--- বিজ্ঞাপন ---

চীনের ‘রেয়ার আর্থ’ নিষেধাজ্ঞায় মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্প মুখ থুবড়ে পড়তে পারে

তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে ক্ষুদ্ধ চীন

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উপর ক্ষীপ্ত চীন তার অত্যন্ত কার্যকর অস্ত্র খনিজ মাটি বা ‘রেয়ার আর্থ’ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এই ‘রেয়ার আর্থ’ বা ‘বিরল খনিজ মৃত্তিকা’ এমনই একটি খনিজ মাটি যার উপাদান দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম সবচাইতে ব্যয়বহুল জঙ্গী বোমারু বিমান এফ-৩৫, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক যন্ত্রাংশে ব্যবহার করা হয়। আর চীন হচ্ছে বিশ্বের শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ এই বিরল খনিজ মাটির উতপাদক। মোটর গাড়ীর যন্ত্রাংশ ম‌্যাগনেট, ব‌্যাটারি,মোবাইল ফোন সহ নানা বেসামরিক সামগ্রী উতপাদনেও এই বিরল মাটির উপর নির্ভর করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের গাড়ী শিল্পের ম‌্যাগনেটের চাহিদার ‌প্রায় পুরোটাই চীনের রেয়ার আর্থ নামের এই খনিজ মাটির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

ব্লুমবাগের সূত্র মতে, চীন বিশ্বে রেয়ার আর্থ নামক এই খনিজ মাটি সরবরাহের উপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে। বিশ্বের রেয়ার আর্থ উত্পাদনের ৭০ ভাগ এবং রেয়ার আর্থ ম্যাগনেটের ৯০ ভাগ এরও বেশি উৎপাদন করে চীন। প্রয়োজন মনে করলে চীন  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই বিরল খনিজ মাটি রফতানি নিষেধাজ্ঞা নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনারও আভাস দিয়েছে। যদিও জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশগুলি চীনের সাথে আমেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এই বিরল মৃত্তিকা বেশী করে মজুদ ও অন্যান্য উতপাদনকারী দেশের কাছ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে শুরু করেছে। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস এর ভাষ্যে বহুবার চীনের নেতৃবৃন্দ মার্কিন বোয়িং, লকহিড মার্টিন, রেথিয়নসহ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানীগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় এই হুমকির ব্যাপারটি স্পষ্ট করে প্রকাশিত হয়। চীন তাইওয়ানকে দেশটির অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে এবং জাতিসংঘ এক চীন নীতির স্বপক্ষেই মত দিয়েছে অতীতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোট এটি মানতে নারাজ। এই জোটের প্রধান দেশ আমেরিকা বরাবরই চীনকে শায়েস্তা করার জন্য তাইওয়ানকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। অতি সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অধিকার প্রশ্নে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখে তাইওয়ানে বিপুল ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহসহ দুটি বড় অস্ত্র চুক্তির অনুমোদন দেয়।

ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদ বিশ্লেষণে গত ৬ নভেম্বর গত তিন বছরে তাইওয়ানের কাছে মার্কিন সমরাস্ত্র বিক্রয়ের একটি হিসেব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সর্বশেষ গত নভেম্বরের প্রথম দিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্রের প্যাকেজকে অনুমোদন করে। এই অস্ত্র চালানে রয়েছে মেরিটাইম রাডার এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার সহ চারটি মনুষ্যবিহীন সামুদ্রিক টহল বিমান। এর আগে গত ২১ অক্টোবর ক্ষেপণাস্ত্র, আর্টিলারি এবং সেন্সর সহ তিনটি আর্মস সিস্টেম বিক্রয়ের উপর আলোকপাত করা হয়। এই প্যাকেজে মূল্য ধরা হয় ১.৮ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ দিন পরে ১০০টি বোয়িং-তৈরি হার্পুন উপকূলীয় প্রতিরক্ষা সিস্টেম যার মূল্য ২.৩৭ বিলিয়ন ডলারের অনুমোদন দেয় মার্কিন প্রশাসন। এর আগে বছরের শুরুতে মোট ৮০ কোটি ডলারের দুটি অস্ত্র বিক্রয় অনুমোদনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্র বিক্রীর এই বৃদ্ধিকে রেন্ড কর্পোরেশন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান বলেন, “এখন আমরা যে অস্ত্র দেখছি তা চীনা আক্রমণের বিরুদ্ধে তাইওয়ানকে দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।” ওয়াশিংটন ২০১৯ সালে তাইওয়ানের জন্য দু’ দফায় বড় চালানের অস্ত্র বিক্রী করে। ঐসময় প্রায় ১০.২ বিলিয়ন ডলারে জন্য এফ-১৬ জঙ্গী বিমান এবং এমওয়ানএ-২ ট্যাংকসহ তিনটি অস্ত্র চালান অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৮ সালে একক ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রয় অনুমোদিত হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জুন ২০১৭ সালের জুনে প্রথম অস্ত্র প্যাকেজ নিয়ে সে বছর মোট ১.৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির অনুমোদন দেয়।

এসকল ক্রমবর্ধমান অস্ত্র বিক্রীর প্রেক্ষাপটে ক্ষীপ্ত হয়ে চীন যে সকল অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রীর সাথে জড়িত তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।গত ৩০ নভেম্বর (সোমবার) রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানায়,সে আলোকে বেইজিং বলেছে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র উন্নয়নের প্রচেষ্টার সাথে সংযোগযুক্ত চার ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের মেয়াদে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপের দিকে। হংকং ও করোনা ভাইরাস নিয়ে বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে উভয় দেশের সম্পর্ক এখন চরমে।চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এই চারজনকে জাতীয় গণতন্ত্রের (এনইডি) সিনিয়র ডিরেক্টর জন কানাস , মনপ্রীত আনন্দ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) আঞ্চলিক পরিচালক; হংকংয়ের এনডিআই-র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কেলভিন সিট এবং এনডিআইয়ের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টাল রোজারিও সোমবার থেকে তাদের চীনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে বলে চীনের রাজধানীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ হংকংয়ের বিষয়গুলিতে স্পষ্টভাবে হস্তক্ষেপ এবং এটা চীনের ঘরোয়া বিষয়গুলিতে চূড়ান্তভাবে হস্তক্ষেপ বলে গণ্য করছে চীন,” মুখপাত্র হুয়া চুনাইং একটি নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন। গত ২১ শে অক্টোবর তাইওয়ানের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি যার মোট মূল্য হতে পারে ১.৮১ বিলিয়ন ডলার। মুখপাত্র পুনরায় উল্লেখ করেন যে, তাইওয়ান দ্বীপে মার্কিন অস্ত্র বিক্রয় এক চীন নীতি কঠোরভাবে লঙ্ঘন করেছে এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও সুরক্ষা স্বার্থকে গুরুতরভাবে ক্ষুন্ন করেছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রকে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রয় বন্ধ করার এবং দ্বীপের সাথে যে কোনও সামরিক সংযোগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “চীন তার দেশের সার্বভৌমত্ব ও সুরক্ষা স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে।”
মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৯ সালের মে মাসে জিয়াংসি প্রদেশে একটি বিরল মৃত্তিকা প্রসেসিং কারখানা পরিদর্শন করেন। রেয়ার আর্থ বিরল মাটি প্রসেসিং কারখানায় তার ঐ সফরকে পর্যবেক্ষকগণ গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল। ঐ সফরকে আমেরিকার জন্য একটি আগাম সতর্ক বার্তা হিসাবে ব্যাখ্যা ধরে নেয় হয় । চীনের রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম পিপলস ডেইলি-তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ এই সন্দেহগুলির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছিল যে, আমেরিকার সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান এই বিরল মাটি রফতানি বন্ধ করতে পারে। এর কয়েকদিন পরে, বেইজিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিজাত বিরল মাটির উপর (এবং অন্যান্য পণ্য) শুল্ক ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় তবে এ যাত্রায় পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা থেকে বিরত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা বিশেষত মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পকে বাঁচাতে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হওয়ার হুমকি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, কেনানা এই বিরল মাটি যা সোনার হরিণের মত । যোগাযোগ সরঞ্জাম থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র এবং জেট ইঞ্জিন পর্যন্ত বিস্তৃত প্রযুক্তিতে বিরল মাটি ব্যবহার করা হয় । মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ‌্য মতে, প্রতিটি মার্কিন সর্বাধুনিক মাল্টিরোল জঙ্গী বিমান এফ-৩৫ এর জন্য প্রায় ৪২৭ কেজি বিরল মাটির প্রয়োজন হয়, এবং ভার্জিনিয়া-শ্রেণীর প্রতিটি পারমাণবিক সাবমেরিনের জন্য প্রায় ৪.২ মেট্রিক টন লাগে। প্রতিরক্ষা শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল ইলেকট্রনিক মোটর গাইডেন্স এর ক্ষেত্রে এই কাঁচামাল অপরিহার্য্য। বেইজিং নতুন দফা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সতর্ক সংকেত দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি এখন প্রতীকী, তবে চীন যদি আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয় তাহলে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের সংস্থাগুলির সরবরাহ চেইনগুলি বড় ধরণের হোঁচট খাবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে বেইজিং তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে বেশ কয়েকটি মার্কিন সংস্থা এবং সংযুক্ত ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা নেবে, ওয়াশিংটন এর আগের সপ্তাহে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বিক্রয়কে অনুমোদন দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম কোম্পানী লকহিড মার্টিন, বোয়িং প্রতিরক্ষা এবং রেথিয়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্রিটিশ লেখক রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক টম ফুডি পূর্ব এশিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলছেন, প্রথমত, মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রধান উপকরণগুলি এই বিরল মাটির উপর ভর করছে। রেয়ার আর্থ উতপাদনে বিশ্বে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে ।এবং চীনের নিষেধাজ্ঞা যদি এই খনিজ মাটির উপর পড়ে তাহলে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের সরবরাহ চেইনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি চীনের নিষেধাজ্হা বর্তমানে কেবল প্রতীকী ধরে নেয়া হলেও, এটি বেইজিংয়ের তরফ থেকে একটি সতর্কবার্তা যা ভবিষ্যতে মার্কিন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও কঠোর প্রতিশোধমূলক হতে পারে।

বিরল খনিজ মাটি ‘রেয়ার আর্থ’ `Rare Earth’ আসলে কী ? এবং এই মাটি নিয়ে এত হৈচৈ কেন?

এই বিরল খনিজ মাটি ১৭ টি উপাদানকে বোঝায় যা ইলেক্ট্রনিক্স, যানবাহন এবং অবশ্যই সামরিক সরঞ্জাম সহ সকল ধরণের আইটেম তৈরিতে প্রধানত ব্যবহৃত হয়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সহ লকহিড মার্টিনের মূল উতপাদিত সমরাস্ত্রের প্রধান উপকরণগুলিই এই বিরল এই চীনা মাটি দিয়ে তৈরি উপাদানগুলির উপর নির্ভর করে।চীন বিশ্বের বৃহত্তম বিরল-মাটি রফতানিকারী দেশ এবং আমেরিকা চীন থেকে প্রয়োজনীয় বিরল মাটির প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করে আসছে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম বিরল-পৃথিবীর রফতানিকারী দেশ এবং আমেরিকা চীন থেকে প্রয়োজনীয় বিরল পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করে, রিপোর্টে বলা হয়েছে। গ্লোবাল টাইমসকে সামরিক বিশেষজ্ঞ ও টিভি ভাষ্যকার গান ঝোপপিং বলেছেন, মার্কিন বিমান নির্মাতা বোয়িং নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলির দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ এই বৃহত্তর বোয়িং কোম্পানি চীনের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা অন্যদের তুলনায় চীনে বৃহত্তর বেসামরিক ও বাণিজ্যিক ব্যবসায়িক সংযোগ রয়েছে।

চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় গত ২৬ অক্টোবর প্রকাশিত এক নিবন্ধে বিশ্লেষক দেং জিয়াওসি পশ্চিমা দেশগুলিকে তাইওয়ানের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রয় নিয়ে বিশেষ করে আমেরিকাকে হুঁশিয়ারির ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, চীন বিরল-মাটি রফতানি সীমাবদ্ধ করতে পারে, আর্থিক অবরোধ জারি করতে পারে।
চীন লকহিড মার্টিন, বোয়িং ডিফেন্স, রায়থিয়েন এবং সেইসাথে তাইওয়ান দ্বীপে অস্ত্র বিক্রির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্হার কথা জানায়। চীন বিদেশ বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের অধ্যাপক লি হাইডং বলেন,চীনা খনিজ মাটি রেয়ার আর্থ বিশ্ব সরবরাহ চেইনের উপর একটি বিধিনিষেধ স্পষ্টতই প্রতিরক্ষা শিল্পের কাঁচামালকে কার্যকরভাবে ক্ষতি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সহ লকহিড মার্টিনের মূল পণ্যগুলির অনেকগুলি এই রেয়ার আর্থ খনিজ মাটির উপর নির্ভর করে থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিশ্বের বৃহত্তম বিরল খনিজ মাটি রেয়ার আর্থ রফতানিকারী দেশ এবং আমেরিকা চীন থেকে প্রয়োজনীয় বিরল পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করে। সোমবার গ্লোবাল টাইমসকে সামরিক বিশেষজ্ঞ ও টিভি ভাষ্যকার, গান ঝোপপিং বলেছেন যে বোয়িং চীনের নিষেধাজ্ঞার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, কারণ এই বৃহত্তর বোয়িং কোম্পানির তালিকায় থাকা অন্যদের তুলনায় চীনে বৃহত্তর বেসামরিক ও বাণিজ্যিক ব্যবসায়িক সংযোগ রয়েছে। এই অনুমোদনের তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও সত্তায় মার্কিন রাজনীতিবিদ যেমন সিনেটর মার্কো রুবিও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যারা হোয়াইট হাউসের তাইওয়ান অস্ত্র চুক্তির অনুমোদনের প্রশংসা করেছেন ।
সিএনএন সূত্রে জানা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ১৩৫ টি স্ট্যান্ড অফ ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল এক্সপেন্ডেড রেসপন্স (এসএলএএম-ইআর) মিসাইল, ১১ টি হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেমস, এম১এ২ লাঞ্চার এর জন্য ৪৩৬.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ছয়টি এমএস-১১০ রেকি পড এবং সম্পর্কিত সরঞ্জামগুলির জন্য মোট আনুমানিক ৩৬৭.২ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন দেয়। ২০১০ সালে টোকিওর সাথে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। এসময় জাপানের কোস্টগার্ড সেনকাকু / দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী সমুদ্রে চীনা ফিশিং বোটের ক্যাপ্টেনকে জাপান গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় চীন দু’মাসের জন্য জাপানে এই রেয়ার আর্থ খনিজ মাটি রফতানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাপানের গাড়ী শিল্প বলতে গেলে পুরোপুরি চীনের এই রেয়ার আর্থ খনিজ পদার্থের উপর নির্ভরশীল।গাড়ীর ম্যাগনেট, ব্যাটারি এই খনিজ মাটির উপর নির্ভরশীল। জাপান এই রেয়ার আর্থ নামের খনিজ মাটি আমদানীর ৮০ ভাগই চীন থেকে আমদানি করে । অনেকটা বাধ্য হয়ে চীনের বোটের ক্যাপ্টেনকে ছেড়ে দিয়ে বেইজিং-এর সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হয় জাপান। ইতিমধ্যে চীনের নিষেধাজ্হার ফলে জাপানকে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। মার্কিন কংগ্রেসনাল রিচার্স সার্ভিসের হিসেবে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের হিসাব মোতাবেক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও চীন থেকে তার বিরল খনিজ মাটি চাহিদার ৮০.৫ শতাংশই  আমদানি করেছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.