--- বিজ্ঞাপন ---

মহাকাশের মহাবিস্ময়

0

কাজী আবুল মনসুর##
আকাশ সত্যি কত বড়ো। উপরের দিকে তাকালে আকাশ দেখে আমাদের আশ্চর্য  হওয়া ছাড়া আর কোন কিছু মনে আসে না। কত বড় বড় পন্ডিত, জ্যের্তিবিদ বছরের পর বছর ধরে এর আয়তন মাপতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে গেছেন। কত রকমের আকাআকি,হিসেবপত্র কষা হয়েছে। কিন্ত কোথায় সীমানা? যুগ যুগ ধরে চলছে মহাকাশ নিয়ে গবেষণা। অবিশ্বাস্য কত কিছু যে মহাকাশ নিয়ে রচিত হয়েছে। আমাদের দৃষ্টির বাইরে এই দুর আকাশ হলো মহাকাশ। আর এ মহাকাশকে যদি সাগরের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে আমাদের এই পৃথিবী হবে তারই বুকে এক ফোটা জল। আর আমরা সেই পৃথিবীর বুকে কয়েক’শ কোটি মানুষ বাস করছি । পৃথিবীর ভেতরে থাকা মানুষগুলোকে মহাকাশের তুলনায় মনে হবে অতি ক্ষদ্র ক্ষুদ্র জীবানু।
দুর আকাশের যে বিশেষ জিনিষটি আমাদের চোখে লাগে তা হলো সূর্য। এটি দিনের বেলায় এত উজ্বল যে যার দিকে ভালো করে তাকানো যায় না। সকালে বা সন্ধ্যায় এটি লাল থালার মতো হয়ে যায়।  সূর্য পৃথিবী থেকে এত বিশাল যা বলাবাহুল্য। বিজ্ঞানীরা বলেন, ১৩ লাখ পৃথিবীকে যদি একত্র করা হয় তাহলে তা হবে সূর্যের সমান! সূর্য অনেক দুরে আছে বলেই তা অনেক ছোট দেখায়। পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। কিলোমিটারের হিসেবে তা হলো ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার। আর এ সূর্যকে মাঝখানে রেখে পৃথিবী তার চারিদিকে ঘুরছে। শুধু পৃথিবী নয়, পৃথিবীর মতো আরও কতগুলি জ্যেতিষ্ক পদার্থ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। সেগুলো গ্রহ বলে পরিচিত। গ্রহগুলো যতদুর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ততদুর পর্যন্ত সূর্যের রাজত্ব। বাংলায় যার নাম সৌরজগত। কিন্ত মহাকাশের তুলনায় এ সৌরজগত কিছু না।
সৌরজগতের বাইরে যে বিশাল মহাকাশ আছে তাতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আলোকবিন্দু। যেগুলো নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। খালি চোখে পৃথিবীর এক এক গোলার্ধ থেকে তিন হাজার তারা দেখতে পাওয়া যায়। আর দুরবিণ দিয়ে দেখলে তার পরিমান বহুগুন বেশি। বিজ্ঞানীরা অবশ্য় কোটি কোটি তারার সন্ধান পেয়েছে।  এগুলো আকারে নাকি সূর্যের চেয়েও বড়। হতে পারে কয়েকগুন!

বিজ্ঞানীরা ‘মীরা’ নামের একটি তারার কথা বলেছেন, যার মধ্যে নাকি আমাদের পৃথিবীর মতো তিন হাজার নয়’শ কোটি পৃথিবী ভরে রাখা যাবে!  ‘সপ্তর্ষি’ নামে তারার নাম আমরা প্রায়শ শুনি। একটি তারার ঝাকঁ। তারও ফাকেঁ ফাকেঁ আমাদের সৌরজগতের মতো ২৫টি সৌরজগত ঢুকে যাবে। ‘হারকিউলস’ নামে একটি তারার ঝাকঁ আছে যার এক কোণা থেকে আর কোণা মাপলে হয় ৩৬০০ তে ৫৮৭৬০৬৮৮৮০০০০ দিয়ে গুন করলে যত হয় তত। মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা। অথচ এটাই সত্যি।
সূর্য পৃথিবী হতে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দুরে। সূর্য যখন পৃথিবীর আকাশে দেখা দেয় ঠিক তখনই আমরা দেখতে পাই না। দেখতে পাই ৮ মিনিট পর! অর্থাৎ সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে আট মিনিট। আলোর গতি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ড ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আর সবচেয়ে কাছের তারা থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে কত সময় লাগে চার বছর তিন মাস! এবার দুরের তারাগুলোর আলোর নাইবা বললাম। অথচ প্রতি রাতে আমরা আকাশের দিকে তাকালে দেখি কতো তারা মিট মিট করে জ্বলছে। আমরা যে তারাগুলো রাতে দেখি সেগুলো কিন্ত ঐ সময়ের তারা নয়, অনেক আগে একদিন সে তারা রওয়ানা হয়েছিল। তারপর ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হয় আমাদের চোখের সামনে। ঔ আলো যেদিন রওয়ানা হয়েছিল সেদিন হয়তো পৃথিবীতে মানুষের কোন অস্তিত্ব ছিল না। হয়তো অতিকায় কোন প্রানী পৃথিবীতের ঘুরে বেড়াতো। শুধু গ্রহ, তারা না আরও কত উজ্বল জ্যোতিষ্ক মহাকাশ ঘুরে বেড়ায়।  নীহারিকার নাম আমরা শুনেছি। নীহারিকা আসলে জ্বলন্ত পিন্ড। মহাকাশের কোটি কোটি মাইল এলাকা জুড়ে এদের রাজত্ব। এক একটা নীহারিকা কত বড় হতে পারে তা ধারনার বাইরে। বিজ্ঞানীরা ‘এ্যান্ড্রামিডা’ নামের একটি নীহারিকার ওজন সর্ম্পকে বলেছেন, এটির ওজন আমাদের সূর্যের চেয়েও তিন হাজার কোটিগুন বেশি! আর ‘এ্যান্ড্রোমিডা’ নিয়ে কাহিনীর শেষ নেই।  মহাকাশের সব চেয়ে দূরের যে জিনিষটি দেখা যায় তাও নীহারিকা। যা থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগবে ৫০০ কোটি বছর!
মহাকাশের বাসিন্দা যেমন পৃথিবী তেমনি আরও আটটি গ্রহও পৃথিবীর মতো সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। এদের মধ্যে সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ হলো বুধ বা মার্কারি, তারপর শুক্র বা ভেনাস, পৃথিবী বা আর্থ, মঙ্গল বা মার্স, বৃহস্পতি বা জুপিটার, শনি বা স্ট্যাটার্ন, ইউরেনাস, নেপচুন , প্লুটো। ভ্যালকান নামের আরও একটি ক্ষুদ্র গ্রহের কথা বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন। এ ছাড়া মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝখানে ছোট ছোট অসংখ্য গ্রহ ছড়িয়ে আছে, তাদের গ্রহ কণিকা বা গ্রহাণু বলা হয়।
অবস্থাটা এমন, প্রতি ঘন্টায় ৬০ মাইল গতিতে চলা একটি রেলগাড়ী কোথাও না থেমে শুক্র গ্রহে পৌছুতে সময় নেবে, ৫৩ বছর! তারপর মঙ্গলে যেতে ৭৫ বছর, বুধে যেতে ১১০ বছর, বৃহস্পতিতে যেতে ৭৪০ বছর, শনি গ্রহে যেতে ১৪৭০ বছর, ইউরেনাসে যেতে ৩১৬০ বছর আর নেপচুনে যেতে লাগবে ৫০৫৫ বছর! আর সূর্যে যেতে লাগবে ১৭৭ বছর। তবে চাদেঁ যেতে কম সময় লাগবে। মাত্র সাড়ে ৫ মাস।
মহাকাশে সূর্যের রাজ্য, গ্রহের রাজ্য ছাড়িয়ে আছে নক্ষত্র বা তারার রাজ্য। তারাগুলো গ্রহের চেয়েও অনেক বড়ো। আমাদের চোখে গ্রহ আর তারা দেখতে একই রকম লাগে বিধায় আমরা পার্থক্যটা ধরতে পারি না। আকাশের দিকে তাকালে দেখি অনেক তারা বেশি উজ্বল। অনেকগুলো হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে উঠে। বৃহস্পতি আর শুক্র গ্রহ খুব জ্বলজ্বলে। তাই এগুলোকে তারার মতো মনে হয়। আর তারার আলো কখনও স্থির থাকে না বলে চিনতে কষ্ট হয়। তারাগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে একবার জ্বলছে আর একবার নিভছে।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে অনেক সময় আমরা দেখি সাদা রঙের আবছা একটা পথ অনেক দুর চলে গেছে। এটি আসলে ছায়াপথ। তবে নীহারিকাই হচ্ছে আকাশের সবচেয়ে দুরতম অধিবাসী। আকাশের কোটি কোটি মাইল জুড়ে দাউ দাউ করে অবিরাম এগুলো জ্বলছে। এসব নীহারিকা কোনটি গোল, কোনটি থালার মতো, আবার ডিমের মতো, আছে স্ক্রুর মতো প্যচানো। আসলে আকাশযোড়া অগনিত নক্ষত্ররাজি, গ্রহ-উপগ্রন-সূর্যে গড়া আমাদের সৌরজগত। আর এসবের সৃষ্টি নাকি ঐ নীহারিকা থেকেই। আরও রয়েছে উল্কা, ধুমকেতু। আরও কত বাসিন্দা রয়েছে মহাকাশের। যেগুলোর অনেক অজানাই রয়ে গেছে।

গ্রহদের কথা
বুধ গ্রহের ব্যাস – ৪,৮৮০ কিলোমিটার, ওজন ৩৩০২০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ৫৭৯০৯১৭৫কিলোমিটার, এক বছর হয় ৫৮.৬৪ দিনে (সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসতে লাগে) , তাপমাত্রা ১৬৬.৮৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। বুধের কোন চাদঁ নেই।শুক্রর ব্যাস-১২,১০৩ কিলোমিটার, ওজন ৪৮৬৯০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ১০৮ ২০৮৯৩০ কিলোমিটার, এক বছর হয় ২২৪ দিনে, গড় তাপমাত্রা ৪৫৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। শুক্রর কোন চাদঁ নেই। পৃথিবীর ব্যাস – ১২৭৫৬ কিলোমিটার, ওজন ৫৯৭২০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরুত্ব প্রায় ১৪৯,৬০০,০০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় ৩৬৫ দিনে, গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পৃথিবীর একটি চাদঁ আছে। মঙ্গলের ব্যাস ৬৭৯৪ কিলোমিটার, ওজন ৬৪২১৯০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ২২৭,৯৪০,০০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় ৬৮৬ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। মঙ্গলের দুটি চাদঁ আছে। বৃহস্পতির ব্যাস ১৪২৯৮৪ কিলোমিটার, ওজন ১৮৯৮৬০০০০০০০০০০০০ টন,সূর্য থেকে দুরুত্ব ৭৭৮৪১২০১০, এক বছর হয় আমাদের পৃথিবীর ১১ বছর ৩১৪ দিনে, গড় তাপমাত্রা ১৪ থেকে ১৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, বৃহস্পতির ৬৩টি চাদঁ আছে। শনির ব্যাস ১২০৫৩৬ কিলোমিটার, ওজন ৫৬৮৪৬০০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ১৪২৬৭২৫৪০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় আমাদের পৃথিবীর ২৯ বছর ১৬৮ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১৩৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, চাদঁ আছে ৩৪ টি। ইউরেনাসের
ব্যাস ৫১১১৮ কিলোমিটার, ওজন ৮৬৮,৩২০,০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ২৮৭০৯৭২২০ কিলোমিটার, এক বছর হয় আমাদের পৃথিবীর ৮৪ বছর ৪ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১৯৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, ২৭টি চাদঁ আছে। নেপচুনের  ব্যাস ৪৯৫২২ কিলোমিটার, ওজন ১০২৪৭০০০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ৪৪৯৮২৫২৯০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় পৃথিবীর ১৬৪ বছর ২৯৮ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, চাদঁ আছে ১৩টি। প্লুটো সূর্য থেকে সবেচেয় দুরের গ্রহ। এটির ব্যাস ২৩৯০ কিলোমিটার, ওজন ১২৯০০০০০০০০০ টন, সূর্য থেকে দুরত্ব ৫৯১৩৫২০০০০ কিলোমিটার, এক বছর হয় পৃথিবীর ২৪৭ বছর ২৫৬ দিনে, গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, চাদঁ আছে ৩টি। এই ৯টি গ্রহের বাইরে আরও একটি গ্রহ আবিস্কারের কথা বেরিয়েছে। যার নাম ‘জেনা’। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন এই গ্রহটির ব্যাস ৩০০০ কিলোমিটার যা প্লুটোর চেয়ে বড়ো। এই গ্রহটিরও একটি চাদঁ আছে। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।###২৫.৯.২০

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.