--- বিজ্ঞাপন ---

চার্লস শোভরাজ দ্যা কিলার…২

0

কাজী ফেরদৌস :

চার্লস শোভরাজের হত্যাকাণ্ডের শুরুঃ ১৯৭৫ সালের ব্যাংককে এক পর্যায়ে তার সাথে যোগদান করে এক ভারতীয় তরুণ অজয় চৌধুরী।অজয় তার বিশ্বস্ত সহকর্মী এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতে থাকে। এই দুজন মিলে বেশ কটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে। যদিও শোভরাজের বর্ননা মতে তাদের বেশির ভাগ মারা গেছে অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারনে কিন্তু পরবর্তী পুলিশি তদন্তে দেখা যায় তারা আসলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে ছিল ।ব্যাংককে তাদের প্রথম শিকারে পরিনত হয় আমেরিকার সিয়াটল এর থেরেসা নলটন নামে এক মহিলা টুরিস্ট। ফুলেল বিকিনি পরিহিত অবস্হায়সমুদ্রে স্নানরত অবস্থায় ডুবে মরেছে বলে প্রচার হলেও পরবর্তী ময়না তদন্ত ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দের তদন্তে প্রমাণিত হয় যে তাঁকে পানিতে ডুবার আগে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল।

শোভরাজ ও চৌধুরীর পরবর্তী টার্গেট হয় কিছুটা যাযাবর প্রকৃতির ইহুদি টুরিস্ট বেটালি হাকিম। পাতায়ার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি সড়কে তার অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায় যার কাছাকাছি কোন খানে শোভরাজ ও তার ক্রিমিনাল গ্যাং এর অবস্থান ছিল। সোভরাজ এর পরবর্তী টার্গেট হয় ডাচ তরুণ হেন্ক বিটান্জ ও তার প্রেমিক কর্নেলিয়া হেমেকার।তাদের সাথে শোভরাজ এর সাক্ষাৎ হয় হংকং শহরে। শোভরাজ তাদের ব্যাংকক সফরে আমন্ত্রণ জানালে তারা ব্যাংকক বেড়াতে আসে । শোভরাজ তাদের প্রথমে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে আমাশা রোগাক্রান্ত করে আবার তাদের চিকিৎসা প্রদান করে সুস্থ করে তোলে যাতে তারা দুজন তার প্রতি আনুগত থাকে । কিন্তু এর মধ্যে তার পূর্ববর্তী টার্গেট ইহুদি টুরিস্ট বিটালী হাকিমের এক প্রেমিকা ক্যারো নামের এক তরুণী ব্যাংকক এসে হাজির হয় হেকিমের অন্তর্ধান রহস্যের সন্ধানে। শোভরাজ তার কুকীর্তী ফাঁস হওয়ার আশংকায় প্রথমে বিন্টাজ ও হেমেকার দুজনকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার চিন্তা করে।

১৬, ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে তাদের দুজনের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায়।এর পরপরই বিটালি হেকিমের এর গার্লফ্রেন্ড ক্যারো কে বিকিনি পরহিত অবস্থায় পাতায়া বীচে মৃত পাওয়া যায়।এর আগে থেরেসা নলটন ও বিকিনি পরহিত অবস্থায় মারা যায়।এতে করে শোভরাজ অপরাধ জগতে বিকিনি কিলার হিসেবে পরিচিতি পায়।যদি ও পুলিশ এসব হত্যাকাণ্ডে শোভরাজ এর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়।২০ শে ডিসেম্বর বিন্টাজ ও হমেকার এর লাশ পাওয়া গেলে শোভরাজ ও তার সহযোগী কানাডার মেয়ে মেরী এন্ড্রী সহ থাইল্যান্ড ছেড়ে হেকিম ও ক্যারোর জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে নেপাল পালিয়ে যায়।এখানে এসে তারা দুজন একত্রে মিলিত হয় এবং ২১ ও ২২ ডিসেম্বর একজন আমেরিকান ব্রোনজিক ও একজন কানাডার নাগরিক ক্যারিরি কে হত্যা করে এবং তাদের মৃতদেহ সনাক্তহবার আগেই তাদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাইল্যান্ড ফিরে আসে।

থাইল্যান্ডে ফিরে আসার পর শোভরাজ বুঝতে পারে তার পূর্ববর্তী তিনজন ফ্রেঞ্চ সহযোগী তাঁকে সিরিয়াল কিলার হিসেবে সন্দেহ করতে শুরু করেছে । ঐ তিনজন মৃত ব্যক্তিদের কাগজপত্র পরীক্ষা করে এটা নিশ্চিত হয় যে তাদের হত্যাকাণ্ডের সাথে শোভরাজ জড়িত ছিল। বিষয় টি তারা থাই কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্যারিস চলে যায়। শোভরাজ তার পরবর্তী ডেসটিনেশন হিসেবে বানারস অথবা কোলকাতা কে বেঁচে নেয়।এখানে এসেই শোভরাজ ইসরাইলী স্কলার এবনি জ্যাকভ কে হত্যা করে শুধু তার পাসপোর্ট টা হাতিয়ে নিয়ে সেটা নিজে জাল করে ব্যবহার করার জন্য। সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে শোভরাজ তাঁর বান্ধবী এন্ড্রী ও ভরতীয় সহযোগী চৌধুরী কে নিয়ে প্রথমে সিঙ্গাপুর পরে ভারত হয়ে মার্চ১৯৭৬ থাইল্যান্ড ফিরে আসে যদিও সে জানত থাইল্যান্ডে সে একজন মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল ছিল। থাই পুলিশ শোভরাজ ও তার গ্যাং কে ইন্টারোগেশন করে। কিন্তু থাই কর্তৃপক্ষ হত্যা মামলাটির প্রচার প্ররাচনা তাদের পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশংকায় পুরো ঘটনা টি ধামাচাপা দেয় এবং শোভরাজ মালয়েশিয়া পালিয়ে যায়।

এসময় ডাচ ডিপ্লোমেট হারমেন নিপেনবার্গ নিজেই বিটানজা এবং হেমকার এর মামলাটি তদন্ত শুরু করে এবং নিশ্চিত হন যে এই হত্যা কাণ্ডে শোভরাজ সংশ্লিষ্ট ছিল এবং তার প্রতিবেশী দের সহায়তায় শোভরাজ এর বিরুদ্ধে একটি মামলা দাঁড় করাতে সক্ষম হয় । কিন্তু ততদিনে শোভরাজ ও তার তিন সহযোগী মালয়েশিয়া পালিয়ে যায়। ওখানে চৌধুরীকে মূল্যবান পাথর ও রত্ন চুরির কাজে নিয়োজিত করে। পুলিশ চৌধুরীর সাথে শোভরাজ এর সম্পর্ক উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হলে চৌধুরী নিখোঁজ হয়ে যায়।তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় শোভরাজ তার সহযোগী চৌধুরী কে গুম করে ফেলে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.