--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বের ৩৯ তম ক্ষমতাধর নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোবর্স ম্যাগাজিনের জরীপ

0

কাজী আবুল মনসুর

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের ৩৯ তম ক্ষমতাধর নারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোবর্স ম্যাগাজিন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন আছেন ৩২ নাম্বারে। ফোর্বসের বার্ষিক তালিকায় এবার ৩০টি দেশের বিভিন্ন বয়সী নারীদের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান আছেন ১০ জন। ৩৮ জন বিভিন্ন কোম্পানির সিইও। বিনোদন জগতের পাঁচজনও এসেছেন ক্ষমতাধর নারীদের এই তালিকায়। টানা দশমবারের মতো এ তালিকার শীর্ষস্থানে আছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। আর টানা দ্বিতীয়বারের মতো দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লগার্ড। এবারই প্রথম বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত কমলা হ্যারিসের নাম এসেছে, প্রথমবারই তিনি আছেন তৃতীয় স্থানে।

শেখ হাসিনা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ভাগ্যক্রমে বেচেঁ যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাচঁ সন্তানের মধ্যে শেখ হাসিনা সবার বড়। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জম্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থাকলে হয়ত ঘাতকদের হাতে তার প্রাণও যেতো। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু রাসেলও। ৭৫এর ১৫ ই আগস্ট এর কাল রাতে শেখ হাসিনা এবং বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে চলে যান।

১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যখন স্বেরতন্ত্র চলছিল তখন শেখ হাসিনা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। বাংলাদেশে তাঁর অনুপস্থিতিতে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন তিনি নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন। শেখ হাসিনা তাঁর ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন যাপনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে জীবনের ঝুকি নিয়ে নিজের দেশে ফিরে আসেন।

শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক মহিলা কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সদস্য এবং রকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবন থেকে সকল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তিনটি নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে আসীন হন। এরপর ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । সংবিধানের ৫১ এবং ৫৬ ধারা মোতাবেক শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক ফর্মুলা ঘোষণা করেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা দেশের পঞ্চম সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী হন। তিনি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের পরিবর্তন করতে সংসদের সকল দলের নেতৃত্ব দেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য শেখ হাসিনা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন সূচনা করেন। তার আন্দোলনের সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযোজিত হয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্ন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলীয় নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন যারা ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনের পর ব্যাপক হত্যা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং শান্তির স্বপক্ষে একটি শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলেছিলেন। শেখ হাসিনা বার বার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। সবচেয়ে মারাত্মক ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এর ঘটনা। এদিন  তাঁর জনসভায় এক ডজনেরও বেশি উচ্চপ্রযুক্তির গ্রানেড হামলা করা হয়। সুপরিকল্পিত এ হামলায় ২২ জন নেতাকর্মী মারা যান এবং পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও মারাত্মকভাবে চোখে আঘাত পান।

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই কিছু মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে তাকেঁ গ্রেফতার করা হয়।দেশে বিদেশে প্রবল জনমতের চাপে ২০০৮ সালের ১১ জুলাই তাকে মুক্তি দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়। এরপর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তার সাহসি নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মর্যদার আসনে প্রতিষ্ঠিত।
মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বস তাদের ১৭তম বার্ষিক র‌্যাঙ্কিংয়ে শেখ হাসিনা সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা এই মেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ। দারিদ্র্য, ক্ষুধামুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন মানুষ এখন দেখতেই পারে।

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.