--- বিজ্ঞাপন ---

আজারবাইজানে রকেট হামলায় হতাহত ৪৩, যুদ্ধবিরতি টিকবে কি?

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলাসহ রোববার একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভাঙ্গার গুরুতর অভিযোগ করেছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া৷ নিজেদের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর গ্যাঞ্জায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার জন্য আর্মেনিয়াকে দায়ী করেছে আজারবাইজান৷ আজেরি কর্তৃপক্ষ বলেছে, সকালে সেখানকার একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি৷ রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পরও একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া৷ যদিও রোববার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে বলে দাবি করেছেন নাগর্নো-কারাবাখের এক নেতা৷ বৃটিশ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি, জার্মানীর সংবাদ সংস্থা ডিডব্লিউসহ বিভিন্ন মাধ্যম যুদ্ধবিরতির এই গুরুতর লংঘনের খবর দেয়।

যুদ্ধবিরতি কি  টিকবে?

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টে ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, চলমান যুদ্ধবিরতিতে আর্মেনিয়া গভীর রাতে আজেরি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাঞ্জায় ঘুমন্ত বেসামরিক নারী-শিশুদের উপর জঘন্যতম রকেট হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছে ৯জন আহত ৩৪। এই বর্বর ঘটনার পুরোপুরি দায়িত্বভার আর্মেনিয়াকে বহণ করতে হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। এদিকে আজারবাইজানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেরবান আলিয়েভা নিরক্ষেপতার দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঘুমন্ত নারী-শিশুদের উপর এই বর্বরতম রকেট হামলার কঠোর নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। আজারবাইজানের বার্তা সংস্থা আজারটেক এ সংবাদ দেয়। তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ এর নিন্দা জানিয়েছে ইতিমধ্যে। নিহতদের মধ্যে ৪জন নারীসহ বহু শিশু আহত হয়েছে ঐ হামলায়। সেখানে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীদেরকে লাশ বহন করতে দেখেছেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা৷

এমন প্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আদৌ টিকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে ৷ এই বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া সরকারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে৷ তার মধ্যস্থতায়ই দুই দেশের কূটনীতিকরা ১০ অক্টোবর এই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিলেন৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আজারবাইজান ও আর্মেনিয়াকে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো মেনে চলতে আহবান জানিয়েছেন সের্গেই লাভরভ৷

যুদ্ধবিরতি সত্বেও আজারবাইজানের শহর গাঞ্জায় যদিও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে আর্মেনিয়া ৷ ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা ৷ তারা বলছেন, আজারবাইজানের সৈন্যরা তাদের হাদরুত শহরে গোলাবর্র্ষন করেছে। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, আজারবাইজান সারারাত ধরে গোলা বর্ষণের মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে গেছে৷ তবে নাগর্নো কারাবাখ সরকারের প্রধান আরাইক হারুতিউনিয়ান দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে৷ যদিও দ্রুতই এর পরিবর্তন ঘটতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি৷ আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে এপর্যন্ত তাদের ৪০৪ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে।

এর আগে শনিবার দুই দেশই সংঘাত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল৷ মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যস্থতায় দুই দেশের কূটনীতিকরা এই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন৷ কিন্তু এরপরও দুই পক্ষ থেকেই গোলাগুলি অব্যাহত ছিল৷ এজন্য শনিবারই পরস্পরকে দায়ী করেছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া৷

এই লড়াইয়ে ইতোমধ্যে কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে দুই রাষ্ট্র হওয়ার পরই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে সংঘাত বাধে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার৷ ১৯৯৪ সাল থেকে অঞ্চলটি আর্মেনিয়ার সেনা সহায়তায় সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ যদিও আন্তর্জাতিকভাবে নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত দুটি দেশ এক অপরকে দায়ী করছে। মাত্র গত ১০ অক্টোবর মস্কোতে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে প্রায় দশ ঘণ্টা আলোচনার পর সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল দেশ দুটি। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের রাজধানী স্টেপানকার্টে শনিবার সন্ধ্যায় গোলাবর্ষণের কথা জানাচ্ছে আর্মেনিয়ার গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করছে যে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথায় আজেরি সেনারা আক্রমণ চালায়। জাতিগত আর্মেনীয়রা তার জবাব দেয়। অন্যদিকে আজাবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাল্টা অভিযোগ করে বলছে, আজেরি অঞ্চলে আর্মেনিয়ানরা ‘স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন করছে।’

নাগোর্নো-কারাবাখে স্বঘোষিত জাতিগত আর্মেনিয়ান কর্তৃপক্ষ বলছে, আজারবাইজান স্টেপানকার্টের বেসামরিক এলাকায় মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে আজেরিদের অভিযোগ আর্মেনিয়া ড্রোন হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে। পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে দীর্ঘ তিন দশক ধরে বিরোধ চলে আসছে সাবেক সোভিয়েত রিপাবলিকের অংশ এই দেশ দুটির মধ্যে। যে জায়গাটির দখল নিয়ে দেশ দুটোর মধ্যে যুদ্ধ চলছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সেই অঞ্চল আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছিল। দুটো দেশই এই এলাকাটিকে তাদের নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। ১৯৮৮ থেকে ৯৪ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলার পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও থেমে থেমে সংঘর্ষ চলেছে।

 দশ ঘণ্টা ধরে আলোচনা চলার পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়

এলাকাটি নিয়ে কোন ধরনের নিষ্পত্তি দুই দেশের মধ্যে হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের বলে স্বীকৃত। কিন্তু এটি পরিচালনা করে জাতিগত আর্মেনীয়রা। পুরনো সংঘর্ষ নতুন করে তা আবারও জোরালো হয়ে ওঠে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর। দুই দেশের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর থেকে তিনশ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং ৭০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য দেশ দুটি একে অপরকে দায়ী করে আসছে। বন্দী বিনিময় এবং মরদেহ উদ্ধারের সুযোগ তৈরি করার জন্য এই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।###১২.১০.২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.