--- বিজ্ঞাপন ---

বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের গতি বদলাবে

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতির আভাস মিলছে এখন থেকেই। দক্ষিন এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তির দেশ ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে এনিয়ে এমন জল্পনা-কল্পনা চলছে। ভারতের জি নিউজ শুক্রবার ও পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকায় (২৮ অক্টোবর) এব্যাপারে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতের জি নিউজ জানিয়েছে, বিশ্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের অপেক্ষায় থাকায় পাকিস্তান আশা করবে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিক। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে পাকিস্তানের সম্পর্কে তেমন উন্নতি হয়নি এবং জো বাইডেনের জয়ের প্রত্যাশা করছে দেশটি। জো বাইডেন একজন প্রবীণ কূটনীতিক এবং পাকিস্তানের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে । পত্রিকাটি জানায়, ২০০৮ সালে পাকিস্তান বাইডেনকে সেদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘হিলাল-ই-পাকিস্তান’ দিয়েছিল। লুগারকেও ‘হিলাল-ই-পাকিস্তান’ ভূষিত করা হয়েছিল। তত্কালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি “ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন” দেওয়ার জন্য দু’জনকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।

অপরদিকে পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকায় মুহাম্মদ আশার খান এক নিবন্ধে বলেছেন, জো বাইডেন পাকিস্তানকে কৌশলগত আঞ্চলিক মিত্র হিসাবে দেখেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অর্থনৈতিক দিক এবং চীনের সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে একমাত্র শক্তিশালী শক্তি হিসাবে পরিণত হওয়ায় বাইডেন ক্ষমতায় এলে ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে তিনি ট্রাম্পের মত এককভাবে পাকিস্তানকে উপেক্ষা করে ভারতকে ঢালাওভাবে সর্বক্ষেত্রে সমর্থন করবেননা এটা বলা যেতে পারে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের ভূমিকা সম্পর্কে ট্রাম্পের থেকে ভিন্নমত পোষন করেন বাইডেন। তিনি ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানকে কৌশলগত আঞ্চলিক মিত্র হিসাবে দেখেছেন।সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির (এসএফআরসি) চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিডেন সিনেটর রিচার্ড লুগার সহ ২০০৮ সালে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নতির উপর গুরুত্ব দেন । এ উদ্দেশ্যে ‘এনহ্যান্স পাটনারশীপ এ্যাক্ট’ নামের আইনটিও তিনি প্রবর্তন করেছিলেন। মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও জোরদার করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা পরে বিখ্যাত কেরি-লুগার বিল নামে পরিচিত । বাইডেনের প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য ছিল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি করা।

US President Donald Trump meets with Pakistani Prime Minister Imran Khan (L) in the Oval Office at the White House in Washington, DC, on July 22, 2019. (Photo by Nicholas Kamm / AFP)

পাকিস্তান ছিল একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র

একসময় দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ছিল আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ। এক দশক আগেও বুশের আমলেও দুদেশের মধ্যেকার সম্পর্কৃ একপ্রকার উষ্ঞ ছিল। তখন আফগান যুদ্ধে তালেবান-আল কায়েদার বিরুদ্ধে অভিযানে পাকিস্তানের জেনারেল মোশাররফ সরকার মার্কিনীদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। এর আগে পরমাণু বোমা তৈরী করছে সন্দেহে আমেরিকা পাকিস্তানকে বিভিন্ন সময়ে সামরিক ও অন্যান্য সহায়তা স্থগিতসহ সম্পর্কে ছড়াই উতরাই ছিল।আফগানিস্তানে সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে আমেরিকাকে সহযোগিতা করায় রাতারাতি সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। সেসময় পাকিস্তানকে ন্যাটো জোটের বাইরে ‘নন ন্যাটো মিত্র’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় । ধুরন্ধর জেনারেল মোশাররফ মার্কিনীদের কাছ থেকে তখনকার লেটেস্ট অত্যাধুনিক এফ-১৬ জঙ্গী বিমান (ব্লক-৫২ মডেল) আদায় করেছিলেন। নওয়াজ শরীফ ও জারদারি ক্ষমতায় আসার পর তারা পররাষ্ট্র নীতিতে পাকিস্তানকে তেমন কিছু দিতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আরব বিশ্ব কারো সাথেই বাণিজ্যিক সামরিক কিংবা আর্থিক কোন দিকেই উন্নতি করাতে পারেনি তারা। সেদেশের বড় বড় পত্রিকাগুলিতে তাদের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই । শরীফ পানামা কেলেংকারিসহ নানা অনিয়মে জড়িত অভিযোগ পাওয়া যায়।অপরদিকে গুলীতে নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো নিহত হওয়ার পর ২০০৮ সালে তার স্বামী আসিফ আলী জারদারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঐ পদে ছিলেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। জারদারিকে মিস্টার টেন পার্সেন্ট বলা হতো।সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণের অভিযোগের কারণে ওই সময় তাঁর নামই হয়ে যায় ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’।জারদারির গ্রেপ্তার হওয়া বা কারাবাস অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগেও গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে ছিলেন তিনি।

ডেমোক্রেট হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সাথে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লাদেনকে হত্যার পর

হোসেন ওবামার আমলে ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে দেশটিকে না আগাম না জানিয়ে গোপণ কমান্ডো অভিযান চালায় আমেরিকার সিল কমান্ডো। এ অভিযানে  আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে । পাকিস্তানের যে ডাক্তার মার্কিন কমান্ডো ও সিআই’র চর হিসেবে কাজ করছিল তাকে পাকিস্তান আটক করায় দুদেশের সম্পর্কে চীড় ধরতে শুরু করে।  পাকিস্তানের যে ডাক্তার মার্কিন কমান্ডো ও সিআইএ’র চর হিসেবে কাজ করছিল তাকে পাকিস্তান আটক করায় দুদেশের সম্পর্কে চীড় ধরতে শুরু করে।মার্কিন টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে ট্রাম্প দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে দুই মিনিটের মধ্যে পাক কারাগার থেকে ডাক্তার শাকিল আফ্রিদিকে মুক্ত করবেন তিনি। তার এ লাগামহীন বক্তব্যের জবাবে পাকিস্তান বলেছিল সেদেশের আদালতই কেবলমাত্র শাকিলের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। পাকিস্তান আমেরিকার উপনিবেশ নয় এ কথা উল্লেখ করে দেশটির পক্ষ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা উচিত জানিয়ে ট্রাম্পের বক্তব‌্যে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ডা: শাকিল লাদেন পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ সংগ্রহ করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। তিনি সে সময় ওই এলাকায় ভ্যাকসিন দেয়ার এক ভুয়া কর্মসূচি পরিচালনা করেন। তবে এর মাধ্যমে তিনি লাদেনের অবস্থান সনাক্ত করতে পেরেছিলেন কিনা সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন ও অর্থ সহায়তা দেয়ার অভিযোগে ড. শাকিলকে দেশটির একটি উপজাতীয় আদালত ৩৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে সিআইএ-কে সহযোগিতা করার অভিযোগে তিনি কারাদণ্ড ভোগ করছেন।তবে সিআই’র চর হিসেবে খ্যাত ডাক্তার শাকিল আফ্রিদি পেশোয়ারের একটি কারাগার থেকে ২০১২ সালে দেয়া সাক্ষাতকারে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা’র গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত বলে দাবি করেছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওয়াশিংটন সফরের পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। এরপরই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে মার্কিন সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক কর্মসূচিতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ আবারও শুরু করে। ###৬.১১.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.