--- বিজ্ঞাপন ---

কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৯১,৫৪৯ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে ?

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: ইতিহাসের পাতা থেকে

0

কাজী আবুল মনসুর

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ৯১,৫৪৯ জন আত্মসমর্পণ করবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, খবর চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ঢাকা মূখি হতে তাকে জনস্রোত। একজন দু’জন নয় ১০ লাখ লোক হাজির হয়ে স্লোগান দিতে থাকে, ‘জয় বাংলা’। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রধান লেঃ জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীকে ‘টাইগার নিয়াজী’ বলে ডাকা হতো। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মানুষের চিৎকার, টাইগার নিয়াজীকে তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। স্বজন হারা মানুষগুলোর বুকফাটা কান্না আর আর্তনাদের মাঝে ভারতীয় বাহিনীকে পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ১৯ মিনিটের আগেই উপস্থিত হন মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার, কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী, ১০১ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল নাগরা, এয়ার মার্শাল দেওয়ান, ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চীফ অফ স্টাফমেজর জেনারেল জ্যাকব, ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কর্ণেল খেরাসহ ভারতের সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। মাথা নিচু করে ভয় আর  আতঙ্ক নিয়ে ভারতীয় বাহিনী কর্ডন করে নিয়ে আসে হানাদার বাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, মেজর জেনারেল জামসেদ, রিয়ার এডমিরাল শরীফ, বিগ্রেডিয়ার বারেক, এয়ার কমোড়র এনামুল হককে। আগে থেকেই মাথা নচু করে দাড়িয়ে ছিলেন হানাদার বাহিনী প্রধান জেনারেল নিয়াজী।

আনুষ্ঠানিক আত্মসমপর্ণ মঞ্চ প্রস্তত। বিকাল ৪টা ১৯ মিনিটে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজী মিত্র শক্তির কাছে আত্মসমপর্ণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। দেশি-বিদেশী শতাধিক সাংবাদিক, ঢাকার লাখ দশেক মানুষ দেখলেন পাকিস্তানের পরাজয়। আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য জেনারেল নিয়াজী তার কোমরের বেল্ট থেকে সুদৃশ্য রিভলবার আর ইউনিফর্মের কাধঁ থেকে লেঃ জেনারেল ব্যাজ দুটো জগজিৎ সিং অরোরার কাছে দিয়ে কপালের সঙ্গে কপাল ঘষেন। এরপর একে একে পাকিস্তানী পরাজিত বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র ও ব্যজ দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন। অভূতপূর্ব দৃশ্য ছিলো বাংলাদেশের মানুষের জন্য। বাংলাদেশের ম্যাপ অংকিত রক্ত বলয়ের পতাকা উঠিয়ে ঘোষনা হলো স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। দ্বিখন্ডিত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের নাম বাংলাদেশ। বিশ্ব জেনে গেলো। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তখন মুক্তিবাহিনীর হামলার আতঙ্ক নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য চাইলেন। তারা ব্যাক্তিগত অস্ত্র সাথে রাখার অনুমতি চাইলেন। ভারত থেকে পর্যাপ্ত বাহিনী তাদের নিরাপত্তায় আসছে। স্বাধীন হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে কত সেনা বাংলাদেশে আত্মসমপর্ণ করেছে। সংখ্যা যাচাই এর বেরিয়ে এলো ৯১,৫৪৯ জন। এ বিপুল সেনা তথন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকারের নেতারা ঢাকায় এসে স্বাধীন দেশের দায়িত্ব নেন। স্বাধীন দেশে পরাজিত পাকিস্তানী সেনাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার তখন জনতা। দেশের অবস্থা তখন আগোছালো। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় তাদের ভারতে স্থানান্তর করা হবে। এসব যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের জন্য ঢাকায় আবার ফেরত আনা হবে। কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিচার আর অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি নামের একটি চুক্তি হওয়ার পর যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়ার জন্য ভারত সরকার চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। বাংলাদেশের মধ্যে থাকা পাকিস্তানী দোসররাও তৎপর হয়ে উঠে। শেষপর্যন্ত এসব যুদ্ধবন্দী ভারতের মাটি থেকেই পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে প্রত্যাবর্তন করে।

৭১ এর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ৭২ এর জানুয়ারীর ভেতরেই যুদ্ধবন্দীরা পাকিস্তানে চলে যায়। ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানী সেনাদের মধ্যে লেঃ জেনারেল নিয়াজী, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী,মেজর জেনারেল জামসেদসহ শীর্ষ কয়েকজন পাক হানাদার আর্মিকে ভারতের ঐতিহাসিক ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গে রাখা হয়। এই ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গে সাংবাদিকদের অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘ঢাকায় আপনার কাছে যেটুকু শক্তিছিলো, তা দিয়েও কি আপনি যুদ্ধকে অারও কয়েকদিন দীর্ঘায়িত করতে পারতেন না? নিয়াজীর উত্তর ছিল এ রকম, ‘কেনো তা করতে যাবো। সেক্ষেত্রে ঢাকার নর্দমাগুলো মৃত দেহে ভরে উঠতো আর রাস্তায় লাশের পাহাড় হতো। ঢাকার নাগরিক জীবনের মারাত্মক ক্ষতি হতো, মহামারি রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তো। অথচ যুদ্ধের ফলাফল একই হতো। আমি পশ্চিম পাকিস্তানে এই ৯০,০০০ যুদ্ধবন্দী ফিরে নিয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করি। না হলে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে আমাদের ৯০,০০০ বিধবা মহিলা আর লাখ পাচেঁক এতিম বাচ্চাকে মোকাবেলা করতে হতো। আমার কাছে যুদ্ধে এভাবে আত্মাহুতি মূল্যহীন মনে হয়েছে। কিন্ত শেষপর্যন্ত যুদ্ধের ফলাফল তো একই হতো”।

আসলে আধ্যাত্মিক জগতের ধর্মকে কখনই রাষ্ট্রিয় চৌহদ্দির মধ্যে আটকে রাখা কিংবা ক্ষমতাসীনদেরসুবিধার জন্য রাজনৈতিক হাতিঁয়ার হিসাবে ব্যবহার করা বাঞ্চনীয় নয় এবং পরিণাম শুভ নয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এর জলন্ত প্রমান। ## তথ্য সূত্র/এম আর আখতার মুকুলের আমি বিজয় দেখেছি।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.