--- বিজ্ঞাপন ---

অনুসন্ধানী সাংবাদিক হতে চান?

0

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হল সাংবাদিকতার একটি ধরন, যেখানে একজন সাংবাদিক কোন একটি বিষয়ে গভীরভাবে তদন্ত করে থাকেন। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর একটি বিষয়ের উপর গবেষণা করেন এবং প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।

অনসুন্ধানী সাংবাদিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রেস এ্যাসোসিয়েশন অব জাম্বিয়ার নির্বাহী সদস্য বেনেডিক্ট থেমবো বলেন, ‘Investigative Journalism is the type of journalism which thrives on exclusive stories through digging [up] information from government, non-governmental organisations and the private sector to do stories in public interest.”

ডেইল মেইল ও গার্ডিয়ানের সাবেক সম্পাদক, গণমাধ্যম শিক্ষক Dr Howard Barrell অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে সঙ্গায়িত করেছেন এভাবে, Reporting undisclosed facts which, as a matter of public interest, one believes to belong in the public sphere and the uncovering of such facts involves concerted investigation by one or more journalists in a newspaper.

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সবচেয়ে ক্লাসিক উদাহরণ হচ্ছে ওয়াটারগেট কেলেংকারীর ঘটনা। দুনিয়া নাড়া দেওয়া “ওয়াটারগেট কেলেংকারি”র খবর প্রকাশ করে ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’র দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টেইন বিশ্বখ্যাত ও জনপ্রিয় হয়েছিলেন। যে সময় তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ওই কেলেংকারির খবরের পেছনে ছোটা শুরু করেছিলেন, তখন তারা ছিলেন মাত্র বিশ পেরোনো দুই যুবক।

১৯৭২ সালের ১৮ জুন ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’র প্রথম পাতার নিচের দিকে Five Held in Plot to Bug Democratic Offices Here শিরোনামে ছোট্ট যে খবরটি প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল, দুই বছরের ধারাবাহিক অনুসন্ধান শেষে সেই খবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা অধ্যায় শেষ করেছিল।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বাহন হচ্ছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সাধারনত দু’ভাগে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনকে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে পড়ে দূনীর্তি, অপরাধ, অপকর্ম ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত ঘটনাসমূহের উন্মোচন, ইংরেজি ভাষায় যাকে বলা হয় এক্সপোজ। এই গোত্রের সংবাদগুলো সাধারনত অনেক নাটকীয় ধরনের হয়।

অনেকেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলতে কেবল এই ধরনের সংবাদকেই বোঝেন। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের গোষ্ঠি স্বার্থের দিকে তাকিয়ে এক ধরনের সাংবাদিকতা হয়ে থাকে। একে কমিউনিটি ইন্টারেস্ট ইনভেসটেগেটিভ জার্নালিজম বলা হয়। সাধারনত দুর্নীতি বা কেলংকারীর বিষয় নয়, বরং জনস্বার্থ সংক্রান্ত জরুরি বিষয়সমূহকে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠির স্বার্থ সংরক্ষণ করার মধ্যে দিয়ে এ ধরনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ক্সতরি করা হয়।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কেন গুরুত্বপূর্ণ, এবার চলুন তার কয়েকটি খুব সংক্ষেপে জেনে নেই।

১. অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সংবাদপত্রের মর্যাদা ও জনপরিসরে এর গুরুত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যে পত্রিকা যত বেশি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে, পাঠক সে পত্রিকার ব্যাপারে ততই আগ্রহী হয় ও পত্রিকাটিকে মর্যাদার আসনে বসায়।

২. শক্তিমানদের বিরুদ্ধে লোকসাধারনের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা।

৩. স্বচ্ছ ও জবাবদিহীতামূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্থম্ভ এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হলো এই সংবাদপত্রের আত্মাস্বরুপ।

৪. ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান, সেটা সরকারি বেসরকারি যাই হোক, তাদের জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছতা ক্সতরিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ভূমিকা পালন করে।

৫. গণমাধ্যমকে সাধারনত জনস্বার্থের ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে হয়, আর এই কাজটি করতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এছাড়া ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পত্রিকার অক্সিজেন হিসেবে কাজ করে। সম্প্রচার মাধ্যমের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সংবাদপত্র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

আপনি অনুসন্ধানী সাংবাদিক হতে চান? চলুন খুব সংক্ষেপে জেনে নেই অনুসন্ধানী সাংবাদিক হয়ে উঠতে গেলে একজন সাংবাদিককে কি কি গুণ থাকতে হয়

ধর্য্য
একটি অনুসন্ধানী সংবাদ ক্সতরি করতে অনেক সময় একজন সাংবাদিকের কয়েক বছর লেগে যায়। দীর্ঘ সময় একটি সংবাদের পেছনে লেগে থাকার ক্সধর্য্যই একজন ইনভেসটিগেটিভ সাংবাদিকের মূল চালিকাশক্তি।

অনুসন্ধিৎসু মন
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ক্সতরি করতে হলে একজন সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসু মন থাকতে হবে। ঘটনার ভেতরে যাওয়া, যা সাদামাটা চোখে দেখা যাচ্ছে, সেটাকে সত্য না ভেবে ঘটনার ভেতরে গিয়ে সত্যিকার তথ্য খুঁজে বের করা।

উদ্যোগী হওয়া
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করতে গেলে প্রথমেই একজন সাংবাদিককে উদ্যোমী হতে হবে। যে ঘটনায় অনুসন্ধান জরুরি, সেটা বুঝে নিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে নেমে পড়তে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেঁচো খুড়তে গিয়ে শাপ বেরিয়ে আসে। একজন সাংবাদিক যিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে চান, তাকে অবশ্যই কেঁচো খোড়ার কাজটি নিয়মিত করতে হবে।

যোগাযোগ দক্ষতা একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে যোগাযোগ দক্ষ হতে হবে। কাংক্ষিত তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে তিনি কিভাবে, কার কার সাথে যোগাযোগ করবেন, নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করবেন, সে ব্যাপারে সাংবাদিককে অবশ্যই জানতে হবে। সংবাদ সূত্র ও উৎস ব্যবস্থাপনা তাকে হতে হবে সিদ্ধহস্ত।

সাহস
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিশ্চিতভাবেই সাহসের কাজ। জনস্বার্থ সংরক্ষনের জন্য অনেক সময়ই একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে হয়। এসব কাজে মৃত্যুঝুঁকি, শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। সত্য উদ্ধারের জন্য সাংবাদিককে লড়ে যাওয়ার মানুষিকতা ক্সতরি করতে হবে।

বিষয় সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞান
আপনি যে বিষয়ে অনুসন্ধান করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত জানাশোনা থাকা জরুরি। কাজ শুরুর আগে পুরো বিষয়, ঘটনা নিয়ে আপনার গবেষণা করে নিতে হবে।

সততা ও নীতি নৈতিকতা
একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে অবশ্যই সৎ ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। লোভের কাছে নতজানু না হওয়া, অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করা, পেশার প্রতি সৎ থাকা আর নিজের যোগ্যতা ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়ে চলার মধ্যে দিয়েই তিনি একজন বড় সাংবাদিক হয়ে উঠবেন।

ভালো প্রতিবেদন রচনার দক্ষতা
সাংবাদিক হতে গেলেই তাকে লিখতে জানতে হবে। একটি ভালো প্রতিবেদন কিভাবে লিখতে হয়, সেটাকে কতোটা সুখপাঠ্য ও সহজবোধ্য করে পাঠকের কাছে পৌঁছানো যায়, তার জন্য নিয়মিত চর্চা করতে হবে। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক দীর্ঘ সময়, অর্থ ব্যয় করে একটি সংবাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এই সংবাদটি সূচারুরুপে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে পারাটাও একটি বড় যোগ্যতা।

সূত্র: মুক্তপাঠ।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.