থীতা নিয়ে হৈচৈও থেমে নেই। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাইছে আ জ ম নাছিরের পরিবর্তে নতুন কাউকে প্রার্থীতা করার। এ ক্ষেত্রে নাম আসে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র মহিবুল হাসান নওফেলের। কিন্ত তিনি বর্তমানে শিক্ষ উপমন্ত্রী হিসেবে আছেন। এখান থেকে সরে মেয়র নির্বাচন করেেবন কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে গুঞ্জন রয়েছে নেত্রী যদি তাকে মেয়র নির্বাচনের জন্য বলেন তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।
চট্টগ্রামের নগর আওয়ামী লীগে গ্রুপিং নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে এ গ্রুপিং চলে আসছে। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের গ্রুপিং এর বিষয়টি অনেক পুরানো। মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাবার পর গ্রুপিং রূপ নিয়েছে আ জ ম নাছির বনাম নওফেলের মধ্যে। ছাত্রলীগ, যুবলীগেও একই অবস্থা। দু’নেতার সাথে দু’গ্রুপ। দু’নেতার সাথে আলাদা আলাদাভাবে তারা চলাফেরা করেন। মাঝে মধ্যে দু’গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষও বাধে। তবে মন্ত্রী থাকার কারণে নওফেলের প্রায়শ ঢাকায় অবস্থানের কারণে গ্রুপিং সেরকম তীব্র আকার ধারন করে না। নাছির ও নওফেল দু’জনে যথাসম্ভব নিজেদের পরস্পর পরস্পর হতে দুরে সরিয়ে রাখেন। আ জ ম নাছির মেয়র হবার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হতে বঞ্চিত ছিলেন। সেটা হলো তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা না দেয়া। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়ররা সাধারনত প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পায়। চট্টগ্রামের চেয়ে ছোট অনেক সিটি কর্পোরেশনে সার্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে এ মর্যাদা দেয়া হলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এটা ঠিক কি কারণে দেয়া হয় নি এ বিষয়ে কেউ মূখ না খুললেও আ জ ম নাছিরের সমর্থকরা বলছেন, চট্টগ্রামের মেয়র ¯্রফে গ্রুপিং এর শিকার।
তবে যাই হোক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাইছে নওফেল নির্বাচন করুক। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন তাই তিনি হাল ধরুক। কিন্ত নওফেলকে নেতা-কর্মীরা ঠিক রাজী করাতে পারছেন না বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। রাজনৈতিক যাত্রাও শুরু হয় চট্টগ্রাম মহানগর থেকে। ২০১৪ সালে ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্য করা হয় নওফেলকে। যুক্ত ছিলেন যুবলীগের রাজনীতির সাথে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। কর্মীভিত্তিক রাজনীতিতে তার প্রভাব অতুলনীয়। পড়াশুনা শেষ করার পর মহিবুল হাসান চৌধুরী হয়ে উঠেন তার যোগ্য উত্তরাধিকার। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে। তখন মহিউদ্দিন অনুসারীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। ঢাকায় বসেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন রাজনীতির প্রয়োজনেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মূল্যায়ন দরকার। ফলে দলীয় কাউন্সিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভাগ বন্টন হলে তার উপর বর্তায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব। দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই বাজিমাৎ করেন তিনি। নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ভূমিকা তখন বেশ প্রশংসা পায়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সিনিয়র অনেক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায় দলের ভেতরে মহিবুল হাসান চৌধুরী তার মেধা, ফ্রেস ইমেজ, বিচক্ষণতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আছেন। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করা মহিবুল পরে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি সম্পূর্ণ করেন। ১/১১ সময়কালীন লন্ডনে অবস্থানরত বিদেশী আইনজীবী ও অর্থনীতিবীদদের একত্রিত করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে জনমত তৈরীর ভূমিকা রেখেছেন রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠা নওফেল। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর আওয়ামী লীগের প্রতি ত্যাগ এবং নওফেলের বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্য পছন্দ হয় শেখ হাসিনার। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় নওফেলকে। সেই দায়িত্ব যোগ্যতা, মেধা এবং নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে পালন করছেন তিনি। বক্তব্যে যেমন অনলবর্ষী, টকশোতে যুক্তির মহারাজ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘ ১৬ বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনকালে বাবাকে নানা উন্নয়ন কাজে পেছন থেকে পরামর্শকের ভুমিকা পালন করেছে তিনি। ১৯৯৪ সালে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। টানা ১৭ বছর মেয়র হিসেব দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে বিএনপিতে যাওয়া এম মনজুর আলমের কাছে তিনি হেরে যান। পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের হাতছাড়া থাকার পর ২০১৫ সালে জয়ী হয়ে ফের চসিক আওয়ামী লীগের কাছে ফিরিয়ে আনেন আ জ ম নাছির উদ্দীন, যিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
নওফেলের ঘনিষ্ঠ সমর্থক বলে পরিচিত নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক নুরুল আজম রনি বলেন, নওফেল ভাই নির্বাচন করতে চাইছেন না। তবে এটা ঠিক যে, নগর মেয়রের পদে যিনি বসবেন তিনি যদি দলের দায়িত্বেও থাকেন তাহলে দলে সময় দিতে পারেন না। তাই দল ও মেয়র পদে দু’জন আলাদা নেতা থাকলে ভালো হয়। যিনি মেয়র হবেন তিনি মেয়রের কাজ করবেন, অন্যদিকে দলের নেতা যিনি হবেন তিনি দলের কাজ করবেন। বর্তমান নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বয়সের ভারে ন্যুজ। তার পক্ষে দল ঠিকমতোন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক বিষয়টি মাথায় রেখে মেয়র নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
এদিকে মেয়র পদে আবারও মনোনয়ন চাইবেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, আমি দলের দুঃসময় থেকে এখনো সক্রিয় আছি। গতবারও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার নেত্রী মনোনয়ন দিলে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করবো। তাই আমি দলের মনোনয়ন পত্রও সংগ্রহ করেছি।’ জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ডান হাত বলে পরিচিত সুজন। এক সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা বলে পরিচিত সুজন ছিলেন অধুনালুপ্ত জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কিমিটির সাবেক সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে সরেজমিন আলাপকালে দেখা যায়, মেয়র পদে প্রার্থীতার বিষয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিগত মেয়র নির্বাচনের পর তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ক্ষমতায় বসার পর পর তিনি নগরকে জঞ্জাল মুক্ত করেছেন। বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে ঢাকা পড়া নগর চট্টগ্রামের সৌন্দর্য্য তিনি ফিরিয়ে এনেছেন। নগরীর রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা দুর করে প্রতি ঘর থেকে আবজর্না পরিস্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নগরীর বেশ কিছু ওয়ার্ডের ফুটপাত পরিস্কার সাধারন মানুষের বসার জায়গা করেছেন। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ডে পরিনত করার কাজ শুরু করেছেন। ফুটপাত থেকে হকারদের ব্যবসা সরিয়ে বিকেলে অফিস ছুটির পর বসার স্থান নির্ধারন করে সাধারন মানুষের হাটাচলার পথ সুগম করার ব্যবস্থা করছেন। নগরীর এক্সেস রোডসহ বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়নে কাজ করেছেন।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, নেত্রী যদি আবারও নির্বাচন করার সুযোগ দেন তাহলে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি আধুনিক নগরীতে রূপান্তর করবেন। অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য তিনি আবারও প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।’### ১১.২.২০২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.