--- বিজ্ঞাপন ---

পরপারে চলে গেলেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

অবশেষে পরপারে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।গত কয়েক মাস যাবত হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে হেরে গেলেন এই জনপ্রিয় মহাতারকা। এপার ওপার বাংলার চলচ্চিত্র্র জগতে উত্তম কুমারের পর বোধ করি এত জনপ্রিয়তা আর কেউ পাননি যেমনটি পেয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।তাঁর মৃত্যুর সংবাদের পরপরই কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার বাংলা চলচ্চিত্রের এই জনপ্রিয় অভিনেতার অতীত বর্তমান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।পত্রিকাটিতে বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তমের পর অতি জনপ্রিয় এই অভিনেতার অতীত বর্তমান নিয়ে আলোকপাত করা হয়।আনন্দবাজার পত্রিকা লিখছে, ৮৬ বছরে শেষ হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মময় পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চলে গেলেন বাংলা ছবির প্রবীণ মহাতারকা, অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি-চিত্রকর। রবিবার(১৫ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টায় মধ্য কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বের বেলভিউয়ে ভর্তি হন সৌমিত্র। তিনি একটা সময়ে ক্যানসারেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই অসুস্থতা স্বভাবতই তাঁকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। ফলে কখনও উন্নতি কখনও অবনতি, এই দোলাচলেই চলছিল হাসপাতাল-বন্দি সৌমিত্রর জীবন। এছাড়াও একাধিক কোমর্বিডিটি ছিল তাঁর। তার জেরে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে তাঁর। তবুও প্লাজমা থেরাপি, শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার-সহ নানা ভাবে অভিনেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাঁকে। রবিবার কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। তার আগে দেহ শায়িত ছিল রবীন্দ্র সদনে। সেখান থেকে সৌমিত্রর দেহ নিয়ে যাওয়া কেওড়াতলায়। হেঁটে শেষ যাত্রায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বসু, রাজ চক্রবর্তী, দেব, কৌশিক সেন-সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধ। তার আগে বেলভিউ হাসপাতাল থেকে গল্ফগ্রিনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় দেহ। সব শেষে কালীপুজোর পরের দিন সন্ধ্যায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় সৌমিত্রর।

কিন্তু শুক্রবার সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটে। হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অলৌকিক কিছু না ঘটলে সৌমিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব। তার পরই দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে আসে অনুরাগীদের মধ্যে।
রাতভর সেই নিয়ে টানাপড়েনের পর এ দিন সকাল হতেই হাসপাতালে পৌঁছে যান সৌমিত্রর পরিবারের লোকজন। কিছু ক্ষণ পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়েও যান তাঁরা। কিন্তু পর ক্ষণেই হাসপাতালের তরফে ফের ডেকে পাঠানো হয় তাঁদের। তবে সেইসময় বাবার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘‘বাবার স্বাস্থ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। তার পর এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব আমরা। চিকিৎসকেরা ওখানে থাকতে বলেছেন আমাদের।’’

এর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, অশীতিপর অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেলভিউ পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পৌলমীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। পৌলমী বলেন, ‘‘দুপুর ২টোয় প্রথমে গল্ফগ্রীনের বাড়িতে নিয়ে যাব বাবাকে। তার পর টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো হয়ে রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাব। সেখান থেকে কেওড়াতলা শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেব আমরা। দিদি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। এত যত্ন করে, ভালবেসে, সম্মানের সঙ্গে বাবাকে আগলে রেখেছিলেন সকলে। বাবা চিরকাল আমাদের মনে রয়ে যাবেন।’’
আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সৌমিত্রকে ধরে রাখতে পারলেন বলে বেলভিউয়ে দাঁড়িয়ে এমন আক্ষেপ করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘ফেলুদা আর নেই। অপু আমাদের বিদায় জানিয়েছেন। বিদায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। উনি এক জন কিংবদন্তী। বাংলা, ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র একজন মহান অভিনেতাকে হারাল। ওঁকে খুব মিস করব আমরা। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ অভিভাবকহীন হয়ে গেল’।

 

 

মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজের সুবাদে সবচেয়ে বেশি পরিচিত সৌমিত্র। লিজিয়ঁ অব অনার, দাদাসাহেব ফালকে, বঙ্গভূষণ, পদ্মভূষণ এবং জাতীয় স্তরে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ওঁর পরিবার, চলচ্চিত্র জগতের কলাকুশলী এবং অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই’।
সৌমিত্রের প্রয়াণে এ দিন টুইটারে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি লেখেন, ‘শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। ওঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত। শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই।###১৫.১১.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.