--- বিজ্ঞাপন ---

লড়ছে আজারবাইজান, পাশে তুরস্ক, কেন এই যুদ্ধ

0

বিশেষ প্রতিনিধি ##

এশিয়া মহাদেশের একটি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র আজারবাইজান। কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরকে ঘিরে একটি চমৎকার দেশ। সারা বছর পর্যটকরা আজারবাইজান ভ্রমন করেন। এ দেশটির রয়েছে চমৎকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। উত্তরে রাশিয়া, দক্ষিনে ইরান, উত্তর পশ্চিমে জর্জিয়া। আর পশ্চিমে আর্মেনিয়া। তুরস্কের সাথে মিত্রতা বহু দিনের পুরানো। আজারবাইজানের ছিটমহল নাখশিভানকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের সখ্যতা রয়েছে। আজারবাইজানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে রয়েছে আর্মেনিয় এলাকা। এ এলাকার বিতর্কিত নর্গোনো- কারাবখ অঞ্চল নিয়ে দু’দেশের রেষারেষি চলছে অনেক বছর ধরে। আর্মেনিয়া এগুলো দখল করে রেখেছে। কাস্পিয়ান সাগর তীরের বাকু আজারবাইজানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর বলে পরিচিত।

উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ১৮শ ও ১৯শ শতকে ককেশীয় এই দেশটি পর্যায়ক্রমে রুশ ও পারস্যদেশের শাসনাধীন ছিল। রুশ গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯১৮ সালের ২৮শে মে তৎকালীন আজারবাইজানের উত্তর অংশটি একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু মাত্র ২ বছরের মাথায় ১৯২০ সালে বলশেভিক লাল সেনারা এটি আক্রমণ করে আবার রুশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং ১৯২২ সালে দেশটি আন্তঃককেশীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩৬ সালে আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে তিনটি আলাদা প্রজাতন্ত্র আজারবাইজান, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াতে ভেঙে দেওয়া হয়। তখন থেকেই আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকার খ্রিস্টান আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব্বের সূত্রপাত। নাগোর্নো-কারাবাখের জনগণ আর্মেনিয়ার সাথে একত্রিত হতে চায়। ১৯৯১ সালের ২০শে অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করলে এই দ্বন্দ্ব সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়। ফলে স্বাধীন দেশটির প্রথম বছরগুলি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবনতি, এবং নাগোর্নো-কারাবাখের যুদ্ধে অতিবাহিত হয়। ১৯৯৪ সালের মে মাসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়রা যুদ্ধে ক্ষান্ত দেয়। এখনও নাগোর্নো-কারাবাখ ও আরও ৭টি আজারবাইজানি জেলা আর্মেনীয়দের সামরিক নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৯৯৫ সালে আজারবাইজানে প্রথম আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ বছরই সোভিয়েত-উত্তর নতুন সংবিধান পাস করা হয়।

আজারবাইজানের বাকুতে রয়েছে তেল স্থাপনা। এ তেলক্ষেত্র বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু  নানা দুর্নীতি, সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ এবং দুর্বল সরকারের কারণে দেশটি খনিজ সম্পদ থেকে সম্ভাব্য মুনাফা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত ২০০০ সাল থেকে দেশটির অর্থনীতি ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি লাভ করে চলেছে। ২০০৭ সালে আজারবাইজানের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মূলত তেল খাতই এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। ২০০৭ সালের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (GDP) ৫২ শতাংশ খনিজ তেল খাত থেকে আসে। আজারবাইজানের মুদ্রার নাম মানাত।জারবাইজানের ৯৭ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর মধ্যে ৮৫% শিয়া এবং ১৫% সুন্নি। আজারবাইজান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক শিয়াবহুল দেশ। বাকুতে রয়েছে ঐতিহাসিক বিবি-হয়বত মসজিদ। মহানবীর এক বংশধরের সমাধির উপর এই মসজিদ নির্মিত হয় বলে ঐতিহাসিক সূত্র জানায়। দেশটির বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও রয়েছে। সংবিধানের ৪৮ তম ধারা অনুযায়ী আজারবাইজান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যা সকল মতাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে থাকে। দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।

আজারবাইজানের সাথে বর্তমানে আর্মেনিয়ার যে যুদ্ধ চলছে তাে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আজারবাইজান এবার জোটবদ্ধভাবে নেমেছে। হারানো অধিকার ফিরে পাবার জন্য আজারী বাহিনী। রুশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজারবাইজান একটুও শান্তি পাইনি আর্মেনিয়ার কারনে। চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৫ টি এলাকার দখল নিয়েছে আজারবাইজান। আর্মেনিয়া অনেকটা জোর করে এতদিন সেসব এলাকা দখল করে রেখেছিল। তাই বিশ্বের সার্পোটও তেমন পাচ্ছে না। এরই মধ্যে আজারবাইজানের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে অনেক দেশ।তার একমাত্র কারন আজারবাইজানের নায্য দাবী। ইতিমধ্যে আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধ বিরতির বিষয়টি সামনে আসলে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ স্পষ্টভাবে বলেছেন,নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে শান্তি আমরাও চাই। তবে এ প্রক্রিয়ার সাথে তুরস্ককে যুক্ত করতে হবে। চিরকাল তো যুদ্ধ চলতে পারে না। সেক্ষেত্রে শান্তি আলোচনা যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় ততই ভালো কিন্তু সে আলোচনায় তুরস্ককে রাখতেই হবে।” সোমবার তুরস্কের টিআরটি হাবের গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট। সাক্ষাৎকারে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বলেন, আজারবাইজানের  সেনারা কারাবাখের বেশ কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বাকুকে এই নিশ্চয়তা দেয়া হবে যে, নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চল থেকে ইয়েরেভান সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। ইলহাম আলিয়েভ বলেন, “আমরা অন্য কোনো দেশের ভূমির প্রতি নজর দেই নি কিন্তু আমাদের ভূখণ্ড আমাদের হাতেই থাকতে হবে।” এর আগে রোববার জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে আলিয়েভ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন, সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আর্মেনিয়া সুস্পষ্ট সময়সীমা ঘোষণা না করা পর্যন্ত আজারবাইজান যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাবে না।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট এলহাম আলিয়েভ আর এক টুইটবার্তায় বলেছেন, আর্মেনিয়ার সেনারা নাগোর্নো কারাবাখ অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নিলেই কেবল ওই দেশটির সঙ্গে তারা সংলাপে বসতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি এ অঞ্চলের যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য ইউরোপকে দায়ী করে ইউরোপের নীতিকে শান্তি বিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট এলহাম দ্রুত যুদ্ধ অবসানে আর্মেনিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ইউরোপীয় সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা মিনস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিনস্ক বর্তমানে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আজ এক বিবৃতিতে বিতর্কিত এলাকা নিয়ে সংকট সমাধানে সহায়তার জন্য তেহরানের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বলেছেন, আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সেখান থেকে আর্মেনিয় সেনা প্রত্যাহার এবং আলোচনার আহ্বান জানিয়ে ইরান প্রস্তাব তুলে ধরেছে যাতে যতদ্রুত সম্ভব যুদ্ধের অবসান ঘটে।

ইরানের মতো এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও যেমন কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরঘিজিস্তান এমনকি তুর্কমেনিস্তানও যুদ্ধ বন্ধের জন্য দুদেশের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছে। আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামরিক উপায়ে এ সংকটের সমাধান হবে না বরং রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান বেহেশতিপুর বলেছেন, যুদ্ধরত দুই দেশই ইরানের প্রতিবেশী। তাই একমাত্র সংঘাত অবসান ও সমঝোতা হলে ইরানের স্বার্থও রক্ষিত হবে।

, যুদ্ধ ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে এবং সামরিক উপায়ে এ সংকটের সমাধান হবে না বরং দ্বিপক্ষীয় কিংবা বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে যেভাবেই হোক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে নিঃসন্দেহে সংঘাত চলতে থাকলে বিদেশিরা এ অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি ও হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে যার পরিণতিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আরো বেশী বিবাদ তৈরি হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।###৬.১০.২০

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.