--- বিজ্ঞাপন ---

ইসরাইল-আরব সম্পর্ক , বাহরাইনের পর কোন দেশ !

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম##

মঙ্গলবার ১৫ সেপ্টেম্বর দিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির এক নতুন দিগন্ত উম্মোচনের দিন। আর কয়েক  ঘন্টার মধ্যে স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে চুক্তিটি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষায় এটিকে ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যবহ আখ্যা দিয়ে মুসলিম দেশগুলো ও ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের মধ্যে শান্তি আনয়নে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ । মুসলমান, খ্রীস্টান ও ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের নিকট পবিত্র হযরত ইবরাহিম (আ:) এর নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে। এ চুক্তির আয়োজনকারী দেশগুলি বলছে,মার্কিন  ইসরাইলের সাথে বৈরী আরব ও মুসলিম দেশগুলির মধ্যেকার সম্পর্কে এক নতুন দিগন্তের শুচনার সূত্রপাত হতে যাচ্ছে। শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব ত্যাগ করে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সাম্প্রতিককালে প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সর্বশেষ দেশ  বাহরাইনের শান্তির ঘোষণা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলছেন  আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

তাঁর  উপস্থিতিতে মঙ্গলবার ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশগুলোর মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরের দিনটি এজন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। বাহরাইনের শান্তি ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের  বলেন, বাহরাইনের এই ঘোষণার  দিনটি  অবশ্যই একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দুটি দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এগিয়ে আসার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য অতীতের চাইতে আরও স্থিতিশীল হবে। এবং এতদঞ্চলে শান্তি ও  সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। বাহরাইন হচ্ছে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী সর্বশেষ ইহুদী রাষ্ট্রটির বিরোধিতাকারী অন্যতম মুসলিম উপসাগরীয় আরব দেশ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃক দেশটির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের এক মাসের মধ্যে এটি দ্বিতীয় উপসাগরীয় এবং ইসরাইলের আশেপাশের বৈরী মুসলিম দেশ। গত শুক্রবার ( ১১ সেপ্টেম্বর ) উপসাগরের এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির রাজা হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু  শান্তি চুক্তিতে উপণীত হয়। মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এর পর বাহরাইন হচ্ছে ইহুদী দেশটির সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনকারী চতুর্থ আরব রাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইবাঙ্কার স্বামী জামাতা সিনিয়র এডভাইজার জারেদ কুশনার মূলত: এই চুক্তির অন্যতম রুপকার। তিনি জাতিতে একজন ইহুদি ও কট্টর ইসরাইলের সমর্থক। সর্বশেষ বাহরাইনের সাথে ইসরাইলের শান্তি চুক্তি সম্পর্কে বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস এপি’কে দেয়া তাৎক্ষনিক মন্তব্যে তিনি বলেছেন, উপসাগরীয় আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাত্র ২৯ দিনের মাথায় এই চুক্তি সম্পন্ন হল। তার মতে, এটি অত্যন্ত দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। ইসরাইল রাষ্ট্র পত্তনের ৭২ বছরের মধ্যে দেশটির বৈরী মুসলিম প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ৪টি দেশ এপর্যন্ত ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করল। প্রথম ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে ঐতিহাসিক  শান্তি চুক্তি করে মিসর ১৯৭৯ সালে। এরপর ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের সীমান্তবর্তী অপর দেশ জর্ডান কায়রোর পদাঙ্ক অনুসরন করে শত্রুরাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে শান্তির হাত বাড়ায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেশটির সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ( ১৩ আগস্ট ) দীর্ঘ ২৬ বছর লেগে যায়। মুসলিম আরব দেশগুলোর মধ্যে পরবর্তী দেশ হিসেবে সৌদি আরবের কথা পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে গুঞ্জন বেশ ফলাও করে শুনা যাচ্ছে।  আরব আমিরাত কর্তৃক ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তির ঘোষণার পর ইতিমধ্যে সৌদি সরকারের কতিপয় পদক্ষেপ ইসরাইলের সাথে দেশটির সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণেরই ইঙ্গিত বহন করছে। রিয়াদ সম্প্রতি সেদেশের আকাশসীমায় ইসরাইলের বিমান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে। সর্বশেষ অপর একটি বিষয়কে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো দাবী করে বলেছে যে, জুমা’র খোতবায় মক্কা শরীফের গ্রান্ড মসজিদের ইমাম  আবদুল রহমান আল সৌদও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আভাস দিয়েছেন। সব মিলিয়ে সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে পরবর্তী দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বলে সম্ভাব্য দেশ বলে মনে করছেন বিশ্বেষকরা। উপসাগরীয় অপর দেশ ওমানের নামটিও বলা হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে।  তবে ইসরাইলের সাথে বাহরাইন ও আরব আমীরাতের শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টাকে প্যালেস্টাইনীদের পীঠে ছুরিকাঘাত বলে মন্তব্য করেছেন তাদের নেতৃত্ব। প্রতিবেশী দেশ ইরান, বাহরাইনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ সহ আরও অনেকে এর কঠোর সমালোচনাও করেছেন।##১৫.৯.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.