--- বিজ্ঞাপন ---

সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তত থাকতে বললেন চীনের প্রেসিডেন্ট

0

বিশেষ প্রতিনিধি##

চীনের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্ততি নিতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট শিং চিনফিং। বুধবার গুয়াংডং প্রদেশের একটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন চিনফিং। চীনের প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যে নড়েচড়ে বসেছে সারা বিশ্ব। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া নাকি ভারতকে টার্গেট করে এ কথা বলেছে তা কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। তাইওয়ানও চিন্তিত। চীন ঠিক কি করতে যাচ্ছে তা বুঝে উঠা মুস্কিল। তবে চীনের প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য কোন দেশ হালকাভাবে নিচ্ছে না।

কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ দক্ষিণ চীন সমুদ্রে গত কয়েক মাসে সামরিক মহড়া চালিয়েছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, বেইজিং এই অঞ্চলে সামুদ্রিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চাইছে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে এই অঞ্চলের বিশ্বস্ত সহযোগীতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে ওয়াশিংটনের এই কৌশলকে পূর্ব এশিয়ার জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বলে বিবেচনা করে চীন। আমেরিকা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরোক্ষ ঘোষণা দিয়েছ

এদিকে বিবিসি বলছে, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে এই সম্পর্ককে এক শ্বাসরুদ্ধকর ভূ-রাজনৈতিক থ্রিলারের মতো মনে হতে পারে। কেউ জানে না এই গল্পটি কোন দিকে যাচ্ছে অথবা এটা কোথায় গিয়ে শেষ হতে পারে। “অস্ট্রেলিয়া-চীন সম্পর্ক এতো জটিল ও এতো দ্রুত পাক খেয়েছে যা ছয় মাস আগেও চিন্তা করা যায়নি,” লিখেছেন গবেষক জেমস লরেনসেন, তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-চায়না রিলেশন্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক। শুধু গত কয়েক সপ্তাহে এই সম্পর্কের কতোটা অবনতি হয়েছে তার দিকে তাকালে এই পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করা সম্ভব হবে। চীনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে অস্ট্রেলীয় নাগরিক এবং চীনে ইংরেজি ভাষার টিভি চ্যানেল সিজিটিএনের প্রখ্যাত সাংবাদিক চেং লেইকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সন্দেহে আটক করা হয়েছে। এর অল্প কিছুদিন পর, সর্বশেষ যে দুজন সাংবাদিক চীনে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতেন কূটনীতিকদের পরামর্শে তারাও তড়িঘড়ি করে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে গেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দুটো দেশের সম্পর্কের ওপর। এবিসি চ্যানেলের রিপোর্টার বিল বার্টলস যখন তড়িঘড়ি করে বেইজিং ছেড়ে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন চীনের সাতজন পুলিশ অফিসার মধ্যরাতে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। শাংহাই-এ অস্ট্রেলিয়ান ফাইনান্সিয়াল রিভিউর সাংবাদিক মাইকেল স্মিথের বাড়িতেও পুলিশ একই ধরনের অভিযান চালায়। তারা দুজনেই অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক মিশনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু “জাতীয় নিরাপত্তার” বিষয়ে চীনা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের আগে তাদের চীন ছেড়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়। এরা দুজন অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যাওয়ার পরদিন চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয় যে এই ঘটনার আগে জুন মাসে অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বেশ কয়েকজন চীনা সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তাদের কাছ থেকে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন জব্দ করে নিয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে সেদেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও পুলিশের তদন্তের অংশ হিসেবে চীনা সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।

অপরদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, লাদাখ সীমান্ত সঙ্ঘাতের মধ্যেই দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। বুধবার গুয়াংডং প্রদেশের একটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন চিনফিং।

চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘জিনহুয়া’ জানাচ্ছে, গুয়াংডং প্রদেশের চাওঝাও শহরে চিনের গণমুক্তি ফৌজের নৌবাহিনীর যে ঘাঁটি রয়েছে সেখানে যান চিনফিং। কোরের সদস্যদের ‘চূড়ান্ত সতর্ক’ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বাহিনীর উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘আপনাদের মন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে রাখুন।’’বাহিনীর প্রতি চিনফিংয়ের এই বার্তা মুহূর্তেই সাড়া ফেলে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। আসলে তিনি যে ঘুরিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন সে কথাও স্পষ্ট। কিন্তু চিনের নিশানায় কোন দেশ? সম্প্রতি তাইওয়ান প্রণালী (চিন এবং তাইওয়ানের মাঝে প্রণালী)-তে নজরে এসেছে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ। যদিও আমেরিকার তরফে বলা হচ্ছে এটা ‘রুটিন’ সফর। কিন্তু ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের পিছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছে বেজিং। আর তা নিয়েই দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পারদ নতুন করে চড়ছে বলে আন্তর্জাতিক মহলের একটা বড় অংশ মনে করছে। তাঁদের ধারণা, সে কারণেই মেরিন কোরের সদস্যদের যুদ্ধের জন্য ‘প্রস্তুত’ থাকার বার্তা দিয়েছেন চিনফিং।ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা করেছে বেজিং।

চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলেন, ‘‘তাইওয়ানে সামরিক অভিযান বাতিল করুক আমেরিকা।’’ আমেরিকা এবং তাইওয়ানের মধ্যে সামরিক চুক্তি বাতিলেরও দাবি তুলেছে তারা। তবে ওয়াশিংটনের তরফে পাল্টা বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনেই মার্কিন বিমান বাহিনীর জাহাজ চলবে এবং বিমান উড়বে।’

শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখতে আরও কিছু সময় লাগবে।###১৫.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.