--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তিতে ৪৬তম বাংলাদেশ

0

কাজী আবুল মনসুর##

পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন দেশ সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বসে নেই বাংলাদেশও। তবে গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ বিশ্বের সামরিক শক্তির পরিসংখ্যানে এক ধাপ পিছিয়েছে। দু”ধাপ এগিয়েছে মিয়ানমার। বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি মিয়ানমার। তারা বিভিন্ন সময় সীমান্তে তাদের বাহিনী জড়ো করে সামরিক শক্তির বিষয়টি জানান দেয়। গত বছর ১৩৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৫। এবার হয়েছে ৪৬। মিয়ানমার ৩৭ থেকে উঠে এসেছে ৩৫ এ।ভারতের স্থান ৪ নাম্বারে, আর পাকিস্তান রয়েছে ১৫ নাম্বারে। তাদের অবস্থানের কোন হেরফের হয়নি।

সারা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ১৩৮টি দেশের সামরিক শক্তি নিয়ে কাজ করছে ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’ নামের সংস্থাটি। সম্প্রতি ২০২০ সালের তালিকা তারা প্রকাশ করেছে।প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে, প্রতিবছরের মত এ বছরও সামরিক শক্তিতে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়া। অন্যদিকে, তৃতীয় চীন ও চতুর্থ স্থানে ভারত।এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তিতে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫ তে। বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের অবস্থান ৩৫তম। তালিকায় ১৩৮টি দেশের মধ্য ৪৬ নাম্বারে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

৫০টিরও বেশি মাপকাঠির ভিত্তিতে গ্লোবাল পাওয়ার: মিলিটারি স্ট্রেন্থ র‍্যাংকিং’ তালিকা প্রকাশ করে। ১৩৮টি দেশের মধ্যে সামরিক শক্তিতে সর্বশেষ, ১৩৮তম অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান। তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০ দেশ এর নামগুলো হলো  যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন,ভারত,জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, মিশর, ব্রাজিল।

তবে গত বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছনে গেলেও সামরিক শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। নৌ-পথ ও স্থল পথে বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বাড়ছে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের সামরিক শক্তির  ১১ ধাপ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’র প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য মতে বাংলাদেশের অবস্থান  ২০১৮ ছিল ৫৬।দয়ৎসেভেলে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার, এর মধ্যে সবাই সক্রিয়৷ সামরিক বাহিনীতে কোনো রিজার্ভ সদস্য নেই৷ দেশের মোটর জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৬০ শতাংশ সামরিক বাহিনীতে কাজের যোগ্য৷ প্রতি বছর ৩০ লাখ ৬০ হাজার ৫৭৩ জন সামরিক বাহিনীর চাকরির বয়সে পৌঁছায়৷সামরিক বাহিনীতে ৪৫টি যুদ্ধ বিমান, ৪৫টি অ্যাটাক বিমান, ১২টি কার্গো বিমান, ১২টি ট্রান্সপোর্ট বিমান, ৫৭টি প্রশিক্ষণ বিমান এবং ৫৯টি হেলিকপ্টার রয়েছে৷ এই জরিপে কোনো দেশের পরমাণু শক্তির বিষয়টি আমলে নেয়া না হলেও স্বীকৃত ও সন্দেহভাজন পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোকে বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে৷ বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে ৩৪০টি ট্যাঙ্ক, ৫২১টি আর্মড ফাইটিং যান, ১৮টি স্বয়ংস্ক্রিয় আর্টিলারি, টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো বাহন ৩৪০টি এবং ৩৬টি রকেট প্রজেক্টর রয়েছে৷নৌ বাহিনীর হাতে দুটি সাবমেরিন, ছয়টি ফিগ্রেড, চারটি মাইন ওয়ারফেয়ার এবং ২৬টি পেট্রোল ভেসেল আছে৷ কেবল একটি দেশের সামরিক সরঞ্জামের সংখ্যা দিয়ে এই শক্তিমত্তা নির্ণয় করা হয়নি৷ কোন দেশের সামরিক সরঞ্জাম কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ তা-ও বিবেচনা করা হয়েছে৷ জ্বালানি, অর্থনীতি এবং ভূখণ্ডকেও সামরিক শক্তি নিরূপণের মাপকাঠি হিসেবে ধরেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার৷ তারা বলছে, বাংলাদেশ প্রতিদিন তিন হাজার ৬৬৬ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে, এরমধ্যে এক লাখ ১৯ হাজার ব্যারেল তেল ব্যবহার হয়৷ বাংলাদেশে তেল সংরক্ষণ করা আছে দুই কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল৷ সামরিকখাতে বাংলাদেশের বাজেটের পরিমাণ ১৫৯ কোটি ডলার৷ বৈদেশিক ঋণ রয়েছে পাঁচ হাজার ২৬ কেটি ডলার৷ আর বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ (স্বর্ণ) আছে তিন হাজার ৩৪২ কোটি ডলার৷

অপরদিকে পাকিস্তান এসেছে ১৭ থেকে ১৫ তে। তবে ভারতও তাদের অবস্থান সংহত করে  ৪ নাম্বারে উঠে এসেছে। মিয়ানমারের অবস্থান ৩৭তম থেকে ৩৫ এ।

গত ২০০৬ সাল থেকে গ্লোবাল পাওয়ার এ জরীপ চালিয়ে আসছে । ১৩৮ টি দেশের উপর করা এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ এখন ৪৬তম সামরিক শক্তির অধিকারী দেশ। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল অবস্থান ৪৫তম। প্রতিবেদনে বিশ্বের সামরিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে প্রথম থেকে ২০ এর মধ্যে দেশগুলো হলো  যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত , ফ্রান্স, জাপান,  দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য,  তুরস্ক,  জার্মানি. ইতালি, মিসর, ব্রাজিল, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া,  অস্ট্রেলিয়া ও  স্পেন।সবচেয়ে নিচের তালিকায় রয়েছে ভুটান।

এ অঞ্চলে সামরিক শক্তিতে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে ভারত ৷ পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোট যে বোমায় কেঁপে উঠেছিল, সেই শক্তিশালী স্পাইস বোমা এবার আরও বেশি সংখ্যায় চলে এল ভারতে ৷ ইজরায়েলি সংস্থার কাছ থেকে স্পাইস ২০০০ বোমা নিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা ৷ প্রথম দফায় স্পাইস ২০০০ বোমা এবং মার্ক ৮৪ ওয়ারহেডস গুলি এসে পৌঁছেছে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র মিরাজ ২০০০ যুদ্ধ বিমানগুলির বেস হল এই গোয়ালিয়রের বায়ুসেনার বিমানঘাঁটি ৷ গোটা একটা বিল্ডিং ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখে এই স্পাইস ২০০০ বোমাগুলি ৷ পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে স্পাইস ২০০০ বোমার ব্যবহার করা হয়েছিল ৷ নতুন বোমা ও তার সরঞ্জাম কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ৷ বাঙ্কার থেকে শুরু করে বড় বড় বিল্ডিং সবই ধ্বংস করতে সক্ষম এই শক্তিশালী বোমা ৷

এ অঞ্চলের দেশগুলো হঠাৎ করে সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তান। পাশাপাশি মিয়ানমারের কারনে বাংলাদেশেরও সামরিক শক্তি বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন।### ১৮.৯.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.