--- বিজ্ঞাপন ---

সাংবাদিক রুহুল্লাহ জামকে ফাসিঁ দিল ইরান

ফ্রান্স তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ##

মত প্রকাশের স্বাধীনতা অন্যান্য অনেক দেশের মতো ইরানেও নেই। বছরের শেষ দিকে এসে ইরান সরকার প্রতিবাদী সাংবাদিক রুহোল্লোহ জাম কে ফাসিঁ দিল। তারঁ বিরুদ্ধে ইরান অদ্ভুত এক অভিযোগ আনে, তা হলো ‘পৃথিবীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি’। ইরান সরকার অভিযোগ করেছিল, আমাদনিউজ ২০১৭-১৮ সালে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ হয়, তাতে উস্কানি দিয়েছিল।

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে আমাদনিউজ যেসব সাংকেতিক বার্তা শেয়ার করতো, সেগুলো ফলো করতো প্রায় দশ লাখ মানুষ। এই নেটওয়ার্কে আমাদনিউজ ইরানে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের খবর ছাড়াও ইরানি কর্মকর্তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করতো। ইরান সরকার এই ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু পরে এটি আবার ভিন্ন-নামে আত্মপ্রকাশ করে।

বিবিসি জানায়, রুহুল্লাহ জাম ছিলেন ইরানের সংস্কারপন্থী ধর্মীয় নেতা মোহাম্মদ আলি জামের ছেলে। তার বিরুদ্ধে এ বছরের শুরুতে ‘বিশ্বকে কলুষিত’ করার অভিযোগ আনা হয়। এটি ইরানের সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের একটি বলে বিবেচনা করা হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, রুহুল্লাহ জাম ‘অন্যায্য বিচারের’ শিকার হয়েছেন, কারণ তার বিচার করা হয়েছে ‘জোর করে আদায় করা স্বীকারোক্তির’ ভিত্তিতে।

এ সপ্তাহের শুরুতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রুহুল্লাহ জামের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছিল। তারা এটিকে ‘ইরানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত’ বলে বর্ণনা করে।

ফ্রান্স রুহুল্লাহ জামকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল। ২০০৯ সালে ইরানে যে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, তারপর রুহুল্লাহ জামকে আটক করা হয়েছিল। ইরানের ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এর আগে বলেছিল, তারা ‘আধুনিক গোয়েন্দা তথ্য এবং উদ্ভাবনী কৌশল’ প্রয়োগ করে রুহুলাহ জামকে আটক করে। আইআরজিসি অভিযোগ করে, রুহুল্লাহ জামকে পরিচালনা করতো ফ্রান্স, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থাগুলো। এসোসিয়েটেড প্রেস বার্তা সংস্থার মতে, রুহুল্লাহ জাম পরে টেলিভিশনে হাজির হয়ে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।

আনন্দবাজার জানায়, সুপ্রিম কোর্ট জুনেই প্রাণদণ্ড বহাল রেখেছিল তাঁর। ইরান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল ‘পৃথিবীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি’-র। শনিবার কাকভোরে প্রতিবাদী সাংবাদিক রুহোল্লা জ়ামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা।

তিন বছর আগে ইরানের বর্তমান শাসকদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান মানুষ। কট্টর ধর্মান্ধতা এবং দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শক্ত হাতে মোকাবিলা করে শাসকেরা। রোষে পড়েন ফ্রান্সে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে যাওয়া সাংবাদিক রুহোল্লা। জ়াম টিভি নামে তাঁর চ্যানেলে সরকার-বিরোধী প্রচার ছাড়া জনরোষে উস্কানি দিয়েছে বলে অভিযোগ এনেছিল সরকার। আমাদ নিউজ় নামে রুহোল্লার টেলিগ্রাম চ্যানেলটির অনুগামীর সংখ্যাও ১০ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছিল। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে ইরানি গুপ্তচরেরা ইরাক থেকে তুলে নিয়ে আসে রুহোল্লা-কে। ধর্মীয় আইনে তাঁর বিচার হয়। ইরানে ‘পৃথিবীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি’-র অভিযোগ আনা হয় সরকার পরিবর্তন বা অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ আনা হয়েছিল শাসকদের বিরুদ্ধে সতত সরব সাংবাদিক রুহোল্লার বিরুদ্ধেও। নিম্ন আদালত দ্রুত বিচার করে তাঁর ফাঁসির আদেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টও জুনে তা বহাল রাখে। ফরাসি সরকার এই সাংবাদিকের প্রাণদণ্ডের বিরোধিতা করে জ়ামকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন করেছিল তেহরানের কাছে। ফরাসি বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘ইরানে মত ও সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতার উপরে আঘাত এই দণ্ড। আমরা আশা করব, ইরান সরকার মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে।’ কিন্তু কোনও কথা কানে না-তুলে শনিবার রুহোল্লাকে ফাঁসিই দিল ইরান সরকার।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.