--- বিজ্ঞাপন ---

ফ্রান্স বয়কট শ্লোগানে প্রকম্পিত বিশ্ব

মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া, নবীকে অসম্মানের দায়ে ফ্রান্স পণ্য বর্জন শুরু

0

কাজী আবুল মনসুর ##

বিশ্বেজুড়ে চলছে ফ্রান্স বয়কট শ্লোগান। মুসলমানদের  নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যঙ্গ প্রতিকৃতি তৈরি করে ফ্রান্স জুলুমের শেষ পর্যায়ে চলে গেছে। ফ্রান্সকে এর জবাব দিতেই বিশ্বব্যাপি ফ্রান্স পণ্য বর্জন শুরু হয়েছে। রাস্তার আন্দোলনের চেয়ে ফ্রান্সকে উচিত শিক্ষা দিতে পণ্য বর্জনকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ । তার মধ্যে ফ্রান্সের পন্য যদি বয়কট করা হয় তাহলে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ধ্বস নামবে। মুসলিম বিশ্ব এখন তাই মনে করছে। ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যে। পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছে এখান থেকে। কুয়েত সারা দেশের সুপারস্টোরগুলো থেকে ফ্রান্স পণ্য সরিয়ে নিয়েছে। কাতার তাদের সারা দেশে থাকা ‘আল মিরা’ সুপারশপ থেকে ফ্রান্স পণ্য উঠিয়ে নিয়েছে। জর্দান, সৌদিআরবও এর মধ্যে ফ্রান্স পণ্য বিক্রি না করার ঘোষনা দিয়েছে। তুরস্ক সবার আগে ফ্রান্স পণ্য বিপনন বন্ধ করে দিয়েছে। পণ্য বর্জনের ডাকে এরই মধ্যে ফ্রান্সের অর্থনীতিতে বিপদ দেখা দিয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা এ অবস্থা কিভাবে সামাল দেবে বুঝে উঠতে পারছে না।

গত বুধবার ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন, স্বাধীন মত প্রকাশের নীতি অনুযায়ী মহানবী মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে অসম্মানজনক কার্টুন প্রকাশ তিনি বন্ধ করতে পারবেন না। ম্যাক্রোর এ বিবৃতির পর মুসলিম বিশ্বে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সারা বিশ্বে ফ্রান্স পণ্য বয়কটের শ্লোগান উঠে।  লিবিয়া, সিরিয়া এবং গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভও দেখা গিয়েছে।

মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সংস্থা ওআইসির বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননা, মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে ক্রমাগত আঘাতের নিন্দা জানাই। রাজনৈতিক স্বার্থে ফ্রান্সের নাগরিক ও ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঘৃণ্য চেষ্টা করছেন কতিপয় ফরাসি কর্মকর্তা। বাক-স্বাধীনতার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সংস্থাটি ফ্রান্সকে তার বৈষম্যমূলক নীতিগুলো পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।

ফেসবুকে ইসলামভীতি বিষয়ক যে কোনও লেখা বা পোস্ট নিষিদ্ধ ঘোষণার আর্জি জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ বিষয়ে মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থাকে একটি চিঠি লিখেছেন ইমরান। যেটি পাক সরকারের তরফে আর এক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, টুইটারে পোস্ট করা হয়েছে। ইমরানের বক্তব্য, এই ধরনের ইসলামভীতি আসলে চরমপন্থা ও হিংসার সৃষ্টি করছে এবং সেই সঙ্গে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে ইসলাম নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তাও যাচ্ছে। তিনি ফরাসী প্রেসিডেন্টের এ কার্যকাপের নিন্দা জানিয়ে পণ্য বর্জনের ডাক দেন। ‘ পাকিস্তানে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসলামকে কটাক্ষ করে অবিবেচকের মতো মন্তব্য করে সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পাকিস্তান।পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যে বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মতো পাকিস্তানেও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

মিশরের আল-আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব বলেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ে ইসলামকে টেনে আনার নিয়মতান্ত্রিক প্রচার। আমরা কখনোই আমাদের প্রতীক এবং পবিত্র স্থাপনাগুলোকে নির্বাচনী লড়াইয়ের সস্তা দর কষাকষির হাতিয়ার হতে দেবো না।
লিবিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ জায়েদ ইসলামবিরোধী ম্যাক্রোঁর অসম্মানজনক বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, মহানবীর সম্মান, দুষিত বিবৃতি এবং তুচ্ছ কার্টুন দ্বারা কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।ফ্রান্সের মুসলিমবিরোধী প্রচারণার প্রতিবাদে আবারো ফরাসী পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন ইয়েমেনের ধর্মমন্ত্রী আহমাদ আত্তিয়া।

জর্ডানের মুসলিম ব্রাদারহুড ম্যাক্রোঁর বক্তব্যকে মুসলিম জাতির প্রতি আগ্রাসন, ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং বর্ণবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে।মহানবীকে অসম্মান করে কার্টুন পুনঃপ্রকাশ এবং ম্যাক্রোঁর বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায়। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। দেশটির জারাবুলুস এবং তেল আবিয়াদ শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে। এসময় প্রতিবাদ জানিয়েছে ম্যাক্রোঁর কুশপুতুল পুড়ানো হয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসাপ তায়েপ এর্দোয়ান বলেন, ইসলামের প্রতি মি. ম্যাক্রঁর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে তার “মানসিক চিকিৎসা করানো দরকার।” শনিবার একই মন্তব্যের জন্য তুরস্কে থাকা ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল দেশটি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলামবিরোধী অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, মুসলিমদের অবমাননা করা সুবিধাবাদী বাক-স্বাধীনতার অপব্যবহারের শামিল। সরাসরি ম্যাক্রোঁর নাম উল্লেখ না করলেও এক টুইট বার্তায় জাভেদ জারিফ বলেন, মুসলিমরা বিদ্বেষের প্রাথমিক শিকার।তিনি বলেন, এ ধরনের উগ্রবাদীদের ঘৃণ্য অপরাধের জন্য বিশ্বের ১৯০ কোটি মুসলিম এবং এবং তাদের পবিত্র স্থানগুলোর অবমাননা বাক স্বাধীনতার সুযোগের অপব্যবহার। এগুলো শুধুমাত্র চরমপন্থা উসকে দেয়।

বিবিসি জানায়,

গত ১৬ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসের শহরতলী এলাকায় এক স্কুলশিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হামলাকারীর বয়স ১৮ বছর। তিনি চেচেন জাতিগোষ্ঠীর । নিহত ওই শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ ক্লাসে তিনি শিক্ষার্থীদের মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন দেখিয়ে ছিলেন। তারপর তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ফ্রান্সের পুলিশ দেশটির অন্তত ৫০টি মসজিদ ও মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় ভয়াবহ অভিযান চালায়। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলেও এর পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন ফ্র্যান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি জানিয়েছেন, হযরত মুহাম্মদের (সা.)কে নিয়ে বিতর্কিত কার্টুন ছাপানো নিয়ে নিন্দা জানাবেন না।
মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন বন্ধে ব্যবস্থা না নেয়া এবং শার্লি এবদোর পক্ষে অবস্থান নেয়ার পর মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়ছে মুসলিম দেশগুলো। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ফ্রান্সের সব ধরনের পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে।

হ্যাশট্যাগ (#BoycottFrenceProducts) 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বিশেষ করে টুইটার ও ফেসবুকে ফ্রান্সের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আন্দোলনকারীরা ফেসবুক পোস্টে ফ্রান্সের বিভিন্ন কোম্পানির একটি তালিকা প্রকাশ করছেন। যেখানে ফ্রান্সের মালিকানাধীনা কোম্পানিগুলোর লোগো ও নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ব্যবহার করা হয়েছে হ্যাশট্যাগ বয়কট ফ্রান্স। বিবিসি বলছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিয়ে বিতর্কিত কার্টুন প্রকাশের পর ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে বিশ্বব্যাপী হ্যাশ ট্যাগ (#BoycottFrenceProducts) ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। এতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।

ফ্রান্সের ওয়েবসাইটগুলোতে সাইবার হামলা

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলাম বিরোধী মন্তব্য ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর কার্টুন পুনঃপ্রকাশের মনোভাব ব্যক্ত করার পর দেশটির কয়েকটি ওয়েবসাইটে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। টুইটারে একটি অ্যান্টি-ম্যালওয়ার এবং সাপোর্ট ইউনিট অ্যাকাউন্ট জানিয়েছে, ফ্রান্সের ওয়েবসাইটগুলো বড় ধরনের সাইবার হামলার মুখে পড়েছে।
বিস্তারিত প্রকাশ না করে সেখানে বলা হয়, রোববার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের ওয়েবসাইটগুলো সাইবার হামলার মুখে পড়েছে। এসব ওয়েব সাইট উদ্ধারে তাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

আই লাভ ইউ মুহাম্মদ মাস্ক কসোভোর সংসদ সদস্যের

মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশে ব্যাপকহারে ফ্রান্সের পণ্য বয়কট করা হচ্ছে। প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন ইমান রাহমানি নামে কসোভোর এক সংসদ সদস্য। তিনি ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ লেখা মাস্ক পরে অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।আনাদোলু এজেন্সির জানায়, গতকাল রোববার (২৫ অক্টোবর) এমন মাস্ক পরে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন ইমান রাহমানি। সংসদ সদস্য ছাড়াও তিনি সেলফ ডিটারমিনেশন মুভমেন্টের সদস্য। জানা যায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যখন ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন, তখন সেই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানায় ফান্সে নিযুক্ত কসোভোর রাষ্ট্রদূত। এ নিয়ে সাংসদ ইমান রাহমানি নিজ দেশের এই রাষ্ট্রদূতের কড়া সমালোচনা করেছেন। সংসদে বক্তব্যের শুরুতে ইমান রাহমানি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানবজাতির জন্য রহমতের বার্তাবাহক।### ২৭.১০.২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.