--- বিজ্ঞাপন ---

মরিয়ম কি পাকিস্তানের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী?

কোন পথে পাকিস্তান, ইমরান খানের বিদায় কি আসন্ন

0

কাজী আবুল মনসুর ##

আগামী বছরেই কি পাকিস্তানে ক্ষমতার রদবদল । অতীতের ইতিহাস তাই বলছে। পাকিস্তানে এখন গুঞ্জন রয়েছে নেওয়াজ কন্যাই হচ্ছেন পাকিস্তানের আগামী প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে এবং ইমরান বিরোধী আন্দোলনে মাঠে এখন মরিয়ম। সাথে রয়েছেন স্বামী মুহাম্মদ সফদার। তাকে সমর্থন দিচ্ছে পাকিস্তানের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। এমনকি চিরশত্রু বলে পরিচিতি বেনজির ভুট্টোর পিপিপিও তার পেছনে রয়েছে। বেনজির তনয় বিলওয়াল ভুট্টো মরিয়মের সাথে এক মঞ্চে দাড়িয়ে ইমরান হঠাও আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। যদিও কেউ কেউ মনে করছেন লন্ডন থেকে নেওয়াজ শরীফ ফিরে এসে আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি এ মধ্যে পাকিস্তানে তিন বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্ত তারঁ স্বাস্থ্যগত কারনে তিনি মেয়েকে ছেড়ে দিতে পারেন বলে পাক জনগনের বিশ্বাস।

পাকিস্তানে ইমরান খানের পদত্যাগের দাবিতে শত্রু-মিত্র সব এখন এক হয়ে গেছে। জোট হয়েছে ১১ দলের। যারা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। বেনজির ভুট্টো, নেওয়াজ শরীফ, মাওলানা ফজলুর রহমানের দল এখন শত্রু থেকে মিত্র। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের স্বামীকে এরই মধ্যে হোটেলের দরজা ভেঙ্গে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পরে তাকে জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়। মেয়াদ ফুরনোর প্রায় আড়াই বছর আগেই ইমরান খান সরকারকে গদি থেকে হঠাতে কোমর বেঁধেছে পাকিস্তানের ১১টি রাজনৈতিক দল। নওয়াজ়ের দল পিএমএল (এন) এবং বিলাবলের দল পিপিপি তো আছেই, তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ছোট-বড়-আঞ্চলিক মিলিয়ে আরও ৯টি দল। এঁরা সকলে মিলে গড়েছেন ইমরান বিরোধী জোট পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)। গত মাসেই জোটটি তৈরি হয়েছিল। এক-একটি শহরে কর্মসূচি করে তারা ইমরান সরকারকে আক্রমণ করে চলেছে। জানুয়ারিতে ইসলামাবাদে বড় জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে।

পাকিস্তানের রাজনীতি ফের নতুন মোড় নিয়েছে। এ অবস্থার শেষ কোথায় হবে, কিভাবে হবে কেউ বলতে পারছে না। সেনাবাহিনী কি ফের ক্ষমতা নেবে?  নাকি পাকিস্তানে ক্ষমতার রদবদর। শরিফ-কন্যা মরিয়ম নওয়াজ় কি পাকিস্তানের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী নাকি বেনজ়ির ভুট্টোর পুত্র বিলওয়াল। ঘুরে ফিরছে এসব প্রশ্ন। তবে এ জোটের সাথে টেক্কা দিয়ে ইমরান খান সরকার যে টিকবে না এটা প্রায় নিশ্চিত। পাকিস্তানে নিরাপত্তাহীনতা, বেকারত্ব, বিদ্যুৎ সংকট, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে পাকিস্তানিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং এজন্য তাঁরা পরিবর্তন আশা করছেন। তবে সেনাবাহিনী বলে আসছে, এ বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করবে না। তারপরও বলা হচ্ছে সেনাবাহিনীর ছায়ায় আছেন ইমরান খান। অতীতে পাক সেনাবাহিনী অনেককে কাছে নিয়ে পরে ছুড়ে ফেলেছিল। তাই সেনাদের সাপোর্ট ইমরানের প্রতি ক’দিন থাকে এটাই এখন দেখার বিষয়।

পাকিস্তানের রাজনীতি বরাবরের মতো হিংসা আর হানাহানিতে ভরা। কোন কিছুর স্থায়িত্ব নেই এখানে। ‘হিসটোরি রিপিটস ইটসেল্ফ’ বলে একটি কথা আছে যা পাক রাজনীতির সাথে একেবারে মিলে যায়। পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন করতে গেলে ফিরে যেতে হয় কয়েক বছর আগে ২০১৩ সালে। এ সময় সফল একটি জাতীয় নির্বাচন হয়। পাকিস্তানের সবাই মনে করেছিল শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ঠিক বছর যেতে না যেতে বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান পার্লামেন্টের বিলুপ্তিসহ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করে বসেন। তার দল আরো দাবি করে, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হয়েছেন। তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কিন্তু তিনি নিজে সে সময় নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলেছিল। এরপরও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নামেন ইমরান খান। তারঁ নেতৃত্বে সরকার বিরোধী আন্দোন শুরু হয় লাহোর থেকে। ইমরান খান তার সঙ্গি হিসেবে বেছে নেন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা তাহির উল কাদরিকে। এই আন্দোলনের পেছেনে নেপথ্যে সমর্থন দেয় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। যারা আজকে ইমরানের বিপক্ষে।  পাক সেনাবহিনীও সমর্থন জানায় ইমরানের প্রতি। আইএসআইও নাকি অবস্থান নেয় ইমরানের পক্ষে। এ সময় কয়েকদিনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন নিহত এবং কয়েকশো মানুষ আহত হয়। বিরোধী পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ভারতের প্রতি শরিফ সরকারের অনুকূল মনোভাব আছে। যার কারনে সন্তুষ্ট নয় পাক সেনাবাহিনীও। এছাড়া সরকারের আফগানিস্তান নীতিরও বিরোধীতা করা হয়। এ সময় নেওয়াজ ক্ষমতায় থাকলেও ইমরান খানের নানামূখি বিরোধীতার কারনে তিনি শান্তি পাননি। ইমরানকে এ সময় শেল্টার দেয় পাক সেনাবাহিনী। কারন নেওয়াজ পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারেন নি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যাওয়ার কারনে তাকে গদিচ্যুত করার জন্য সেনাবাহিনী ইমরান খানের প্রতি হাত বাড়ান। শেষপর্যন্ত ২০১৭ সালে নেওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আল-আজিজিয়া স্টিল মিল মামলায় শরিফকে সাত বছরের জেল দেয়া। কিছুদিন জেলের চার দেওয়ালে কাটিয়ে তিনি লন্ডনে যান চিকিত্‍‌সা করাতে। শারীরিক অসুস্থতার কারণেই আদালত তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়ে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি দেয়। আট সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে দেশে ফিরতে বলা হয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক জটিলতার তিনি দেশে ফিরেন নি। নেওয়াজকে সরিয়ে পাক সেনার সহযোগিতায় ইমরান খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। যে কায়দা করে ইমরান খান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে নেওয়াজ শরীফকে সরালেন এখন একই কায়দায় ইমরান খানেরও বিদায় হবে এমনটিই এখন মনে করা হচ্ছে।

পাক সেনারা এখন কি নেওয়াজ শরীফের দলকে কাছে টেনে নিচ্ছে? এমন প্রশ্ন আসছে ঘুরেফিরে। যদিও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে বলছেন, দলের কেউ সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনায় বসতে পারবেন না। তবে এরই মধ্যে তার দলের প্রভাবশালী নেতা মুহাম্মদ জুবাইরির সাথে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামরান বাজওয়ার দু’দফা বৈঠকের বিষয় ফাঁস হয়ে গেছে। নেওয়াজ শরীফের দল এখন সংসদে প্রধান বিরোধী দল। তাই স্বাভাবিকভাবে সেনা প্রধানের সাথে বিরোধী দলের বৈঠকের কারনে সবাই মনে করছে পাকিস্তানে আবার ক্ষমতার রদবদল আসন্ন। তবে বিষয়টি নিয়ে জোটের অন্যান্য দলগুলোর মাঝে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে হস্তক্ষেপ করেন নেওয়াজ শরীফ। তিনি লন্ডন থেকে টুইটারে জানান, দেশের স্বার্থে এবং সাংবিধানিকভাবে প্রয়োজন হলে যদি কখনও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের প্রযোজন হয় তবে তা হবে প্রকাশ্যে। বিষয়বস্ত গোপন থাকবে না। প্রকাশ করা হবে জনসমক্ষে। তিনি তারঁ দলকে নির্দেশ দেন, কেউ যেন একা বা দলের হয়ে সেনাবাহিনীর কারও সাথে কথা বতে পারবে না। আইএসআই এর কারও সাথে কোন ধরনের আলাপ আলোচনা করাও তিনি নিষেধ করেন।’ নেওয়াজ লন্ডন থেকে পাকিস্তানে ইমরান খান বিরোধী আন্দোলন মনিটরিং করেন। জোট শরীকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সেও যোগ দেন। এ কনফারেন্সে তিনি পাক সেনাবাহিনীর সমালোচনাও করেন বলে জানা গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানর রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া যায় না। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে পাকিস্তানের নির্বাচনে সেনা বা গোয়েন্দা সংস্থা কেউ যেন হস্তক্ষেপ না করে তার জন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

পাকিস্তানের অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, একটা বড় সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল সে দেশের সামরিক বাহিনী। জেনারেল জিয়া উল হকের আমল থেকে পাকিস্তনে মূলত অশান্তি শুরু। বিশেষ করে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের পর আমেরিকার পাকিস্তান নির্ভরতায় অস্ত্রের আনাগোনা শুরু হয়। বিভিন্ন গ্রুপের কাছে চলে যায় ভারী অস্ত্র। আমেরিকানরাই অস্ত্রের যোগান দাতা। জিয়া উল হক সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় গণতন্ত্রের আবরণে এমন একটি ব্যবস্থার চেষ্টা করে যার ফলে পাকিস্তানে রাজনীতি অনেকটা হ-য-ব-র-ল হয়ে যায়। একদিকে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন অন্যদিকে গণতন্ত্রের বুলি মিলে দিশেহারা হয়ে যায় পাক জনগণ। নিজের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য ডানপন্থিদের উপর নির্ভর করেন জিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করার জন্য ইসলামী দলগুলোকে ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আফগান মুজাহিদদের অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপ পাকিস্তানে জায়গা করে নেয়। যা এখন পাকিস্তানের জন্য বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমেরিকানদের কথা শুনে এ সময় পাকিস্তানে গড়ে উঠে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী আন্দোলন। দলগুলোর হাতে আমেরিকা থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র আসতে থাকে। আমেরিকানরা পাকিস্তানকে ব্যবহার করে আফগান গেরিলাদের প্রশিক্ষণ দিতে।

ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে গড়ে উঠে ধর্মীয় ট্রেনিং সেন্টার। পাকিস্তানের সেন্ট্রাল পাঞ্জাব এবং দক্ষিণ পাঞ্জাব নিয়ন্ত্রণ করছে সুন্নি মতদর্শে বিশ্বাসীরা। এসব প্রশিক্ষিত যুবক উত্তরাধিকার সূত্রে আফগান যুদ্ধে প্রশিক্ষিত। ‘লসকর- এ- জাংভি’ নামের ছত্রছায়ায় তারা পাকিস্তানে সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।পাকিস্তানে জাতিগত দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ১৯৮০ সালে। যখন দেউবন্দি মিলিট্যান্টে নামের একটি গ্রপের জন্ম হয়।‘আনজুমান এ শিপা সাহাবা’ নামের এ দেউবন্দি গ্রুপের সাথে শিয়াদের সংর্ঘষের পর সংঘর্ষ বাধেঁ। শিয়া গোষ্ঠী এখানে প্রচুর জমির মালিক। দেউবন্দিরা টার্গেট করে শিয়া ভূ-সম্পত্তির মালিকদের। তাদের সাথে দফায় সংঘষের পর দুটি প্লাটফর্ম দাঁড়িয়ে যায়। দেউবন্দিরা গঠন করে ‘শিপাহ-এ-সাহাবা পাকিস্তান (এসএসপি)’ আর শিয়ারা গঠন করে ‘শিপাহ এ মোহাম্মদ পাকিস্তান (এসএমপি)’ । মূলত সুন্নি মতাদর্শদের ঠেকাতে শিপাহ এ মোহাম্মদ এর আত্মপ্রকাশ হয়। শিয়া ও সুন্নি দু’দলের মাঝে শত্রুতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। যা পাকিস্তানের রাজনীতি ও সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পাকিস্তানে সুন্নিদের দল ‘এসএসপি’ ও শিয়াদের দল ‘এসএমপি’ বিরোধ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। পাকিস্তানে সারা বছর ধরে অস্থিরতা জিইয়ে রাখার জন্য এ দু’দল যথেষ্ট। তাদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয় শান্তির জন্য। কিন্ত শান্তি আর আসে না। এসএসপি মুলত লসকর-ই-জাংভি নেতা রিয়াজ বসরা নেতৃত্বে সুসংগঠিত দল। দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে তাদের পৃষ্টপোষকাতায় পাকিস্তানে মাদ্রাসা ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠে। তাদের নেতৃত্বে অনেক উপদলও সৃষ্টি হয়। যা তাদেরকে জোট বলে পরিচিত। ১৯৫৭ সালে যেখানে মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫০টি। বর্তমানে সেখানে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার মাদ্রাসা। আর এসব মাদ্রাসার বেশির ভাগই পাঞ্জাবে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে এসব মাদ্রাসার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

বিশেষ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গি সম্পৃতার সরাসরি অভিযোগ রয়েছে প্রায় হাজারেরও অধিক মাদ্রাসার বিরুদ্ধে। পাকিস্তানে যত্রতত্র বোমা বিস্ফোরণসহ সন্ত্রাসবাদের পেছনে সক্রিয় মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে প্রায় ১০০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ংকর হামলার সব মামলা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নেওয়াজ শরীফ একাধিকবার মাদ্রাসা সম্পৃক্ত জঙ্গি দমনের চেষ্টা চালায়। কিন্ত প্রতিবারই ব্যর্থ হন। পাঞ্জাবের বিভিন্ন মাদ্রাসার জঙ্গিদের গ্রেফতার করার পর তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। বিশেষ করে পাঞ্জাবের শেহবাজ শরীফ প্রশাসনও মাদ্রাসার জঙ্গি দমনে প্রচেষ্টা চালান। কিন্ত শেষ পর্যন্ত সফলতা আসে না। কারণ তারা এতই শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত যে তাদের দমন করা দুরুহ হয়ে উঠে। পাকিস্তানে এমনিতেই প্রতিনিয়ত জাতিগত সংঘাত তো রয়েছে। মোহাজির ও সিন্ধি, মোহাজির ও পাঠানদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক দ্বন্দ্ব। ১৯৮৫ সালের দিকে বাসের নিচে পড়ে এক মুহাজির বালিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মুহাজির ও পাঠানদের মধ্যে ব্যাপক জাতিগত সংর্ঘষ ছড়িয়ে পড়ে। যা পরবর্তিতে ভয়াবহ রূপ নেয়। পাকিস্তানে মুহাজিররা বিশাল ভূমিকা পালন করে চলেছে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সন্ত্রাস একটি কমন ইস্যু। বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানের জঙ্গিদের কাছে যে পরিমান অস্ত্র ও বোমা রয়েছে তা অনেক দেশের সরকারের কাছেও নেই। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠির সহায়তায় পাকিস্তানে হচ্ছে অহরহ বোমবাজি। আর প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

পাকিস্তান জন্মের পর অর্ধেক শাসন সেনাবাহিনীর হাতে থাকলেও পাকিস্তানী রাজনীতিকরা দল গঠনে পিছিয়ে নেই। বর্তমানে ২৪টি রাজনৈতিক দল সক্রিয় রয়েছে। মুহাজির নেতা আলতাফ হোসেনের ‘মুহাজির কওমি মুভমেন্ট’ওয়ালী খানের নেতৃত্বে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (আওয়ামী), বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (হাবি গ্রুপ), বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (মেঙ্গল), সৈয়দ মুনওয়ার হাসানের জামাতে ইসলামী, জামহুরি ওয়াতান পার্টি, সৈয়দ মিরের জমিয়াত এ আহলে হিদাত, ফজলুর রহমানের জমিয়াতে ই ওলামায়ে ইসলাম, সামিউল হকের জমিয়াতে ই ওলামায়ে ইসলাম, আবুল খায়ির জুবায়েরের জমিয়াতে উলেমা ই পাকিস্তান, আল্লামা সাজিদ নকবীর মিল্লাত ই জাফরিয়া, আলতাফ হোসেনের মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, মাহমুদ খান আকজাই এর পাখতুন খাওয়া মিল্লি আওয়ামী পার্টি, তাহির উল কাদিরের পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক, চৌধুরী সুজ্জাত হোসেনের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম), পীর পাগারোর পাকিস্তান মুসলিম লীগ, নেওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নেওয়াজ), ভুট্টো পরিবারের পাকিস্তান পিপলস পার্টি, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (আফতাব আহমেদ), আফতাব আহমেদ খানের কওমি ওয়াতান পার্টি ও ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ অন্যতম।

আর এসব রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা নিজেদেও অবস্থানে কখনও স্থির থাকতে পারেন না। বার বার তারা চরিত্র বদলায়। দলগুলোর নেতাদের মধ্যে কেউ ইসলামকে ব্যবহার করে, কেউ সাধারণ মানুষের দারিদ্রতার সুযোগ নেয়, কেউ নিজের প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করে। আবার কেউ ক্ষমতার কাছাকাছি গেলে তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা চালায়। সব মিলিয়ে পাকিস্তানে সেনাবাহিনী প্রধান ভূমিকা রাখে। যে কেউ ক্ষমতায় যাক না কেন তাদের পরামর্শে দেশ চালাতে হবে। অন্যতায় ক্ষমতাচ্যুত। এভাবে চলছে দেশটি। আর ১৯ কোটি জনগণ তা তাকিয়ে দেখা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। বর্তমান চলমান আন্দোলনের শেষ ফসলও কি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা লাভ নাকি নেওয়াজ কন্যা মরিয়মের ক্ষমতা,দেখতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।### ২০.১০.২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.