--- বিজ্ঞাপন ---

ফ্রান্স থেকে রাফাল জঙ্গী বিমান কিনলো ভারত

ব্যয় হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি টাকা, এসেছে ৫টি

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

ফ্রান্সের কাছ থেকে  ভারত তার বহু আলোচিত প্রতিক্ষিত ‘রাফাল’ জঙ্গী বিমানের প্রথম চালানটি আসার আগ থেকেই বলছিল এই জঙ্গী বিমানের ভয়ে পাকিস্তান থর থর করে কাঁপতে শুরু করেছে। ভারতের মোদি সরকারের পক্ষের মিডিয়া তো এ নিয়ে বেশ ফলাও প্রচার করে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সাথে লাদাখসহ দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে সংঘর্ষ উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের পক্ষ থেকে চীনের জন্যও রাফেল মাথাব্যথার কারণ হয়েছে বলছে। আসলে কি তাই? ভারতের সামরিক বিশ্লেষকরাই এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। মূলত: রাফাল জঙ্গী বিমান ক্রয়ের শুরু থেকেই নিশানা ছিল পাকিস্তান । ২০১৫ সালের এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্সে গিয়ে এই রাফাল ক্রয়ের চুক্তি করে।পাকিস্তানের বালাকোটে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী হামলার পর পাকিস্তানী বিমানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মিগ-২১ খোয়ানো পাইলট বন্দী হওয়ার পর থেকেই ভারত ‘রাফাল’ বিমান চালান দ্রুত ভারতে পৌঁছাতে ফ্রান্সকে চাপ দেয়। গোয়েন্দাদের নিকট থেকে  প্রাপ্ত তথ্য মতে, পাকিস্তানও ভারতের এই বিমান ক্রয় চুক্তির ঘোষণার শুরু থেকেই সে দেশের পাইলট ঐ বিমানের অপর ক্রেতা দেশ  কাতার পাঠিয়ে ‘রাফাল’ বিমান চালিয়েছে। এবং  গোপণীয় সব কিছু রপ্ত করেছে এবং নিজ দেশে তৈরী জেএফ-১৭ ব্লক-থ্রি নামের নতুন সংস্করণকে রাফালকে ঘায়েল করতে সক্ষম ২০০ কিলোমিটার পাল্লার পিএল-১৫ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল, অত্যাধুনিক আয়েসা রাডারসহ নানা প্রস্তুতিতে সজ্জিত করতে শুরু করেছে। চীন তো ভারতের এই ‘রাফেল’ বিমানকে পাত্তাই দিচ্ছেনা। তারা বলছে এটি  শুধুমাত্র একটি থার্ড প্লাস জেনারেশনের বিমান। যেখানে চীনের রয়েছে পঞ্চম জেনারেশনের রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম স্টীলথ সুপার টেকনোলজির জঙ্গী বিমান। গত ২৯ জুলাই ভারতে সেদেশের বহুল আলোচিত ফ্রান্সের তৈরী জঙ্গী বিমান ‘রাফাল’ এর প্রথম ৫টি বিমান পৌঁছেছে।

বেশ চড়া দামে রাফাল ক্রয়

পাঁচ বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্স সফরে গিয়ে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের ৬০ হাজার কোটি ভারতীয় রুপী ব্যয়ে ৩৬টি রাফাল জঙ্গী বিমান ক্রয়ের চুক্তি করেন। পরে এর মূল্য বেড়ে গিয়ে প্রতিটি বিমানের পেছেনে খরচ পড়ছে প্রায় ২৫ কোটি ডলারের কাছাকাছি। মোদি  সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই জঙ্গী বিমান আসায় সেদেশের বিমানবাহিনীর জন্য গেমচেঞ্জার। আরও বলা হচ্ছে, এই রাফেল-এ রয়েছে অত্যন্ত হাইটেক সুপরিয়র টেকনোলজি। এই পাঁচটি জঙ্গী বিমান আসার পর ভারতের মোদি সমর্থিত মিডিয়া বলতে শুরু করেছে পাকিস্তান ‘রাফালে’র ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এই জঙ্গী বিমান প্রাপ্তির পর বলেছেন, “ রাফাল থাকলে ভারতে বসেই বালাকোটে হামলা চালানো যেত”। তবে  আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা বিবিসি এই ‘রাফাল’ আসার পরপরই নানা সমর বিশেষজ্ঞদের মতামত সম্বলিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেদিন ওই পাঁচটি জঙ্গী বিমান ভারতে পৌঁছে সেদিনই ২৯ জুলাই দিল্লি থেকে বিবিসি প্রতিনিধি শুভজ্যোতি ঘোষ তার প্রতিবেদনে সামরিক পর্যবেক্ষকদের মতামতের উদ্ধৃতি দিয়ে এই যুদ্ধবিমান আসলে কতটা গেমচেঞ্জার পাকিস্তান কিংবা চীনের বিরুদ্ধে ঠিক কতটা সুবিধা দিতে পারবে সেটাও স্পষ্ট নয়।বিবিসি শিরোনাম দেয়, “রাফাল: এই ফরাসি যুদ্ধবিমান ভারতকে কি আদৌ কোন সুবিধা এনে দিবে?”ফ্রান্সের কাছ থেকে ভারত যে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রাফাল কিনছে, তার প্রথম ব্যাচের পাঁচটি ফাইটার জেট ২৯ জুলাই বুধবার বিকেলে উত্তর ভারতের আম্বালা বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেছে।

এক একটি রাফাল কিনতে ভারতের খরচ পড়েছে প্রায় দশ কোটি ডলার-এবং এই প্রতিরক্ষা ক্রয়ে কথিত দুর্নীতি নিয়ে একটা সময় সে দেশের রাজনীতিও ছিল সরগরম।ভারত দাবি করছে, এই যুদ্ধবিমান বিশেষ করে উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তের আকাশযুদ্ধে একটা ‘গেমচেঞ্জারে’র কাজ করবে। যদিও সামরিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাফালকে বিমানবাহিনীতে সক্রিয় করতে এখনও বেশ সময় লাগবে এবং এই যুদ্ধবিমান পাকিস্তান বা চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ঠিক কতটা সুবিধা দিতে পারবে সেটাও স্পষ্ট নয়।বস্তুত চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে গত মাসেই যে দেশ তার কুড়িজন সেনাকে হারিয়েছে, সেখানে এই আধুনিক জঙ্গী বিমান কেনাকে একটা বিরাট সঙ্কটের সমাধান হিসেবে ভারতে তুলে ধরা হচ্ছে।

ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল বি এস ধানোয়া

ফ্রান্স থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্টপওভার নিয়ে আসার সময় মাঝ-আকাশে ৩০ হাজার ফিট উচ্চতায় বিমানগুলোকে কীভাবে ট্যাঙ্কার থেকে রিফিউয়েল করা হয়েছে বা জ্বালানি ভরা হয়েছে সে ছবিও ভারতীয়রা এরই মধ্যে দেখে ফেলেছেন। ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান, এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া এর কথায়, “রাফাল আসলে ভারতের প্রতিরক্ষা সামর্থ্যে একটা বিরাট লাফ।”

“আমাদের দুই প্রতিপক্ষ দেশের ইনভেন্টরিতে এখন যে ধরনের যুদ্ধবিমান আছে তার চেয়ে এটা অনেক ভাল, অনেক দক্ষ,” এয়ার চিফ মার্শাল ধানোয়া বলেন, “এয়ার ডিফেন্সের ক্ষেত্রে যেটাকে আমরা ‘ডেটারেন্স’ বলি, অর্থাৎ শত্রু দেশ যেটাকে সমীহ করে চলে, সেটাও অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবে এই রাফায়ল।” “রাফায়ল আসার পর কেউই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় বা সীমান্তে চট করে ঘেঁষতে সাহস পাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস,” তিনি বলেন।গত বছর ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল বিমানের ‘পূজা’ করে এসেছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

‘রাফাল নতুন গাড়ি নয়’। তবে এই কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট আসা মানেই যে ভারতের বাজিমাত করে ফেলা নয় – সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও ভারতীয় বাহিনীর সাবেক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি।তিনি বলছিলেন, “এটাতে নিশ্চয় আমাদের এয়ার সুপিরিওরিটি বা এয়ার পোজিশনে অনেকটাই উন্নতি হবে। তবে তার পরেও কয়েকটা জিনিস মনে রাখার আছে।” “প্রথম কথা, রাফাল আসছে বেশ কম সংখ্যায়। তারপর পাইলটদের ট্রেনিং করাতে হবে, বিমানে ভারতের জন্য কিছু রদবদল করতে হবে, ওয়েপেনাইজেশন বা অস্ত্রসম্ভার যোগ করতে হব-এবং তাতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে,” তিনি বলেন “এটা গাড়ি কেনা নয় যে শোরুম থেকে বের করেই চালাতে শুরু করে দিলাম।”  “তাছাড়া রাফালকে মূলত যেখানে উড়তে হবে, হিমালয়ের সেই হাই-অল্টিচিউড টেরেইনটাও কিন্তু দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন ও দুরূহ ফ্লাইং এলাকা,” মেজর জেনারেল ব্যানার্জি বলেন।

চীনের আধুনিক জে-২০ জঙ্গি বিমান মোকাবেলা করবে ভারতের রাফাল

বছরচারেক আগে প্রায় ৬০ হাজার কোটি রুপি খরচ করে ভারত ফ্রান্স থেকে মোট ৩৬টি রাফায়ল কেনার চুক্তি করেছিল, সেই বিপুল দাম আর কেনার পদ্ধতি নিয়েও ভারতে বিতর্ক ও রাজনীতি কম হননি। দীপঙ্কর ব্যানার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, রাফাল এত দামী বলেই এগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভারতকে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। তার কথায়, “দেখুন চীন বা পাকিস্তানের কাছেও কিন্তু এর তুলনীয় এয়ারক্র্যাফট আছে। রাফাল অবশ্য কয়েকটা ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে, একটু বেশি সুপিরিওর।” “তবু আমি রাফায়ল-কে গেমচেঞ্জার বলতে রাজি নই। এর একটা কারণ, এই ধরনের হাই-অল্টিচিউড যুদ্ধে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমেও কিন্তু অনেক পরিবর্তন এসেছে-ফলে এই যুদ্ধবিমানগুলো আর অপরাজেয় নেই।” “আর এতো দামী এয়ারক্র্যাফট বলেই ভারতকেও খুব সাবধানে এটা ব্যবহার করতে হবে, খুব অ্যাডভেঞ্চারাস হওয়ার সুযোগ থাকবে না।””তবে রাফায়ল আসার পর ওই গোটা এলাকায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর পক্ষে অনেক নতুন কিছু করা সম্ভব হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই!”, বলছিলেন মেজর জেনারেল ব্যানার্জি। বিগত প্রায় দু’দশকের মধ্যে এটাই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমানের কেনাকাটা। কিন্তু সামরিক দিক থেকে প্রতিপক্ষ দেশগুলোর তুলনায় ভারতকে এটা ঠিক কতটা বাড়তি সু্বধিা দিতে পারে, সেটা কিন্তু খ্বু পরিষ্কার নয়।

ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিলনা ফ্রান্সের ‘রাফাল’

আসলে বিশ্ব  বাজারে রাফেল জঙ্গী বিমানের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। বিমান রফতানী বাজারে ফ্রান্সের ব্যয়বহুল এই ‘রাফাল’ এর সময় খুব একটা ভাল যাচ্ছিল না। ভারতের ইউরেশিয়া টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, ওমান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর লিবিয়া, কুয়েত, কানাডা, ব্রাজিল, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ এই জঙ্গী বিমান কিনতে অস্বীকৃতি জানায়। শুধুমাত্র মিশর, কাতার ও ভারতই এটি ক্রয়ের চুক্তি করেছে। তবে ভারতের বিমানগুলি অন্যদের চাইতে অত্যন্ত চড়া দামে কেনা হয়েছে। এই জঙ্গী বিমান ক্রয় নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে রাজনীতিকরাও এর কড়া সমালোচনা করেছেন। তবে সম্প্রতি সবচেয়ে পিলে চমকানো খবর ভারতের সমর পরিকল্পনাবিদদের বেশ বেকায়দায় ফেলেছে। চীর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তানের পাইলটরা এই রাফাল বিমান আগেই চালিয়েছেন এবং এর নাড়ী নক্ষত্রও তারা জানেন। এ সংবাদ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। ভারতের প্রথম শ্রেণীর পত্র-পত্রিকায় এ খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় সরকার অতি বেশী মূল্যে ক্রয় করা এই রাফেল নিয়ে যতটা ঢাকঢোল পেটাচ্ছে আসলে কী এই জঙ্গী বিমান ততটা কার্যকর? এনিয়ে সেদেশের সমর বিশেষজ্ঞ ও বিদেশী বিশ্লেষকরা নানা প্রশ্ন তুলেছেন।

পাকিস্তানের পাইলটরা আগেই ‘রাফাল’ এর গোপণ নাড়ী নক্ষত্র রপ্ত করেছেন

ভারতের পত্র-পত্রিকায় পাকিস্তানের পাইলটরা আগেই ট্রেনিং নিয়েছে সংবাদটি ফাঁস হওয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ‘রাফাল’ বিমান ব্যবহার কতটা সফল হবে এ নিয়ে সেদেশের সামরিক বিশেষজ্ঞরা গুঞ্জণ শুরু করেছেন। যদিও ভারতের সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান বি এস ধানোয়ার রাফাল ভারতে আসায় এর প্রশংসায় বলেছেন, পাক আকাশ সীমাতেই শত্রুবিমানকে ধ্বংস করবে রাফাল। ভারতের এনডিটিভি তার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান ধানোয়ার আরও দাবী করে বলেন, যখনই পাঁচটি ‘রাফাল’ ভারতের মাটি ছুঁয়েছে, তারপর থেকেই প্রতিবেশী দেশগুলির ঘুম উড়েছে। ভারতের অপর একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ এটা মানতে রাজী নন। বিবিসিকে তিনি বলেন, “দেখুন চীন বা পাকিস্তানের কাছেও কিন্তু এর সমকক্ষ জঙ্গী বিমান রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান একে তো আগেই এর সিক্রেট রপ্ত করেছে এবং নিজেদের তৈরী জেএফ-১৭ জঙ্গী বিমানের পরবর্তী সংস্করণকে রাফাল এর চাইতেও বেশী কার্যক্ষম করে তুলছে।শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তান চীনের রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম জে-২০ জঙ্গী বিমান পেতে যাচ্ছে যা ভারতের যেকোন জঙ্গী বিমানের সমকক্ষ।বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে।###৬.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.