--- বিজ্ঞাপন ---

আজারবাইজানের ড্রোনে ব্যাপক ক্ষতি আর্মেনিয়ার সেনা রেজিমেন্টের

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম##

আজারবাইজান দখলকৃত নগর্নো-কারবাখ অঞ্চল পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে বেশ সক্রিয়ভাবে এগুচ্ছে। এরই মধ্যে ড্রোন হামলা চালিয়ে আর্মেনিয়ার একটি সেনা রেজিমেন্টের ব্যাপক ক্ষতি করেছে বলে দাবী করেছে আজারবাইজান। অপরদিকে আর্মেনিয়া দাবি করেছে তারা আজারবাইজানের বেশ কয়েকটি সামরিক যান, ড্রোন ধংস করেছে। থেমে থেমে যুদ্ধ চলছে। পাশাপাশি শান্তি প্রচেষ্টার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগও থেমে নেই। কারন এ যুদ্ধ থামাতে না পারলে বড় দেশগুলো জড়িয়ে যাবার আশঙ্কা আছে।

আন্তর্জাতিক পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফেক্স জানিয়েছে তুরস্কের তৈরী ড্রোনের সাহায্যে আক্রমণ চালিয়ে আজারবাইজানের বিমান বাহিনী আর্মেনিয়ার ৩য় মোটর রাইফেল রেজিমেন্ট মার্টুনি সর্ম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। অপরদিকে দুদেশের এই যুদ্ধের উপর তীব্র নজর রাখা ইসরাইলের প্রভাবশালী পত্রিকা জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, তাদের নিকট প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যুদ্ধের তৃতীয় দিনে আজারবাইজান তাদের লক্ষের দিকে এগিয়ে চলেছে। পত্রিকাটি ইসরাইলি গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে জানায়, দখলকৃত নগর্নো-কারাবাখের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারি আর্মেনিয়ার সৈন্যদের সড়কের উপর কৌশলগত পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেছে আজারি বাহিনী। ঐ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেই আর্মেনিয়া লজিস্টিক সাপোর্ট হারিয়ে নগর্নো-কারাবাখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

আজারবাইজানের বর্তমানে মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ফ্রন্ট লাইনের ২৫০ কিলোমিটার এলাকা ভেদ করে অগ্রসর হওয়া। সেই লক্ষ্যে আজারি বাহিনী  এখন পাহাড়ের উঁচু মুরুভদাগ চূড়ায় পৌঁছেছে। তবে নীচের ভার্দেনিস-আগদারা সড়কটি দখলই এখন প্রধান লক্ষ্য। এটির দখল নিলেই আর্মেনিয়া নগর্নো-কারাবাখের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এদিকে রুশ সংবাদ সংস্থা ইন্টারফেক্স জানিয়েছে, খোজাবান্দ এলাকায় আর্মেনিয়ার মার্টুনি মোটরাইজড রাইফেল রেজিমেন্ট আজারবাইজানের হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। অপরদিকে আর্মেনিয়া একটি আজারি এসইউ-২৫ জঙ্গী  বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে দাবী করলেও বাকু এটা স্রেফ প্রোপাগান্ডা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। উভয়পÿের প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমসমূহ জানিয়েছে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ই্উনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার প্রাক্কালে আজারবাইজান ৯১’র  আগস্টে এবং আর্মেনিয়া সেপ্টেম্বরে স্বাধীন দেশ হিসেবে  আত্নপ্রকাশ করে। সেসময় নগর্নো-কারাবাখ নামক ৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল এবং সেখানে বসবাসরত প্রায় ১লক্ষ ৪৭ হাজার খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ  মুসলিম সংখ‌্যাগরিষ্ঠ আজারবাইজানের ভাগে পড়ে যায়। তখন থেকে তারা স্বায়ত্বশাসনের দাবী জানাতে থাকে। এ সুযোগে আর্মেনিয়া আচমকা এক ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে আজারবাইজানের একটি করিডোর অঞ্চল দখলে নিয়ে নগর্নো-কারাবাখে প্রবেশ করে এবং ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত  দীর্ঘ ৪ বছরের  যুদ্ধে ঐ এলাকাসহ আজারবাইজানের ২০ শতাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজী হয়। ঐ  যুদ্ধে ৩০ হাজার প্রাণহানি ও ১০ লক্ষ মানুষ গৃহহীণ হয়। নিরাপত্তা পরিষদের চার দফা প্রস্তাব অনুযায়ী আজারবাইজানের দখলকৃত নগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল  সে দেশকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলা হলেও নানা টালবাহানায় আর্মেনিয়া অদ্যাবধি দখলিকৃত ঐ এলাকাগুলো থেকে সরে আসেনি। যুদ্ধবিরতির প্রাক্কালে গঠিত অপর আন্তর্জাতিক সংস্থা ওএসসিই ( অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কোঅপারেশন অব ইউরোপ ) মিনস্ক গ্রুপ  ( রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এই গ্রুপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করে আসছে)  সংগঠনটি দুদেশের বিরোধ মিমাংসার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু এতদিনেও তারাও কোন ফলপ্রসূ কিছু করতে ব্যর্থ হয়। ফলে দুদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা লেগেই আছে। একের পর এক যুদ্ধ বেধে চলেছে।###৩০.৯.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.