--- বিজ্ঞাপন ---

তুর্কী ড্রোনে কুপোকাত আর্মেনিয়া

আজারবাইজানের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছে এই ম্যাজিক অস্ত্র

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

সিরিয়া ও লিবিয়ার পর আজারবাইজানের নগর্নো- কারাবাখ যুদ্ধেও ড্রোন এক বিরাট ভুমিকা নিয়েছে। বড় বড় উন্নত সামরিক বাহিনীর দেশগুলির জন্য এ এক নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরাসি দৈনিক পত্রিকা ‘লা ‘অ’পিনিয়ন’ সহ বিভিন্ন পশ্চিমা পত্র পত্রিকায় এনিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার ( ১০ নভেম্বর ) লা ‘অ’পিনিয়ন এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানায়,“যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিক থেকেই আর্মেনিয়ার চেয়ে আজারবাইজানীয় শ্রেষ্ঠত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠে। তুর্কি প্রযুক্তির বিরুদ্ধে রাশিয়ান অস্ত্রশস্ত্র তেমন কোন সুবিধা করতে পারেনি বলে ঐ দৈনিক উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্কিন প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদক ডেভিড হাম্বলিং জানান, আর্মেনিয়ায় আজারবাইজানের বিজয়ের পিছনে ‘ম্যাজিক বুলেট’ ড্রোন। সংঘর্ষে আজারবাইজান বিভিন্ন ধরণের ড্রোন ব্যবহার করেছিল। তবে সবচেয়ে মারাত্মক ড্রোনের মধ্যে রয়েছে তুরস্কের সরবরাহকৃত বায়ারাকতার টিবি-২ ড্রোন। যদিও এটি আমেরিকার এমকিউ-৯ রিপারের ওজনের প্রায় এক-অষ্টমাংশ ওজন, গতি বেগ ৮০ মাইল মাইল, টিবি-২ চারটি এমএএম (স্মার্ট মাইক্রো মিউনিশন) লেজার-গাইডেড মিসাইল বহন করে এবং লড়াইয়ে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়। আজারবাইজান টিবি-২ থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলির দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক ইত্যাদির ভিডিও প্রকাশ করে।

বিশ্লেষক স্যামুয়েল বেন্ডেট এর উদ্ধৃতি দিয়ে ডেভিড হাম্বলিং গত মঙ্গলবারের এই প্রতিবেদনে বলেছেন, “আজারি বিমানগুলি আর্মেনিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা এবং স্থল লক্ষ্যবস্তু ক্রমাগত ধ্বংস করতে সক্ষম হওয়ার পেছনে একটি ‘ম্যাজিক বুলেট’ ছিল। আর সেটা ছিল ড্রোন। এই ড্রোন গোটা যুদ্ধের গতি পাল্টে দিয়েছে। আগামীতে বড় বড় দেশগুলির সমর বিশারদরা ড্রোন মোকাবেলার পথ খুঁজতে এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার রবিওয়ান ডায়াকন  ১১ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, ড্রোন নিয়ন্তিত হামলাই আর্মেনিয়ার নগর্নো- কারাবাখের সৈন্যদের লক্ষ্যবস্তু , ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে  ৪৪ দিনের যুদ্ধে আজারবাইজানকে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যায়। পৃথিবী জুড়ে এখন আগামী দিনের যু্দ্ধসমূহে ড্রোন হামলা মোকাবেলা করা যায় এটাই সামরিক বাহিনীসমূহের জন‌্য বড় চ‌্যালেঞ্জ।তুলনামূলকভাবে স্বল্প দামের এই ড্রোনগুলি  প্রযুক্তিতে সামর্থে উন্নত দেশগুলির বড় বিমান বাহিনী নেই এমন দেশগুলিকে যুদ্ধ নিজেদের অনুকূলে আনতে পারে নাগর্নো-কারাবাখের যুদ্ধ থেকে এর প্রমাণ মেলে।  এই  ৩০ বছরের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের  এই যুদ্ধের কীভাবে ড্রোনগুলি যুদ্ধের গতিপথের পরিবর্তন ঘটিয়ে হঠাৎ আজারবাইজানের অনুকূলে যুদ্ধ নিয়ে এল পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকদের অবাক করে দিয়েছে।

আজারবাইজান ড্রোন  উড়ে যাওয়ার সময় নাগর্নো-কারাবাখের হদ্রুতের কাছে সৈন্যরা গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায় ( ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০এর ছবি )  মার্কাস ইয়াম / লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস।

আমেরিকার  ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের নেভাল এনালাইসিসের সেন্টারের রাশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক সামরিক বিশ্লেষক মাইকেল কোফম্যান বলেছেন, ” এধরনের কম দামের ড্রোনগুলি ব‌্যবহার করে  ছোট ছোট দেশগুলি প্রতিপক্ষের অনেক দামি  দামি সামরিক সরঞ্জাম যেমন ট্যাঙ্ক, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম হচছ যা ভেবে দেখার বিষয়। ” তিনি আরও বলেন, “একটি বিমানবাহিনী খুব ব্যয়বহুল অনেক  দরিদ্র ছোট দেশগুলির পক্ষে বড় বিমানবাহিনী পরিচালনা ব‌্যয়সাপেক্ষ।”

ফ্রান্সের ম্যাক্রোর জন্য চরম ব্যর্থতা
আর্মেনিয়ার পরাজয় ফ্রান্সের জন্য আরেকটি ব্যর্থতা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে । ‘লা ‘অ’পিনিয়ন’ পত্রিকার আরও বলছে, আজারবাইজানের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং যৌথ ঘোষণাপত্র আর্মেনিয়ার জন্য এক বিশাল পরাজয় । ফ্রান্সের ইমানুয়ের ম‌্যাক্রোর জন‌্য এটি আরেকটি ব্যর্থতা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজিপ তাইয়েপ এরদোয়ান আজারবাইজানকে নগর্নো কারাবাখ যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে জিতে নিয়েছে। শুধু তা-ই নয় এটা তুরস্ক বিরোধী জোটের দেশ ফ্রান্স লিবিয়া, সিরিয়ার পর আর্মেনিয়াকে সমর্থৃন দিয়ে সেখানেও হেরে গেল। যা ফ্রান্সের জন্য আরেকটি ব্যর্থতা। দৈনিক দাবি করেছে যে “কূটনৈতিক খেলা”  থেকে পশ্চিমা দেশগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের রেজিপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের মধ্য দিয়ে যে কূটনৈতিক বাজিমাত হয়েছে এতে ফ্রান্স ও আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলিকে টেক্কা দেয়া হল। কারাবাখ যুদ্ধ বন্ধ চুক্তিতে কোন পশ্চিমা দেশকেই রাখা হয়নি।

২৫ হাজার সৈন্যের প্রাণ বাঁচিয়েছি-আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান আজারবাইজানকে ছাড় দেয়ায় সেদেশে বিক্ষোভরত মানুষকে শান্ত করতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে গত ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বলেন, আর্মেনিয়াকে বাকুর সাথে চুক্তি করা ছাড়া কোন বিকল্প ছিলনা। এই চুক্তি না হলে ২৫,০০০ সৈন্য ঘেরাও কিংবা বন্দী হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছি। সেনাবাহিনী পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হত। তিনি বলেন, এটি একটি “খুব, খুব কঠিন সিদ্ধান্ত” ছিল। রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম আরটি এ খবর জানায় । তুরস্ক যুদ্ধ বিরতিকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে আজারবাইজানের এক “বিরাট বিজয়” হিসাবে আখ্যা দেয়। ###১৩.১১.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.