--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন, কতটুকু এগুলো সেনাবাহিনী

0

বিশেষ প্রতিনিধি ##
সেনাবাহিনীর বড় চ্যালেঞ্জ এখন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন। এটি কার্যকর করা না গেলে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের বেশিরভাগ এলাকা ভবিষ্যতে পানির নিচে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। এখন বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের বড় এলাকা ডুবে যাচ্ছে। যে কোন মূল্যে এ পানি ঠেকাতে হবে। এরই লক্ষে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার জন্য ৫,৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্পের কাজ দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কাজটি আদৌ শেষ হবে কিনা সংশয় রয়েছে। কারন সেনাবহিনী এ কর্মযজ্ঞ সামলাতে গিয়ে দেখে নানা জায়গায় বিশাল বিশাল অবৈধ স্থাপনা, ৩৬ টি খালের মধ্যে অনেকগুলো নালায় পরিনত হয়েছে, পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন খালপাড় ঘিরে নানা অবৈধ স্থাপনা, প্রভাবশালী মহলের দখল, হাইকোর্টে মামলাসহ নানা কিছু। সর্বোপরি এ কাজের সাথে জড়িত সেবা সংস্থারগুলোর নানা রকম প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রকল্পটির প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

কি পর্যায়ে আছে সেনাবাহিনীর এই মেগা প্রকল্পের কাজ। অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর প্রথম নজর ছিল চট্টগ্রামের খালগুলোর উপর। কারন পানি তো এ খাল দিয়ে যাবে। এগুলো উদ্ধার করা না গেলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা জানা গেছে, প্রকল্পের ভেতরে ৩৬ টি খালের কথা উল্লেখ আছে। শেষপর্যন্ত ৩৬ টি চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্ণফুলি নদীর সাথে সংযোগ আছে এমন খাল হচ্ছে ১৬টি, আর এসব খালের সাথে লিংক আছে এমন খালের সংখ্যা ২০টি। সেনাবাহিনী এরই মধ্যে ৩৬টি খার হতে ময়লা ও কাদাঁ অপসারন করেছে। এসব খালের আশপাশ ঘিরে থাকা তিন হাজারেরও অধিক অবৈধ স্থাপনা সরানো হয়েছে। ২৮টি খালের পাড় ঘিরে রিটেইনিং ওয়াল নির্মান কাজ চলছে। ৩৫ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মান কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আরও ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মান কাজ চলছে। পানি সরবরাহ বাঁধামুক্ত ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত নতুন ড্রেন নির্মান করা হচ্ছে। ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত ড্রেন সংস্কার ও সম্প্রসারনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় নির্মান কতে হবে ৫৪টি ব্রীজ ও কলভার্ট। এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩৪টির কাজ শুরু হয়। তৎমধ্যে ১৬টির কাজ শেষ। ১৮টির কাজ চলছে। বাকি ২০ টি রয়ে গেছে। এগুলোতে নানা জটিলতা আছে। শীঘ্রই ২০টি কাজও শুরু হবে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হয় চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, ২নং গেইট,মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই,আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ ২২টি এলাকায়। সেনাবাহিনী বলছে, এ ২২ এলাকা ঘিরে আলাদাভাবে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর দায়িত্বে নেয়া ৫টি স্লুইচগেট রেগ্যুলেটরের মধ্যে অন্তত: ৪টির ( টেকপাড়া, মরিয়মবিবি, কলাবাগিচা, ফিরিঙ্গিবাজার) কাজ শেষ হওয়ার পথে। বাকী রেগুলেটর মহেষখালের কাজও এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হাতে দেয়া ২৩ টি কাজে রয়েছে ধীর গতি। অপরদিকে সিডিএ’র হাতে নেয়া ১২টি স্লুইচগেট রেগুলেটর এর কাজও চলছে ঢিলেঢালা। সময়মত এ কাজগুলো শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বেধে দেয়া নির্দ্ধারিত সময়ে বিলম্বত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এর ফলে নগরবাসীর ভোগান্তিও বাড়বে।, চাকতাই খাল, মীর্জা খাল ও হিজড়া খাল প্রধান তিন খালের প্রকল্প প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রাথমিক ধাপে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন। এ কাজেও রয়েছে ধীর গতি। অনেকাংশে প্রস্তাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হলেও মিলছে না ছাড়পত্র।
চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শাহ আলী বলেন, “সেনাবাহিনী এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়ার পর আমাদের আওতাভুক্ত কাজগুলো ধাপে ধাপে কাজগুলো এগুচ্ছে। খালগুলোর পাশে ভুমি অধিগ্রহণের কাজটি সিডিএ করছে। এই ভূমি অধিগ্রহণের কাজটির উপর নির্ভর করছে প্রকল্পের সিংহভাগ কাজের অগ্রগতি। যত তাড়াতাড়ি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হবে ততই মঙ্গল। কারণ, অধিকাংশ খালের আশেপাশেই মাটি খননের ক্রেন যন্ত্রপাতি নেয়ার সামান্যতম উপায় নেই। যেমন, জামালখান খাল, বদর খাল, হিজড়া খাল অন্যতম। নাসির খালে কিছুটা এখন কাজ করতে পারছি। তবে আমরা অবৈধ সকল স্থাপনার প্রায় ৯৯ ভাগ সরাতে সক্ষম হয়েছি। খালের উপর থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমের আওতায় প্রথম ধাপে ৩৬ টি খালকে চিহ্ণিত করেছিলাম সেগুলোর শতভাগ আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমরা কাজের সমন্বয়ের জন্য ৪টি গ্রুপে স্থানীয় কাউন্সিলরদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে স্থানীয় জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ থাকবে প্রকল্পের কাজের আওতায় যেসব গ্যাস, বিদ্যুতের খুঁটি, পানির লাইন রয়েছে ইত্যাদি সরানোর কাজে তারা যাতে আরও আন্তরিক হন। তবেই প্রকল্প কাজটি দ্রুততম সময়ে শেষ করতে পারবো ইনশাল্লাহ আশা রাখছি।”
চট্টগ্রামে বৃহৎ এ মেগা প্রকল্পটিকে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া চট্টগ্রামবাসীকে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা লাঘবের উপহার হিসেবে দেখছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড খালের উচ্ছেদ কার্যক্রম সফলতার সাথে সমাপ্ত করেছেন। খালের আশেপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৩ হাজারেরও বেশী অবৈধ স্থাপনা অপসারণের দূরহ কাজ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রকল্পটি দ্রুত সম্পন্ন করছেন সেনাবাহিনী। এসকল নানা স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৮ তলা ইউএসটিসি ভবন থেকে শুরু করে প্রবর্তকের মোড়ে প্রিমিয়ার ইউনির্ভাসিটির ক্যাম্পাসও রয়েছে। জানা গেছে, উঁচু ভবনটি সহ এসকল ভবন তারা নিজেদের উদ্যোগেই ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করেছেন। ভরাট মাটি অপসারণ, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ ইত্যাদি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হচ্ছে সেনাবাহিনীর অংশের কাজগুলি। তবে এর সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাকী ভূমি অধিগ্রহণ কাজটি সময়মত সম্পন্ন করতে পারলে চট্টগ্রামবাসী আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে অনেকটা রেহাই পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সেনাবাহিনীর প্রকল্প কর্মকর্তা ।
কাজের অগ্রগতি নিয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, যেহেতু চট্টগ্রামবাসীর এটি দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। কাজে যাতে কোন প্রকার ত্রুটি না থাকে আমরা সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে প্রকল্পটি যাতে সফলভাবে সমাপ্ত হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে কাজ করছি। খালগুলোর আশেপাশে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ‘কনসালট্যান্ট ফার্ম ‘সিইজিআইএস’ এর দেয়া ডিজাইন, ড্রইং, ভুমির বিএস দাগ ঠিক রেখে পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য মেগা এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন। পরে এটি আরও বাড়িয়ে ২০২১ সালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামবাসীও চাইছে বছরের বছর পানিবন্দী থেকে মুক্ত হতে।### ১২.১০.২০

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.