--- বিজ্ঞাপন ---

তুর্কি ড্রোনের ভয়ে পিছিয়ে গেল আর্মেনিয়া

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

রাশিয়ার মধ্যস্থতায় অবশেষে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া ২৭ সে্প্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ বন্ধে রাজী হয়েছে।শনিবার ১০ অক্টোবর থেকে এই যুদ্ধবিরতি চলছে ।যদিও এই যুদ্ধবিরতি কতদিন টিকে এনিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর্মেনিয়া বলছে এটা একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি।গত দু’সপ্তাহের যুদ্ধে আহতদের সরিয়ে নেয়া এবং উভয় পক্ষের বন্দী বিনিময় এ চলমান যুদ্ধবিরতির অন্যতম লক্ষ্য। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে ব্যাপক  গোলাবর্র্ষন একপ্রকার থেকে গেছে তবে থেমে থেমে চোরাগুপ্তা হামলার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ বিরতির জন্য আর্মেনিয়ার আগ্রহ ছিল বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছে, আসলে তুর্কি ড্রোনের কারনেই আর্মেনিয়া পিছিয়ে যায়। আজারবাইজান তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করলে যুদ্ধে বেশি দিন টিকে থাকা আর্মেনিয়ার জন্য কঠিন হতে পারে। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্তার তরফ থেকেও আর্মেনিয়াকে সাবধান করে দেয়া হয়।

এদিকে রাজধানী মস্কোয দশ ঘন্টা আলোচনার পর আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটা সমঝোতা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গত দু সপ্তাহ ধরে বিতর্কিত নাগর্নো কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে যে যুদ্ধ হয়ে গেল – তা `সামরিক বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে একটা বিশেষ কারণে । বিবিসি’র সাংবাদিক পাভেল আস্কেলভ শনিবার থেকে চলমান যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গত কয়েকদিনের যুদ্ধের মূল্যায়ন করে বলেছেন, দীর্ঘ তিন দশক ধরে পুরনো যে সংঘাত থেকে থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তাতে এবারের লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ড্রোন – বিশেষ করে তুরস্কের তৈরি ড্রোন দিয়ে চালানো হামলা।সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়া, লিবিয়ায় তুরস্কের তৈরী এই ড্রোন যুদ্ধের চেহারা যে বদলে দিচ্ছে এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এবারের লড়াই, যা শুরু হয়েছিল ২৭শে সেপ্টেম্বর, তার তীব্রতা বুঝিয়ে দিয়েছে নাগোর্নো-কারাবাখে আর্মেনীয় লক্ষ্যবস্তুর ওপর আজেরি ড্রোন হামলার ভিডিও ফুটেজ। এই ভিডিও ছবি থেকে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে এবারের লড়াইয়ের জন্য আজারবাইজানের হাতে এসেছিল তুরস্কের বেয়ারআকতার ড্রোন। আজারবাইজানের  প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ ড্রোন থেকে তোলা এলাকার ছবি বিতরণ করেছে, যেখানে লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান চিহ্ণিত করা হয়েছিল এবং সেখানে চালকবিহীন ‘কামিকাযি’ কায়দার বিমানের ভিডিও দেয়া হয়েছিল। কামিকাযি হল একধরনের আত্মঘাতী বিমান- যেগুলো বিস্ফোরক অস্ত্রে সজ্জিত থাকে এবং লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত করে নিজেই বিস্ফোরিত হয়ে যায়।সম্প্রতি দুটি দেশই তাদের অস্ত্রের সম্ভার বাড়িয়েছে। এর মধ্যে আজারবাইজান অস্ত্র সংগ্রহ করেছে আর্মেনিয়ার চেয়ে বেশি এবং আজেরিরা ড্রোন প্রযুক্তির দিকে বেশি ঝুঁকেছে।

বেয়ারআকতার ড্রোন কী?

আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখে ড্রোন হামলা চালিয়েছে দাবি করে যে ভিডিও প্রকাশ করেছে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিকতম এই লড়াইয়ে যে ড্রোনের ব্যবহার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেটি হল তুরস্কের বেয়ারআকতার টিবি-টু মডেলের ড্রোন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন , নাগোর্নো-কারাবাখে আজেরি সামরিক বাহিনীর হামলার যেসব ভিডিও দেশটির সরকার বিলি করেছে তা ফিল্ম করা হয়েছে টিবি-টু ড্রোন দিয়ে। কয়েক বছর আগে বেকার নামে তুরস্কের একটি সংস্থা এই ড্রোন তৈরি করে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে এবং এটি পর্যবেক্ষণ ও লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের কাজে ব্যবহার করা যায়।সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  ড্রোনের বাজারে তুরস্কের এই টিবি-টু  এখন একটি তারকা। ফেব্রুয়ারি ২০২০য়ে সিরিয়ায় অপারেশন স্প্রিং শিল্ড অভিযানে এই ড্রোন ব্যবহার করেছিল তুরস্ক। এর আগে লিবিয়ায় খলিফা হাফতারের বিদ্রোহী বাহিনীদের লক্ষ্য করে চালানো অভিযানেও তুরস্ক এই ড্রোন ব্যবহার করে। তুরস্ক টিবি-টু বিক্রি করেছে ইউক্রেনের কাছে। কিয়েভ আরও ৪৭টি ড্রোন কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। তুরস্ক ও ইউক্রেনের মধ্যে ড্রোন টেকনোলজি হস্তান্তরও এর মধ্যে থাকছে। গত  ৬ই অক্টোবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদলু-র এক খবরে বলা হয়েছে যে সার্বিয়াও এই ড্রোন কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

বিতর্কিত এলাকায় আর্মেনীয় সাজোঁয়া যান বিধ্বস্ত করার যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো বেয়ারআকতার ড্রোন দিয়ে তোলা বলে বিশেষজ্ঞরা যদিও নিশ্চিত, কিন্তু এই ড্রোন যে আজারবাইজানের অস্ত্র সম্ভারের অংশ ছিল, তার স্বপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন নিশ্চয়তা এখনও পাওয়া যায়নি।আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ৫ই অক্টোবর ঘোষণা করেন যে, আজারবাইজানের কাছে তুর্কী ড্রোন রয়েছে। তবে তারা সেগুলো কিনেছে কি না, সে সম্পর্কিত কোন কাগজপত্র বা রসিদ আজেরি সরকার প্রকাশ করতে পারেনি। জুন মাসে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে এই ড্রোন পাবে বলে তারা আশা করছে। রুশ সাময়িকী আমর্স এক্সপোর্টের প্রধান সম্পাদক আন্দ্রেই ফ্রলভ মনে করেন, আজারবাইজান হয় গোপনে এই চালকবিহীন বিমান মজুত করছিল, না হয়ত সাম্প্রতিক এই লড়াই শুরু হবার ঠিক আগেই এগুলো তাদের হাতে যায়।##১০.১০.২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.