--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তানে তৈরী জেএফ-১৭ থান্ডার জঙ্গী বিমান পাচ্ছে নাইজেরিয়া

মূল্য ১৮ কোটি ৪৩ লক্ষ মার্কিন ডলার

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ নাইজেরিয়া পাকিস্তানে তৈরী অত্যাধুনিক জেএফ-১৭ থান্ডার জঙ্গী বিমানের প্রথম ৩টির চালান গ্রহণ করতে যাচ্ছে । বিমানগুলির মূল্য প্রশিক্ষণ ও অন‌্যান‌্য ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়সহ ব‌্যয় ধরা হয়েছে মোট  ১৮৪.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ( ১৮ কোটি ৪৩ লক্ষ মার্কিন ডলার) বলে সূত্রে জানা গেছে। আসছে সপ্তাহের কোন এক সময়ে জঙ্গী বিমানগুলি দেশটিতে পৌঁছুবে। এর আগে গত নভেম্বর মাসে এ চালানটি শীগগীরই দেশটিতে প্রেরণের কথা উভয় দেশ জানিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত  ১৩ নভেম্বর, নাইজেরিয়ার বিমানবাহিনীর কমান্ডার এয়ার মার্শাল সাদিক আবুবাকরের মাকুরদী বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনকালে প্রেরিত তার ফেসবুক পোস্টে এ সংবাদটি নিশ্চিত করেন। নাইজেরিয়ার পাইলটরা পাকিস্তানে এই জেএফ-১৭ জঙ্গী বিমান চালানোর যাবতীয় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন বলে সূত্র জানায়।

নাইজেরিয়ার ডেইলি পোস্ট পত্রিকা গত ১৬ অক্টোবর সেদেশের সিনেটের সভাপতির উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, এই জঙ্গী বিমান ছাড়াও প্রতিরক্ষা খাতের আধুনিকীকরণে পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছে নাইজেরিয়া। সেদেশের সিনেটের প্রেসিডেন্ট আহমদ লান নাইজেরিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়নে নাইজেরিয়াকে সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের সিনেটের বিদেশ বিষয়ক সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর মুশাহিদ হুসেন সাঈদ এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাত করার সময় এই আহ্বান  জানান তিনি।

সিনেট প্রেসিডেন্ট বিদ্রোহ ও অন্যান্য সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নাইজেরিয়া সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহে পাকিস্তানের সহায়তার জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান।

জেএফ-১৭ জঙ্গী বিমান পাকিস্তান-চীন যৌথভাবে নির্মাণ করছে। পাকিস্তানে তৈরী সেদেশের কারখানা কামরা’য় পাকিস্তান এ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স (পিএসি) -এ  তৈরী এই মডেলের প্রথম বিমান উড়ে ২০০৮ সালে। পাকিস্তান এই জঙ্গী বিমানের এয়ারফ্রেম এবং সাবসিস্টেমগুলি ডানা, লেজ এবং ফরোয়ার্ড ফিউজলেজসহ জেএফ-১৭’র  প্রায় ৫৮ ভাগ তৈরী করছে। চীন বাকী ৪২ শতাংশের মধ্যে বিমানের এভিওনিক্স, রাডার ও ইঞ্জিন সরবরাহ করে। এই জঙ্গী বিমানে এখনও  রাশিয়ায় তৈরী আরডি-৯৩ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে নতুন মডেল জেএফ-১৭ ব্লক-৩-তে আরডি-৩৩ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে । পাকিস্তান রাশিয়ার ইঞ্জিনটির উন্নত সংস্করণ আরডি-৩৩ এমএ ব্যবহার করতে পারে বলে জানা গেছে। পাকিস্তান জঙ্গী বিমানটিতে পশ্চিমা সরঞ্জাম সংযোজন করেছে। যেমন বৃটেনের বিশ্বখ্যাত মারটিন বেকার ইজেকসন সীট যা পাইলটদের বিপদের সময় প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে বিমান থেকে বেরুতে সাহায্য করে।

পাকিস্তান এ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স ( পিএসি) অদূর ভবিষ্যতে বিমানটি তৈরীতে বিদেশী নির্ভরশীলতা কমিয়ে আরও স্বয়ংসম্পূণ হওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায় । এই জেএফ-১৭ থান্ডার বিমানে চীনের  ডব্লিউএস-১০ তাইহং ইঞ্জিন বা এর উন্নত সংস্করণ স্থাপনের পরিকল্পনা আছে বলে চীনের সামরিক পত্রিকা সূত্রে জানা যায় । তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তৈরী করা নতুন সংস্করণ  জেএফ-১৭ ব্লক-৩ মডেলটিতে বহু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম প্রযুক্তি থাকছে। এছাড়া থাকবে সর্বাধুনিক রাডার ব্যবস্থা যাকে  এইএসএ (অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যান অ্যারে) বলা হয়।  সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান এ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স নতুন মডেলটিকে বিশ্বের সেরা বিমানগুলির প্রযুক্তি সমতুল্য করতে এটিতে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ জঙ্গী বিমানের মত বিমানের উইং এবং পেটের অংশের নীচে  সেন্ট্রালাইন স্টেশনে মার্ক-৪ বোমা বহন করার উপযোগী করে গড়ে তুলেছে। নাইজেরিয়ায় ৩টি  এবং এর আগে মিয়ানমারে ৮টি জেএফ-১৭ জঙ্গী বিমান বিক্রী হয়েছে। নাইজেরিয়ার জন‌্য তৈরী বিমানগুলোতে সেদেশের পতাকার সাথে সামঞ্জস‌্য রেখে রঙ করা ও সাংকেতিক নাম্বার দেয়া হয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আজারবাইজান, মিশর, শ্রীলঙ্কা, সুদান, মালয়েশিয়া এবং জিম্বাবুয়ে জেএফ-১৭ জঙ্গী বিমান ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী নিজেরাই ১২০ টির অধিক ইতিমধ্যেই ব্যবহার করতে শুরু করেছে । পাকিস্তানের দাবী, ভারতের সাথে সর্বশেষ কাশ্মীরের পুলওয়ামাসহ সীমান্ত সংঘর্ষের সময় এই জেএফ-১৭ জঙ্গী বিমানই ভারতের মিগ-২১ বিমানকে ভূপাতিত করে এবং পাইলট অভিনন্দন এতে বন্দী হয় ।পরে দুদেশের আলোচনায় পাইলটকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গী বিমান উতপাদনে সক্ষম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত তার দেশে তৈরী ‘তেজস’ এখনও পুরোপুরি উতপাদনে যেতে পারেনি। এতেও বিদেশী নির্ভরশীলতা রয়েছে, যেমন ‘তেজস’ এর ইঞ্জিন হচ্ছে আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিক জিই এফ-৪১৪ ইঞ্জিন, ইসরাইলের রাডার ও ডার্বি ক্ষেপণাস্ত্র, রাশিয়ার ভিমপেল ক্ষেপণাস্ত্র, বৃটেনের মারটিন বেকার ইজেকসন সীট ইত্যাদি সজ্জিত থাকার কথা রয়েছে। ইউরোশিয়ান টাইমস গত জুলাইতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারতে তৈরী ‘তেজাস’ বিমান কবে আলোর মুখ দেখবে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। উল্লেখ্য, পাকিস্তান দেশের বাইরে রফতানি করতে সক্ষম হলেও ভারতের তৈরী ‘তেজস’ এখনও রফতানির মুখ দেখেনি। ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় পাকিস্তানেরও বহু আগে নিজেদের দেশে তৈরী করার অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও কয়েক দশক গত হল ‘তেজস’ এখনও আলোর মুখ দেখাতে সক্ষম হয়নি। কলকাতা ২৪ পূরণ ৭ অনলাইন ( ১৩ মার্চ, ২০১৯ ) এক প্রতিবেদনে পাকিস্তান ও চীনের যৌথ তৈরী সফল জঙ্গী বিমান জেএফ-১৭’র নতুন সংস্করণের উল্লেখ করতে গিয়ে শিরোনাম দেয় ,“ভারতের তেজসকে টেক্কা দিতে JF-17 ফাইটার জেট চিন-পাকিস্তানের”। ঐ প্রতিবেদনে চীনের গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধের উল্লেখ করে বলা হয়, চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে জেএফ-১৭ থাণ্ডার সিরিজের জেটগুলির মানোন্নয়নে কাজ করছে ৷ যা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে বলে খবর ৷ সেক্ষেত্রে পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বাড়লে পাক তরফে হামলা চলুক বা চীনের সাহায্যে পাক হামলা হোক, সব ক্ষেত্রেই এই JF-17 ফাইটার জেট ব্যবহার করা হবে জানা গিয়েছে ৷ চীনে তৈরি এই ফাইটার জেটের মূল কারিগর ইয়াং ওয়েই জানান, JF-17 জেটের আপগ্রেডেশনের কাজ শুরু হয়েছে ৷ এতে পাকিস্তানও কাজ করছে। JF-17 ফাইটার জেটের কাজ শেষ হলেই তা হামলার কাজে ব্যবহার করা হবে ৷  ভারতীয় পত্রিকা মতে, JF-17 ব্লক-৩ গ্রেডের এই ফাইটার জেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি F-16 জেটের আপগ্রেড ভার্সন ৷ যা টেক্কা দিতে পারে ভারতে তৈরি স্বল্প ওজনের কমব্যাট এয়ারক্রাফট তেজসকেও ৷ পাশাপাশি, JF-17 পাল্লা দেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি FA-50 জেটকেও বলে দাবি করা হয়েছে৷

পাকিস্তান যেখানে ইতিমধ্যে নিজ দেশে তৈরী জঙ্গী বিমান বিদেশে রফতানি শুরু করেছে নিজেরাই ১২০টির মত ব্যবহার করছে। অথচ ভারত এক্ষেত্রে কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেল বলে পত্রিকায় সমালোচনা হয়েছে। একবার খবর বেরিয়েছিল ভারতীয় বিমান বাহিনী তার উড়ন্ত কফিন ( পাখির সাথে ধাক্কা লেগে ঘন ঘন বিধ্বস্ত হওয়ায় ) নামে সমালোচিত মিগ-২১ জঙ্গী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে সেস্থলে দেশে তৈরী এই ‘তেজস’ ব্যবহার করতে শুরু করবে। সে পরিকল্পনাও ঠিকঠাকমত এগোয়নি। ভারতীয় পত্রিকা সামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে, সেদেশের বিমান বাহিনী ৮৪টি ‘তেজস’ জঙ্গী বিমানের ফরমায়েশ দিলেও এপর্যন্ত মাত্র ৩০টি জঙ্গী বিমান পেয়েছে । বাকীগুলি পেতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। তেজসের মান পাকিস্তানের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ জঙ্গী বিমানের সমকক্ষ নয় জানিয়ে  অভিযোগ করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী (ভারতের দি উইক, ১৫ মে ,২০২০)। অপর সংবাদ মাধ্যম ইউরেশিয়ান  টাইমস সেদেশের সামরিক বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, মোদি সরকারের  ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শ্লোগানের সাথে মেলালে চীনের জঙ্গী বিমান জে -২০ এর তুলনায় এলসিএ ‘তেজাস’ প্রযুক্তির দিক থেকে এখনও কয়েক দশক পিছিয়ে রয়েছে।###

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.