--- বিজ্ঞাপন ---

ট্রাম্প নেই, স্বস্তির নিঃশ্বাস ইউরোপেও

0

আব্দুল্লাহ আরাফাত##

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার “আমেরিকা ফার্স্ট” জাতীয়তাবাদী নীতি গ্রহণ করে তার দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রসমূহের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। ইউরোপের দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ন্যাটো সামরিক জোটের মাধ্যমে তারা এক শক্তিশালী জোট গড়ে তোলে নিজেদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার কারণে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র এই জোটের বড় অংশীদার এবং অর্থদাতা। তিনি পররাষ্ট্রনীতির নিয়ম তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ইউরোপের দেশগুলো জোটের অর্থ  ন্যায্যতার অনুপাতে দিচ্ছে না। তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপীয় নেতাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শুরু করেন। বিভেদ এমন চরম আকার ধারণ করে যে এর ফলে এস্তোনিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পদত্যাগ করেন ৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ইউরোপীয় নেতানেত্রীদের যে মধুর সম্পর্ক ছিল ট্রাম্প এসে তাতে ছেদ টেনে দেন। “আমি আমেরিকান কূটনীতি ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে যুক্ত, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার মিত্রদেশের এমন উত্তেজনা আমি আর কখনো দেখিনি” – বলছিলেন ন্যান্সি ম্যাকেডাউনি। তিনি ওবামা আমলে বুলগেরিয়ায় রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং বর্তমানে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত।

ট্রাম্পের ভুল পররাষ্ট্রনীতির কারণে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল বর্তমান নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের জন্য পুনরায় সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ও ক্ষতে প্রলেপ দেয়া এক ধরণের চ্যালেঞ্জ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের নড়বড়ে অবস্থা ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বৈশ্বিক গতিপ্রকৃতিকে এক অনিশ্চিত পথে নিয়ে গিয়েছে।

এক নজরে দেখে নেয়া যাক শীর্ষ ইউরোপীয় দেশের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বন্দ্বঃ

যুক্তরাজ্যঃ যুক্তরাজ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কাছের ও পুরনো বন্ধ । ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্য বর্তমানে জেরবার অবস্থায় পড়েছে তার উপর কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বরিস জনসনের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। পূর্বে, যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ট্রাম্প টুইটে বলেছিলেন, তিনি থেরেসা মে কে ব্রেক্সিট নিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তার উল্টো পথে চলেছেন।

জার্মানিঃ  ট্রাম্পের মূল অভিযোগ জার্মানি ইউরোপের অর্থনৈতিক  ‘পাওয়ারহাউস’ হওয়া সত্ত্বেও ন্যাটো জোটে তার প্রাপ্য অর্থ দিচ্ছে না। এছাড়া তারা, রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল ও গ্যাস আমদানি করছে। তিনি আরও বলেছিলেন, জার্মান অটোমোবাইল শিল্প যদি যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিধি বিস্তার করতে চাই, তাহলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে কারখানা স্থাপন করতে হবে।

ফ্রান্সঃ ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাখোর সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক সবসময় সমান্তরাল ছিল না। ম্যাখো গতবছর বলেছিলেন, ইউরোপীয়দের সম্পূর্ণ ‘ইউরোপীয় বাহিনী’ থাকা দরকার যাতে তারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব নিজেরাই রক্ষা করতে পারে। ম্যাখোর এই ধরণের উচ্চভিলাষী পরিকল্পনার কথা ট্রাম্প সমর্থন করেননি ও হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ফরাসী পণ্যে ট্যারিফ বসাবেন।

নরওয়েঃ বিশ্বের অন্যতম ধনীদেশ নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গকে হুমকির সুরে একটা পত্রে ট্রাম্প বলেন, নরওয়ে যেন সামরিক বাজেট ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। ট্রাম্পের এই ধরণের আচরণ স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশটি ভালভাবে নেয়নি।

সুইডেনঃ গতবছর মার্কিন এক শিল্পী সুইডেনে কারান্তরীণ হলে ট্রাম্প সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লফবেনের সাথে কথা বলে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপের জন্য বলে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লফবেন এই ব্যাপারে তার অপরাগতা প্রকাশ করলে ট্রাম্প নাখোশ হয়েছিলেন।

ডেনমার্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টায় সবচেয়ে অখুশি ছিল ডেনমার্ক। এর ফলে, ডেনমার্কের সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে। তিনি, ডেনমার্ক সফর বাতিল করেন। এর ফলে ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাটে ফ্রেডেরিকসেন ট্রাম্পের আচরণে ক্ষোভ  প্রকাশ করেছিলেন।

জো বাইডেনের কর্ম পরিকল্পনা কেমন হতে পারে?

জো বাইডেন ‘অখন্ড ইউরোপের’ সমর্থক। তিনি ও তার প্রশাসন ইউরোপের সাথে পুনরায় সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করবেন এটা নতুন কিছু নয়। তিনি দীর্ঘদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এরও আগে সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ছিলেন। ইতিমধ্যে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ইউরোপীয় নেতারা তাদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে শুরু করেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, তিনি বাইডেনের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছেন। এছাড়াও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাশ টুইট করেছেন বাইডেনের বিজয়ে। তিনি বলেন, ‘ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনার সম্ভাবনা আছে। একে তিনি ‘নিউ ডিল’ বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে মিত্রদের সাথে সম্পর্কের যে মেরুকরণ করেছিলেন বাইডেন তা সারিয়ে তুলবেন বলে আশা করা যায়৷ আশা করা যায় এই কারণে যে, বাইডেন পুনরায় জলবায়ু, কোভিড-১৯ এর টিকার বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বাস্তবিক সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।###সূত্রঃ দ্য হিল

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.