--- বিজ্ঞাপন ---

তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ড্রোন ক্রয়ে আগ্রহী পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

আজারবাইজানকে যুদ্ধে জিতিয়ে দিয়েছে তুরস্কের তৈরী ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ইউএভি ড্রোন। সিরিয়া, লিবিয়ায় ড্রোন ব্যবহারে ব্যাপক সাফল্যের পর আর্মেনিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ পর্যদুস্ত করেছে তুরস্কের বেয়ারআকতার টিবি-২ নামের শত্রুপক্ষের আতংক এই ড্রোন। যুদ্ধক্ষেত্রে এসব সাফল্য দেখে বড় বড় অস্ত্র রফতানিকারক দেশ চীন, ইসরাইলকে ডিঙ্গিয়ে তুরস্কের তৈরী সশস্ত্র ড্রোন কিনতে সর্বশেষ আগ্রহ দেখালো পাকিস্তান, কাজাখাস্তান ইউক্রেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে গত এক সপ্তাহে তুরস্কের তৈরী ড্রোন কেনার আগ্রহের কথা জানাল এই তিনটি দেশ। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি জানিয়েছে, চীনের অর্ডার বাদ দিয়ে তুরস্কের ড্রোন ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখাস্তান। অপরদিকে পাকিস্তান ভারতের সাথে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কাশ্মীর সীমান্তে ব্যবহারের জন্য তুর্কী ড্রোন কেনার কথা জানিয়েছে। ইউরেশিয়া টাইমস , ইন্ডিয়া টাইমস নাউ এ সংবাদ জানিয়ে বলছে, যুদ্ধক্ষেত্রে নাটকীয় সাফল্য দেখানো তুরস্কের উচ্চ প্রযু্ক্তির মিনি ড্রোন কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট, ফ্রান্সের ল’পয়েন্ট, জার্মান ডার স্পিজেলসহ বিশ্বের প্রায় সব মিডিয়ায় এ নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।  সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক ড্রোন ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে তুরস্ক যে পরিবর্তন এনেছে এনিয়ে কারো দ্বিমত নেই।

বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত মনুষ্যবিহীন যান যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ইউএভি (আনমেনড এরিয়াল ভেহিকল) বা বহুল প্রচলিত ‘ড্রোন’। এই ড্রোনের ব্যবহার এখন বহুমুখী। যেমন বিভিন্ন কার্গো গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। তবে সবচাইতে আলোচনায় উঠে এসেছে যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহারে ব্যাপক সাফল্যকে ঘিরে। সাম্প্রতিককালে সিরিয়া, লিবিয়া এবং সর্বশেষ আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত সামরিক ড্রোন সমরবিদদের ভবিষ্যত যুদ্ধের পরিকল্পনাকেই পাল্টে দিয়েছে। আর এসব ড্রোন ব্যবহারে যুদ্ধের মোড় অনুকূলে নিয়ে আসার যুগান্তকারী দেশ হচ্ছে তুরস্ক। তুর্কীদের তৈরী বেয়ারাকতার টিবি-২ ড্রোন গত ১০ নভেম্বর সমাপ্ত হওয়া যুদ্ধে আজারবাইজানকে জিতিয়ে দিতে মুখ্য ভূমিকা নেয়। এসব যুদ্ধের পর ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ড্রোনের হামলায় ট্যাংক, আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও সামরিক স্থাপনাসমূহ চোখের পলকে কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তা দেখে সমর বিশারদরা অবাক হয়ে যান। তারা আগামী দিনের যুদ্ধে এই ড্রোন হামলা প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিয়ে এখন থেকে ভাবতে শুরু করেছেন । সেই বিবেচনায় পশ্চিমা দেশের সামরিক জোটের অন্যতম বড় দেশ তুরস্ক অন্যদের চাইতে কয়েক ধাপ এগিয়েছে সন্দেহ নেই।

বেয়ারাকতার টিবি-২ ড্রোন

র্তমানে অস্ত্র ক্রেতারা হু হু করে তুরস্কের ড্রোন ক্রয়ের ফরমায়েশ দিতে শুরু করেছে যা দেখে প্রতিয়মান হয় এ যাবত চলমান যুদ্ধসমূহে তুরস্কের সশস্ত্র ড্রোন যে কতটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে তা সহজেই অনুমেয়। আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ড্রোন রফতানির অর্ডার পেল তুরস্ক। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য খবর হচ্ছে চীনের তৈরী ড্রোন  এর অর্ডার বাতিল করে কাজাখাস্তান তুরস্কের তৈরী ড্রোন ক্রয় করছে। সংবাদটি অপর বড় অস্ত্র রফতানিকারক দেশ রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম রিয়া নভোস্তি প্রকাশিত হলে সামরিক মহলে তোলপাড় হতে শুরু করেছে। রুশ সংবাদ মাধ‌্যম আরআইএ নভোস্তি বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে  জানিয়েছে,  সিরিয়া ও নাগরোণো-কারাবাখের যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের খবরের পর কাজাখ প্রেসিডেন্ট  নুরসুলতান নাজারবাইয়েভ তুরস্কোর  টিবি-২ ড্রোন ক্রয় করতে বিশেষভাবে আগ্রহ দেখান। গত সপ্তাহে ২৩-২৫ নভেম্বর  কাজাখস্তানের একটি সামরিক প্রতিনিধি দল ইউএভি দেখতে বেশ কয়েক দিন তুরস্কের ইউএভি  বিমান ব্যবস্থা বেস কমান্ড পরিদর্শন করেছেন। বাটমান প্রদেশে অবস্থিত এই ঘাঁটিটি তুরস্কের সেনা ও বিমান বাহিনীর ড্রোন ইউনিটগুলির প্রধান ঘাঁটি । তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় গত ২৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে এ সফরের সংবাদটি নিশ্চিত করে।  তুর্কি ড্রোন বেয়ারআকতার টিবি-২ রফতানি  হয়েছে সাবেক সোভিয়েত রাজ্য আজারবাইজান এবং ইউক্রেন সহ কয়েকিটি দেশে। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেন আরও পাঁচটি বায়রাকতার টিবি-২ ড্রোন কেনার পরিকল্পনার কথা জানায়। বিশ্বের খ্যাতনামা প্রচার মাধ্যমসমূহ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট, ফ্রান্সের ল’পয়েন্ট, জার্মানীর ডার স্পেইজেলসহ বিশ্বের বহুল প্রচারিত পত্র পত্রিকা সামরিক জার্নালে ইতিমধ্যেই তুরস্কের তৈরী ড্রোন এবং ড্রোনের সাহায্যে হামলা চালিয়ে যুদ্ধে শত্রুপক্ষকে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর খবর  নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। 

অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম ‘কালকা’

এদিকে অপর এক খবরে জানা গেছে এবার বড় অস্ত্র রফতানির দেশ রাশিয়া তুরস্কের ড্রোন বিধ্বংসী সিস্টেমস ক্রয় করছে। গতকাল ১লা ডিসেম্বর তুরস্কের আন্দালু বার্তা সংস্থা এ খবর দেয়। তুরস্কের দৈনিক সাবাহ জানায়, তুরস্কের একটি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ন‌্যাশনাল টেকনোলজিস ডিফেন্স সিস্টেমস আগাম সতর্কীকরণ অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম ‘কালকা’ রাশিয়ায় রফতানি করবে। তুরস্ক উদ্ভাবিত  বিশ্বে এই নতুন  এ‌্যান্টি ড্রোন সিস্টেম ক্রয় করার জন‌্য রাশিয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সংবাদ মাধ‌্যমটি জানায়।

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.